Q/A

যেভাবে শুভসমাপ্তির সাথে মৃত্যুবরণ করবেন

আল্লাহ তাআলার আনুগত্য এবং একটি সুন্দর সমাপ্তির মধ্য দিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারা কতই না সৌভাগ্যের বিষয়! যারা এই দুনিয়ায় ধৈর্য ধরে আমল করে যেতে পারবে এবং যাদের প্রতি আল্লাহ তাআলা করুণা ও রহমত বর্ষণ করবেন, কেবল তাদের পক্ষেই এরকম বরকতময় বিদায় লাভ করা সম্ভব।নী

কোনোদিন কি দেখেছেন, শয্যাশায়ী মুমূর্ষু ব্যক্তি মৃত্যুযন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে সুর করে তিলাওয়াত করছেন?
কোনোদিন কি কাউকে দেখেছেন, সামনে কুরআন রেখে তিলাওয়াতরত অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন?
এমন কোনো লোকের কথা কি শুনেছেন কখনো, যিনি হজ করতে করতে অথবা উমরার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন আর যাত্রাপথে কিংবা কাবার কাছে এসে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন?
এমন কারও ব্যাপারে কি শুনেছেন, যিনি কিনা সিজদারত অবস্থায় মারা গেছেন?
এভাবে মৃত্যুবরণ করা কি আমাদের সারা জীবনের স্বপ্ন নয়?
এভাবে এই অস্থায়ী পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে পারাই কি প্রকৃত সৌভাগ্য নয়?
নাকি মদ খেতে খেতে অথবা রামাদানে কোনো কারণ ছাড়া পানাহার-রত অবস্থায় মারা যাওয়া খুব সম্মানের?

এমন কারও ব্যাপারে কি কখনো শুনেছেন, যে ব্যভিচার-রত অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে?
আল্লাহ তাআলাকে গালি দিতে দিতে মৃত্যুপথের যাত্রী হয়ে গিয়েছে?
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এরকম জঘন্যতম ভয়ংকর মৃত্যু থেকে হিফাজত করুন এবং হায়াত শেষে আমাদেরকে সুন্দরতম শুভ মৃত্যু দান করুন।

শুভসমাপ্তির কিছু লক্ষণ

  • আল্লাহ তাআলার সাক্ষাৎ-আকাঙ্ক্ষী হওয়া।
  • মৃত্যুর সময় মুখে কালিমা জারি থাকা।
  • কপালে ঘাম থাকা।
  • বৃহস্পতিবার রাতে এবং শুক্রবার দিনের বেলায় মৃত্যুবরণ করা।
  • যুদ্ধের ময়দানে শাহাদাত লাভ করা।
  • সাওম, সাদাকা, হজ বা উমরা এ ধরনের কোনো ভালো কাজ করতে করতে মৃত্যুবরণ করা।
  • মক্কা-মুনাওয়ারায় মৃত্যুবরণ করা।

অন্য কোনোভাবে শহিদ হওয়া, যেমন-মহামারিতে, ভূমিধস, পানিতে ডুবে, পেটের অসুখে, অগ্নিদগ্ধ হয়ে, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে কিংবা বাচ্চা প্রসব করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করা।
মৃত্যুর পর মুখ হাস্যোজ্জ্বল থাকা।

ভালো মৃত্যুর জন্য কি করণীয়

কী করলে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বান্দাকে শুভ পরিণতি দেবেন?
কোন কাজ করলে সুন্দর সমাপ্তি আশা করা যাবে?

৯টি গুরুত্বপূর্ণ আমলের কথা আপনাকে জানাব, যদি আপনি এর একটিও করতে পারেন, তাহলে আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা আপনাকে সুন্দর মৃত্যু দান করবেন। আসুন, জেনে নিই সেই আমলগুলো-

ঈমান ও সৎকাজে অবিচল থাকা

আল্লাহ তাআলা বলেন-

يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ ۖ وَيُضِلُّ اللَّهُ الظَّالِمِينَ ۚ وَيَفْعَلُ اللَّهُ مَا يَشَاءُ
আল্লাহ তা’আলা মুমিনদেরকে মজবুত বাক্য দ্বারা মজবুত করেন। পার্থিবজীবনে এবং পরকালে। এবং আল্লাহ জালেমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা, তা করেন।1

ইমাম তাবারি, ইমাম বাগাবি রাহিমাহুমাল্লাহ প্রমুখ মুফাসসির বলেন, এখানে ‘দুনিয়ার জীবনে’ কথাটির অর্থ হলো-মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত, যখন প্রাণবায়ু বের হওয়ার সময় আসে।2

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-

إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنتُمْ تُوعَدُونَ
নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভয় করো না, চিন্তা করো না এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ শোন।3

আল্লাহ তাআলার দেখানো পথে দৃঢ়পদে নিরবধি চলতে থাকা, বিপথে কিংবা পাপের পথে না যাওয়াই হচ্ছে অবিচলতা। ধৈর্যের সঙ্গে একমনে সরল পথে এগিয়ে চলার নামই অবিচলতা।

আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَأَنَّ هَـٰذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ ۖ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَن سَبِيلِهِ ۚ ذَٰلِكُمْ وَصَّاكُم بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। নিশ্চিত এটি আমার সরল পথ। অতএব, এ পথে চল এবং অন্যান্য পথে চলো না। তা হলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা সংযত হও।4

সংক্ষেপে বলা যায়, কথা ও কাজে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের আদেশ মেনে চলা এবং নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে আমাদের। সরল পথের পথিক কেবল সারাজীবন এতটুকু দাবি করেই জীবন পার করে দেয় না যে, ‘আল্লাহ আমাদের রব।’ বরং সে এটা মুখে বলার পাশাপাশি অবিচলভাবে আল্লাহ তাআলার আদেশ মেনে চলে, তাঁর সকল নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকে। কাজ না করে শুধু মুখের দাবিতে কোনো কিছু প্রমাণিত হয় না। দাবির সত্যতা প্রকাশ পায় মানুষের কাজের মাধ্যমে। কে কতটুকু সৎ ও নিষ্ঠাবান, কাজের মাধ্যমেই তা প্রমাণিত হয়। তাই শুধু কথা নয়, আমাদের কাজও করতে হবে আর তাতে দৃঢ় থাকতে হবে।

দৃঢ়তার পুরস্কার কী?

মৃত্যুর আগে রহমতের ফেরেশতারা শুভ্র কাপড় পরে হাস্যোজ্জ্বল মুখে আপনাকে স্বাগত জানাতে আসবে, আপনাকে সুসংবাদ দেবে এবং আশ্বস্ত করবে, যেন সামনের জীবন নিয়ে আপনি কোনো শঙ্কায় না ভোগেন, পেছনের জীবন নিয়ে কোনো অনুশোচনায় না পড়েন, যেন আপনি থাকতে পারেন ভীতিমুক্ত ও দুশ্চিন্তাহীন। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে ফেরেশতারা এরকম দৃঢ় ব্যক্তিকে কালিমা পাঠ করতে সাহায্য করবে, তাকে অবিচল রাখবে এবং তার শুভসমাপ্তি নিশ্চিত করবে।

আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সততা

আল্লাহ তাআলা বলেন-

مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ ۖ فَمِنْهُم مَّن قَضَىٰ نَحْبَهُ وَمِنْهُم مَّن يَنتَظِرُ ۖ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا
মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে। তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি।
لِّيَجْزِيَ اللَّهُ الصَّادِقِينَ بِصِدْقِهِمْ وَيُعَذِّبَ الْمُنَافِقِينَ إِن شَاءَ أَوْ يَتُوبَ عَلَيْهِمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا
এটা এজন্য যাতে আল্লাহ, সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদিতার কারণে প্রতিদান দেন এবং ইচ্ছা করলে মুনাফেকদেরকে শাস্তি দেন অথবা ক্ষমা করেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।5

এক বেদুইন ইসলাম গ্রহণ করার পর শাহাদাতের তীব্র আকাঙ্ক্ষার কথা জানালে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উদ্দেশে বলেছিলেন,
‘তুমি যদি আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সততার পরিচয় দিয়ে থাকো, তাহলে তিনি তোমার আশা পূরণ করবেন।’ এরপর জিহাদের ময়দানে সে প্রচণ্ড যুদ্ধ করে শাহাদাত বরণ করে। নবিজির সামনে তাকে আনা হলো। নবিজি তার দিকে ইশারা করে বললেন,
‘আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সে সততার পরিচয় দিয়েছে, তাই আল্লাহ তাআলাও তার আশা-আকাঙ্ক্ষাকে সত্যে পরিণত করেছেন।’6

পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় সততা হলো, কাজে ও কর্মে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সৎ থাকা। যারা আল্লাহ তাআলার সাথে সততা দেখাতে পারে, তাদের সততার কারণে আল্লাহ তাআলাও তাদের সৎ কামনা-বাসনাকে বাস্তবায়িত করেন এবং তাঁর নিকট তাদের জন্য নির্ধারণ করে রাখেন সুউচ্চ মর্যাদা ও পুরস্কার। মূলত তারাই হলো প্রকৃত সত্যবাদী। আল্লাহ তাআলা পার্থিব জীবনে তাদেরকে হিদায়াত ও ঈমানের ওপর অবিচল রাখেন, যেন তারা আল্লাহ তাআলার সঙ্গে এবং মানুষের সঙ্গেও সৎ থাকতে পারে। পার্থিব জীবনের এ সততার জন্য কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পুরস্কৃত করবেন।
যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন-

لِّيَجْزِيَ اللَّهُ الصَّادِقِينَ بِصِدْقِهِمْ 
যাতে আল্লাহ অঙ্গীকার পূরণকারীদেরকে অঙ্গীকার পূরণের পুরস্কার দিতে পারেন।7

তিনি তাদেরকে উদ্যান, অরণ্য এবং ফোয়ারা বিশিষ্ট জান্নাতে প্রবেশ করাবেন; তারা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মহা-অধিপতি আল্লাহ তাআলার নিকট যথোপযুক্ত আসনে উপবিষ্ট হবে। আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সব বিষয়ে তারা সততার পরিচয় দিয়েছে। সততার পরিচয় দিয়েছে তাওহিদের ক্ষেত্রে, সততার পরিচয় দিয়েছে ভয়ের ব্যাপারে, সততার পরিচয় দিয়েছে তাওয়াক্কুলের ক্ষেত্রে, সততার পরিচয় দিয়েছে সন্তুষ্টির ক্ষেত্রে, সততার পরিচয় দিয়েছে অবিচল থাকার ক্ষেত্রে এবং সততার পরিচয় দিয়েছে তাওবা করার ক্ষেত্রে। তারা যেহেতু শুরু থেকেই আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সততার পরিচয় দিয়ে এসেছে, তাই আল্লাহ তাআলাও তাদেরকে সুন্দর মৃত্যু উপহার দিয়ে তাদের সেই সততাকে যথাযথভাবে পুরস্কৃত করবেন।

সিদ্দিক হওয়ার চাবিকাঠি হচ্ছে সততা। বান্দা সর্বক্ষেত্রে সততার পরিচয় দিতে থাকলে আল্লাহ তাআলা একসময় তাকে ‘সিদ্দিক’-এর মর্যাদা দান করেন। আর ‘সিদ্দিক’-এর মর্যাদা আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গকারী শহিদের মর্যাদার ঊর্ধ্বে এবং নবিদের মর্যাদা থেকে মাত্র একধাপ নিচে। যেখানে একজন শহিদের পবিত্র কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত হয়, ‘আমার মৃত্যু কেবল আল্লাহরই জন্য’, সেখানে একজন সিদ্দিকের কণ্ঠস্বর যেন বলে ওঠে-

إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার ইবাদত এবং আমার জীবন আমার মরণ সবই বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য8

ইউসুফ ইবনু আসবাত রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় আমার তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধ করার চেয়েও আমার কাছে অধিক প্রিয় এক রাত আল্লাহ তাআলার ইবাদতে সততার পরিচয় দেওয়া।9

শাদ্দাদ ইবনু হাদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
একবার এক গ্রাম্য লোক নবিজির কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করল এবং দ্বীনের পথে চলতে শুরু করল। হঠাৎ একদিন সে নবিজিকে অনুরোধের সুরে বলতে লাগল,
‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমি আপনার সাথে মুহাজির হিসেবে থাকতে চাই।’ তখন নবিজি তার কোনো এক সাহাবিকে বললেন, ‘তুমি এই লোকটিকে মেহমান হিসেবে গ্রহণ করে নাও।’
তারপর খাইবার অথবা হুনাইনের যুদ্ধে প্রাপ্ত গনিমত থেকে নবিজি তার জন্য একটি অংশ রেখে দিলেন। তিনি অন্যান্য সাহাবির উট চরাতেন।

এরপর সে (মাঠ থেকে ফিরে) এলে তার সম্পদ তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হলো। সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘এগুলো কী?’ তারা বলল, ‘নবিজি তোমার জন্য এসব পাঠিয়েছেন।’ এরপর সে ওগুলো নিয়ে নবিজির কাছে এসে বলল, ‘এসব কী, ইয়া রাসুলাল্লাহ?’ নবিজি বললেন, ‘এগুলো আমি তোমার জন্য পাঠিয়েছি।’
উত্তরে সে জানাল, ‘আমি তো এসব পাওয়ার জন্য আপনার অনুসরণ করিনি। আমি অনুসরণ করেছি এখানে একটি তির পাবার জন্য (এই বলে সে গলার দিকে আঙুল তুলে দেখাল) যেন আমি শহিদ হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি।’

নবিজি এটা শুনে বললেন, ‘তুমি যদি আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সততার পরিচয় দিয়ে থাকো তাহলে তিনি তোমার মনের আশা পূরণ করবেন।’ এর অল্প কিছুক্ষণ পরেই (যুদ্ধের দামামা বেজে উঠলে) সাহাবিরা যুদ্ধের ময়দানে শত্রুদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। খানিক বাদে সেই গ্রাম্য সাহাবিকে বহন করে নবিজির সামনে আনা হলো। দেখা গেল, ঠিক ওই স্থানেই তির লেগে আছে, যেখানে সে আঙুল তুলে দেখিয়েছিল।

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দেখেই বললেন, ‘এ কি সেই ব্যক্তি?’ সাহাবিরা বললেন, ‘হ্যাঁ, তিনি সেই ব্যক্তি।’ নবিজি তখন বললেন, ‘আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সে সততার পরিচয় দিয়েছিল, তাই আল্লাহ তাআলাও তার মনের আশা পূরণ করেছেন।’

এরপর নবিজি তাকে নিজের জুব্বা দিয়ে কাফন পরিয়ে দিলেন এবং তাকে সামনে রেখে জানাযার সালাত আদায় করলেন। তার জানাযার সালাতে দুআর যে বাক্যগুলো শোনা গিয়েছিল তা হলো,
‘হে আল্লাহ, এ ব্যক্তি আপনার বান্দা। সে আপনার রাস্তায় মুহাজির অবস্থায় বের হয়েছিল। এরপর সে শহিদ হয়েছে, আমি এ ব্যাপারে সাক্ষী হলাম।10

দুনিয়া-বিমুখতা এবং আখিরাত-মুখিতা

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘মুমিন বান্দার যখন দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে আখিরাতের দিকে যাওয়ার সময় হয় তখন আসমান থেকে হাস্যোজ্জ্বল ফেরেশতারা নেমে আসেন। তাদের চেহারা সূর্যের মতো আলো ছড়ায়। তাদের হাতে থাকে জান্নাতের কাফন ও সুগন্ধি। তারা এসে তার চোখের দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত বসে পড়েন। এরপর মৃত্যুর ফেরেশতা তার মাথা বরাবর বসে তাকে সম্বোধন করে বলেন,
হে পবিত্র আত্মা, আল্লাহ তাআলার ক্ষমা ও সন্তুষ্টির দিকে বের হয়ে এসো। এরপর তার আত্মা মৃদুভাবে বের হয়ে আসে, যেভাবে পানপাত্রের মুখ থেকে পানির ফোঁটা গড়িয়ে পড়ে। এরপর মৃত্যুর ফেরেশতা আলতোভাবে তার আত্মা কব্জা করে নেন।’11

আরবি ভাষায় ‘দুনিয়া’ (دنیا) শব্দটির আভিধানিক অর্থ নিচু ও দুর্গন্ধময় বস্তু। বাস্তবেও এই দুনিয়া তার নামের মতোই। দুনিয়ার জীবনের শুরুটা বঞ্চনায় ভরা আর শেষটা মৃত্যুর হাহাকারে ঠাসা। যেন তা ক্ষণিকের দস্তরখান-ভালোমন্দ সবাই এখান থেকে খাচ্ছে। আর আখিরাত হলো সত্য ও স্থায়ী জগৎ, যেখানে আমাদের যাবতীয় কাজকর্মের বিচারকার্য পরিচালনা করবেন সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাআলা।

দুনিয়ার অবস্থা বর্ণনা করে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘দুনিয়া মুমিনদের জন্য কারাগার এবং কাফিরদের জন্য জান্নাতস্বরূপ।’12

আলি রাযিয়াল্লাহু আনহু দুনিয়ার বিবরণ এভাবে দিয়েছেন-
‘দুনিয়ার শুরুটা কষ্টের আর শেষটা ধ্বংসের। দুনিয়ায় হালাল বস্তু উপভোগ করলেও হিসাব দিতে হয়। আর হারাম কিছু করলে শাস্তির উপযুক্ত হতে হয়। যে দুনিয়াতে সম্পদ অর্জন করে ধনী হতে পারে সে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়, আর যে সম্পদ অর্জন করতে না পেরে গরীব ও নিঃস্ব হয়, তাকে জীবনে অনেক দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।’13

এক জ্ঞানী সাধক দুনিয়াকে এভাবে চিত্রায়িত করেছেন- ‘দুনিয়া হলো তোমার সামনে অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। দুনিয়া হলো অল্প কিছু সময়ের সমষ্টি। তোমার আশা-আকাঙ্ক্ষা তোমাকে নিরন্তর স্বপ্ন দেখিয়ে যাবে, অন্যদিকে মৃত্যু তোমার মাথার ওপর অপেক্ষায় থাকবে। দুনিয়া হলো একটা শয়তান, যে কিনা তোমাকে সর্বদা ধোঁকায় ফেলে রাখবে। দুনিয়া হলো হাজারও কামনা-বাসনার নাম, যা তোমার লাগাম ধরে হিচড়ে টানতে থাকবে। সে তোমাকে বিভিন্ন কৌশলে ফাঁদে ফেলার জন্য তার দিকে আহ্বান করবে। তুমি যদি তার ডাকে সাড়া দিয়ে তার থেকে কিছু আশা করো তাহলে জেনে রেখো, তোমার ব্যর্থতা নিশ্চিত।’14

লুকমান হাকিমাণ তার ছেলেকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘দুনিয়া তো এক গভীর সমুদ্র, এতে যেমন পূর্ববর্তীরা ধ্বংস হয়েছে তেমনি পরবর্তীরাও ধ্বংস হবে। তুমি এই সমুদ্রে যখন নামবে, তখন আল্লাহ তাআলার ভয়কে তুমি নৌকা হিসেবে গ্রহণ করবে। তোমার প্রস্তুতি যেন হয় আল্লাহর প্রতি ভরসা আর তোমার মূলধন যেন হয় তোমার নেক আমল। তুমি যদি কোনোভাবে মুক্তি পেয়েও যাও এবং তীরে পৌঁছাও, সেটা কেবল আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহের মাধ্যমেই সম্ভব। আর যদি তুমি দুনিয়ার সাগরে ডুবে যাও, তো সেটা তোমার নিজের পাপের ফল।’15

বর্ণিত আছে-
‘এক বুজুর্গের সাথে এক লোকের দেখা হলো। সে লোক বুজুর্গকে জিজ্ঞেস করল, আমাকে দুনিয়ার বাস্তবতা সম্পর্কে কিছু বলুন। তখন তিনি বললেন, দুনিয়া তো এমন এক জায়গা যেখানে তোমার শরীর বাড়তে থাকে, আর তুমি নিত্যনতুন স্বপ্ন দেখতে থাকো। ধীরে ধীরে তোমার স্বপ্নগুলো তোমার নাগালের বাইরে চলে যায়। আর মৃত্যু তোমার দিকে একটু একটু করে এগিয়ে যেতে থাকে।

সেই ব্যক্তি আবার জিজ্ঞেস করল, এবার তাহলে দুনিয়াবাসীর বাস্তবতা সম্পর্কে আমাকে কিছু বলুন। তখন তিনি বললেন, দুনিয়া যে অর্জন করতে পারে সে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে, আর যে করতে পারে না সে দুঃখ-কষ্টে নিপতিত হয়।

লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল, দুনিয়া থেকে বিমুখ থাকার কি কোনো উপায় আছে? তখন সেই বুজুর্গ বললেন, হ্যাঁ, বাঁচার একমাত্র উপায় হলো দুনিয়া থেকে কোনো কিছুর আশা না করা।
সে পুনরায় জিজ্ঞেস করল, দুনিয়া থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার উপায় কী? তিনি উত্তর দিলেন, সরল পথের পথিক হওয়া।

লোকটি ফের শুধাল, সরল পথের পথিক হওয়ার উপায় কী? তিনি বললেন, যথাসাধ্য চেষ্টা করা এবং যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা।’16

ঈসা আলাইহিস সালাম তার সঙ্গীসাথিদের উপদেশ দিয়ে বলেন,
‘তোমরা দুনিয়াকে আখিরাতে যাওয়ার সেতু মনে করবে। তাই এটাকে কেবল অতিক্রম করে যাও, এখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের চিন্তা কোরো না।’17
আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার বিবরণ এককথায় এভাবে দিয়েছেন-

وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ
আর পার্থিব জীবন-সে তো কেবলই এক ধোঁকার সামগ্রী18

দুনিয়াবিমুখ হওয়ার অর্থ এই নয় যে, কোনো মাঠে, আশ্রমে বা কোনো মসজিদের খুঁটির আড়ালে আত্মগোপন করা। বিমুখতার প্রকৃত অর্থ হলো দুনিয়াকে হৃদয়ে স্থান না দেওয়া। হয়তো কেউ দুনিয়ার সমস্ত উপায়-উপকরণ নিয়ে অর্থ উপার্জনের পেছনে প্রতিনিয়ত ঘাম ঝরাচ্ছে। কিন্তু তার হৃদয়ে হয়তো দুনিয়ার প্রতি এক বিন্দু ভালোবাসা নেই; এর পরিবর্তে তার হৃদয়ের প্রতিটি কোণ আল্লাহ তাআলার ভালোবাসায় ভরে আছে।

আশাবাদী হওয়া এবং আল্লাহ প্রতি সুধারণা রাখা

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘তোমাদের মধ্যে কেউ যেন আল্লাহ তাআলার প্রতি সুধারণা পোষণ করা ব্যতীত দুনিয়াত্যাগ না করে।’19 অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার প্রতি আমাদের অবশ্যই সুধারণা রাখতে হবে।
আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
‘নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার এক মুমূর্ষু যুবকের কাছে এসে বসেন। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন, কেমন লাগছে তোমার?
সে উত্তরে জানাল, আল্লাহর কসম, আমি আল্লাহ তাআলার রহমতের আশা করছি, আবার আমার গুনাহগুলোর কারণে ভয়ও পাচ্ছি।

নবিজি বললেন, যে বান্দার হৃদয়ে এরকম সময়ে (ক্ষমার আশা ও আজাবের আশঙ্কা) এরূপ দুই বিপরীত জিনিস একত্র হয়, আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাকে তার আকাঙ্ক্ষিত জিনিস (অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ ও ক্ষমা) দান করেন এবং তার বিপদাশঙ্কা (অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার ক্রোধ ও শাস্তি) থেকে তাকে নিরাপদে রাখেন।’20

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, সুধারণা পোষণ করা এবং আমল করা দুটোই পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। মুমিন ভালো কাজ করার কারণে আল্লাহ তাআলার প্রতি সুধারণা (অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ ও ক্ষমার আশা) পোষণ করে। আবার আল্লাহ তাআলার প্রতি এমন সুধারণা পোষণ করার কারণেই সে ভালো কাজ করতে থাকে। পক্ষান্তরে, ফাসিক ব্যক্তি খারাপ কাজ করার কারণে তার রবের প্রতি খারাপ ধারণা (অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার ক্রোধ ও শাস্তির নিশ্চিত আশঙ্কা) পোষণ করে। আবার অন্তরে এমন খারাপ ধারণা পোষণ করার কারণেই সে খারাপ কাজ করতে থাকে।

ইবনুল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
‘মুমিন বান্দা যদি আল্লাহ তাআলার প্রতি সুধারণা পোষণ করতে পারে, তাঁর কাছে ভালো কিছু আশা করতে পারে এবং যথাযথভাবে তাঁর ওপর ভরসা করতে সক্ষম হয় তাহলে আল্লাহ তাআলা কিছুতেই তার আশা ব্যর্থ করবেন না। কেননা, আল্লাহ তাআলা কখনো (সুধারণার সাথে) আশাকারীর আশাকে ব্যর্থ করেন না এবং (নিষ্ঠার সাথে) আমলকারীর আমলকে নষ্ট করেন না।’21

ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
‘তোমরা যদি কাউকে মৃত্যুর পথযাত্রী হতে দেখো, তাহলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত তাকে (আল্লাহ তাআলার প্রশস্ত রহমতের ও অসীম ক্ষমার কথা বলে) সুসংবাদ দিতে থাকো যাতে সে আল্লাহ তাআলার (রহমত ও দয়ার আশা করে তাঁর) প্রতি সুধারণা নিয়ে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে পারে। আর যে ব্যক্তি জীবিত, তাকে তোমরা আল্লাহ তাআলার ব্যাপারে ভয় দেখাতে থাকো। তাকে তাঁর কঠিন শাস্তির কথা মনে করাতে থাকো (যাতে সে আল্লাহ তাআলার ভয়ে তাঁর অবাধ্যতা ও সকল প্রকারের গুনাহ-পঙ্কিলতা থেকে বিরত থাকতে পারে)।22

মুতামির ইবনু সুলাঈমান রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
‘আমার বাবা যখন মৃত্যুশয্যায় তখন আমাকে বলেছিলেন, তুমি কেবল আমাকে আল্লাহ তাআলার দয়া, ক্ষমা ও অনুগ্রহের কথা বলতে থাকো, যাতে আল্লাহ তাআলার সাথে সাক্ষাৎ হলে আমার হৃদয়ে কেবল তাঁর প্রতি সুধারণাই থাকে।’23

সুহাইল ইবনু আবি হাযম বাসরি রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
‘আমি মালিক ইবনু দিনার রাহিমাহুল্লাহকে মৃত্যুর পরে স্বপ্নে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, হে আবু ইয়াহইয়া24, যদি জানতে পারতাম আপনি আল্লাহর দরবারে কী নিয়ে গেছেন? তখন মালিক ইবনু দিনার রাহিমাহুল্লাহ উত্তরে বললেন, আমি আল্লাহর দরবারে অনেক গুনাহ নিয়ে গিয়েছিলাম। শুধু তাঁর প্রতি সুধারণা করার কারণেই তিনি আমার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন।25

তাওবা করা

মহান আল্লাহ বলেন-

وَأَنِيبُوا إِلَىٰ رَبِّكُمْ وَأَسْلِمُوا لَهُ مِن قَبْلِ أَن يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ
وَاتَّبِعُوا أَحْسَنَ مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ بَغْتَةً وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ
أَن تَقُولَ نَفْسٌ يَا حَسْرَتَىٰ عَلَىٰ مَا فَرَّطتُ فِي جَنبِ اللَّهِ وَإِن كُنتُ لَمِنَ السَّاخِرِينَ
أَوْ تَقُولَ لَوْ أَنَّ اللَّهَ هَدَانِي لَكُنتُ مِنَ الْمُتَّقِينَ
أَوْ تَقُولَ حِينَ تَرَى الْعَذَابَ لَوْ أَنَّ لِي كَرَّةً فَأَكُونَ مِنَ الْمُحْسِنِينَ

তোমাদের ওপর আজাব নেমে আসার আগেই তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হও এবং তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ করো। কারণ তখন আর তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না। আর তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে উত্তম যা কিছু অবতীর্ণ হয়েছে, তোমাদের ওপর অতর্কিতভাবে ও অজ্ঞাতসারে শাস্তি আসার আগেই তোমরা তার অনুসরণ করো। যেন কারও বলতে না হয়, ‘হায় আফসোস! আল্লাহর প্রতি আমার কর্তব্যে আমি তো অবহেলা করেছি। আর অবশ্যই আমি ঠাট্টা-বিদ্রূপকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।’ অথবা কারও যেন বলতে না হয়, ‘আল্লাহ যদি আমাকে হিদায়াত দান করতেন, তাহলে অবশ্যই আমি মুত্তাকিদের একজন হতাম।’ অথবা শাস্তি প্রত্যক্ষ করার সময় কাউকে যেন বলতে না হয়, ‘আমি যদি একটি বারের জন্য (পৃথিবীতে) ফিরে যাওয়ার সুযোগ পেতাম, তবে নিশ্চয়ই আমি সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।26

আত্মা কণ্ঠনালিতে পৌঁছার আগেই যে ব্যক্তির সমস্ত গুনাহ ও পাপাচার থেকে এমন তাওবা করার সুযোগ হয়েছে, আল্লাহ তাআলা তার সমস্ত গুনাহকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, সে কতই না ভাগ্যবান! মায়িজ আসলামি রাযিয়াল্লাহু আনহু কত ভাগ্যবান ছিলেন! শয়তানের ধোঁকায় পড়ে যিনা করার পরে তিনি এমন তাওবা করেছিলেন যে, যিনার শাস্তিস্বরূপ তাকে রজম27 করার ২-৩ দিন পর নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘তোমরা মায়িজ ইবনু মালিকের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করো।’ তারা তখন ক্ষমাপ্রার্থনা করে বলল, ‘হে আল্লাহ, আপনি মায়িজ ইবনু মালিককে ক্ষমা করুন।’

এরপর নবিজি বললেন,
‘মায়িজ এত বেশি তাওবা করেছিল, তার তাওবা একটি জাতির মাঝে ভাগ করে দেওয়া হলে তাদের সবার জন্য তা যথেষ্ট হবে।’28

বনি ইসরাইলের এক খুনি ৯৯ জন নিরপরাধ লোককে হত্যা করার পর তাওবা করে মৃত্যুবরণ করে। এরপর তার রুহ নিতে রহমতের ফেরেশতারা ও আজাবের ফেরেশতারা পরস্পরে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়। পরিশেষে আল্লাহ তাআলার ফয়সালায় রহমতের ফেরেশতারা তার রুহ কব্জা করে-এ ঘটনায় তাওবাকারীদের জন্য আল্লাহ তাআলার রহমতের অনন্য নিদর্শন রয়েছে।

বস্তুত ওইসব লোক একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তাআলার কাছে তাওবা করেছিল; ফলে আল্লাহ তাআলাও তাদের তাওবা কবুল করেছেন এবং তাদের শুভসমাপ্তি দান করে তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।

নেক কাজ করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘আল্লাহ তাআলা যখন কোনো বান্দার কল্যাণ চান তখন তাকে কাজে লাগান।’
সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহ তাআলা কীভাবে তাকে কাজে লাগান?’
নবিজি উত্তরে বললেন,
‘মৃত্যুর আগে তিনি তাকে নেক কাজ করার তাওফিক দান করেন।’29

নবিজি বলেন,
‘যে ব্যক্তির (জীবনের) শেষ কথা হবে-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।30

নবিজি আরও বলেন,
‘যে ব্যক্তি মৃত্যুর সময় আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” পড়ে মৃত্যুবরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি মৃত্যুর আগে জীবনের শেষ দিনে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সিয়াম পালন করে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি মৃত্যুশয্যায় জীবনের শেষ অবস্থায় এসে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য দান করে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’31

আপনি কি এমন কাউকে চেনেন, যে কিনা জায়নামাজে থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে?
আপনি কি কখনো এমন কারও ব্যাপারে শুনেছেন, যে কিনা কুরআন তিলাওয়াতরত অবস্থায় মারা গিয়েছে?

আপনি কি কখনো এমন কোনো ব্যক্তিকে দেখেছেন, যে কিনা ইহরামের কাপড় পড়ে তাওয়াফরত অবস্থায় তালবিয়া পড়তে পড়তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে?
কিংবা হজের কোনো বারাকাহপূর্ণ কাজ করার সময় আল্লাহ তাআলা তাকে মৃত্যু দান করেছেন?

আপনি কি এমন কাউকে দেখেছেন, যে কিনা মাসজিদুল হারামের মধ্যে সালাত পড়ছে, ইমাম সিজদা থেকে ওঠার তাকবির দেওয়ার পরও সেই ব্যক্তি সিজদায় পড়ে আছে?
এরপর লোকেরা যখন সালাত শেষে তাকে ওঠানোর চেষ্টা করে, দেখতে পায়, তার শরীর নিথর হয়ে আছে। অর্থাৎ এই বান্দা সিজদারত অবস্থায় মারা গেছে। আল্লাহ তাকে কবুল করেছেন। এ ধরনের ঈর্ষণীয় মৃত্যুর দৃশ্য দেখার পরে কি আপনার চোখে পানি চলে আসবে না? সেই লোকটির মতো সৌভাগ্য অর্জন করার আকাঙ্ক্ষা কি আপনার হৃদয়ে জাগ্রত হয়নি?

এরকম অসাধারণ মৃত্যু আল্লাহ তাআলার এমন এক বিশেষ নিয়ামত, যা কেবল আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের ভাগ্যেই জোটে। আল্লাহ তাআলা সর্বোত্তম অবস্থায়, সুন্দরতম মুহূর্তে তাদের মৃত্যু দান করেন। অথচ কিছু দুর্ভাগা মানুষের মৃত্যু হয় এমন জঘন্য ও বীভৎস অবস্থায় যে, তা কল্পনা করতেও গা শিউরে ওঠে। মৃত্যুর আগমুহূর্তে কেউ মদ খাচ্ছে, কেউ যিনায় লিপ্ত আছে, কেউ মানুষের ওপর জুলুম করছে, আবার কেউ পবিত্র রামাদান মাসে শারয়ি কোনো ওজর বা অসুস্থতা ছাড়াই খাবার খেয়ে চলছে। আল্লাহ তাআলার কাছে আমরা এমন জঘন্য ও বীভৎস মৃত্যু থেকে পানাহ চাই। বস্তুত আল্লাহ তাআলা কেবল তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকেই শুভসমাপ্তি এবং উচ্চমর্যাদা দান করে থাকেন।

সৎ কাজ করা

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘সৎ কাজসমূহ মানুষকে খারাপ পরিণতি (অপমৃত্যু), বিপদ-আপদ ও ধ্বংস থেকে রক্ষা করে।’32

সবচেয়ে জঘন্য ও দুঃখজনক মৃত্যু হলো মানুষ যখন কোনো গুনাহের কাজে লিপ্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। মৃত্যুর সময় যদি সে শিরকের কাজে লিপ্ত থাকে কিংবা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে সে মহামূল্যবান ঈমানটা হারিয়ে ফেলে তাহলে সেটা তো আরও ভয়ংকর ও সবচেয়ে মারাত্মক শোচনীয় মৃত্যু। জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়াও দুঃখজনক মৃত্যু।

আমরা যদি ভালো ও কল্যাণকর কাজ করতে পারি তাহলে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ ধরনের মারাত্মক, শোচনীয় ও দুঃখজনক মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাবেন। তাই আমাদের উচিত দান-সাদাকা করা, পিতা-মাতার সাথে ভালো আচরণ করা, আত্মীয়স্বজনের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা, ইয়াতিমকে সাহায্য করা, সবার প্রতি দয়া দেখানো, বিধবা ও দরিদ্রদের সাহায্য করা এবং অন্ধ ও প্রতিবন্ধীদের যথাসাধ্য সাহায্য করা।

উম্মুল মুমিনিন মহীয়সী খাদিজা রাযিয়াল্লাহু আনহা নিজের বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞানের মাধ্যমে এ বিষয়টি অনুধাবন করেছিলেন। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি প্রথম ওহি অবতীর্ণ হওয়ার পর যখন তিনি সামাজিকভাবে অপদস্থ হওয়ার আশঙ্কা করলেন, সে সময় খাদিজা রাযিয়াল্লাহু আনহা তাকে অভয় দিয়ে বলেছিলেন, ‘আল্লাহর কসম। আল্লাহ আপনাকে কখনো লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করেন, অসহায় দুস্থদের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃসুকে সহযোগিতা করেন, মেহমানের আপ্যায়ন করেন এবং হক পথের দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন।’33

দুআ করা

কুরআনুল কারিমে বলা হয়েছে-

وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ …
আর তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো34

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-

قَالُوا إِنَّا إِلَىٰ رَبِّنَا مُنقَلِبُونَ
وَمَا تَنقِمُ مِنَّا إِلَّا أَنْ آمَنَّا بِآيَاتِ رَبِّنَا لَمَّا جَاءَتْنَا ۚ رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ

প্রতিউত্তরে তারা (জাদুকররা নিজেদের ঈমানের ঘোষণার ওপর অবিচল থেকে ফিরআউনকে উদ্দেশ্য করে) বলল, আমরা তো আমাদের প্রতিপালকের – কাছেই ফিরে যাব। আর তুমি তো আমাদেরকে শাস্তি দিচ্ছ শুধু এজন্য যে, আমাদের নিকট যখন আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনসমূহ এসেছে, তখন আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। (তারা আল্লাহ তাআলার কাছে এ বলে দুআ করল,) হে আমাদের রব, আমাদেরকে পরিপূর্ণ ধৈর্য দান করুন এবং মুসলিমরূপে আমাদেরকে মৃত্যু দান করুন।35

শুধু আশা ও আকাঙ্ক্ষার মাধ্যমে যেমন ঈমান অর্জন করা যায় না, তেমনি শুধু মৌখিক চাওয়ার মাধ্যমেই শুভসমাপ্তি পাওয়া যাবে না। প্রতিটি খাঁটি মুমিনই সুন্দর। মৃত্যু কামনা করে এবং প্রতিটি আল্লাহভীরু মানুষই সুন্দর মৃত্যুর স্বপ্ন দেখে থাকে।

এই মৃত্যু শুধু মনে মনে চাইলেই পাওয়া যায় না। যার হাতে সমস্ত নিয়ামতের চাবি রয়েছে, তিনি যদি চান তাহলেই এই নিয়ামত আমাদের ভাগ্যে জুটবে। আল্লাহ তাআলার কাছে সবসময় মন থেকে চাইতে হবে, তাঁর কাছে বেশি বেশি শুভসমাপ্তির জন্য দুআ করতে হবে।

উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু যাকে আল্লাহ তাআলা অনেক সময় গায়েবি দিকনির্দেশনা বা ইলহামের মাধ্যমে সাহায্য করতেন। আল্লাহ তাআলার দরবারে তার দুআ ছিল এমন-

‘হে আল্লাহ, আপনি আমাকে আপনার রাস্তায় শাহাদাত অর্জনের তাওফিক দিন এবং আপনার রাসুলের শহরে আমার মৃত্যু দিন।’36

তিনি যেমন দুআ করেছিলেন, আল্লাহ তাআলা তাকে ঠিক তেমনই দান করেছিলেন37 কত মানুষ আছে, যারা আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করেছেন যে, তিনি যেন তাকে সিজদায় বা হজের মধ্যে মৃত্যু দান করেন। তারপর আল্লাহ তাআলা তাদের দুআ কবুল করে তাদেরকে সেভাবেই সুন্দর সমাপ্তি দিয়েছেন। তাই আল্লাহ তাআলার কাছে একাগ্রতা নিয়ে দুআ করতে হবে।

শাইখ আব্দুল হামিদ কিশক রাহিমাহুল্লাহ আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন,
তিনি যেন তাকে জুমআর দিন সিজদারত অবস্থায় মৃত্যু দেন। আল্লাহ তাআলার কাছে তিনি যেভাবে চেয়েছিলেন, আল্লাহ তাআলা তাকে সেভাবেই মৃত্যু দিয়েছিলেন।…

শাইখ উমার সুলাঈমান আল-আশকার রাহিমাহুল্লাহ দুআ করেছিলেন,
আল্লাহ তাআলা যেন তাকে জুমার দিন মৃত্যু দেন। তাকেও আল্লাহ তাআলা সেই দিনেই মৃত্যু দিয়েছিলেন। তিনি পেটের রোগে আক্রান্ত হয়ে রামাদানে জুমার দিন শেষ নিঃশ্বাস করেন।

এ ছাড়াও আল্লাহ তাআলার কত প্রিয় বান্দা আল্লাহ তাআলার কাছে কত সুন্দর মৃত্যু কামনা করেছে, আর আল্লাহ তাআলাও তাদেরকে সেভাবেই মৃত্যু দিয়েছেন-তার কোনো হিসাব নেই। আমরা আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ প্রার্থনা করি। ইনশাআল্লাহ তিনিও আমাদেরকে অনিন্দ্য, অপার্থিব এবং সুন্দরতম মৃত্যু দান করবেন।

অশুভ মৃত্যুর কারণসমূহ থেকে বেঁচে থাকা

কুরআন ও হাদিসের বিশুদ্ধ প্রমাণসহ অশুভ মৃত্যু ও মন্দ পরিণতির কারণসমূহ উল্লেখ করা হলো-

শিরক ও কুফর

আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ قَالَ أُوحِيَ إِلَيَّ وَلَمْ يُوحَ إِلَيْهِ شَيْءٌ وَمَنْ قَالَ سَأُنْزِلُ مِثْلَ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَلَوْ تَرَى إِذِ الظَّالِمُونَ فِي غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَالْمَلَائِكَةُ بَاسِطُو أَيْدِيهِمْ أَخْرِجُوا أَنْفُسَكُمُ الْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُونِ بِمَا كُنْتُمْ تَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ غَيْرَ الْحَقِ وَكُنْتُمْ عَنْ آيَاتِهِ تَسْتَكْبِرُونَ .

তার চেয়ে বড় জালিম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহর নামে মিথ্যা আরোপ করে। অথবা বলে, আমার কাছে বিশেষ ওহি নাযিল করা হয়েছে। অথচ তার প্রতি কোনো ওহিই নাযিল করা হয়নি। অথবা যে বলে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, আমিও ঠিক তেমন কিছু নাযিল করব? তুমি যদি দেখতে-যখন জালিমরা মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করে এবং ফেরেশতারা তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে, তোমরা যার যার প্রাণ বের করে দাও। আজ তোমাদেরকে দেওয়া হবে লাঞ্ছনাকর শাস্তি। কারণ তোমরা অব্যাহতভাবে আল্লাহর নামে মিথ্যা আরোপ করতে এবং তার নিদর্শনাবলির বিপরীতে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করতে38

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-

وَلَوْ تَرَىٰ إِذْ يَتَوَفَّى الَّذِينَ كَفَرُوا ۙ الْمَلَائِكَةُ يَضْرِبُونَ وُجُوهَهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ وَذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ
ذَٰلِكَ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيكُمْ وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيدِ
ফেরেশতারা যখন কাফিরদের জান কবজ করে, তখন যদি আপনি তাদের দেখতেন! তারা তখন কাফিরদের চেহারায় ও পিঠে আঘাত করে আর বলে, এবার মজা ভোগ করো জ্বলন্ত আগুনের। এটা তোমাদেরই কর্মফল। আল্লাহ বান্দাদের প্রতি মোটেও অবিচার করেন না।39

বড় নিফাক

আল্লাহ তাআলা বলেন-

إِنَّ الَّذِينَ ارْتَدُّوا عَلَىٰ أَدْبَارِهِم مِّن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَى ۙ الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْ وَأَمْلَىٰ لَهُمْ
ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا لِلَّذِينَ كَرِهُوا مَا نَزَّلَ اللَّهُ سَنُطِيعُكُمْ فِي بَعْضِ الْأَمْرِ ۖ وَاللَّهُ يَعْلَمُ إِسْرَارَهُمْ
فَكَيْفَ إِذَا تَوَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ يَضْرِبُونَ وُجُوهَهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ
ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمُ اتَّبَعُوا مَا أَسْخَطَ اللَّهَ وَكَرِهُوا رِضْوَانَهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ

যাদের কাছে হিদায়াতের পথ স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়, শয়তান তাদের দৃষ্টিতে সুশোভিত করে তোলে তাদের কাজগুলো এবং তাদেরকে মিথ্যে আশা দেখায়। এটা এজন্য যে, আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ বিষয়াবলি যারা অপছন্দ করে, এরা তাদেরকে বলে, ‘আমরা কোন কোন বিষয়ে তোমাদের আনুগত্য করব।’ আল্লাহ তাদের গোপন অভিসন্ধির ব্যাপারে অবগত আছেন। ফেরেশতারা যখন তাদের চেহারা ও পিঠে আঘাত করতে করতে জান কবজ করবে তখন তাদের কী দশা হবে? এটা এজন্য যে, তারা এমন সব বিষয়ের অনুসরণ করে, যেগুলো আল্লাহর অসন্তোষ জাগ্রত করে; অধিকন্তু তারা অপ্রিয় মনে করে তাঁর সন্তুষ্টিকে। ফলে তিনি নিষ্ফল করে দেন তাদের সমস্ত কর্মপ্রচেষ্টা40

সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কাফিরদের দেশ থেকে হিজরত না করা

আল্লাহ তাআলা বলেন-

إِنَّ الَّذِينَ تَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ ظَالِمِي أَنفُسِهِمْ قَالُوا فِيمَ كُنتُمْ ۖ قَالُوا كُنَّا مُسْتَضْعَفِينَ فِي الْأَرْضِ ۚ قَالُوا أَلَمْ تَكُنْ أَرْضُ اللَّهِ وَاسِعَةً فَتُهَاجِرُوا فِيهَا ۚ فَأُولَـٰئِكَ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا
إِلَّا الْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ لَا يَسْتَطِيعُونَ حِيلَةً وَلَا يَهْتَدُونَ سَبِيلًا

যারা নিজেদের ওপর জুলুম করে, ফেরেশতারা তাদের প্রাণ হরণ করতে এসে বলে, তোমরা কী অবস্থায় ছিলে? তারা বলে, পৃথিবীতে আমরা অসহায় ছিলাম। ফেরেশতারা বলে, আল্লাহর জমিন কি এতটা প্রশস্ত ছিল না যে, তোমরা (চাইলেই) সেখানে হিজরত করতে পারতে? এদেরই ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম। আর তা বড়ই নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল। তবে যেসব অসহায় নরনারী ও শিশু (হিজরতের) উপায় অবলম্বন করতে পারে না এবং (বের হওয়ারও) কোনো পথ পায় না (তাদের কথা ভিন্ন)41

সর্বাত্মক দুনিয়ামুখী হওয়া

আল্লাহ তাআলা বলেন-

إِنَّ الَّذِينَ لَا يَرْجُونَ لِقَاءَنَا وَرَضُوا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاطْمَأَنُّوا بِهَا وَالَّذِينَ هُمْ عَنْ آيَاتِنَا غَافِلُونَ
أُولَـٰئِكَ مَأْوَاهُمُ النَّارُ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ

যারা আমার সাক্ষাৎ লাভের আশা করে না; বরং পার্থিব জীবন নিয়েই সন্তুষ্ট ও নিশ্চিন্ত থাকে এবং যারা আমার নিদর্শনাবলির ব্যাপারে সম্পূর্ণ বেখবর তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম, তাদের (এসব) কৃতকর্মের কারণে।42

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘আর অবিশ্বাসী বা পাপী বান্দার যখন দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে আখিরাতে পাড়ি দেওয়ার সময় হয় তখন আসমান থেকে কালো চেহারার ফেরেশতারা নেমে আসেন। তাদের হাতে থাকে মোটা কাপড়ের কাফন। তারা এসে তার চোখের দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত বসে পড়েন। এরপর মৃত্যুর ফেরেশতা এসে তার মাথা বরাবর বসে তাকে সম্বোধন করে বলেন,
হে পাপিষ্ঠ আত্মা, আল্লাহ তাআলার ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির দিকে বের হয়ে আসো। এরপর তার আত্মা (পালানোর জন্য) তার শরীরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তখন মৃত্যুর ফেরেশতা তাকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে আনেন; যেভাবে ভেজা সুতা থেকে লোহার শিক টেনে বের করা হয়। তারপর ফেরেশতা তার আত্মা কবজা করার পর এক মুহূর্তের জন্যও তিনি সেই আত্মাকে তার হাতে রাখবেন না, সরাসরি সেই মোটা কাপড়ের কাফনে ছুড়ে ফেলবেন এবং সেটা নিয়ে ঊর্ধ্বজগতে চলে যাবেন। তার সে কাফনের ভেতর থেকে একেবারে গলিত-মথিত লাশের দুর্গন্ধের মতো পচা দুর্গন্ধ বের হতে থাকবে।’43

রিয়া বা লোকদেখানো কাজ করা

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘নিশ্চয়ই কিছু মানুষ জান্নাতবাসীদের মতো আমল করতে থাকে, লোকদের কাছেও তেমনই (তাকে জান্নাতি বলে) মনে হতে থাকে; অথচ প্রকৃতপক্ষে সে জাহান্নামি। আবার কিছু মানুষ জাহান্নামিদের মতো আমল করতে থাকে, লোকদের কাছেও তেমনই (তাকে জাহান্নামি বলে) মনে হতে থাকে; অথচ প্রকৃতপক্ষে সে জান্নাতি।’44

ফরজ ইবাদত ও সৎকাজ ছেড়ে দেওয়া

আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَأَنِيبُوا إِلَىٰ رَبِّكُمْ وَأَسْلِمُوا لَهُ مِن قَبْلِ أَن يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ
وَاتَّبِعُوا أَحْسَنَ مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ بَغْتَةً وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ
أَن تَقُولَ نَفْسٌ يَا حَسْرَتَىٰ عَلَىٰ مَا فَرَّطتُ فِي جَنبِ اللَّهِ وَإِن كُنتُ لَمِنَ السَّاخِرِينَ
أَوْ تَقُولَ لَوْ أَنَّ اللَّهَ هَدَانِي لَكُنتُ مِنَ الْمُتَّقِينَ
أَوْ تَقُولَ حِينَ تَرَى الْعَذَابَ لَوْ أَنَّ لِي كَرَّةً فَأَكُونَ مِنَ الْمُحْسِنِينَ

তোমাদের ওপর আজাব নেমে আসার আগেই তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হও এবং তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ করো; কারণ তখন আর তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না। তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে উত্তম যা কিছু অবতীর্ণ হয়েছে, তোমাদের ওপর অতর্কিতভাবে ও অজ্ঞাতসারে শাস্তি আসার আগেই তোমরা তার অনুসরণ করো। যেন কারও বলতে না হয়, হায় আফসোস! আল্লাহর প্রতি আমার কর্তব্যে আমি তো অবহেলা করেছি। আর অবশ্যই আমি ঠাট্টা-বিদ্রূপকারীদের দলভুক্ত ছিলাম। অথবা কারও যেন বলতে না হয়, আল্লাহ যদি আমাকে হিদায়াত দান করতেন, তাহলে অবশ্যই আমি হয়ে উঠতাম মুত্তাকিদের একজন। অথবা আজাব প্রত্যক্ষ করার সময় কাউকে যেন বলতে না হয়, আমি যদি একটি বারের জন্য (পৃথিবীতে) ফিরে যাওয়ার সুযোগ পেতাম, তবে নিশ্চয়ই আমি সৎকর্মশীলদের দলভুক্ত হয়ে যেতাম45

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-

حَتَّىٰ إِذَا جَاءَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُونِ
لَعَلِّي أَعْمَلُ صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ ۚ كَلَّا ۚ إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَائِلُهَا ۖ وَمِن وَرَائِهِم بَرْزَخٌ إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ

অবশেষে যখন তাদের (অবিশ্বাসী ও পাপীদের) কারও মৃত্যু চলে আসে, তখন সে বলে, হে আমার প্রতিপালক, আমাকে পুনরায় (দুনিয়ায়) ফেরত পাঠান। যাতে আমি যাপিত জীবনের সৎকর্মগুলো করতে পারি। অসম্ভব; এটা কিছুতেই হবার নয়। তারা যা বলছে, তা কেবলই কথার কথা। পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত তাদের সামনে থাকবে বারযাখ-অর্থাৎ মৃত্যু থেকে বিচারদিবস পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ের অন্তরাল46

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-

وَأَنفِقُوا مِن مَّا رَزَقْنَاكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُولَ رَبِّ لَوْلَا أَخَّرْتَنِي إِلَىٰ أَجَلٍ قَرِيبٍ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُن مِّنَ الصَّالِحِينَ

আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি, তোমরা তা থেকে ব্যয় করো-তোমাদের কারও মৃত্যু আসার আগেই; অন্যথায় মৃত্যু এসে গেলে সে বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলেন না কেন? তাহলে তো আমি দান-সাদাকা করতে পারতাম এবং সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।47

সংগ্রহীত
বইঃ জান্নাতিদের আমল
লেখকঃ শাইখ আলা নুমান
প্রকাশনাঃ সমকালীন প্রকাশন

  1. সূরা ইব্রাহীম:২৭ ↩︎
  2. ইমাম তাবারি রাহিমাহুল্লাহ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে ঈমানের ওপর অটল রাখবেন।’ [তাফসিরুত তাবারি, খণ্ড: ১৬, পৃষ্ঠা: ৬০২] তিনি এখানে ‘মৃত্যুর আগে’ বা ‘প্রাণবায়ু বের হওয়ার সময়’ এমন কোনো কথা বলেননি। তার ব্যাখ্যার সারকথা হলো, আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে শুধু মৃত্যুর সময়ই নয়; বরং সারাজীবনই ঈমানের ওপর অবিচল রাখবেন। অবশ্য ইমাম বাগাবি রাহিমাহুল্লাহ এটার ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে তথা মৃত্যুর আগমুহূর্তে তাওহিদের কালিমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-এর ওপর অটল রাখবেন।’ এরপর তিনি বলেন, ‘এটাই অধিকাংশ মুফাসসিরের মত।’ [তাফসিরুল বাগাবি, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৩৮] ↩︎
  3. সূরা হা-মীম সেজদাহ ↩︎
  4. সূরা আল আন-আমঃ১৫৩ ↩︎
  5. সূরা আল আহযাবঃ২৩-২৪ ↩︎
  6. সুনানুন নাসায়ি: ১৯৫৩; মুস্তাদরাকুল হাকিম: ৬৫২৭; মুসান্নাফু আব্দির রাযযাক: ৬৬৫১, ৯৫৯৭; আস-সুনানুল কুবরা, বাইহাকি ৬৮১৭; হাদিসটি সহিহ। ↩︎
  7. সূরা আল আহযাবঃ২৪ ↩︎
  8. সুরা আনআম: ১৬২ ↩︎
  9. মাদারিজুস সালিকিন, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২৬৫ ↩︎
  10. মুস্তাদরাকুল হাকিম: ৬৫২৭; সুনানুন নাসায়ি: ১৯৫৩; মুসান্নাফু আব্দির রাযযাক: ৬৬৫১, ৯৫৯৭; আস-সুনানুল কুবরা, বাইহাকি ৬৮১৭; হাদিসটি সহিহ। ↩︎
  11. মুসনাদু আহমাদ: ১৮৫৩৪; মুস্তাদরাকুল হাকিম: ১০৭; মুসান্নাফু ইবনি আবি শাইবা: ১২০৫৯; আয-যুহদ ওয়ার-রাকায়িক, ইবনুল মুবারক: ১২১৯; হাদিসটি সহিহ। ↩︎
  12. সহিহ মুসলিম: ২৯৫৬; জামিউত তিরমিযি: ২৩২৪; সুনানু ইবনি মাজাহ: ৪১১৩; সহিন্ন ইবনি হিজ্ঞান: ৬৮৭, ৬৮৮; মুসনাদু আয়মান: ৮২৮৯, ৯০৫৫, ১০২৮৮ ↩︎
  13. মুজালাসা ওয়া জাওয়াহিবুল ইলম, খন্ড ২, পৃষ্ঠা: ৩৭১, হাদিস: ৫৩৯; আমালিল কলি, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১২০; কামিল ফিল লুগাতি ওয়াল আদব, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ১২৫ ↩︎
  14. মাজানিল আদব ফি হাদায়িকিল আরব, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা: ২৩-২৪২২ ↩︎
  15. মাজানিল আদব ফি হাদায়িকিল আরব, খন্ডঃ২, প্রিস্থাঃ১১-২২ ↩︎
  16. ইকদুল ফারিদ, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ১২১ ↩︎
  17. ইকদুল ফারিদ, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ১২০ ↩︎
  18. সুরা আলি-ইমরান: ১৮৫ ↩︎
  19. সহিহ মুসলিম: ২৮৭৭; সুনানু আবি দাউদ: ৩১১৩। সুনানু ইবনি মাজাহ। ৭৪৭; সহিতু ইবনি হিব্বান : ৬৩৬, ৬৩৮; শুআবুল ঈমান: ৯৮০ ↩︎
  20. জামিউত তিরমিযি: ৯৮৩; সুনানু ইবনি মাজাহ: ৪২৬১; মুসনাদু আবি ইয়ালা: ৩৩০৩; শুআবুল ঈমান: ৯৭০, ৯৭১; হিলইয়াতুল আউলিয়া, খণ্ড: ৬, পৃষ্ঠা: ২৯২। হাদিসটি হাসান। ↩︎
  21. মাদারিজুস সালিকিন, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৪৭১ ↩︎
  22. আকিবার ফি ফিকরিল মাওত, ইশবিলি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ১৪৫ ↩︎
  23. আকিবাহ ফি বিকরিল মাওত, ইশবিলি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা ১৪৬; সিয়ারু আলামিন নুবালা, খণ্ড: ৬, পৃষ্ঠা: ১৯৯, ৩২৫; তাহযিবুল কামাল, খণ্ড: ১২, পৃষ্ঠা: ১২ ↩︎
  24. এটি মালিক ইবনু দিনারের উপনাম। ↩︎
  25. তারিখু দিমাদক, ইবনু আসাকির, খণ্ড: ২৬, পৃষ্ঠা: ৪৪১-৬৪২ ↩︎
  26. সুরা যুমার: ৫৪-৫৮ ↩︎
  27. রজম অর্থ পাথর নিক্ষেপ করে কাউকে হত্যা করা। ইসলামি আইন অনুসারে, বিবাহিত নারী বা পুরুষ যিনা করলে এবং তা প্রমাণিত হলে তাকে পাথর মেরে হত্যা করতে হবে। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, এই কাজটিই হচ্ছে রজম। [দেখুন, সহিহ মুসলিম: ১৬৯০; রদ্দুল মুহতার, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ১৪৫-১৪৬; বাদরিউস সানারি, খণ্ড: ৭, পৃষ্ঠা: ৩৯; মুগনি, খণ্ড: ৮, পৃষ্ঠা: ১৬০-১৬১] ↩︎
  28. সহিহ সহিহ মুসলিম: ১৬৯৫; মুস্তাখরাজু আবি আওয়ানা: ৬২৯২; আল-মুজামুল আওসাত, তাবারানি: ৪৮৮৩; আস-সুনানুল কুবরা, বাইহাকি: ১১৪৪৯ ↩︎
  29. জামিউত তিরমিযি: ২১৪২; সবিন্ন ইবনি হিক্যান: ৩৪১; মুস্তাদরাকুল হাকিম: ১২৫৭; মুসনাদু আহমাদ: ১২০৩৬, ১৩৪০৮; হাদিসটি সহিহ। ↩︎
  30. সুনানু আবি দাউদ: ৩১১৬; মুস্তাদরাকুল হাকিম: ১২৯৯, ১৮৪২; মুসনাদু আহমাদ: ২২০০৪, ২২১২৭; মুসনাদুল বাযযার: ২৬২৬; হাদিসটি সহিহ। ↩︎
  31. মুসনাদু আহমাদ: ২৩৩২৪; আল-আসমা ওয়াস-সিফাত, বাইহাকি ৬৫১; মুসনাদুল বাযযার।। ২৯১৯; মুসনাদুল হারিস: ২৫৮; হাদিসটি সহিহ। ↩︎
  32. মুস্তাদরাকুল হাকিম ৪২৯; শুআবুল ঈমান ৭৭০৪; আল-মুজামুল কাবির, তাবারানি: ৮০১৪; হাদিসটি সহিহ। ↩︎
  33. সহিহুল বুখারি: ৩; সহিহ মুসলিম: ১৬০; সহিতু ইবনি হিব্বান: ৩৩; মুস্তাখরাজু আবি আওয়ানা : ৩২৮; মুসনাদু আহমাদ: ২৫৮৬৫; মুসনাদু আবি দাউদ আত-তয়ালিসি: ১৫৭০ ↩︎
  34. সুরা গাফির (মুমিন): ৬০ ↩︎
  35. সূরা আরাফ: ১২৫-১২৬ ↩︎
  36. সহিহুল বুখারি: ১৮৯০; জামিউ মামার ইবনু রাশিদঃ ১৯৬০৭। মুসান্নাফু আব্দির রাযযাক: ৯৫৫০; তারিখুল মাদিনা, ইবনু আবি শাইবা, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৮৭৮ ↩︎
  37. উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু মসজিদে নববিতে ইমামতি করার সময় আবু লুলু ফিরোজ নামের এক অগ্নিপূজারি মুশরিক আততায়ীর ছুরিকাঘাতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে শাহাদাত বরণ করেন। ↩︎
  38. সুরা আনআম: ৯৩ ↩︎
  39. সুরা আনফাল: ৫০-৫১ ↩︎
  40. সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ২৫-২৮ ↩︎
  41. সুরা নিসা: ১৭-৯৮ ↩︎
  42. সুরা ইউনুস: ৭-৮ ↩︎
  43. মুসনাদু আহমাদ: ১৮৫৩৪; মুস্তাদরাকুল হাকিম: ১০৭; মুসান্নাফু ইবনি আবি শাইবা ১২০৫৯; শুআবুল ঈমান: ৩৯০; ঈমান, ইবনু মান্দাহ: ১০৬৪; হাদিসটি সহিহ। ↩︎
  44. সহিহুল বুখারি: ২৮৯৮, ৪২০২, ৪২০৭, ৬৪৯৩, ৬৬০৭; সহিহ মুসলিম: ১১২; সহিহ্র ইবনি হিক্যান: ৬১৭৫; মুস্তাখরাজু আবি আওয়ানা: ১৪০ ↩︎
  45. সূরা যুমার: ৫৪-৫৮ ↩︎
  46. সুরা মুমিনুন: ৯৯-১০০ ↩︎
  47. সুরা মুনাফিকুনঃ১০ ↩︎
Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture