যাদু নিয়ে ইসলাম কী বলে

বিষের যেমন ক্রিয়া আছে, যাদুরও ক্রিয়া আছে। আল্লাহর ইচ্ছায় বিষ যেমন ক্রিয়া করে, তেমনি যাদুও ক্রিয়া করে।
তবে অনেকেই ভে‌ল্কির যাদু ও শয়তানী কুফরীর যাদুকে একত্রে গু‌লিয়ে ফেলেন। অথচ উভয়টা ভিন্ন ভিন্ন বিষয়। কতক হলো যাদুকরের কারসাজী ও কৌশল, যা দর্শকের চোখ ফাঁ‌কি দিয়ে তারা প্রয়োগ করে থাকে। সেযুগের ফেরাউনের যাদুকর আর এ যু‌গের জুয়েল আইসেরা মূলত তাই করে।

আরেক প্রকারের যাদু হলো, কুফরী-মন্ত্রের প্রভাব প্রতি‌ক্রিয়া, যা কোনো ক‌বিরাজ, ওঝা বা মন্ত্রকের মন্ত্রপা‌ঠের পর দেখা দেয়।

যাদুমন্ত্র কীভাবে কাজ করে, এটা একটা ব্যাখ্যাসাপেক্ষ বিষয়। তবে এতটুকু বুঝে রাখা যথেষ্ট মনে হয়, যাদুমন্ত্র যেহেতু কুফরী কালাম, যা শয়তানের আবিস্কার। প্রত্যেক‌টি কুফরী মন্ত্রের সাথে অসংখ্য অগ‌ণিত শয়তান‌ নিয়ো‌জিত থাকে, যেভাবে বি‌ভিন্ন আয়াত ও দুআর সাথে ফেরেশতা নিয়ো‌জিত থাকে। যখন মন্ত্রক মন্ত্র পাঠ করে, তখন প‌ঠিত মন্ত্রের সাথে নিয়ো‌জিত অদৃশ্য শয়তান সেখানে ক্রিয়া আরম্ভ করে দেয়। যাদুমন্ত্র একধরণের শয়তান-পুজা। তখন উপাস্য শয়তান খু‌শি হয়ে তার উপাসকের ইচ্ছা পূরণ করে দেয়। এক্ষেত্রে উপকার বা অপকার উভয়টাই করে থাকে। তবে বে‌শিরভাগই ক্ষ‌তিকর হয়ে থাকে।

যাদুম‌ন্ত্রের বাস্তবতা ও তার প্রভাব এক‌টি স্বীকৃত বিষয়। ইসলাম এটাকে অস্বীকার করে না। বরং কুরআন হাদী‌সের অসংখ্য ঘটনা তার বাস্তবতা ও স্বীকৃ‌তি প্রমাণ করে।

কুরআন মাজীদে সুরা বাকারা’র ১০২নং আয়াত কেউ ভালো করে প‌ড়লে বুঝতে পারবে, যাদুমন্ত্রের বিষয়ে ইসলামের অবস্থান কি? যেমন সেখানে বলা হয়েছে :

فَیَتَعَلَّمُونَ مِنۡهُمَا مَا یُفَرِّقُونَ بِهِۦ بَیۡنَ ٱلۡمَرۡءِ وَزَوۡجِهِۦۚ وَمَا هُم بِضَاۤرِّینَ بِهِۦ مِنۡ أَحَدٍ إِلَّا بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ وَیَتَعَلَّمُونَ مَا یَضُرُّهُمۡ وَلَا یَنفَعُهُمۡۚ
বনী ইসরাইল ওসব যাদুমন্ত্র শিখতো, যেগুলো দ্বারা তারা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ করতে পা‌রতো।

এ আয়াত স্পষ্ট প্রমাণ ক‌রে যাদুর দ্বারা বি‌চ্ছেদ করা সম্ভব! তবে এর সবই আল্লাহর ইচ্ছাধীন বিষয়, স্বতন্ত্র ও স্বয়ং‌ক্রিয় নয়।

আমাদের প্রিয় নবী‌জি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম‌কে যাদু করা হয়েছে। এতে তি‌নি ক‌ঠিন অসুস্থ হয়ে পড়ে‌ছি‌লেন এবং তখন তার ম‌ধ্যে স্মৃ‌তি‌বিভ্রাটও দেখা দিয়ে‌ছিল। বুখারী মুস‌লিমের সহীহ রেওয়ায়েত দ্বারা তা প্রমা‌ণিত।

এমন প্রমা‌ণিত ও স্বীকৃত বিষয়কে খবরে ওয়া‌হিদের অজুহাতে অস্বীকার করা হটকা‌রিতা বৈ কিছু নয়!

খবরে ওয়া‌হিদ বিষ‌য়ে চমৎকার কথা বলেছেন শাইখুনা মাওলানা আবদুল মালেক হা‌ফি.। তি‌নি বলেছেন : মুতাওয়ারাস, মুতাওয়াতির ও ইজমায়ী বিষয়াবলীতে খবরে ওয়া‌হিদের কোনো প্রভাব পড়বে না। যুগযুগ ধরে যা ইসলামে স্বীকৃত হয়ে আসছে, হা‌দিসের ভাণ্ডারে য‌দিও বিষয়‌টি স্রেফ খবরে ওয়া‌হিদ দ্বারা প্রমা‌ণিত, সেটা স্বীকৃত ও অকাট্যই থাকবে, খবরে ওয়া‌হিদের কারণে সন্দেহযুক্ত হবে না। কাজেই এমন বিষয় অস্বীকার করা সুস্পষ্ট গোমরাহী!

তি‌নি আরও বলেছেন, প্রমা‌ণিত ও ইজমাঈ মাসআলা প্রমাণে তো খবরে ওয়া‌হিদের প্রয়োজন নেই। বরং অপ্রমা‌ণিত বিষয়‌কে প্রমাণ করার জন‌্যই খব‌রে ওয়া‌হিদ। এটা প্রা‌মা‌ণিত বিষয়‌কে দুর্বল করার জন্য নয়। যেমন, নবী‌জি সা. এর মিরাজের ঘটনা। হাদীসে হয়ত এটি খবরে ওয়া‌হিদ দ্বারা প্রমা‌ণিত, অথচ এটি স্বীকৃত ও উম্মা‌তের ইজমায়ী মাসআলা, যা অস্বীকার করা চরম ভ্রা‌ন্তি! (মুহাজারাত দ্রষ্টব্য)

মোটকথা, যাদুম‌ন্ত্রের বাস্তবতা ও তার কুপ্রভাব প্রমা‌ণিত এবং ইসলা‌মে স্বীকৃত বিষয়। এজন্য যাদুম‌ন্ত্রের ক্ষ‌তি থে‌কে বাঁচার জন্য ইসলাম তার অনুসারী‌দের জন্য বি‌ভিন্ন ‌কৌশল ও আমল রেখেছে।

ত‌বে ভে‌ল্কির যাদু ও ক্রিয়াশীল যাদুর ম‌ধ্যে তফাৎ বুঝ‌তে হ‌বে। নতুবা জু‌য়েল আইসদের কৌশলী যাদু ও শয়তানের কুফরী যাদুম‌ন্ত্র একরকম মনে হবে এবং নি‌জেরা বিভ্রান্ত হ‌বে।

লিখেছেন

সাইফুদ্দীন গাযী

‌শিক্ষকতা, দাওয়াহ, লেখালে‌খি, সস্পাদনা, খুতবা প্রদান

All Posts

‌শিক্ষকতা, দাওয়াহ, লেখালে‌খি, সস্পাদনা, খুতবা প্রদান

Exit mobile version