ইয়া রাসুলুল্লাহ ﷺ আপনাকে কেন এত ভালোবাসি
ইয়া রাসুলুল্লাহ ﷺ, আপনাকে কেন এত ভালোবাসি!
‘তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং সকল মানুষের চাইতে অধিক প্রিয় না হই।’1
যেদিন থেকে জেনেছি হাদিসটি, সেদিন থেকে আপনার প্রতি ভালোবাসা আরও তীব্র হয়েছে ইয়া রাসুলুল্লাহ ﷺ।
এ-তো আমার নিজেরই অনেক দুভার্গ্য যে মাত্র কয়েকদিন আগেই আমি এ ব্যাপারে জেনেছি। অথচ জানার কথা ছিলো সেই শিশুকাল থেকেই, যখন থেকে চিনতাম আপনাকে।
মা গজল শুনাতেন, আপনি খেলার মাঠে খেলতে যেতেন। বিকেলে সবার বাবা আসলেও আপনার বাবা আসতো না মাঠে। শিশুমনে বাবাহারা একজন শিশুর যন্ত্রণায় আমার মনটাও ব্যথিত হতো। ভাবতাম, আহা কত কষ্ট বাবুটার। তখনও জানতাম না, আপনার প্রকৃত পরিচয়। জানতাম না, আপনি যে এত দামী! এত মূল্যবান!
আপনাকে কী করে ভালো না বেসে থাকতে পারি ইয়া রাসুলুল্লাহ ﷺ। বরং আপনাকে ভালোবাসাই তো আমার প্রকৃত মুমিন হওয়ার পূর্বশর্ত।
ইয়া রাসুলুল্লাহ ﷺ,
যখন জানতে পারি আপনি বলেছেন, ‘যার সামনে আমার নাম উল্লেখ করা হল, অথচ সে (আমার নাম শুনেও) আমার প্রতি দুরুদ পড়ল না, সেই হল সব চাইতে বড় কৃপণ।’2
তখন বেশ মন খারাপ হয়েছে। জানি না কখনো অজান্তেই এই কৃপণতা করে ফেলেছি কিনা! কিন্তু আনন্দের কথা হচ্ছে এখন আর কৃপণতা করি না। বরং আমার আনন্দ তো সিরাত পাঠে। কারণ সিরাত পাঠের মাধ্যমে আমি বারবার দুরুদ পাঠ করতে পারি। আলহামদুলিল্লাহ!
আপনাকে না ভালোবেসে কি আমি আমার নাম লিখাব কৃপণের খাতায়! বরং আপনার প্রতি দুরুদ পেশ করে আমিও হতে চাই সমৃদ্ধশালী।
ইয়া রহমতাল্লিল আলামিন ﷺ,
আপনাকে ভালোবাসাই আমার জন্য, প্রতিটি উম্মতের জন্য লাভজনক। যখন জানি দুরুদ পাঠের ফজিলত আপনি বলেছেন—
‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দুরুদ প্রেরণ করবে আল্লাহতায়ালা তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন।’ (সহিহ মুসলিম)
অন্য হাদিসে রয়েছে আপনি বলেছেন—
‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দুরুদ পাঠ করে আল্লাহতায়ালা তার প্রতি দশবার রহমত বর্ষণ করেন, তার দশটি পাপ ক্ষমা করা হয় এবং তার জন্য মর্যাদার দশটি স্তর বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়।’ (নাসায়ী)
এসব কথা জানার পরেও কী করে আপনাকে না ভালোবেসে থাকতে পারি! বরং আপনাকে ভালোবাসাই আমার জন্য লাভজনক সওদা।
আপনি সম্মানিত, আপনি পবিত্র, আপনি উত্তম, আপনিই সকলের সেরা ﷺ।
যে নামে এত মধু, সে নাম না জঁপে কী করে থাকতে পারি রাসুলুল্লাহ ﷺ।
বরং এই নামটি নেওয়ার মধ্যে, এই নামটি জঁপার মধ্যেই আমাদের জীবনের স্বার্থকতা নিহিত।
ইয়া মুহাম্মাদ ﷺ,
যখন মন খুব খারাপ থাকে, যখন মনে হয় আশার আলো সব নিভে গেছে, কোথাও কিছুই নেই বাকি। তখন ভীষণ আপনার কথা মনে পড়ে। আপনি থাকলে ছুটে যেতাম আপনার কাছে। সিরাত পড়ে জেনেছি আপনার কাছে একজন পাগলির জন্যও সময় ছিলো। নিশ্চয়ই আমাকেও আপনি সময় দিতেন। দিতেন আমার সমস্যার যৌক্তিক সমাধান। শুনতেন অগোছালো কথাগুলো, এরপর আমার জন্য দু’আ করে দিতেন। আমি প্রশান্ত একটা মন নিয়ে ফিরতাম নীড়ে।
যখন মন খারাপ নিয়ে আকাশের দিকে তাকাই, বিশ্বস্ত কাউকেই পাই না খুঁজে। তখনই মনে হয় আপনাকে হারিয়ে ফেলা, আপনি না থাকাটাই এই উম্মতের জন্য সবচেয়ে বড় দুঃখের কথা। আপনি হারানোর পর আদতে আমাদের হারানোর আর কিছুই নেই। আপনি না থাকাটাই জীবনের সবচেয়ে বড় বিপদ, এরচেয়ে বড় বিপদ এই উম্মতের আর থাকতেই পারে না।
ইয়া উসওয়াতুন হাসানাহ ﷺ,
নিঃসন্দেহে আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক, আপনি উত্তম আদর্শ। একজন শিক্ষকের সব ছাত্র এক রকম হয় না, আর আমি তো নগন্য মেধাহীন এক উম্মত। তবুও আমি বলব আমার বিপদে মনকে বুঝ দেওয়ার, অভয় দেওয়ার কথা। যা আমি আপনার থেকে শিখেছি। আলহামদুলিল্লাহ!
আপনার ছেলে ইবরাহীম রাদি., যিনি জন্ম নিয়েছিলেন মারিয়া কিবতিয়া রাদি. এর ঘরে। ইবরাহীম মারা গেলেন। আপনার মন বিষন্ন। সন্তানহারা বাবার বেদনা কে না বুঝে!
কিন্তু সেদিন আপনার শত্রু, ইসলামের দুশমন, আবু লাহাব আনন্দ করছিলো। বলছিলো, মুহাম্মদ নির্বংশ হয়েছে। লানাতুল্লাহি আলাইহি। এরপরের ঘটনা আমরা জানি, সূরা লাহাব নাযিলের মাধ্যমে আল্লাহ জানিয়ে দেন আসলে কে নির্বংশ। আর কার নাম যুগ যুগ ধরে উচ্চারিত হচ্ছে সম্মানের সাথে। কার নাম গেঁথে থাকে মুমিনের মন মগজে। কার নাম ঠোঁট থেকে নয় উচ্চারিত হয় হৃদয় থেকে।
যুগে যুগে যত আবু লাহাবরুপী মানুষ এসেছে, আসছে তারা দেখছে অবাক নয়নে। আপনার নামের সামান্যতম অসম্মানেও মুমিন কারো কল্লা কাটতেও দ্বিধা করে না। হাসিমুখে ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে যায়। কারণ জীবনের প্রকৃত স্বার্থকতা তো এখানেই।
ইয়া রাসুলুল্লাহ ﷺ,
আপনার ছেলে মারা গেছেন, হৃদয় ব্যথিত। অথচ আপনি বলছেন— চোখ অশ্রুসিক্ত হবে, আমাদের হৃদয় ব্যথিত হবে, কিন্তু মুখে এমন কিছুই বলব না যাতে আমার রব অসন্তুষ্ট হবেন।
সুবহানাল্লাহ! কত উত্তম শিক্ষা অধৈর্য এই উম্মতের জন্য। আলহামদুলিল্লাহ, যখন আমারও মন খুব ব্যথিত হয়, আমার মনে পড়ে আপনার কথা। নিজেকে রিমাইন্ডার দিই, এমন কিছুই যেন না বলি যাতে আমার রব অসন্তুষ্ট হন।
ইয়া মদীনাওয়ালা ﷺ,
জানিনা কখনো মদীনা যাওয়ার তাওফিক আল্লাহ আমাকে দিবেন কিনা! যখন কারো মক্কা মদিনা সফরের গল্প শুনি তখন তাদের সাথে কল্পনায় ঘুরে বেড়াই। এই গরীব, অভাগীকে আল্লাহ কবে কখন এই তাওফিক দেবেন তা আমার জানা নেই। কিন্তু আমার মন তো ঘুরে বেড়ায় মদীনার অলিগলি।
পরিচিত এক প্রতিবেশী ওমরাহ করে এসেছে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম তার অনুভূতি জানার জন্য। সে বললো, হোটেলে ভালো কিন্তু বের হলে মক্কায় খুব গরম। মদীনায় গরম কিছুটা কম।
আমি ভেবেছিলাম আমার নানীর মতো সেও এমন কিছু বলবে— সেখানে ভুখ নাই, তিয়াশ নাই, ক্লান্তি নাই, ঘুম নাই। আছে শুধু শান্তি আর শান্তি। সে এমন কিছু বলেনি, বলেছে গরম খুব।
আমি ভাবলাম, মদীনায় নাকি আসলেই অন্যরকম একটা শান্তি আছে। যারা আত্মিক শান্তি পায় তারা তো পায়ই। আর যারা আত্মিক শান্তি অনুভব করতে পারে না তারা শারীরিক শান্তি পায়। এতো মদীনাওয়ালারই গুণ।
তবুও এই প্রতিবেশীর প্রতি আমি ঈর্ষান্বিত হয়েছি। সেতো ঘুরে এসেছে মক্কা মদীনা। আমার তো এই সৌভাগ্য হলো না। জানি না, কখনো আল্লাহ আমাকে ডাকবেন কিনা এই পবিত্র নগরীতে।
ইয়া রাসুলুল্লাহ ﷺ,
আপনাকে ভালোবাসার প্রমাণ হচ্ছে সুন্নাহ মোতাবেক জীবন গড়া। কিন্তু সুন্নাহগুলো আজ ভীষণ অবহেলিত। সুন্নাহ হয়ে গেছে ব্যাকডেটেড। আল্লাহ আমাদেরকে মাফ করুন, সুন্নাহ মোতাবেক জীবন গড়ার তাওফিক দিক। যেন হাউজে কাওসারের পানি আমাদেরও নসীব হয়।
আমিন।
সীরাতের মাসে ডুবে থাকুন সীরাত নিয়ে