We are just friends
উই আর জাস্ট ফ্রেন্ডস
ফাহিমা আমার জাস্ট ফ্রেন্ড। নাথিং এলস। ওকে আমি আমার বোনের মতো দেখি। একসাথে চলাফেরা করে বলেই যে, তার সাথে আমি খারাপ কিছু করে ফেলব এমনটা ভাবা ঠিক নয়। এগুলো কুরুচিপূর্ণ মানুষের কাজ।
– দেখ জাহিদ, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রেখে এভাবে কোনো বেগানা মেয়ের সাথে চলাফেরা করা ইসলামে জায়েজ নেই। এসব থেকেই তো যিনার পথ উন্মোচিত হয়। স্বয়ং আল্লাহ এ ব্যাপারে বলেছেন, তোমরা যিনার ধারে কাছেও যেও না। [সূরা বনী ইসরাইল: ৩২]
লক্ষণীয়, আল্লাহ বলেন নি যে, যিনা করো না বরং বলেছেন যেখান থেকে যিনার সূত্রপাত হয় সেখানে পর্যন্ত যেও না। কারণ আল্লাহ ভালো করেই জানেন যে, যিনার কাছাকাছি গেলে একসময় সে যিনা করবেই। এজন্যই আগে থেকেই যিনার কাছাকাছি যেতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। আর একজন বেগানা মহিলাকে হায়, হ্যালো, কিংবা জাস্ট ফ্রেন্ড বলে মেলামেশার মাধ্যমেই যিনার মূল দরজায় প্রবেশ করা হয়।
তাছাড়া, সৃষ্টিগতভাবে বেগানা ছেলে-মেয়ে একসাথে একত্রে থাকলে তাদের মধ্যে আকর্ষণ হবেই। এটাই স্বাভাবিক। আর বিবাহ বহির্ভূত এমন অবৈধ আকর্ষণ যিনায় রূপ নেয়। ফলে একজন বেগানা নারী-পুরুষের মধ্যে জাস্ট ফ্রেন্ড বলতে কিছু থাকতে পারে না। এই শব্দদ্বয় শয়তানের একটি ধোঁকা ছাড়া কিছুই নয়।
– আহহা, তোদের এই একটাই সমস্যা। ছেলে মেয়ে এক হলেই তোরা যিনার বিষয় টেনে আনিস। তোদের মাথায় কেন যে এসব আজেবাজে চিন্তা আসে-তা আমি বুঝি না। তোকে কে বলেছে আকর্ষণ সৃষ্টি হবে? কেন, ছেলে মেয়ে কি এক হয়ে চলতে পারে না? এক হয়ে চললেই কি খারাপ হয়ে যাবে?
আকর্ষণ চলে আসবে?
যিনা করে ফেলবে? এগুলো কেমন কথা রে ভাই? তোরা এতো খারাপ মেন্টালিটি নিয়ে চলিস কেমনে? একজন মানুষের মন যদি পরিষ্কার থাকে তাহলেই হলো। মনের পর্দা বড়ো পর্দা। বুঝলি?
– তাহলে আর কাপড় পরিধান করার দরকার কী? এতো টাকা-পয়সা খরচ করে কাপড় কিনে কষ্ট করে কাপড় পরিধান না করে বরং মনে মনে কাপড় পরিধান করে নেংটু হয়ে চললেই তো হয়। কারণ মনের কাপড় বড়ো কাপড়। একইভাবে, এতো কষ্ট করে পাক করে খাবার রান্না করে খাওয়ারও দরকার কী? মনে মনে খেয়ে নিলেই তো হয়। মনের খাবার বড়ো খাবার। এগুলো তো বরং আরও অনেক সহজ। তাই না?
– আয়মান, তুই কী এসব আজেবাজে বকছিস? এগুলো কোনো কথা হলো!
– কেন হবে না? তোদের কাছে যদি পর্দা না করেই মনের পর্দা বড়ো পর্দা হয়ে যায় তবে কাপড় পরিধান না করে মনের কাপড় বড়ো কাপড় হবে না কেন? তোদের যুক্তিতেই তো প্রশ্ন রাখলাম!
– ইয়ে মানে…
– ইয়ে মানে কী, বল শুনি? আসলে তোদের সমস্যা কী জানিস? তোদের সমস্যা হচ্ছে, তোরা জাতে মাতাল তালে ঠিক। কোনো বিষয় নিজের অনুকূলে গেলে ঠিকই বুঝিস আর প্রতিকূলে গেলে না বোঝার ভান করিস, গুঁজামিল দিস। হিপোক্রেসি অ্যাট ইটস বেস্ট। যাইহোক, এবার তুই আমাকে একটু বল তো, লোভনীয় মানে কী?
– হঠাৎ এমন প্রশ্নের মানে কী?
– আরে ব্যাটা, বল না।
– যে জিনিসের আকর্ষণ রয়েছে সেটাতেই মূলত লোভের সৃষ্টি হয়। লোভনীয় মানেই তো বেশি আকর্ষণীয়। তাছাড়া, আকর্ষণ নেই এমন কোনো জিনিস তো আর লোভনীয় হতে পারে না। তাই না?
– এই তো সুন্দর বলেছিস। আচ্ছা! এবার বল, মানুষকে কে সৃষ্টি করেছে?
– বুঝতেছি না, তুই এসব কী শুরু করেছিস? এভাবে একটির পর আরেকটি এলোমেলো প্রশ্ন করে যাওয়ার মানে কী?
– আহহা, উত্তেজিত হচ্ছিস কেন? এখানে উত্তেজিত হওয়ার তো কিছু বলি নি আমি।
– তাহলে মানুষকে কে সৃষ্টি করেছে-এ তোর কেমন প্রশ্ন? মানুষকে অবশ্যই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। এ বিষয় তো সবারই জানা। এমন বিষয় কেউ কাউকে জিজ্ঞেস করে নাকি?
– হ্যাঁ, এটা ঠিক, মানুষ আল্লাহরই সৃষ্টি- এটা আমাদের সবারই জানা। এখন যিনি মানুষের সৃষ্টিকর্তা, মানুষের ব্যাপারে তার ইন্সট্রাকশন কি আমাদের মানা উচিত নয়?
– হ্যাঁ তা তো অবশ্যই। কিন্তু এখন কী হয়েছে?
– মানুষের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা’য়ালা নিজেই বলেছেন যে,তিনি মানুষের জন্য সাতটি জিনিসকে লোভনীয় করে রেখেছেন। মানুষের জন্য লোভনীয় করে রাখা সাতটি জিনিসের শুরুর দিকে যেটি বলা হয়েছে তা হচ্ছে নারীর প্রতি ভালোবাসা।
[সূরা আলে ইমরান: ১৪]
তুই নিজেই বলেছিস, কোনো কিছু লোভনীয় করে রাখার মানেই হচ্ছে সেই জিনিসকে বেশি আকর্ষণীয় করে রাখা। আর লোভনীয় কিছুর কাছে গেলে আকর্ষণ হবেই- এটাই স্বাভাবিক।
এখন যেখানে মানুষের সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে বলেছেন যে, নারী-পুরুষ একসাথে মেলামেশা করলে তাদের মধ্যে আকর্ষণ হবেই সেখানে তুই কীভাবে সেই আকর্ষণের কথা অনায়াসে উড়িয়ে দিতে পারিস কিংবা আকর্ষণের বিষয় অস্বীকার করতে পারিস?
সৃষ্টিকর্তা কি জানেন না, তার সৃষ্টির কীসে কী হয়?
যেখানে স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালাই বলেছেন, নারীকে লোভনীয় অর্থাৎ আকর্ষণীয় করে রাখা হয়েছে সেখানে পর নারীর সাথে একসাথে চললে আকর্ষণ হওয়ার ব্যাপারে অন্তত কোনো মুসলিমের সন্দেহ থাকার কোনো অবকাশ নেই। আর সেই আকর্ষণই মূলত খারাপ কাজের দিকে নিয়ে যায়। সেজন্যই তো মহান রাব্বুল আলামিন সেই অবৈধ আকর্ষণ থেকে বাঁচতে ইন্সট্রাকশন হিসেবে পর্দার বিধান চালু করেছেন। এমন অবৈধ আকর্ষণ থেকে নারী পুরুষ একে অপরকে হেফাজত করার জন্যই তো আল্লাহ পর্দার বিধানকে ফরজ করেছেন, নিজের দৃষ্টি সংযত ও লজ্জাস্থান হেফাজত করার জোরালো নির্দেশ দিয়েছেন।
এখন ফাহিমার সাথে তুই একসাথে ওঠাবসা করবি অথচ তোদের মধ্যে কোনো আকর্ষণ হবে না এবং যার ফলশ্রুতিতে কোনো খারাপ কিছু সংঘটিত হবে না তা তুই কীসের ভিত্তিতে বলতে পারলি? আরে মিয়া! শয়তান যে তোর মাথায় বসে ঢোল বাজাচ্ছে -তা কি তুই বুঝতে পারছিস?
ফাহিমার মতো পরনারীর সাথে চললে তোর কিছু হবে না এমনটা বলার মানে কি এই নয় যে, তুই বলতে চাচ্ছিস, ওর সাথে চললে তোর কোনো আকর্ষণই হবে না যা রীতিমতো আল্লাহর ঐ আয়াত অস্বীকারের নামান্তর। তুই কি বুঝতে পারছিস, ব্যাপারটি কত্তো সাংঘাতিক?
এছাড়া, তার প্রতি তোর কোনো আকর্ষণ হবে না বলাটা কি এমনটার ইঙ্গিত দেয় না যে, তুই সৃষ্টিকর্তার চেয়েও যেন বেশি বুঝদার হয়ে গেছিস। নাউজুবিল্লাহ! আকর্ষণ অনাকর্ষণের বিষয় যেনো তোর নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
একজন পরনারীর সাথে উঠাবসা করার পর যদি কেউ বলে যে, তার কোনো আকর্ষণ হয় না তাহলে এর পেছনে মূলত দু’টি কারণ থাকতে পারে। হয় তার কোনো যৌন সমস্যা আছে বিধায় সে যৌন আকর্ষণ অনুভব করে না, না হয় সে তার যৌন আকর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করতে চায় না। আর যারা এমনটা করে তাদেরকে আমি একটু কঠিন ভাষায় বলি বদমাশ। কারণ তারা প্রকৃত বিষয়টি ইচ্ছে করেই লুকিয়ে রাখে অথচ তলে তলে ঠিকই খারাপ কাজে লিপ্ত হয়। মাঝে মাঝে এই কুলাঙ্গারদেরকেই তো বিভিন্ন কুকর্মে ধরা পড়ে পত্রিকার শিরোনাম হতে দেখা যায়।
– আসলে বন্ধু আয়মান, তোর কথাগুলোর সত্যতা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আমি শয়তানের ধোঁকায় পড়ে ফ্রি মিক্সিং-এ জড়িয়ে পড়েছিলাম। আমরা স্বীকার করি আর না করি, আর যতোই ইনিয়েবিনিয়ে বলি না কেন নারী আসলেই লোভনীয় জিনিস। লোভনীয় জিনিস বলেই তো আমরা তাদের কাছে ঘিরে বসি, তাদের সাথে মেলামেশা করতে পছন্দ করি।
– এই তো ব্যাটা লাইনে এসেছিস। নিজের ইগোকে দমিয়ে রেখে সত্য স্বীকার করার জন্য তোকে অনেক ধন্যবাদ। আসলে, আমাদের সমাজে এমন অনেক কপালপোড়া রয়েছে যারা এসব বুঝতেই চায় না। নিজের মনকে সৎ দাবি করে ইনিয়ে বিনিয়ে ফ্রি মিক্সিং এর পক্ষে কথা বলতে চায়। এগুলো যে যিনার পথ উন্মোচিত করে তা তারা স্বীকারই করতে চায় না। শিয়াল যেমন মুরগীকে ভোগ করার উদ্দেশ্য মুরগীর স্বাধীনতা চায় ঠিক তেমনি আমাদের সমাজে কিছু নরপশু আছে যারা নারীকে ভোগ করার উদ্দেশ্যই নারীর ঘর থেকে বের হয়ে আসার স্বাধীনতা চায়।
– কথাটি একদমই ভুল বলিস নি, বন্ধু।
– জাহিদ, এবার তোকে আমি একটি কথা বলি। যদিও সে কথাটি শুনতে হয়তো তোর খারাপ লাগবে তবুও তোর ‘we are just friends’ বলা কথাটি কতোটা মারাত্মক ছিল সেটা উপলব্ধি করানোর জন্যই আমাকে তা বলতে হচ্ছে।
– কী কথা, বল তো শুনি?
– আজ যদি আমি আর তোর বোন একসাথে ঘোরাঘুরি করে বলি আমরা তো জাস্ট ফ্রেন্ডস তাহলে কি তুই তোর বোনের সাথে আমার ফ্রেন্ডশিপের ব্যাপারটি মেনে নিতে পারবি? তখন কি তুই নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারবি? তোর বোনের সাথে চলাফেরা করে, একসাথে গায়ে গা লাগিয়ে বসে গল্প করে, আড্ডা দিয়ে আমি যদি বলি তাকে আমি আমার বোনের মতো দেখি তবে কি তুই তা সহ্য করতে পারবি?
রাগান্বিত ভঙ্গিতে জাহিদ বলল, কী এসব বিশ্রী কথা বলছিস। এগুলো ভাবতেই তো ঘৃণা হয়। দেখ আয়মান, তুই আমার বন্ধু হয়েছিস বলে যা তা বলতে পারিস না। হিসেব করে কথা বলিস। এমন কথা বলা রীতিমতো আমার কাছে অপরাধ।
– কী ব্যাপার, তুই তো দেখছি একেবারে রেগে লাল হয়ে যাচ্ছিস। আমি তো আগেই বলেছি, এ কথাটি ভালো শুনাবে না তবুও না বলে পারছিলাম না।
আরে ব্যাটা! আমার সামান্য ঐ কথা বলাতে যদি এই হয় তোর অবস্থা তাহলে একটি বার চিন্তা কর তো, যে মেয়ের সাথে তুই জাস্ট ফ্রেন্ডের দোহাই দিয়ে হাতে হাত রেখে ঘোরাফেরা করছিস, ফোনে কথা বলছিস, ইনবক্সে দিন-রাত চ্যাট করছিস সেই মেয়ে তো কারো না কারো বোন, সেই মেয়ে তো কারো না কারো মেয়ে- তাই না? এখন যেখানে তুই নিজের বোনের বেলায় ব্যাপারটিকে মানতে পারছিস না বরং বিশ্রী বলে আখ্যায়িত করছিস সেখানে ঠিক এই একই ব্যাপার অন্যের বোনের বেলায় ঘটলে বিশ্রী হবে না কেন? তখন কেন সেটা ঘৃণিত কাজ হবে না?
জাহিদ নিশ্চুপ থাকায় আয়মান জিজ্ঞেস করলো, কী হলো, কোনো জবাব দিচ্ছিস না যে? তখন কি তোর বলা সেই ‘we are just friends‘ কথাটি বিশ্রী হয় না? তুই যেখানে তোর নিজের বোনের সাথে কারো বিবাহ বহির্ভূত ফ্রেন্ডশিপকে অপরাধ বলছিস সেখানে অন্যের বোনের সাথে তোর বিবাহ বহির্ভূত ফ্রেন্ডশিপ কি অপরাধের কাতারে পড়ে না?
জাহিদ এবার মাথা নিচু করে বলল, ইয়ে মানে….. আসলে বন্ধু আমাকে আর লজ্জা দিস না, প্লিজ। আমি এমনিতেই লাজুক একটা ছেলে। লজ্জা একদমই সহ্য হয় না আমার। কথা হচ্ছে তুই যেভাবে বলেছিস সেভাবে তো আমার কখনোই চিন্তা করা হয় নি কিংবা কেউ কখনো এসে এভাবে আমাকে বলেও নি। সত্যি কথা বলতে কী! তোর বলা কথাগুলো নিয়ে চিন্তা করতে পারা কোনো আত্মসম্মানবোধ ছেলেই অন্যে কোনো মেয়ের সাথে ‘just friends‘ এর দোহাই দিয়ে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারে না। আমিও পারি না।
– দ্যাটস লাইক অ্যা গুড বয়। আমি তো চাচ্ছিলাম তোর এই উপলব্ধিটাই হোক। আলহামদুলিল্লাহ, সেটাই হয়েছে।
শোন বন্ধু জাহিদ! তোকে আরেকটা কথা বলি, এই দুনিয়ার প্রত্যেকটা জিনিসের কিছু নিয়ম-কানুন আছে। নিয়ম ভঙ্গ করলেই ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।
এই ধর, কোনো গাড়ি চালক যদি বলে আমি রাস্তার কোনো পাশ্ব মেইনটেইন না করে আমার স্বাধীন মতো মাঝ বরাবর দিয়ে গাড়ি চালাতে থাকবো তাহলে সে নিশ্চিত নিজেকে ধ্বংসের মুখে টেলে দেবে। কারণ যিনি গাড়ি চালানোর নিয়ম দিয়েছেন সেই তার নিয়ম এখানে মানা হয়নি। তদ্রুপভাবে, মহান আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে নিয়ম করে দিয়েছেন যে, বেগানা পুরুষ- মহিলা একে অপরের অবৈধ আকর্ষণ থেকে বাঁচতে পর্দা রক্ষা করে চলবে। এখন কেউ যদি এই নিয়মের তোয়াক্কা না করে জাস্ট ফ্রেন্ড শব্দদ্বয়ের মতো নিজের মনগড়া কিছু কথা বলে সেই নিয়ম ভঙ্গ করে তাহলে সে-ও যিনার মতো কার্যকলাপে যুক্ত হয়ে নিজেকে ধ্বংসের মুখে টেলে দিবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।
– এভাবেও কেউ বুঝাতে পারে সেটা তুই না হলে হয়তো জানতামই না, বন্ধু। সত্যিই তোর কথাগুলো আমার হৃদয় স্পর্শ করেছে। এর থেকে ভালোভাবে কাউকে বোঝানো সম্ভব বলে মনে হয় না। আমি এখন বুঝতে পারছি যে, আমি কাজটি মোটেও ঠিক করি নি, মোটেও না। একইসাথে, পর্দার গুরুত্বও এখন ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারছি।
– মা শা আল্লাহ! এই তো আমার বন্ধু নিজের ভুল কতো সুন্দরভাবে বুঝতে পেরেছে। দেখ জাহিদ, বেগানা নারীর সাথে উঠাবসা করা কিংবা তাকে স্পর্শ করা কতোটা ভয়াবহ তা বোঝার জন্য একটি হাদীসই যথেষ্ট। রাসূল (সাঃ) কঠিন থেকে কঠিনতর হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, কোনো ব্যক্তির জন্য যে নারী অবৈধ তাকে স্পর্শ করার চেয়ে মাথায় লোহার পেরেক গেঁথে দেওয়া অনেক ভালো।
[হাদীস সম্ভার, হাদীস নং : ২৬৬২; ত্ববারণী : ১৬৮৮০ ; হাদীসের মান : সহীহ]
এই কথাটির মানে কী- তা কি তুই বুঝতে পারছিস, জাহিদ? এর মানে হচ্ছে, প্রথমত নিজের শরীরে আঘাত করা সম্পূর্ণত নিষেধ তথা হারাম। কিন্তু পরনারী স্পর্শের ব্যাপার যদি সামনে আসে তাহলে সেক্ষেত্রে তোর জন্য বরং নিজের মাথায় লোহার পেরেক গেঁথে দেওয়ার মতো কঠিন আঘাত করাটাই বহুগুণে উত্তম তবুও পরনারীকে স্পর্শ করা যাবে না। আর এ থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, পরনারীর স্পর্শ সাধারণ কোনো গোনাহ নয়। এটি খুবই জঘন্য লেভেলের একটি কবিরা গোনাহ। যদি এটি মারাত্মক পর্যায়ের গোনাহ নাই-বা হতো তবে রাসূল (সাঃ) আমাদেরকে কুরআন-হাদীসের মাধ্যমে সাধারণভাবে নিজেকে আঘাত করা নিষেধ করা সত্ত্বেও এমন বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে নিজেকে আঘাত করার উৎসাহ দিতেন না। অতএব, বুঝতেই তো পারছিস বিষয়টির চূড়ান্ত ভয়াবহতা!
– হ্যাঁ, বুঝতে পেরেছি। আমি আসলে এমন বিষয়ও আগে কখনো জানতাম না, বন্ধু। আজ যেহেতু বিষয়টি জেনেছি তাই আমি তোকে কথা দিলাম যে, আর কখনো এমন হবে না।
– জেনে খুবই খুশি হলাম। সকল প্রশংসা সেই রবের যে রব আমাদেরকে বিষয়টি বোঝার তাওফিক দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ! এভাবে যদি সবাই বুঝতে পারতো তাহলে কতোই-না ভালো হতো রে। যাইহোক, আল্লাহ তা’য়ালা তোর মতো আমাদের সকল ভাইবোনকে সঠিক সময়ে সঠিক বিষয় উপলব্ধি করার তাওফিক দান করুন।
আমিন!