উপরে ওঠার সময় আল্লাহু আকবার নিচে নামার সময় সুবহানাল্লাহ পাঠ করা

একটি হারিয়ে যাওয়া সুন্নত: উপরে ওঠার সময় আল্লাহু আকবার এবং নিচে নামার সময় সুবহানাল্লাহ পাঠ করা:
উঁচু স্থানে উঠার সময় ‘আল্লাহু আকবার‘ এবং নিচু স্থানে নামার সময় ‘সুবহানাল্লাহ’ পাঠ করা সুন্নত। ঘরের সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠা বা নামার ক্ষেত্রেও কি তা সুন্নত?

উঁচু স্থানে উঠতে আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ স্বরূপ ‘আল্লাহু আকবার’ এবং নীচে নামতে ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা সুন্নত। প্রখ্যাত সাহাবি জাবির রা. বলেন,

كُنَّا إِذَا صَعِدْنَا كَبَّرْنَا وَإِذَا نَزَلْنَا سَبَّحْنَا
“আমরা যখন উপরের দিকে উঠতাম, ‘আল্লাহু আকবার’ ও যখন নীচের দিকে নামতাম তখন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলতাম।” [বুখারি, হা/২৯৯৩]

অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كَانَ النَّبِيُّ ﷺ وَجُيُوشُهُ إِذَا عَلَوا الثَّنَايَا كَبَّرُوا، وَإِذَا هَبَطُوا سَبَّحُوا
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সেনা বাহিনী যখন উঁচু জায়গায় উঠতেন তখন আল্লাহু আকবার বলতেন। আর যখন নিচু জায়গায় নামতেন তখন সুবহানাল্লাহ’ বলতেন।” [আবু দাউদ, হা/২৫৯৯, সনদ সহীহ]

আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রাহ.-এর ফতোয়া:

বর্তমান শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফকিহ ও আলেমে দ্বীন আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রাহ. কে প্রশ্ন করা হয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদিসে এসেছে যে, তিনি কোনও উঁচু জায়গায় ওঠার সময় তাকবির বলতেন এবং কোনও নিচু জায়গায় নামার সময় তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ) বলতেন।
এখন প্রশ্ন হলো, এই তাকবির ও তাসবিহ কি শুধুমাত্র সফরের সময় পাঠ করতে হয় নাকি বাড়ির দ্বিতীয় তলায় বা তৃতীয় তলায় ওঠানামার সময়ও তাকবির ও তাসবিহ বলা যাবে? জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।

উত্তরে তিনি বলেন,
” كان النبي صلى الله عليه وسلم في أسفاره إذا علا صَعداً كبر، وإذا نزل وادياً سبح، وذلك أن العالي على الشيء قد يتعاظم في نفسه، فيرى أنه كبير، فكان من المناسب أن يكبر الله عز وجل فيقول: الله أكبر، وأما إذا نزل فالنزول سفول فناسب أن يسبح الله عز وجل عند السفول، هذه هي المناسبة .
ولم ترد السنة بأن يفعل ذلك في الحضر، والعبادات مبنية على التوقيف، فيقتصر فيها على ما ورد، وعلى هذا فإذا صعد الإنسان الدرجة في البيت فإنه لا يكبر، وإذا نزل منها فإنه لا يسبح، وإنما يختص هذا في الأسفار” . انتهى من (لقاءات الباب المفتوح 3/102).

“নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরের সময় কোনও উঁচু জায়গায় উঠলে তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলতেন এবং নিচু জায়গায় নামলে তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ) বলতেন। কারণ উঁচু জায়গায় উঠলে মানুষ নিজেকে মহান মনে করতে পারে। সে মনে করতে পারে, সে বড়। তাই সে সময় তাকবির তথা আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা দেওয়াটা অধিক প্রাসঙ্গিক। আর অবতরণ মানে উপর থেকে নিচে চলে যাওয়া। এ সময় তাসবিহ পাঠ বা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করাটা অধিক প্রাসঙ্গিক। এখানে এটাই তাকবির ও তাসবিহ পাঠের প্রাসঙ্গিকতা।

সুন্নতে এমন কোনও দলিল নেই যে, আবাসে থাকাকালীন এই আমল করতে হয়। আর ইবাদত শুধুমাত্র দলিলের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং ঘরের দ্বিতীয় বা তৃতীয় তলায় ওঠানামার সময় তাকবির ও তাসবিহ বলা যাবে না। এই আমলটি কেবল সফরের সাথেই খাস। [সূত্র: লিকাউল বাবিল মাফতুহ, ৩/১০২]

সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায.-এর ফতোয়া:

সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায. কে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয় যে, কোনও উঁচু জায়গা থেকে নামার সময় তাসবিহ পাঠ করা এবং উপরে ওঠার সময় তাকবির পাঠ করা-এটা কি শুধু সফরের সময় করতে হয় নাকি আবাসেও করা যায়?
তিনি উত্তরে বলেন,
المعروف في السفر، أما في الحضر فإنَّه يُسبّح ويُكبّر في الصعود والنزول، يُكثر من الذكر، سواء في الحوش، أو في السطح، أو غير ذلك.
“সাধারণত সফরের সময় এটা করা হয়। এ বিষয়ে এটাই প্রসিদ্ধ কথা। তবে আবাসে থাকাকালীন উপরে উঠা, নিচে নামার সময় তাকবির পাঠ করবে, তসবিহ পাঠ করবে এবং অধিক পরিমাণে জিকির করবে। তা বাড়ির আঙ্গিনা, ছাদ বা অন্য যেকোনো জায়গায় হতে পারে।”

এ ক্ষেত্রে সবাই মিলে একসাথে তাকবির বলা কি জায়েজ?

না, প্রত্যেকে নিজ নিজে তাকবির বলবে। অন্যের আওয়াজের দিকে খেয়াল করবে না। সবাই মিলে তাকবির বলার কোনও ভিত্তি নাই। এটা বিদআত। প্রত্যেকে নিজের অবস্থান অনুযায়ী আল্লাহর জিকির করবে; অন্যের আওয়াজের দিকে খেয়াল করবে না।

যখন কেউ সিঁড়ি বেয়ে ওঠে তখন কি তাকবির বলবে?

হ্যাঁ, ওঠার সময় বা নামার সময় উভয়ক্ষেত্রেই তাকবির বলা যায়।

যখন কেউ সিঁড়ি বেয়ে নামে তখন তাসবিহ বলবে?

এটাও খুব ভালো। অথবা নামার সময় আন্যান্য জিকির-আজকার করতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ
"তারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং পাশ ফিরে শুয়ে আল্লাহর জিকির করে।"
[আল ইমরান: ১৯১]

তবে পাহাড়ের উপত্যকা বা খাদে নামার সময় খেয়াল করে তাসবিহ পাঠ করবে সফর অবস্থায়।” [binbaz.org]

তবে কতিপয় আলেমের মতে, সিঁড়ি ব্যবহারের সময়ও উক্ত আমল করা যায়। অর্থাৎ বাড়ি বা কোনও ভবনের সিঁড়ি বেয়ে বা লিফটের মাধ্যমে উপরে উঠার সময় বলবে, আল্লাহু আকবার এবং নিচে নামার সময় বলবে, সুবহানাল্লাহ। তবে এ ক্ষেত্রে প্রথম মতটি অধিক অগ্রাধিকারযোগ্য। কিন্তু এই উঠানামার সময় সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি যেকোনো জিকির ও দুআ তাসবিহ পাঠ করা যায়। আল্লাহু আলাম।

মোটকথা, কোনও উঁচু বিল্ডিং-এর সিঁড়ি বেয়ে বা লিফটের মাধ্যমে উপরে উঠার সময়, নামার সময়, পায়ে হেঁটে অথবা গাড়ি চালনা বা গাড়িতে অবস্থানকালে উপরে ওঠা এবং নিচে নামার সময় আমরা সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি নানা ধরণের জিকিরের মাধ্যমে আমাদের জিহ্বাকে সচল রাখার চেষ্টা করা উচিৎ।

তবে বিশেষভাবে সফরে পথ চলার সময়, গাড়ি ড্রাইভ করার সময় বা বাহনে থাকা যখন আমরা পাহাড় বা অন্যান্য উঁচু স্থানে উঠব তখন খেয়াল করে এই সুন্নতটি প্রতি আমল করার চেষ্টা করব। অর্থাৎ উপরে ওঠার সময় সুবহানাল্লাহ, আর নিচে নামার সময় সুবহানাল্লাহ পাঠ করব। এতে আমাদের আমলনামায় জামা হবে অবারিত সওয়াব ইনশাআল্লাহ।

দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, বর্তমানে এই সুন্নতটি আমাদের মাঝ থেকে প্রায় বিদায় নিয়েছে। তাই এটিকে পুনর্জীবিত করা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ কাজ।

আল্লাহ তাওফিক দান করুন।

Exit mobile version