সারাদিন কর্মব্যস্ততা শেষ করে বাসায় ফিরে হাত-পা লেলিয়ে বিছানায় শুতে কারই-বা না ভালো লাগে! আর সেই শোয়া টা যদি হয় উপুড় হয়ে, তাহলে তো আর কথাই নেই।
সবাই চায় বিছানায় শোয়ে তার ক্লান্তি ভাবটা দূর করতে। বাসায় ফিরে বিছানায় একটা গড়াগড়ি করতে। অতঃপর, বেশ কিছুক্ষণ গড়াগড়ি করে রাতের খাবার খেতে যায়। রাতের খাবার শেষে বিছানায় শুতে গেলে আর শান্তি আসে না। একবার ডান-কাতে, আরেকবার বাম-কাতে, আরেকবার চিত হয়ে। যখন এত কিছুর পরও শান্তি পায় না, তখন উপুড় হয়ে শোয়ে পড়ে।
এমন পরিস্থিতিতে আপনি কী করেন?
আপনি কি উপুড় হয়ে ঘুমান না?
আরে ঘুমান তো! প্রায়ই তো উপুড় হয়ে ঘুমান। অনেকেই আছে, যারা উপুড় হয়ে ঘুমাতে পছন্দ করে, অনেকে মাঝে মাঝে আবার অনেকে উপুড় হয়ে ঘুমানোকে অভ্যাসে পরিণত করেছে। যার কারণে, উপুড় হয়ে না শোলে তার ঘুমই আসে না। তাদের কাছে উপড় হয়ে ঘুমানোর মধ্যেই সকল শান্তি। শান্তি তো থাকবেই, শয়তান যে খারাপ কাজটাকে মানুষের কাছে সুশোভিত করে উপস্থাপন করে। এটা তো শয়তানের একটি মায়াজাল। যেখান আবদ্ধ হয়ে থাকে হাজারো মানুষ।
উপুড় হয়ে শোতে তো সবারই ভালো লাগে! এই উপুড় হয়ে ঘুমানো টা কি ঠিক? এ- ব্যাপারে ইসলাম কী বলে? আসুন জেনে নিই..
তিখফাহ বিন কায়স আল-গিফারী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—
রাসুল সা. আমাকে মসজিদে উপুড় হয়ে শোয়া অবস্থায় পেলেন। তিনি তাঁর পা দ্বারা আমাকে খোঁচা মেরে বলেন—তোমার এ ধরনের শোয়া কী রূপ। এ ধরনের শোয়া তো আল্লাহ তাআলা অপছন্দ করেন বা ঘৃণা করেন।
এই হাদিস থেকে তো বুঝা যায়—উপুর হয়ে শোয়া ঠিক নয়। কেননা, আল্লাহ তা’আলা উপুড় হয়ে শোয়া পছন্দ করেন না। যে কাজ আল্লাহ তা’আলা পছন্দ করেন না, তা আমরা কেন করব?
অতএব, উপুড় হয়ে শোয়ার অভ্যাস যত দ্রুত সম্ভব পরিত্যাগ করতে হবে।
আর তাছাড়া, আরেকটি হাদিসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি— উপুড় হয়ে শোয়া হচ্ছে জাহান্নামীদের শোয়া। অর্থাৎ, জাহান্নামীরা উপুড় হয়ে শোবে।
আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পাশ দিয়ে গেলেন। তিনি আমাকে তাঁর পা দ্বারা খোঁচা মেরে বলেনঃ হে জুনাইদিব! এটা তো জাহান্নামীর শয়ন।1
‘যেদিন তাদের উপুড় করে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামের দিকে; সেদিন বলা হবে, জাহান্নামের যন্ত্রণা আস্বাদন করো।’2
সুতরাং, আমাদেরকে এ- ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। শোতে গেলে অবশ্যই ডান কাতে শোবো। উপুড় হয়ে শোয়া পরিত্যাগ করবো। মনে রাখবেন, ঘুমাতে গেলে শয়তান আপনাকে উপুড় হতে প্ররোচনা দিবে। শয়তানের প্ররোচনা উপেক্ষা করে ডান কাতে শোয়ার মধ্যেই বিজয় নিহিত রয়েছে। সুতরাং, শয়তানের বিরুদ্ধে আমাদেরকে বিজয় অর্জন করতেই হবে।
- সুনান ইবনু মাজাহঃ৩৭২৪,তিরমিযি ২৭৬৮, আহমাদ ৭৮০২, ৭৩৮১, ১৫১১৫, ১৫১১৭, ১৮৯৬৩, ১৮৯৭৮, ২৩১০২, ২৩১০৩, ২৩১০৪, ২৩১০৫। (হাদিসের মান সহীহ) ↩︎
- সুরা কমার : ৪৮ ↩︎