‘গুলবদন বেগম’ চরিত্রটি উপমহাদেশের মুসলিম নারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি ছিলেন মোঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবরের মেয়ে। তার মা ছিলেন বাবরের তৃতীয় স্ত্রী দিলদার বেগম।
তার ভাইপো সম্রাট আকবর তখন মোঘল সম্রাট। ফুফু গুলবদন বেগম ইচ্ছেপোষণ করলেন হজ্জে যাবেন।
১৫৭৫ সালে গুলবদন বেগম আরো ১১ জন নারী এবং মোঘল বাহিনী নিয়ে হজ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
১৫৭৫ থেকে ১৫৮২ সাল পর্যন্ত এই ৭ বছরের মধ্যে ৪ বছর তিনি মক্কায় ছিলেন, বাকি ৩ বছর ছিলো যাত্রাকাল।
সপ্তম শতাব্দী থেকেই মুসলিমরা উপমহাদেশে বসবাস করে। একসময় উপমহাদেশের ক্ষমতায় মুসলিমরা আসে। মুসলিম সুলতানদের পৃষ্ঠপোষকতায় অনেকেই মক্কায় হজ্জ করতে যায়। সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলকের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। তখন সাধারণত আলেমগণ হজ্জের জন্য যেতেন, সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ীরাও সঙ্গী হতেন।
কিন্তু, নারীদের হজ্জে যাবার ঘটনা উল্লেখযোগ্য ছিলো না। এমন না যে গুলবদন বেগমের পূর্বে উপমহাদেশ থেকে কোনো নারী হজ্জে যাননি। সম্ভাবনা ছিলো।
গুলবদন বেগম হলেন প্রথম নারী, যার হজ্জে যাবার ঘটনা উল্লেখযোগ্য। সেই সময় হজ্জযাত্রা ছিলো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে সমুদ্রে পর্তুগিজ দস্যুদের আক্রমণের কারণে ঐ সময়টায় হজ্জে যাওয়ার ব্যাপারে সম্রাটগণ ঝুঁকি নিতেন না।
বলা হয়ে থাকে, ২১ জন মোঘল সম্রাটের কেউই হজ্জে যাননি!
তারা বিভিন্ন সময় হজ্জযাত্রীদের সাথে উপহার পাঠিয়েছেন, মক্কার শরীফদের কাছে সাহায্য পাঠিয়েছেন।
সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে আভ্যন্তরিণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং যাত্রাপথের ঝুঁকি থাকায় তারা হজ্জে যেতে পারেননি।
এই মুহূর্তে এটা মনে হতে পারে বিস্ময়কর। কারণ, এখন একদেশের প্রধান যদি হজ্জ করতে চান, এটা ৪-৫ দিনের জার্নি। কিন্তু, সেই সময় এটা ছিলো বছর, ২ বছরের জার্নি।
ঠিক এমন প্রেক্ষাপটে ৫২ বছর বয়সী গুলবদন বেগমের হজ্জে যাবার ঘটনা বিবেচনা করলে বলতে হয়- তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হজ্জযাত্রা করেন। তিনি আবার রাজপ্রাসাদে ফিরে আসতে পারবেন কিনা এটা ছিলো অনিশ্চিত।
গুলবদন বেগমের আরেকটি পরিচয় হলো তিনি ছিলেন লেখিকা।
এখন তো সবাই লিখতে পারে। কিন্তু, একজন মেয়ে লিখতে পারা ব্যাপারটা উপমহাদেশে স্বাভাবিক ছিলো না।
গত শতাব্দীর ভারতের খ্যাতনামা আলেম আবুল হাসান আলী নদভী রাহিমাহুল্লাহর মা উল্লেখ করেন, আজ থেকে ১০০ বছর আগেও উপমহাদেশে নারীদেরকে লেখা শেখানো হতো না এই ভয়ে যে, তারা লিখতে শিখলে প্রেমপত্র লেখা শুরু করবে!
গুলবদন বেগম হলেন ভারতের প্রথম নারী যিনি একটি ইতিহাস-জীবনীগ্রন্থ লিখেন।
মোঘল সম্রাট হুমায়ূনকে জানার জন্য প্রাথমিক রেফারেন্স বই হিশেবে ব্যবহৃত ‘হুমায়ূননামা’ বইটি এখন বাংলা ভাষায় পাওয়া যায়। এই বইয়ের লেখক গুলবদন বেগম।
১৫৭৫ থেকে ২০২৪, উপমহাদেশ থেকে লক্ষাধিক নারী হজ্জ-উমরাহ করতে মক্কা গিয়েছেন।
উপমহাদেশ থেকে নারীদের হজ্জযাত্রার অন্যতম লিগ্যাসী বহন করছেন মোঘল পরিবারের এই নারী।