উপহার লেনদেন: ইসলামে এর গুরুত্ব এবং কতিপয় বিধান
সলামে উপহার লেনদেনের গুরুত্ব কতটুকু?
আর ধনসম্পদ বেশি থাকা সত্ত্বেও আত্মীয়-স্বজনদেরকে কমদামী উপহার দিলে কি গুনাহ হবে?
উপহার (هدية/Gift) লেনদেন করা সুন্নত। এর মাধ্যমে পারস্পারিক সুসম্পর্ক, ভ্রাতৃত্ব ও ভালবাসা বৃদ্ধি পায় এবং হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা বিদূরিত হয়। আর নি:সন্দেহে এগুলো একটি শান্তিময় ও সৌহার্দপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থার জন্য অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। এই ভালবাসা ও হৃদ্যতা পূর্ণ সম্পর্ক কেবল জাগতিক ক্ষেত্রেই উপকারী নয় বরং তা ঈমানের পূর্ণতা লাভ এবং আখিরাতের চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন তথা জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম একটি কারণ। তাই তো প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لا تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا ، وَلا تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا ، أَوَلا أَدُلُّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ ؟ أَفْشُوا السَّلامَ بَيْنَكُمْ
“সেই স্বত্বার কসম যার হাতে রয়েছে আমার প্রাণ, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ইমানদার হতে পারবে না। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ইমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা একে অপরকে না ভালবাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি বিষয়ের কথা বলবো যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালবাসবে? তোমরা বেশি বেশি করে সালামের প্রসার কর।” [সহিহ মুসলিম]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পারস্পারিক ভালবাসা বৃদ্ধির উপায় হিসেবে উপহার লেনদেনের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন,
تَهَادَوْا تَحَابّوا
“তোমরা একে অন্যকে উপহার দাও তাহলে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে।”
[আল আদাবুল মুফরাদ, হা/৫৯৪, ইরওয়াউল গালিল ৬/৪৪-শাইখ আলবানি রহ.-হাসান]
হাফেজ ইবনে আব্দিল বার বলেন,
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقبل الهدية وندب أمته إليها، وفيه الأسوة الحسنة به صلى الله عليه وسلم. ومن فضل الهدية مع اتباع السنة أنها تورث المودةً وتُذهب العداوة [فتح المالك بتبويب التمهيـد على موطأ مالك 9/358-359]
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপহার গ্রহণ করতেন এবং উপহার (আদান-প্রদান) কে উম্মতের জন্য মোস্তাহাব করেছেন। এর মধ্যে তাঁকে অনুসরণ করার নমুনা রয়েছে।
আর উপহারের অন্যতম একটি উপকারিতা হল, সুন্নত অনুসরণের পাশাপাশি তা ভালবাসা সৃষ্টি করে এবং শত্রুতা দূর করে।” [ফাতহুল মালিক]
সুতরাং সুন্নতের অনুসরণ এবং পারস্পারিক সুসম্পর্ক, ভ্রাতৃত্ব ও ভালবাসা বৃদ্ধির স্বার্থে আত্মীয়-স্বজন এবং প্রিয়জনদেরকে যথাসাধ্য ভালো ও উপকারী জিনিস উপহার দেয়া উচিৎ।
উপহার দেয়ার কারণে যদি দাতা ও গ্রহীতার মাঝে ফিতনা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে তাহলে উপহার দেয়া থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। যেমন: নন মাহরাম যুবক-যুবতির মাঝে উপহার লেনদেন করা হলে উভয়ের ফিতনায় পতিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং এমন আশঙ্কা থাকলে তা হতে বিরত থাকা অপরিহার্য।
সাধারণ গরিব-অসহায় মানুষের তুলনায় নিজস্ব রক্ত সম্পর্কীয় গরিব আত্মীয়দেরকে সাহায্য করার নিয়তে উপহার দিলে দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
الصَّدقةُ على المسْكينِ صدقةٌ، وعلى ذي القرابةِ اثنتان: صدقةٌ وصلةٌ
“মিসকিনকে সদকা দিলে শুধু সদকার সওয়াব হয় আর নিকটাত্মীয়কে দিলে সদকা এবং আত্মীয়তার বন্ধন উভয়টির সওয়াব হয়।” [সহিহ ইবনে মাজাহ হা/১৫০৬, হাসান লি গাইরিহ]
উপহারের দাম কম বা বেশি তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং উপহার হিসেবে এমন জিনিস দেয়ার চেষ্টা করা উচিৎ যাতে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি খুশি হয়।
উপহার কমদামী হলে বা আদৌ উপহার না দিলে কোন গুনাহ হবে না। কারণ তা ওয়াজিব (আবশ্যক) নয় বরং মোস্তাহাব (উত্তম)।
আল্লাহ আমাদেরকে ঈমান, ভালবাসা ও সৌহার্দপূর্ণ সমাজ বিনির্মানের জন্য নববী নির্দেশিকা মেনে চলার তাওফিক দান করুন।
আমিন।
আল্লাহু আলাম।