দুটি বর্ণনা থেকে আমরা রাসুলের (ﷺ) সাথে ফাতিমার (রা:) শেষ মুহূর্তের সম্পর্ক সম্বন্ধে জানতে পারি। একটি বর্ণনায় এসেছে রাসুল (ﷺ) মদিনার বাহিরে ভ্রমণের পর ঘরে ফিরলেন। তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন আগের ঘটনা। অভ্যাস বশত রাসুল (ﷺ) আগে মসজিদে গেলেন এবং দুই রাকাত নামাজ পড়লেন। এরপর বাসায় ফিরে সবার আগে ফাতিমার (রা:) সাথে দেখা করলেন। ফাতিমার (রা:) বিয়ের পরও, স্ত্রীদের সাথে দেখা করার আগে তিনি তাঁর প্রাণপ্রিয় কন্যার সাথে দেখা করতেন।
রাসুল (ﷺ) ফাতিমার (রা:) ঘরে প্রবেশের পর, ফাতিমার (রা:) তাঁকে স্বাগত জানালেন। সবসময়ের মতো ফাতিমা (রা:) রাসুলের (ﷺ) কপালে চুমু খেলেন, হাতে চুমু খেলেন এবং তারপর তাঁর বাবাকে বসতে দিলেন। রাসুলও (ﷺ) ঠিক একইভাবে তাঁর কন্যাকে স্বাগত জানাতেন। ফাতিমা (রা:) যখনই তাঁর বাসায় আসতেন, তিনি তাঁর কপালে চুমু খেতেন এবং তাঁকে বসতে দিতেন।
পিতা-কন্যার এ সম্পর্ক ছিল সুগভীর এবং সৌহার্দ্যময়। সেদিন ফাতেমা (রা:) কাঁদতে শুরু করলেন। রাসুল (ﷺ) তাঁর কাঁদার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। ফাতেমা (রা:) বললেন, “আপনাকে ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে, আপনার জামা কাপড়ও মলিন, আপনি খেতে পারছেন না।”
এই হলো উম্মে আবিহা, মায়ের মতোই তিনি তাঁর বাবার যত্ন করতেন। রাসুলের (ﷺ) শারীরিক অবস্থার অবনতি উপলব্ধি করে ফাতেমা (রা:) বিচলিত হয়েছিলেন।
রাসুল (ﷺ) বেশি খেতেন না। প্রায় সময় তিনি ক্ষুধার্ত থাকতেন, আর পর্যাপ্ত খাওয়া সামনে থাকলেও তিনি পেট ভরে খেতে কখনোই সম্মতি জানাননি। ফাতেমা (রা:) কাঁদতে শুরু করলেন। এই সেই কন্যা যিনি বালিকা অবস্থায় কাঁদতে কাঁদতে তাঁর বাবার পিঠ থেকে উটের নাড়িভুড়ি পরিষ্কার করেছিলেন। এই তাঁর বেড়ে উঠা।
শৈশবে পিতাকে নিপিরণের শিকার হতে দেখে কেঁদেছেন, আর এখন কাঁদছেন তাঁর বাবার শারীরিক অবনতি প্রত্যক্ষ করে। আরো একবার রাসুল (ﷺ) তাঁকে সান্ত্বনা দিলেন,
“ফাতিমা তুমি কেঁদো না, আল্লাহ তোমার বাবাকে এক বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, যা এই পৃথিবীর প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে, হোক তা গ্রামে বা শহরে, তাবুতে বা মরুতে। তুমি কেঁদো না ফাতেমা, এই বার্তা পৌঁছানোর জন্য আমি আমার সারাটি জীবন উৎসর্গ করেছি, যে কারনে এত কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা গিয়েছি, তা প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে। এ বার্তা সর্বত্র ছড়িয়ে যাবে, দিনশেষে এর মূল্যায়ন হবে।”
শৈশবে মক্কায় রাসুল (ﷺ) ফাতিমাকে (রা:) যেভাবে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন, ঠিক একই ভাবে আরো একবার তিনি তাঁর কন্যাকে সান্ত্বনা দিলেন,
“আল্লাহ তোমার বাবাকে সমর্থন করবেন, তাঁকে বিজয় দিবেন।”
ফাতিমার (রা:) ছিল গভীর উপলব্ধি বোধ এবং পরিপূর্ণ ঈমান। সহজাত ভাবে ইসলামের সাথে ছিল তাঁর গভীর সম্পৃক্ততা। এই সেই নারী যিনি প্রার্থনা করতেন, দু’আ করতেন, তিনি আল্লাহর সাথে গড়ে তুলেছিলেন গভীর সম্পর্ক। কাজেই রাসুল (ﷺ) যখন ফাতিমাকে (রা:) বললেন, তিনি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে পৃথিবীতে এসেছেন এবং তাঁর বার্তা সব জায়গায় পৌঁছে যাবে, তখন ফাতিমা (রা:) মন খারাপ করে নি। তাঁর বাবার কথা তাঁকে আশ্বস্ত করেছে, সান্ত্বনা দিয়েছে।
আলী (রা:) ও ফাতিমার (রা:) সুখের সংসার
পর্ব : ৯
মূল: ড. ওমর সুলাইমান