রমজান মাসে একজন পুরুষ যদি বাড়িতে একাকী তারাবির নামাজ আদায় করেন তাহলে তার বিধান কী?
এবং এর রাকাতসংখ্যা কত?
রমজানে কিয়াম (তারাবির নামাজ) মসজিদে আদায় করা সুন্নত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
❝যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজানে কিয়াম (তারাবি) করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করা হবে।❞
সুতরাং রমজানে মুসল্লিদের সঙ্গে মসজিদে তারাবির নামাজ আদায় করা উত্তম। তবে যদি কেউ বাড়িতে নামাজ আদায় করে তাতেও কোনো সমস্যা নেই।
তারাবির নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো রাকাতসংখ্যা নেই। তবে উত্তম হলো, ১১ বা ১৩ রাকাত আদায় করা। এটি সর্বোত্তম পদ্ধতি। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণত এত রাকাত পড়তেন। তিনি প্রতি দুই রাকাত পর পর সালাম ফিরিয়ে শেষে এক রাকাত বিতর আদায় করতেন।
যদি কেউ ২০ রাকাত ও বিতর, ৩০ রাকাত ও বিতর, কিংবা ৪০ রাকাত ও বিতর আদায় করে তাহলেও কোনো সমস্যা নেই। তবে সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো, ১১ বা ১৩ রাকাত পড়া। কেননা এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল অনুযায়ী।
তারাবির নামাজ রাতের যে কোনো অংশে আদায় করা যায়—
প্রথম ভাগে (এশার পর)
মধ্য ভাগে
শেষ ভাগে
কেউ চাইলে কিছু রাকাত প্রথম ভাগে এবং কিছু শেষ ভাগে আদায় করতে পারে।এগুলো সবই বৈধ।
এভাবেই মসজিদে জামাতের ক্ষেত্রেও করা যায়—
যদি সবাই প্রথম রাতেই আদায় করে
যদি সবাই শেষ রাতে পড়ে
অথবা কিছু রাকাত প্রথম রাতে, কিছু শেষ রাতে আদায় করে।
এসব ক্ষেত্রে কোনো সংকীর্ণতা নেই, বরং বিষয়টি উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবল বলেছেন:
من قام رمضان إيماناً واحتسابا…
❝যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজানে কিয়াম (তারাবি) করে…❞
তিনি যখন শেষ দশকে প্রবেশ করতেন, তখন পুরো রাত ইবাদতে অতিবাহিত করতেন।
সুতরাং যে ব্যক্তি শেষ দশকে সম্পূর্ণ রাত ইবাদতে কাটাবে, এটি সর্বোত্তম। তবে যদি কেউ কিছু বিশ্রাম নেয় তাতেও কোনো সমস্যা নেই। [উৎস: binbaz]
সংক্ষেপে:
– মসজিদে জামাতে তারাবি আদায় করা উত্তম তবে বাড়িতে একাকী আদায় করলেও বৈধ।
– নির্দিষ্ট কোনো রাকাতসংখ্যা নেই। তবে নবীর সুন্নাহ অনুযায়ী ১১ বা ১৩ রাকাত উত্তম।
– কেউ চাইলে ২০, ৩০ বা ৪০ রাকাত পড়তে পারে। এতে কোনো বাধা নেই।
– প্রথম, মধ্য বা শেষ রাতে নামাজ আদায় করা যায়।
– কেউ চাইলে প্রথম ও শেষ রাতে ভাগ করে পড়তে পারে।
আলহামদুলিল্লাহ ইসলামে এ ব্যাপারে সহজতা রাখা হয়েছে।
তারাবির নামাজ মসজিদে জামাতে পড়া উত্তম নাকি বাড়িতে একাকী পড়া উত্তম?
ইসলামিক ফিকহবিদগণ একমত যে তারাবির নামাজ পড়া সুন্নত। তবে এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে যে, এটি মসজিদে জামাতে উত্তম নাকি একাকী বাড়িতে আদায় করা উত্তম।
এ বিষয়ে কতিপয় ফকিহগণের মতামত উল্লেখ করা হলো:
১. মসজিদে তারাবির নামাজ উত্তম:
ইমাম বাহুতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:
❝মসজিদে তারাবির নামাজ আদায় করা বাড়ির চেয়ে উত্তম। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন রাত পরপর সাহাবিদের নিয়ে জামাতে তারাবির নামাজ আদায় করেছেন, যেমনটি আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বর্ণনা করেছেন।
এছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
مَنْ قَامَ مَعَ الإِمَامِ حَتَّى يَنْصَرِفَ حُسِبَ لَهُ قِيَامُ لَيْلَةٍ
❝যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে নামাজ আদায় করে এবং শেষ পর্যন্ত ইমামের সঙ্গে থাকে, তার জন্য পুরো রাত নামাজ পড়ার সওয়াব লেখা হয়।❞
[তিরমিজি, আবু দাউদ]
[দাকায়ক উলিন নুহা, ১/২২৪৫]
২. অধিকাংশ ফকিহদের মতে জামাতে তারাবি উত্তম:
শাওকানি (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:
❝নওয়াবী (রহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন যে, ফকিহগণ তারাবির নামাজকে সুন্নত বলে একমত হয়েছেন। তবে তারা ভিন্নমত পোষণ করেছেন যে, এটি মসজিদে জামাতে উত্তম নাকি একাকী বাড়িতে উত্তম?
ইমাম শাফেয়ি, তাঁর অধিকাংশ অনুসারী, ইমাম আবু হানিফা, ইমাম আহমদ, কিছু মালিকি আলেম এবং অন্যান্য অনেক ফকিহদের মতে, মসজিদে জামাতে পড়াই উত্তম। কারণ,
– উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ও সাহাবায়ে কেরাম এভাবে আমল করেছেন।
– এটি ইসলামের অন্যতম প্রকাশ্য প্রতীক (শাআইর)।
– মুসলিম উম্মাহর সর্বজনীন আমল এটি।❞
[নায়লুল আওতার, ৩/৬২]
৩. বাড়িতে তারাবি পড়ার অনুমতি:
যদি কেউ বাড়িতে একাকী তারাবি আদায় করে বা পরিবারের সঙ্গে জামাতে আদায় করে তাহলে সেটিও বৈধ।
তারাবির নামাজ সুন্নত এবং একাকী বা জামাতে উভয়ভাবেই বৈধ।
ইমাম নববী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:
তারাবির নামাজ সম্পর্কে আলেমগণ সর্বসম্মত যে এটি সুন্নাত। এটি একাকী বা জামাতে উভয়ভাবেই পড়া বৈধ। তবে কোনটি উত্তম—একাকী নাকি জামাতে? এ বিষয়ে দুইটি প্রসিদ্ধ মত রয়েছে। তবে আমাদের সাথীরা এ ব্যাপারে একমত যে, জামাতে পড়া অধিক উত্তম।”
[আল মাজমু’, ৩/৫২৬]
উৎস: islamqa
সংক্ষেপে:
– মসজিদে জামাতে তারাবি পড়াই উত্তম।
– তবে বাড়িতে একাকী বা পরিবারের সঙ্গে জামাতে পড়লে সেটিও বৈধ।
– যদি কেউ ইমামের সঙ্গে থেকে নামাজ সম্পন্ন করে তবে সে পুরো রাত নামাজ পড়ার সওয়াব পাবে।
আল্লাহু আলাম।