দ্বীনদার ভালো পাত্র পাওয়ার জন্য বা তাড়াতাড়ি বিয়ের জন্য কি বিশেষ কোন আমল আছে?
এ ক্ষেত্রে একটি আমল বলা হয় যে, ৪১ বার সূরা যোহা পাঠ করতে হবে এবং প্রতিবার এটি পড়ার আগে ও পরে একবার করে দুরুদ শরীফ পাঠ করতে হবে। তাহলে তাড়াতাড়ি বিয়ে হবে। এ আমলটি কি সঠিক?
বিয়ে-শাদি সহ মানুষের জীবনের সকল সমস্যার সমাধানের উপায় হল, মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করার পাশাপাশি সেই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। তাই দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনাময় সময় গুলো খেয়াল করে একান্ত বিনয়, নম্রতা এবং কান্নাকাটি সহকারে দোয়া করবেন। যেমন, ভোররাতে তাহাজ্জুদ সালাতের পরে, আযান ও একামতের মধ্যবর্তী সময়, জুমার দিন আসর থেকে মাগরিব নামাযের মধ্যবর্তী সময়, শবে কদরের রাতে, সেজদা অবস্থায়, রোযা অবস্থায়, সফর অবস্থায়, যে কোন সৎকর্ম করে তার ওসীলা দিয়ে দুআ করা ইত্যাদি।
আর বিয়ের জন্য আত্মীয়-স্বজন এবং পরিচিত জনের মাধ্যমে বরের অনুসন্ধানের পাশাপাশি পেশাদার ঘটকের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। বিশ্বস্ত অনলাইন ভিত্তিক ম্যারেজ মিডিয়ার মাধ্যমেও বর অনুসন্ধান করা যেতে পারে।
দুআ করি, মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সকল সমস্যা দূরভীত করে দিন আর যাদের বিয়েতে বিলম্ব হচ্ছে, তিনি যেন তাদেরকে অনতি বিলম্বে দ্বীনদার সুপাত্রের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার তাওফিক দান করেন।
আমীন।
তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার জন্য ৪১ বার সূরা যোহা পাঠের আমল মনগড়া ও ভ্রান্ত:
বিয়ে তাড়াতাড়ি হওয়া বা সুপাত্র পাওয়ার জন্য সর্ব প্রথম দরুদ পাঠ করা তারপর সূরা যোহা পাঠ করা তারপর পুনরায় দরুদ পাঠ করা-এভাবে ৪১ বার করলে তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়- এটি একটি সম্পূর্ণ বিদআতি ও বাতিল আমল। কুরআন-সুন্নাহয় এ মর্মে কোন বক্তব্য আসে নি। এটা যদি শরিয়ত সম্মত হত তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্টভাবে বা ইঙ্গিতে তা বর্ণনা করে যেতেন। কিন্তু এমন কোন হাদিস বর্ণিত হয় নি।
বিশেষ উদ্দেশ্যে কোন সূরা, আয়াত ও দুআ পড়ার বিশেষ পদ্ধতি আবিষ্কার করা কারো ব্যক্তির ইজতিহাদ বা গবেষণা কিংবা কারো অভিজ্ঞতার আলোকে সাব্যস্ত হতে পারে না বরং অবশ্যই এ মর্মে শরীয়তের দলীল থাকতে পারে।
সুতরাং এ ধরণের সুন্নাহ বর্হিভূত মনগড়া আমল করলে গুনাহগার হতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে বিদআত থেকে রক্ষা করুন।
আমিন।
দ্রুত বিয়ে হওয়ার জন্য ‘ইয়া ফাত্তাহু’ পাঠের ভিত্তিহীন আমল
দ্রুত বিয়ের জন্য নিম্নোক্ত আমলটি কি সঠিক?
“রোজ ফজর নামাজ বাদ বাম হাতের উপর ডান হাত রেখে আল্লাহর ‘ইয়া ফাত্তাহ’ নামটি চল্লিশবার জিকির করলে ইনশাআল্লাহ ৪০ দিনের মধ্যে বিবাহের ব্যবস্থা হয়ে যাবে।”
ইয়া ফাত্তাহু’ এতবার এই নিয়মে পড়লে তাড়াতাড়ি বিয়ে হবে শরিয়তে এমন কোনও নির্দেশনা আসে নি। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, বিদআতিদের মনগড়া কিছু বইয়ে এই আমলের কথা লেখা হয়েছে এবং সেগুলো বিভিন্নভাবে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। যার কারণে দীনের প্রকৃত জ্ঞান বঞ্চিত সাধারণ মানুষ নানা বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও কল্পিত আমলের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
তাই অনতিবিলম্পে আমাদের ঘরগুলোকে এ সকল ভিত্তিহীন আমল, বানোয়াট ওজিফা ও বিদআতের ফুলঝুরি দিয়ে সাজানো এ সব বই থেকে মুক্ত করা জরুরি। আর বিয়ের জন্য সম্ভাব্য স্থানে পাত্র/পাত্রীর খোঁজ নিতে হবে। যারা বিয়ের ঘটকালি করে তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু ও পরিচিত জনদের সাহায্য নিতে হবে। সর্বোপরি মহান আল্লাহর দরবারে দুআ করতে হবে।
আর যারা বিয়ের জন্য ১০০টা শর্ত নিয়ে বসে আছে কিন্তু কেউ শর্ত পূরণ করতে পারছে না যার কারণে বিয়েও হচ্ছে না তাদের উচিৎ, দ্বীনদারি ও চরিত্রিক বিষয় ছাড়া কিছু শর্ত মাইনাস করা। মানুষকে কখনো ১০০% প্রত্যাশা অনুযায়ী পাওয়া যাবে না। দুনিয়ার কোনও মানুষই নিখুঁত নয়। নিখুঁত মানুষ পেতে হলে জান্নাতে যেতে হবে।
সুতরাং ঘরে বসে বুড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে কিছু শর্ত কমিয়ে হলেও দ্রুত বিয়ের চেষ্টা করা কর্তব্য।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
আমিন।