সুহাইব ইবনে সিনান আর-রূমী
তিনি ছিলেন আরব। বাবার ‘চাকরি’ সূত্রে তিনি বসবাস করেন পারস্যে। আরবের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও তিনি দেখতে ছিলেন রোমানদের মতো।
তার বয়স তখন ৫ বছর। মায়ের সাথে পিকনিকে গেলেন। সেখানে তাকে কিডন্যাপ করা হয়। বিক্রি করা হয় রোমানদের কাছে।
আরব থেকে পারস্য, পারস্য থেকে রোমানদের সাথে। দাস হিশেবে কাটিয়ে দেন প্রায় ২০ বছর। মাতৃভাষা ভুলে যান তিনি, শিখে ফেলেন রোমানদের ভাষা।
দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেতে ছটপফট করতে থাকেন। একদিন সুযোগ পেয়ে পালিয়ে চলে যান মাতৃভূমি মক্কায়! এমন এক জায়গায় আসেন, যা তার মাতৃভূমি হওয়া সত্ত্বেও তিনি যেন ভিনদেশী। এখানে কেউ তাকে চিনে না, তিনিও কাউকে চিনেন না। একজনের আশ্রয়ে বসবাস করেন মক্কায়।
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামের দাওয়াত প্রচার করলে তিনি প্রথমদিকে দাওয়াত কবুল করে সাহাবী হবার সৌভাগ্য লাভ করেন।
আবার শুরু হয় তাঁর ওপর নির্যাতন! আবারও তাঁর সাথে দাসের মতো ব্যবহার করা হয়।
সুযোগ পেয়ে তিনি হিজরত করেন মদীনায়। সাহাবীরা তাঁকে সম্মানের চোখে দেখতেন।
কী এক বৈচিত্র্যময় জীবন তাঁর। আরবের সন্তান, শৈশব কাটান রাজপুত্রের মতো পারস্যে, কৈশোর কাটান দাসের মতো রোমান সাম্রাজ্যে, যৌবন কাটান চাকরি, ব্যবসা করে মক্কায়, বার্ধক্য কাটান মদীনায়!
এই সাহাবী কতোটা সম্মানিত ছিলেন একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে পারবেন।
সাহাবীরা ইন্তেকাল করলে গুরুত্বপূর্ণ কেউ তাদের জানাযা পড়াতেন বা ইন্তেকালের আগে তারা ওসিয়ত করে যেতেন কে তাদের জানাযা পড়াবেন।
উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর জানাযা পড়ান কে?
উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু ইন্তেকালের আগে অসিয়ত করে যান, তাঁর জানাযা যেন পড়ান এই সাহাবী।
খলিফা ইন্তেকালের পর পরবর্তী খলিফা নিয়োগে কয়েকদিন সময় লাগে। মাঝখানের এই সময়টুকুতে ‘ভারপ্রাপ্ত খলিফা‘র দায়িত্ব পালন করেন খুব ভালো আরবি বলতে না পারা এই সাহাবী।
তাঁর নাম সুহাইব ইবনে সিনান আর-রূমী রাদিয়াল্লাহু আনহু।
কোনো সাহাবীর জীবনী নিয়ে যদি ‘থ্রিলার উপন্যাস’ লেখা যেতো, তাহলে বেস্ট হতো এই সাহাবীর জীবনী