সৃষ্টির কার্যক্রমে স্রষ্টার ‘একত্ববাদ’ এর প্রমাণ
নাস্তিকরা তো আল্লাহর অস্তিত্বকে স্বীকারই করে না। পক্ষান্তরে, আস্তিকদের বড়ো একটি অংশ আল্লাহকে স্বীকার করলেও আল্লাহ একত্ববাদকে (তাওহীদ) অর্থাৎ আল্লাহকে এক হিসেবে স্বীকার করে না। বরং আল্লাহর সাথে আল্লাহর বিভিন্ন সৃষ্টির শরীক করে আসমান যমীন কাপাঁনোর মতো ভয়াবহ গুনাহ শিরক করে থাকে। আল্লাহর একত্ববাদের বিষয় খুবই সিম্পল একটি বিষয়। এমন বিষয় নিয়ে একটু বিবেক খাটালে, একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারা যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আল্লাহর একত্ববাদের বিষয় তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ থেকেই বোঝা যায়। আল্লাহর একত্ববাদের যৌক্তিকতা আমরা তার সৃষ্টির কার্যক্রমের দিকে তাকালেই সহজে বুঝতে পারি। প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে, এইতো?
দেখুন, পৃথিবীর যতো ধর্মের যতো বর্ণের মানুষ রয়েছে তাদের সবার মধ্যে একটা মিল রয়েছে। জানেন, সেটা কী? সেই মিলটা হচ্ছে, সবাই-ই চায় যে, সে এককভাবে একাই সব ক্ষমতার মালিক হোক, তার সমকক্ষ যেনো আর কেউই না থাকে। পৃথিবীর অন্যতম পরাশক্তির দেশ আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কথাই ধরুন না। সে কি কখনো তার প্রেসিডেন্টশল মর্যাদার পাশে কাউকে জায়গা দিবে?
সে কি তার সমকক্ষ কাউকে মানবে?
কখনোই মানবে না। প্রয়োজনে বিভিন্ন বড়ো বড়ো পদ কিংবা মন্ত্রী বানিয়ে দিবে কিন্তু কোনোক্রমেই কাউকে তার সমকক্ষ হতে দিবে না। আর এটাই স্বাভাবিক। এটাকে আমরা স্বাভাবিকভাবেই মেনে নেই।
একইভাবে, বাংলাদেশে, ভারত কিংবা যে কোনো দেশের কথাই চিন্তা করুন। তারাও প্রয়োজনে মন্ত্রী বানিয়ে দিবে কিন্তু তবুও তাদের সমকক্ষ হিসেবে কাউকে মানবে না। আর এসব বিষয়ে কেউ প্রশ্নও তুলবে না। কারণ এই যে বললাম, এগুলোই যে স্বাভাবিক। স্বাভাবিক বিষয়ে কারো প্রশ্ন থাকে না।
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, এই যাদের কথা বললাম তাদের একেক জন কিন্তু একেক ধর্মালম্বী। অথচ তাদের সবার মধ্যে এই একত্বের ব্যাপারে মিল রয়েছে। এখন যেখানে আল্লাহর সামান্য সৃষ্টি মানুষের মধ্যে একত্বের প্রবণতা রয়েছে সেখানে সেই মানুষেরই নিকট তার রব আল্লাহর একত্ববাদের বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হবে কেন?
কেন অমুসলিমরা বহু খোদার উপাসনা তথা শিরকী কর্মকান্ড করে?
তাদের বিবেকে কি এই বিষয়টি আসে না যে, আমরা মানুষেরাই যদি একক ক্ষমতার বিষয়কে অন্তরে লালন করি, স্বীকার করি তবে আল্লাহর একত্ববাদকে কীভাবে আমরা অস্বীকার করতে পারি? কোন বিবেকে?
দেখুন, বিজ্ঞানীরা কোনো একটি থিওরী প্রতিষ্ঠিত করে গেলে পরবর্তীতে অন্য বিজ্ঞানীরা এসে তা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ভুল প্রমাণ করেন। অর্থাৎ এক বিজ্ঞানী এসে তার পূর্ববর্তী বিজ্ঞানীর তত্ত্ব ভুল প্রমাণ করেন। আগের তত্ত্ব মিথ্যা প্রমাণ করে নতুন আরেকটি তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন। এভাবেই চলতে থাকে। বিজ্ঞানের তত্ত্ব পরিবর্তনযোগ্য।
পক্ষান্তরে, সৃষ্টির আদিকাল থেকে শুরু করে শেষ যামানা পর্যন্ত যতো নবী-রাসূলগণ এসেছেন তাদের সবার থিওরী কিন্তু একটাই ছিল। আর সেটা হচ্ছে, আল্লাহ এক, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। অর্থাৎ তাদের সবার মূল থিওরী ছিল আল্লাহর একত্ববাদ তথা তাওহীদ।
বিজ্ঞানীদের মতো কোনো রাসূল এসে তার পূর্ববর্তী রাসূলগণকে ভুল হিসেবে আখ্যায়িত করেননি বরং তারা সবাই তাদের পূর্ববর্তীদের প্রচারকৃত থিওরী অর্থাৎ আল্লাহর একত্ববাদের সত্যতার স্বীকৃতি দিয়েছেন। এরপরও কি আল্লাহর একত্ববাদ নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে?
এরপরও কি কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ তার অন্তরে নাস্তিকতা লালন করতে পারার কথা?
আল্লাহ যখন কাল কিয়ামতের উত্তপ্ত ময়দানে জিজ্ঞেস করবেন, হে অবিশ্বাসীরা! এতো এতো নবী-রাসূলগণরা তোমাদের নিকট আমার একত্ববাদের বাণী পৌঁছানোর পরও তোমরা কেন আমি এক আল্লাহর ওপর ঈমান আনো নি? আমার সৃষ্টির একত্বের বিষয় যদি তোমরা মানতে পারো তবে আমার একত্ববাদের দাবিকে তোমরা কেন সেদিন মানোনি?
সৃষ্টির একত্বের দাবিকে যদি তোমরা অস্বাভাবিক মনে না করো তবে আমার অসংখ্য নবী রাসূলগনের মাধ্যমে পাঠানো আমার ‘একত্ববাদ’ এর দাবিকে তোমরা কেন স্বাভাবিক মনে করো নি?
তখন কি আমাদের নাস্তিক কিংবা সংশয়বাদী বন্ধুদের জবাব দেওয়ার কিছু থাকবে? সেদিন তাদেরকে কতোটা অসহায় অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে সেটা কি তারা আজকের দিনগুলোতে ভাবছে?
অথচ বিবেক দিয়ে একটু চিন্তা করলেই আল্লাহকে চেনা যায়, আল্লাহর একত্ববাদকে ফিল করা যায়। যারা আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ করে তাদের জন্য আল্লাহর প্রশ্ন রেখে বলছেন, তোমাদের নিজেদের (এ দেহের) মধ্যেও তো (আল্লাহকে চেনার অসংখ্য নিদর্শন) রয়েছে; তোমরা কি তা দেখতে পাও না?1
প্রসঙ্গত, মৃত্যুর পর পুনরায় আল্লাহর জীবন দানের ব্যাপারে যারা সন্দেহ কিংবা অবিশ্বাস করে তাদেরকে আল্লাহ বলছেন, তারা কি বুঝতে পারে না যে, যে মহান আল্লাহ তা’য়ালা আসমানসমূহ ও যমীন বানিয়েছেন এবং এসবের সৃষ্টি যাকে সামান্যতম ক্লান্তও করতে পারে নি, তিঁনি কি একবারও মরে গেলে পুনরায় জীবন দান করতে সক্ষম নন? হ্যাঁ, অবশ্যই তিঁনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।2
আল্লাহর অবাধ্য হয়ে চলার বড়ো একটি কারণ কী, জানেন? আল্লাহকে প্রকৃতরূপে চিনতে না পারা, আল্লাহর অস্তিত্বকে মন থেকে ফিল করতে না পারা। যে আল্লাহকে সত্যিকার অর্থে চিনতে পারে, আল্লাহর অস্তিত্বকে হৃদয় দিয়ে ফিল করতে পারে সে কখনোই বেপরোয়া জীবনযাপন করতে পারে না, সে কখনোই আল্লাহ থেকে দূরে থাকতে পারে না।অবশ্যই আল্লাহর অস্তিত্বের বিষয়, আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার বিষয় তাকে সঠিক পথে চলতে, সঠিক পথে ঠিকে থাকতে সাহায্য করবে।