সম্পর্কের গভীরতা
আলী (রা:) এবং ফাতিমা (রা:) দুজনের সাথেই রাসুলকে (ﷺ) নাজুক সম্পর্ক বজায় রাখতে হয়েছিল। তিনি আলীকে (রা:) ভাই বলে সম্বোধন করতেন। উম আইমান (রা:) একবার রাসুলকে (ﷺ) জিজ্ঞেস করেছিলেন, কেন তিনি এখনও আলীকে (রা:) ভাই বলে সম্বোধন করেন। তখন রাসুল (ﷺ) বলেছিলেন, “আলীকে আমি হিজরতের পরে আমার জন্য নির্বাচিত করেছিলাম ভাই হিসাবে।” এজন্য তিনি আলীর (রা:) সাথে ভাইয়ের সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন, এবং সেই সাথে ফাতিমার (রা:) সাথে কন্যার সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।
এই প্রসঙ্গে রাসুল (ﷺ) আলীর (রা:) সাথে খেজুর এবং খেজুরের বিচি নিয়ে রসিকতাটি করেছিলেন তা উল্লেখ করতে চাই। একদিন জামাই-শ্বশুর—মানে নবী (ﷺ) ও আলী (রা:) একসঙ্গে বসে খেজুর খাচ্ছিলেন। নবী (ﷺ) খেজুর খেয়ে আঁটিগুলো আলী (রা:) যেখানে আঁটি রাখছিলেন সেখানে রাখছেন। একপর্যায়ে রসিকতা করে নবী (ﷺ) বললেন, “আলী, তোমার দেখছি খুব খিদে পেয়েছে! তোমার পাশে দেখেছ তো অনেক খেজুরের আঁটি! জামাইও ছাড়ার পাত্র নন। নবীকে (ﷺ) লক্ষ্য করে আলী (রা:) বললেন,
“হে আল্লাহর রাসুল! আমার চেয়ে দেখছি আপনার অনেক বেশি খিদে পেয়েছে! কারণ আমি তো আঁটি ফেলে দিচ্ছি, কিন্তু আপনি তো আঁটি সমেত খেজুর খেয়ে ফেলছেন।”
এ কথার পর জামাই-শ্বশুর সমস্বরে হেসে উঠলেন।
এখানে পিতার ভূমিকাটাও গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর সাথে আলীর (রা:) বয়সের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, তিনি আলীকে (রা:) একজন প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে গণ্য করতেন। ভাইয়ের মতো অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয় গুলো নিয়ে তিনি আলীর (রা:) সাথে পরামর্শ করতেন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করতেন। আলীকে (রা:) তিনি সত্যিই ভালোবাসতেন এবং তাঁকে কখনো খাঁটো করে দেখতেন না। আলী (রা:) এবং ফাতিমার (রা:) বৈবাহিক জীবনে তিনি হস্তক্ষেপ করতেন না। দুজনের সাথেই তাঁর সম্পর্কের গভীরতা সর্বজনবিদিত।
আজ আমি বিশেষভাবে আলোকপাত করতে চাই বিয়ের পরে, হাসান,হুসাইন জাইনাব, ও উম্মে কুলসুমের জন্মের পরে ফাতেমার (রা:) অবস্থানকে। আয়েশা (রা:) বলেন, একবার তিনি উলের তৈরি পোশাক পরিধান করেছিলেন। রাসুল (ﷺ) ঘরে ঢুকে ফাতিমাকে (রা:) বললেন, “আমি যা ভালোবাসি, তুমি কি তা ভালোবাসো না ফাতিমা?” ফাতিমা (রা:) বলেছিলেন, “হ্যাঁ, অবশ্যই”, তখন তিনি ফাতিমাকে (রা:) বলেছিলেন আয়েশাকে (রা:) ভালোবাসার জন্য। এভাবে তিনি এক ঐক্যতান গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, সম্পর্কের সুন্দর সমন্বয় করতে চেয়েছিলেন। নির্দিষ্ট কিছু প্রিয়জনদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের কারণে তিনি কোনো অন্যায় করেননি, বরং সংহতি বজায় রাখার চেষ্টা করেছিলেন।
আলী (রা:) ও ফাতিমার (রা:) সুখের সংসার
পর্ব : ৮
মূল: ড. ওমর সুলাইমান