সকাল-সন্ধ্যার আমলগুলো কেন এত জরুরি এবং কখন করব আমলগুলো

সকাল-সন্ধ্যার আমলগুলো কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

সকাল-সন্ধ্যার আমলগুলো একজন মুমিনের প্রধান নিরাপত্তবলয় ও সুরক্ষা হিসেবে কাজ করে। এগুলো ঈমানকে নিরাপত্তা দেয়, আমলকে তরতাজা রাখে, মনের অশান্তি দূর করে, বদনজর থেকে সুরক্ষা দেয় এবং শয়তান ও নিকৃষ্ট জ্বিনের আক্রমণ থেকে হেফাজত করে। এবার বলুন, একজন বুদ্ধিমান ঈমানদার কী করে সকাল-সন্ধ্যার আমলগুলো থেকে দূরে থাকতে পারে?

এজন্যই আল্লাহ তাআলা কুরআন কারিমে বারবার সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর যিকর (স্মরণ) ও তাসবিহ পড়তে বলেছেন। আল্লাহ বলেন—

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর মহিমা ঘোষণা করো।” 
[সুরা আহযাব, আয়াত: ৪১-৪২]
“অতএব, তোমরা আল্লাহর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করো, যখন তোমরা সকাল করো এবং যখন তোমরা সন্ধ্যায় উপনীত হও।” 
[সুরা রুম, আয়াত: ১৭]
“তুমি তোমার রবের প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করো সকালে ও সন্ধ্যায়।” 
[সুরা গাফির, আয়াত: ৫৫]

এরকম অসংখ্য আয়াত আছে কুরআনে। আর আল্লাহ তাআলার এসব নির্দেশনার আলোকে তাঁর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সকাল-সন্ধ্যার বিভিন্ন আমল, আযকার ও তাসবিহাতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। সেগুলো ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করবো, ইনশাআল্লাহ।

যারা সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহকে ডাকে, তাদেরকে যেন দূরে ঠেলে দেওয়া না হয়, সেজন্য নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

“যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের রবকে ডাকে তাঁরই সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে, তাদেরকে আপনি দূরে সরিয়ে দেবেন না।”
[সুরা আনআম, আয়াত: ৫২]

জীবনের সার্বিক নিরাপত্তা, শান্তি ও সফলতার জন্য সকাল-সন্ধ্যার আমলগুলোর কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহওয়ালা ব্যক্তিগণ এসব আমলকে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়ে নিয়েছিলেন।

সকাল-সন্ধ্যার আমলগুলো করলে যেসব উপকার ও ফজিলতের কথা হাদিস থেকে জানা যায়, সেগুলোর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

সকাল-সন্ধ্যার আমলগুলো কখন পালন করা উচিত

সকাল-সন্ধ্যার আমলগুলো কখন পালন করা উচিত?
সন্ধ্যা বলতে আসর নাকি মাগরিব উদ্দেশ্য?

আল্লাহ তাআলা কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় বারবার বলেছেন,

“তোমরা সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর মহিমা ঘোষণা করো।”

সকাল-সন্ধ্যায় পালনীয় আমলগুলোর সুনির্দিষ্ট সময়ের ব্যাপারে অনেকের মনে সংশয় আছে। কারণ সকাল-সন্ধ্যার সময়টি সুনির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া হয়নি। চলুন, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেষ্টা করি।

সকালের আমলের শুরু ও শেষ সময়

কুরআনে সকাল বুঝাতে “সবাহ” (صَبَاح) শব্দটি বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। এর পাশাপাশি বুকরাহ/আবকার (بُكْرَة/أبكار) এবং গুদুউউ/গাদাত (غدو/غداة) শব্দগুলোও ব্যবহৃত হয়েছে। আলিমগণের বৃহৎ অংশের মতে, সকালের সূচনা হয় সুবহে সাদিক তথা ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর থেকে।
তবে আরবদের অনেকের মতে, মধ্য রাত অতিক্রান্ত হওয়ার পরই সবাহ তথা সকাল শুরু হয়ে যায়। আর সবাহ-এর শেষ সময় নিয়েও আছে মতভিন্নতা। ইবনু তাইমিয়্যাহ ও ইবনুল কায়্যিমের মতে, সূর্যোদয় পর্যন্ত আবার ইবনুল জাযারি ও শাওকানির মতে, জোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সকালের আমলের সময়।

নির্ভরযোগ্য আলিমগণের মতে, সকালের আমলের সর্বোত্তম সময় হলো, ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়া থেকে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত। কোনো কারণে এই সময়ের মধ্যে “সবাহ” তথা সকালের আমল করতে না পারলে জোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগেই শেষ করে নিতে হবে। সকালের আমল ফজরের নামাজের পরেও করা যাবে, আগেও করা যাবে। ফজরের ওয়াক্তের মধ্যে হলেই হলো।

সন্ধ্যার আমলের শুরু ও শেষ সময়

কুরআনে সন্ধ্যা বুঝাতে বারবার “মাসা” (مَسَاء) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এর পাশাপাশি আসিল/আসাল (أصيل/آصال) এবং আশিয়্যুন (عشي) শব্দগুলোও এসেছে। ইমাম নববি, ইবনু তাইমিয়্যাহ ও ইবনুল কায়্যিমের মতে, মাসা তথা সন্ধ্যার আমলগুলোর সময় হলো, আসরের সময় থেকে মাগরিব পর্যন্ত। ইবনুল জাযারি ও শাওকানির মতে, মাগরিব থেকে ফজর পর্যন্ত সময়টুকু। কারও কারও মতে, এর শেষ সময়টা মধ্যরাত সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত।

দলিলের বিচারে সন্ধ্যার আমলের সময় হিসেবে আসর থেকে মাগরিবের সময়টিকে এগিয়ে রাখতে হয়। আবার অনেক নির্ভরযোগ্য আলিমের মতে, সন্ধ্যার আমলগুলো মাগরিবের পরে করতে হবে, আসরের পর নয়। উল্লেখ্য, বিশেষ প্রয়োজনে ফজরের আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে “সন্ধ্যা”র আমলগুলো করা যাবে।

তাহলে, আমরা সকালের আমলগুলো সূর্যোদয়ের আগেই শেষ করে নেবো এবং সন্ধ্যার আমলগুলো আসরের পর মাগরিবের আগেই শেষ করে নেবো, ইনশাআল্লাহ। নিচের দুটো আয়াতের ভাষ্য খেয়াল করুন।

আল্লাহ তাআলা কুরআন কারিমে বলেন—

وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ الْغُرُوبِ
“তুমি তোমার রবের রবের প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করো সূর্যোদয়ের আগে ও সূর্যাস্তের আগে।”
[সুরা ক্বাফ আয়াত: ৩৯]

আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেন—

وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا
“তুমি তোমার রবের রবের প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করো সূর্যোদয়ের আগে এবং এটি (সূর্য) অস্ত যাওয়ার আগে।” [সুরা ত্ব-হা, আয়াত: ১৩০]

লিখেছেন

নুসুস টিম

কুরআন ও হাদিসের মূল পাঠকে নুসুস (text) বলা হয়। নুসুসের উপর ভিত্তি করেই আমরা লেখালেখি করি।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন


Exit mobile version