শুনছেন, অমুক আপনার নামে কী বলছে?
নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাতে কিছু সম্পদ আসলে তিনি সেগুলো মানুষের মধ্যে বিতরণ করেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) শুনতে পান, দুজন লোক বলাবলি করছে- “আল্লাহর কসম! মুহাম্মদ এই যে বিলি-বন্টন করলেন, তাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের ইচ্ছে ছিলো না এবং পরকালে বাসস্থান লাভের অর্জনের জন্যও নয়।”
এই ধরণের কমেন্ট খুবই পরিচিত। নবিজীর যুগের মানুষরা যেভাবে নবিজীকে নিয়ে কমেন্ট করতো, আমাদের সমাজেও এরকম অহরহ মানুষ ভালো কাজে এমন কমেন্ট করে। কাউকে দান করতে দেখলে বলে ‘লোক দেখানোর জন্য দান করছে’! ঐ দুজন লোক খোদ নবিজীর ইখলাস নিয়ে প্রশ্ন তুলছে!
সবসময় সব কমেন্ট শুনতে নেই, পাত্তা দিতে নেই। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) যখন নবিজীকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ দুই লোকের কথোপকথন শুনান, নবিজী তখন বলেন, “আমার সাহাবীগনের কেউ যেনো তাদের অপরজনের কোন খারাপ কথা আমার নিকট না পৌঁছায়। কারণ, আমি তাদের সাথে পরিষ্কার ও উদার মন নিয়েই দেখা করতে ভালবাসি।”
মানুষকে নিয়ে মানুষের খারাপ কমেন্ট, হেইট স্পিচ এগুলোতে ইন্টারেকশন না করাই উচিত। এসব জায়গায় কমেন্ট করা, সেটা শেয়ার দেয়া, সেটার লিংক ঐ ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেয়া, এতে কোনো লাভ নেই। এগুলো মস্তিষ্ক উত্তপ্ত করে।
মাঝেমধ্যে কিছু লোক ইমাম আবু হানিফার (রাহিমাহুল্লাহ) কাছে এসে বলতো, “জানেন, অমুক আপনার ব্যাপারে কী বলেছেন। অমুক আপনাকে…।”
ইমাম আবু হানিফা ঐ লোকদের থামিয়ে দিয়ে বলতেন, “অন্যের দোষত্রুটি আমার নিকট বর্ণনা করবে না। আমাকে নিয়ে কে কী বললো তা আমার জানার দরকার নেই। কেউ যদি আমার সম্পর্কে খারাপ কিছু বলে, তবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন। আর যদি ভালো কিছু বলে, তবে আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন। কে কী মন্তব্য করলো, কে কী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলো, সে বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে নিজেদের কাজে মনোযোগী হও। দ্বীনের বিষয়ে পুরোপুরি বুৎপত্তি লাভ করো; দেখবে মানুষ এমনিতেই তোমার প্রতি ঝুঁকে পড়বে৷ একদিন সকলকেই তোমার দ্বারস্থ হতে হবে।”
এলিনর রুজভেল্ট বলেন, “Great minds discuss ideas, average minds discuss events, small minds discuss people.”
মৌমাছি বিভিন্ন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। কোনো কোনো ফুল থাকে বিষাক্ত, কাঁটাযুক্ত। তবে, মৌমাছির মুখের রস সবসময় বিষমুক্ত থাকে, সুস্বাদু থাকে। আমাদের কানের নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে না-ও থাকতে পারে। চলতে ফিরতে খারাপ কথা, কটু কথা, গালাগালি না হয় আমাদের কান শুনতে পাবে। আমাদের মুখ যেনো মৌমাছির মতো হয়। আমরা খারাপ কথা বলবো না, কাউকে গালাগালি করবো না। তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, কারো ব্যাপারে কটু মন্তব্যের সংবাদ যেনো আমরা বহন না করি- ‘জানো, অমুক তোমাকে কী বলেছে’।