শিশুদের ভুল ও নেতিবাচক অর্থ প্রকাশক নাম রাখা!

যে কোন মানুষের সবচেয়ে সুন্দর ও মৌলিক পরিচয়ের মাধ্যম হচ্ছে তার নাম। তাই ইসলাম ধর্মে নাম রাখার গুরুত্ব যেমন অধিক ঠিক তেমন এই গুরুত্বপূর্ণ বিধান পালনের ক্ষেত্রে রয়েছে বিশেষ কতিপয় ইন্সট্রাকশন। শিশুদের ভালো ও সুন্দর নাম রাখার সাথে সাথে অসুন্দর নাম রাখার ব্যাপারে সতর্কতা ও অন্যের মন্দ নাম পরিবর্তনের এক বাস্তব আমুলি নমুনা রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জিবনে দেখিয়ে দিয়েছেন।

ভালো নাম রাখার ব্যাপারে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
সন্তানের সুন্দর নাম রাখা ও তার উত্তম তারবিয়াতের ব্যবস্থা করা বাবার উপর সন্তানের হক।”
[মুসনাদে বাযযারঃ ৮৫৪০]

অন্যত্র মানুষের উত্তম নাম সম্পর্কে নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“তোমাদের নামসমূহের মধ্যে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে আব্দুল্লাহ (আল্লাহর বান্দা) ও আব্দুর রহমান (রহমানের বান্দা)।”
[সুনানে আবু দাউদ:৪৯৫০]

উত্তম নাম রাখার ক্ষেত্রে ইসলামের সুনিপুণ নির্দেশনার সহিত রয়েছে নিষিদ্ধ নামের তালিকা। ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির কতিপয় নাম রাখা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম, কিছু নাম রাখা অপছন্দনীয়। তবুও অজ্ঞতাবশত উম্মাহর জনসাধারণ এই নামগুলোকে উল্টো ইসলামি নাম মনে করে তাদের শিশুদের নাম রাখেন। প্রাত্যাহিক জীবনে মুসলিম উম্মাহর প্রচলিত ভুলগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। সমাজে খুব বেশি জ্ঞাত এরুপ কয়েকটি নামের আলোচনা নিয়ে সাজানো হয়েছে এই অধ্যায়।

আব্দুল কালাম নামটি খুবই কমন একটি নাম। ইসলামি নাম মনে করে অনেকেই শিশুর এই নাম রাখলেও তা ইসলামে নিষিদ্ধ। কারণ এর অর্থ হচ্ছে ‘কথার উপাসক’। মানুষ আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুরই উপাসক হতে পারেনা। ঠিক এরকমভাবে ‘গুলামুন নাবি’ নাম রাখাও ইসলামে হারাম। ‘নবীর বান্দা/উপাসক’ অর্থ বহণকারী এই নামও শিরকী আক্বিদাহ ইঙ্গিত করে।

মোটকথা, আল্লাহর নাম নয় এমন শব্দের সাথে গুলাম বা আবদ শব্দ যুক্ত করে নাম রাখা নিষিদ্ধ । যেমন, আব্দুল আলী, আব্দুল কামার, আব্দুন নবী, আব্দুল ওজ্জা ইত্যাদি।

আব্দুন শব্দ ব্যতীত সরাসরি আল্লাহর নামে নাম রাখা হারাম। যেমন, আর রাহমান, রাজ্জাক, আর রাহিম ইত্যাদি। বৈধ হচ্ছে আব্দুর রাহমান, আব্দুর রাজ্জাক্ব, আব্দুর রহিম।

মালিকুল আমলাক নাম রাখার ক্ষেত্রে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সরাসরি নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেছেন। কেননা এই নাম অহংকার ও নিজের বড়ত্বের দিকে ইঙ্গিত করে।
[সহীহ বুখারীঃ১৪০৩]

এই হাদিসের বিশ্লেষণে অনেক আ’লেমদের মতে শাহেনশা (বাদশাহের বাদশাহ), শাহ আলম (বিশ্বের বাদশাহ) , শাহজাহান (জাহানের বাদশাহ) এইসকল নাম রাখাও উচিৎ নয়। কেননা এসব প্রত্যেকটি নাম ব্যক্তির অর্থ বড়ত্ব, অহংকারের প্রকাশক। সেইম অর্থ প্রকাশের জন্য মহারাজ নাম রাখাও অনুচিত।

বৃহদাকারে প্রচলিত মহিলাদের ‘আছিয়া’ নাম না রাখার নির্দেশনাও পাওয়া যায় রাসুলে হাদিসে (সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। ওমরের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আছিয়া নামের এক মেয়ের নাম পরিবর্তন করে জামিলা রাখেন নবীজি (সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।
[সহিহ মুসলিম : ২১৩৯]

কেননা, আছিয়া নামের অর্থ ‘নাফরমান, অবাধ্যচারিনী’।

রাব্বি নামের অনেক মানুষ আমাদের সমাজে বিদ্যমান। ‘আমাদের প্রভু’ অর্থ প্রকাশক এই নাম রাখা সম্পূর্ণ অনুচিত।

অর্থের দিকে খেয়াল রেখেই নাম রাখতে হবে। অনেকেই আরবি শব্দ পেলে মনে করেন এটি সুন্দর নাম। অথচ, সব আরবি শব্দের অর্থ সুন্দর বা পজেটিভ হবে এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। তাই নাম রাখার ক্ষেত্রে হারব (যুদ্ধ), মনাফ (নিফিল) ইত্যাদি নাম পরিত্যাগ করা উচিৎ।

কুরআনে বর্ণিত শব্দের রেফারেন্সে অনেকেই মনে করতে পারেন আবু লাহাব ইসলামি নাম কিন্তু তা একজন কুখ্যাত কাফেরের নাম। এই নাম কিংবা কোন কুখ্যাত মুশরিক, কাফেরের নামে শিশুদের নাম রাখাও ইসলামে পূর্ণ নিষিদ্ধ।

নাম রাখার বিষয়ে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্পষ্ট নির্দেশনা ও মাপকাঠি রয়েছে। তিনি বলেন, “তোমরা নবীগণের নামে নাম রাখো, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হচ্ছে আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রাহমান, সবচেয়ে সত্য নাম হচ্ছে হারেস এবং হাম্মাম আর সবচেয়ে খারাপ নাম হচ্ছে হারব এবং মুররাহ।”
[সুনানে আবু দাউদ:৪৯৫০]

শিশুদের নাম রাখার ক্ষেত্রে নবীজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী নবীদের নামে নাম রাখা কিংবা আব্দুল্লাহ, আব্দুর রাহমান, হারেস ও হাম্মাম নাম রাখা উত্তম।

মানুষের নাম তার ব্যক্তিত্বকে প্রভাবিত করে। রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সময়কার একটি ছোট্ট ঘটনা তার স্পষ্ট প্রকাশক।

আবদুল হুমাইদ বিন শায়বা বলেন, আমি হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিবের কাছে বসা ছিলাম। তিনি তখন বললেন, ‘আমার দাদা ‘হাযান’ একবার নবীজীর দরবারে উপস্থিত হলেন।’ নবীজী তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার নাম কী?” দাদা বললেন, ‘আমার নাম হাযান (শক্তভূমি)’।
নবীজী বললেন- “না, তুমি হচ্ছ সাহল” (অর্থাৎ তোমার নাম হাযানের পরিবর্তে সাহল রাখো; সাহল অর্থ, নরম জমিন।) দাদা বললেন, ‘আমার বাবা আমার যে নাম রেখেছেন আমি তা পরিবর্তন করব না।’ সাইদ ইবনুল মুসায়্যিব বলেন, ‘এর ফল এই হল যে, এরপর থেকে আমাদের বংশের লোকদের মেযাজে রুঢ়তা ও কর্কশভাব রয়ে গেল।’
[সহীহ বুখারীঃ ৬১৯৩]

তাই নাম রাখার ক্ষেত্রে অর্থের দিকে দৃঢ় দৃষ্টিপাত একান্ত জরুরী। মধুর অর্থবাচক নাম রাখা একান্ত কর্তব্য। যার প্রভাবে যাতে জীবনাচরণ সুন্দর ও সাবলীল হয়। নেতিবাচক অর্থপ্রকাশক নাম রাখার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সচেতনতা অবলম্বন অত্যাবশ্যক। উপর্যুক্ত কতিপিয় ভুল নামে কারো নাম থাকলে তার উচিৎ হবে অতিসম্ভব তা পরিবর্তন করে নেওয়া।

Exit mobile version