শাওয়ালের ৬ রোজা রাখার পরে নাকি ঈদ করতে হয়
ইসলামে শাওয়ালের ৬টা রোজার পর কোন ঈদ নেই। যদি কেউ তা পালন করে তাহলে তা দ্বীনের মধ্যে নব সংযোজিত বিদআত হিসেবে পরিগণিত হবে। আর প্রতিটি বিদআতই গোমরাহি এবং প্রতিটি গোমরাহির পরিণতি জাহান্নাম।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, ইসলাম অনুমোদিত ঈদ মাত্র তিনটি (৪র্থ কোন ঈদ নাই)। যথা:
১. ঈদুল ফিতর (রমাযান শেষে শাওয়ালের ১ম দিন)
২. ঈদুল আযহা বা কুরবানির ঈদ (জিল হজ্জ মাসের ১০ তারিখে)
৩. সাপ্তাহিক জুমার ঈদ।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, প্রখ্যাত সাহাবি আনাস বিন মালিক রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আগমন করে দেখলেন, মদিনা বাসীগণ খেলা-ধূলার মধ্য দিয়ে দুটি দিবস উদযাপন করে থাকে।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ দুটি দিবস কি?
তারা বলল, এ দুটি দিবস জাহেলি যুগে আমরা খেলা-ধুলার মধ্যদিয়ে উদযাপন করতাম।
তিনি বললেন,
إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا : يَوْمَ الْأَضْحَى ، وَيَوْمَ الْفِطْرِ
“আল্লাহ তোমাদের জন্য এর থেকে উত্তম দুটি দিবসের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন: একটি হল, ঈদুল আযহা এবং অপরটি হল, ঈদুল ফিতর।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং ৯৫৯ সনদ-সহীহ, আলবানী)
হাদিসে শুক্রবারকে সাপ্তাহিক ঈদ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেমন:
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
«إِنَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ يَوْمُ عِيدٍ، فَلَا تَجْعَلُوا يَوْمَ عِيدِكُمْ يَوْمَ صِيَامِكُمْ، إِلَّا أَنْ تَصُومُوا قَبْلَهُ أَوْ بَعْدَهُ»
“নিশ্চয় জুমার দিন ঈদের দিন। অতএব তোমাদের ঈদের দিনকে তোমরা সিয়ামের দিন বানিয়ো না। তবে তার পূর্বে কিংবা পরে যদি সিয়াম রাখ তাহলে সমস্যা নেই।”
যদিও এ হাদিসটি সহিহ জইফ হওয়ার ব্যাপারে মুহাদ্দিসদের মাঝে দ্বিমত দেখা যায়।
[মুসনাদে আহমদ/৭৮২৫, সহিহ ইবনে খুজাইমাহ/২১৫৫, হাকেম:/৬৩০, তিনি হাদিসটি সহিহ বলেছেন। আরও সহিহ বলেছেন, শাইখ আহমদ শাকের-তাহকিক মুসনাদে আহমদ ১৫/১৭৬, অপরপক্ষে শাইখ আলবানী হাদিসটিকে জইফ বলেছেন। সূত্র: যঈফুত তারগিব ৬৩৬ নং হাদিস]
সুতরাং উপরোক্ত হাদিস সমূহ থেকে প্রমাণিত হল, মুসলিমদের দুটি জাতীয় বড় উৎসব তথা ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর এবং সাপ্তাহিক জুমার দিনের ছোট ঈদ ছাড়া ইসলামে আর কোন ঈদ নেই।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন,
وأما اتخاذ موسم غير المواسم الشرعية كبعض ليالي شهر ربيع الأول التي يقال : إنها ليلة المولد , أو بعض ليالي رجب , أو ثامن عشر ذي الحجة , أو أول جمعة من رجب , أو ثامن من شوال الذي يسميه الجهَّال عيد الأبرار : فإنها من البدع التي لم يستحبها السلف , ولم يفعلوها. والله سبحانه وتعالى أعلم
“শরিয়ত প্রদত্ত নয় এমন কোন মৌসুম গ্রহণ করা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত, যেটাকে সালফে-সালেহিন (পুণ্যবান পূর্বসূরিগণ) মোস্তাহাব জানতেন না এবং তা তারা পালন করতেন না। যেমন: রবিউল আউয়াল মাসের কোন একটি রাত; যে রাতকে মিলাদুন্নবীর রাত বলা হয় (ঈদে মিলাদুন নবী), রজবের কোন একটি রাত (শবে মেরাজ), যিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখ, রজব মাসের প্রথম জুমাবার ও শাওয়াল মাসের ৮ তারিখ; যে দিনকে মূর্খ লোকেরা ‘ঈদুল আবরার (পুণ্যবান লোকদের ঈদ)’ বলে থাকে । আল্লাহ্ সুবহানাহু তায়ালা ভাল জানেন। [শাইখুল ইসলাম এর ‘মাজমুউল ফাতওয়া’ (২৫/২৯৮)]
তিনি আরও বলেন,
وأما ثامن شوال : فليس عيداً لا للأبرار ولا للفجار , ولا يجوز لأحد أن يعتقده عيداً, ولا يحدث فيه شيئاً من شعائر الأعياد
“শাওয়াল মাসের ৮ তারিখ পুণ্যবানদেরও ঈদও নয়; পাপিষ্ঠ লোকদেরও ঈদও নয়। কোন ব্যক্তির জন্য এ দিনকে ঈদ বিশ্বাস করা এবং এ দিনে ঈদের কোন আলামত জাহির করা জায়েজ হবে না।”
[আল-ইখতিয়ারাত আল-ফিকহিয়্যা, পৃষ্ঠা-১৯৯]
সূত্র: শাইখ আব্দুল্লাহ্ বিন আব্দুল আযিয বিন আহমাদ আল-তুয়াইজিরি রচিত ‘আল-বিদা আল-হাওলিয়াহ’ পৃষ্ঠা-৩৫০
আল্লাহ আমাদেরকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রেখে যাওয়া অবিকৃত দীনের উপর চলার এবং দীনের নামে জাহেলদের আবিষ্কৃত নিত্য-নতুন বিদআত থেকে রক্ষা করুন।
আমিন।
আল্লাহু আলাম।