স্বামীর একাধিক বিয়েকে অপছন্দ করা কি ঈমান ভঙ্গের কারণ
অনেক মহিলাই স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে অপছন্দ করে। এতে কি তাদের ইমান নষ্ট হওয়ার বা মুনাফিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে?
নিঃসন্দেহে আল্লাহর প্রতিটি বিধান মানুষের কল্যাণের জন্য। তাঁর প্রতিটি বিধানেই রয়েছে সুনিপুণ হেকমত ও সুগভীর প্রজ্ঞা।
সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং তাকে ভালোবাসে তার জন্য আবশ্যক হচ্ছে, আল্লাহর প্রতিটি বিধানের কাছে নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করা। এটি ঈমানের দাবি।
এর বিপরীতে আল্লাহর কোন একটি বিধানকে অপছন্দ করা বা ঘৃণা করা ঈমান ভঙ্গের অন্যতম একটি কারণ। আল্লাহ তাআলা বলেন,
ذَ ٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ كَرِهُوا۟ مَاۤ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأَحۡبَطَ أَعۡمَـٰلَهُمۡ
“এটা এজন্যে যে, আল্লাহ যা নাজিল করেছেন তারা তা অপছন্দ করেছে। কাজেই তিনি তাদের আমলসমূহ বাতিল করে দিয়েছেন।”
[সূরা মুহাম্মদ: ৯]
সুতরাং কেউ যদি মনে করে, ইসলাম পুরুষদেরকে একাধিক বিয়ের বিধান দিয়ে নারীদের প্রতি জুলুম করেছে, অথবা মনে করে, এই বিধানটি বর্তমান যুগে অনুপযোগী বা এটিকে কেউ ঘৃণার চোখে দেখে তাহলে সে ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত মুরতাদ ও কাফের বলে গণ্য হবে।
তবে কেউ যদি আল্লাহর বিধানের প্রতি সম্মান বজায় রাখে এবং এটিকে বৈধ মনে করে কিন্তু ব্যক্তিগত মানবিক দুর্বলতা ও অনিচ্ছার কারণে স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করুক এটা না চায় বা তার দ্বিতীয় বিয়েকে অপছন্দ করে তাহলে তাতে সমস্যা নেই। এ কারণে সে ঈমান থেকে বের হয়ে যাবে না বা মুনাফিক বলে গণ্য হবে না।
উদাহরণ হিসেবে, মানুষ রোগাক্রান্ত হলে অস্ত্রপাচার, ইনজেকশন নেওয়া বা ওষুধ খাওয়াকে স্বভাবগতভাবে অপছন্দ করে কিন্তু সুস্থতার স্বার্থে তা মেনে নেয়।
অনুরূপভাবে জিহাদ তথা কাফেরদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া স্বভাবগতভাবে মানুষের অপছন্দনীয়। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন,
كُتِبَ عَلَیۡكُمُ ٱلۡقِتَالُ وَهُوَ كُرۡهࣱ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰۤ أَن تَكۡرَهُوا۟ شَیۡـࣰٔا وَهُوَ خَیۡرࣱ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰۤ أَن تُحِبُّوا۟ شَیۡـࣰٔا وَهُوَ شَرࣱّ لَّكُمۡۚ وَٱللَّهُ یَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ
“তোমাদের উপর কিতাল (যুদ্ধ) করাকে ফরজ করা হয়েছে যদিও তোমাদের নিকট তা অপছন্দনীয়। কিন্তু তোমরা যা অপছন্দ কর হতে পারে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং যা ভালবাস হতে পারে তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর আল্লাহ জানেন তোমরা জান না।”
[সূরা বাকারা: ২১৬]
অনুরূপভাবে, ঠাণ্ডার রাতে ঘুম থেকে উঠে অজু করে মসজিদে যাওয়া, সফরের কষ্ট, ক্লান্তি ও নানা রোগ-ব্যাধি সত্বেও পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা, নিজের সম্পদ থেকে জাকাত বের করে গরিবদেরকে দান করা, রমজান মাসে সারাদিন ক্ষুধা-পিপাসায় কাতর হয়ে রোজা রাখা ইত্যাদি মানুষের স্বভাবজাত অপছন্দনীয় বিষয়। কিন্তু তারপরও কেউ যদি আল্লাহর বিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন পূর্বক জাহান্নামের আগুনের ভয়ে এ কাজগুলো করে তাহলে তার জন্য রয়েছে অবারিত সওয়াব।
ঠিক তদ্রুপ কোন নারী যদি স্বামীর একাধিক বিয়ের প্রতি অন্তরে কষ্ট অনুভব করার পরেও আল্লাহর বিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং স্বামীকে সন্তুষ্ট করার স্বার্থে তা মেনে নেয় তাহলে সে আল্লাহর কাছে সওয়াবের অধিকারী হবে ইনশাআল্লাহ।
কিন্তু এর বিপরীতে স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে স্ত্রী যদি তার প্রতি কোন ধরনের জুলুম-নির্যাতন করে, খারাপ আচরণ ও গালাগালি করে, তার গোপনীয়তা প্রকাশ, গিবত ও আমানতের খিয়ানত করে, তাকে অপমান-অপদস্থ করে বা অন্য কোন ভাবে তাকে কষ্ট দেয় তাহলে সে মারাত্মক গুনাগার হবে। এই বিষয়গুলো সাধারণভাবেই কবিরা গুনাহ। কিন্তু স্বামীর সাথে করা হলে তার ভয়াবহতা আরও বেশি।
এক্ষেত্রে তার কর্তব্য হবে, আল্লাহর বিধানের প্রতি আত্মসমর্পণ এবং স্বামীর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দেওয়া। তা করা সম্ভব না হলে এক বুক কষ্ট নিয়ে সংসার করা আবশ্যক নয়। ইচ্ছা করলে সে খোলা তালাক নিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার অধিকার রাখে। আল্লাহু আলম।
উল্লেখ্য যে, কোন স্বামী যদি একাধিক বিয়ে করে তাহলে তার সকল স্ত্রীর মাঝে (রাতযাপন এবং খরচ এর ক্ষেত্রে) সমতা রক্ষা করা ফরজ। কেউ যদি তা করতে পারবে না বলে মনে করে তাহলে তার জন্য একাধিক বিয়ে করা হারাম।