স্বামী তার স্ত্রীর ভরণ-পোষণ না দিয়ে যেদিকে দু’চোখ যায় চলে গেছে। এভাবে কেটে গেছে পাঁচটি বছর। এই সময়ে স্বামী তার বৌয়ের খোঁজ-খবর নেয় নি। কিন্তু এখন স্বামী-স্ত্রী আবার সংসার করতে চাইছে।
আমার প্রশ্ন: তাদের বিয়ের সম্পর্ক কি এখনো আছে?
এ রকম অনেককে বলতে শুনেছি যে, একসঙ্গে একটা নির্দিষ্ট সময় একসাথে না থাকলে বিয়ে টিকে থাকেনা। এ ব্যাপারে মাসআলা জানতে চাচ্ছি।
“নির্দিষ্ট সময় স্বামী-স্ত্রী একসাথে বসবাস না করলে বিয়ে টিকে না বা তালাক হয়ে যায়” ইসলামের দৃষ্টিতে এ কথা সঠিক নয়। বরং স্বামী যদি তালাক না দেয় বা এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে স্ত্রী কোর্টের মাধ্যমে বিয়ে বিচ্ছেদ না ঘটায় তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তালাক পতিত হবে না যদিও এভাবে পাঁচ বছর, দশ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে যায়।
তালাক কখন কিভাবে পতিত হয়?
শাইখ বিন বায রহ. বলেন,
تعتبر المرأة طالقاً إذا أوقع زوجها عليها الطلاق ، وهو عاقل مختار ليس به مانع من موانع الطلاق كالجنون والسكر ، ونحو ذلك . وكانت المرأة طاهرة طهراً لم يجامعها فيه أو حاملاً أو آيسة . أهـ
فتاوى الطلاق للشيخ ابن باز 1/35
“একজন মহিলা তালাক প্রাপ্ত বলে তখনই পরিগণিত হবে যখন তাকে তার স্বামী সুস্থ মস্তিষ্কে স্বেচ্ছায় তালাক প্রদান করে এবং তালাক নিষিদ্ধ হওয়ার কোন কারণ না থাকে।
যেমন: পাগল বা মাতাল হওয়া ইত্যাদি।
সেই সাথে তালাক প্রদানের সময় মহিলাটি ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র ছিল কিন্তু স্বামী এ অবস্থায় তার সাথে সহবাস করে নি। অথবা মহিলাটি গর্ভবতী ছিল বা বার্ধক্য জনিত কারণে স্রাব বন্ধ ছিল।”
[উৎস: ফাতাওয়াত তালাক (তালাক বিষয়ক ফতোয়া)-শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রহঃ ১/৩৫]
সুতরাং উক্ত স্বামী স্ত্রী থেকে পাঁচ বছর নিরুদ্দেশ থাকার ফলে তাদের মাঝে বিয়ে-বিচ্ছেদ ঘটে নি। এখন তারা যদি পুনরায় ঘর সংসার করতে আগ্রহী হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তা শুরু করতে পারে। আলাদা কোন আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন নাই।
তবে আমাদের জানা কর্তব্য যে, আল্লাহ তাআলা স্ত্রীদের সাথে সুন্দর ও সদ্ভাবে জীবন-যাপন করা ফরজ করেছেন। এর ব্যত্যয় ঘটলে আল্লাহর কাঠগড়ায় বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۚ فَإِن كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّـهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا
“নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়ত তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ, অনেক কল্যাণ রেখেছেন।”
(সূরা নিসা: ১৯)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« لاَ يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً ( أي : لا يبغض و لا يكره ) إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِىَ مِنْهَا آخَرَ » ( رواه مسلم )
“কোন মুমিন পুরুষ কোনও মুমিন নারীকে ঘৃণা ও অপছন্দ করবে না; যদি সে তার কোনও স্বভাবকে অপছন্দ করেও, তাহলে সে তার অপর একটি স্বভাবকে পছন্দ করবে।” [সহিহ মুসলিম]
তিনি আরও বলেন,
اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ ، فَإِنَّ المَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ ، وَإِنَّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضِّلَعِ أَعْلاَهُ ، فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ، وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ ، فَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ
‘‘তোমরা স্ত্রীদের সাথে ভাল ব্যবহার করবে। কেননা মহিলাকে বাম পাঁজরের হাড় হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড় সবচেয়ে বাঁকা হয়। যদি তুমি তা সোজা করতে চেষ্টা কর তাহলে তা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি সেভাবেই ছেড়ে দাও তাহলে সর্বদা বাঁকাই থাকবে। সুতরাং তাদের সাথে সৎ ব্যবহার করতে থাক।’’ (সহিহ বুখারি/৩০৮৪)
সুতরাং কোন স্বামী যদি স্ত্রীর সাথে খারাপ আচরণ করে, তার হক নষ্ট করে, তার ভরণ-পোষণ না দেয় বা স্ত্রী-পরিবার ফেলে পালিয়ে বেড়ায় তাহলে নি:সন্দেহে আল্লাহর নিকট যেমন গুনাহগার হিসেবে পরিগণিত হবে তেমনি রাষ্ট্রীয় আইনেও সে অপরাধী বলে গণ্য হবে।
সুতরাং উক্ত স্বামীর কর্তব্য, এত দীর্ঘ সময় স্ত্রীকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার কারণে তার কাছে ক্ষমা চাওয়া পাশাপাশি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া এবং নিজেদের মাঝে মিটমাট করে নেয়া।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন।