শালী-দুলাভাই দেবর-ভাবী বেয়াই-বেয়াইন মাঝে পারস্পারিক সম্পর্ক
শালী-দুলাভাই, দেবর-ভাবী, বেয়াই-বেয়াইন ইত্যাদির মাঝে পারস্পারিক সম্পর্ক, যোগাযোগ ও পর্দা। আমি জানি, আমার ছোট বোনের স্বামী আমার জন্য নন মাহরাম। তার সাথে আমার মেসেঞ্জারে কথা বলা জায়েজ আছে কি? তার সাথে কথা না বলার কারণে সে আমার বোনের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করতে চায় এবং কথা বলা বন্ধ করে দেয়। এটা কি ঠিক? এ ক্ষেত্রে আমার কী করণীয়?
শালী-দুলাভাই, দেবর-ভাবী, বেয়াই-বেয়াইন ইত্যাদি শ্বশুর গোষ্ঠির নন মহরাম নিকটাত্মীয়কে হাদিসের ভাষায় ‘মৃত্যু’ সমতুল্য বলা হয়েছে। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” إِيَّاكُمْ وَالدُّخُولَ عَلَى النِّسَاءِ ” . فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَفَرَأَيْتَ الْحَمْوَ قَالَ ” الْحَمْوُ الْمَوْتُ ”
উকবা ইবনে আমির রা. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সাবধান! মহিলাদের সাথে তোমরা কেউ অবাধে দেখা-সাক্ষাৎ করবে না।
আনসারদের এক ব্যক্তি বললেন: হে আল্লাহর রাসূল, শ্বশুর গোষ্ঠির নিকটাত্মীয় (যেমন: দেবর-ভাবী, শালী-দুলাভাই, বেয়ায়-বেয়াইন ইত্যাদি ব্যক্তিগণ যারা পরষ্পরের জন্য মাহরাম নয়) সম্পর্কে আপনার মত কি?
তিনি বললেন: “সে তো মৃত্যু (সমতুল্য)।”
(বুখারী ও মুসলিম। সুনান আত তিরমিজী [তাহকীক কৃত] হাদিস নম্বর: [1171] অধ্যায়ঃ ১০/ শিশুর দুধ পান (كتاب الرضاع) পরিচ্ছদ: ১৬. যার স্বামী অনুপস্থিত তার সাথে দেখা করা নিষেধ)
ইমাম নওবী রাহ. বলেন:
فمعناه: أن الخوف منه أكثر من غيره، والشر يُتوقع منه والفتنة أكثر لتمكُّنه من الوصول إلى المرأة والخلوة من غير أن يُنكَر عليه بخلاف الأجنبي
(স্বামীর নন মাহরাম নিকটাত্মীয়কে ‘মৃত্যু সমতুল্য’ বলার) অর্থ হল: অন্যদের তুলনায় তার ব্যাপারে ভয় বেশি। তার মাধ্যমে ক্ষতি ও ফেতনার সম্ভাবনা অধিক। কারণে সে বিনা বাদ-প্রতিবাদে যেভাবে একজন নারীর কাছে পৌঁছুতে পারে এবং একাকী তার কাছে যেতে সক্ষম হয় বাইরের অন্য কারো দ্বারা তা সম্ভব নয়।” (শরহে মুসলিম-ইমাম নওবী রহ.)
সুতরাং এ সকল নন মাহরাম নিকটাত্মীয়দের মাঝে পর্দা বিহীনভাবে দেখা-সাক্ষাৎ, অবাধে উঠাবসা, হাসি-কৌতুক, দুষ্টুমি, নির্জনে বসে গল্প করা এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ফোন, মেসেঞ্জার বা সরাসরি কথা বলা বৈধ নয়। প্রয়োজনে কথা বললেও কোমল ও আকর্ষণীয় কণ্ঠ পরিত্যাগ করতে হবে। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوفًا
“যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না। ফলে কুবাসনা করবে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। আর তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে।”
(সূরা আহযাব: ৩২)
আপনি তার সাথে মেসেঞ্জারে কথা না বলার কারণে যদি আপনার বোন (তার স্ত্রী) এর সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করতে চায় বা তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয় তাহলে এটা নি:সন্দেহে আল্লাহর বিধান অমান্য করার শামিল। এতে সে দু দিক থেকে গুনাহগার হবে। যথা:
- এক. বিনা প্রয়োজনে নন মাহরাম মেয়ের সাথে কথা বলা।
- দুই. হালাল স্ত্রীর সাথে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে কথা বন্ধ করা বা তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদের হুমকি দেয়া।
এগুলো স্পষ্ট ফাসেকি কাজ। সুতরাং এমন ব্যক্তির শরিয়া বিরোধী দাবী পূরণ করে গুনাহের কাজে সহযোগিতা করার সুযোগ নাই। অন্যের কারণে নিজে গুনাহগার হতে যাবেন না। বরং সে যদি আপনার সাথে ফোন বা মেসেঞ্জারে কথা বলার জন্য জোরাজোরি করতে চায় তাহলে বিষয়টি আপনার বাবা-মা, পরিবার বা যার মাধ্যমে সম্ভব তাকে জানিয়ে প্রতিকার করা উচিৎ।
আল্লাহ হেফাজত করুন।
আমীন।