সেই আশীর্বাদপূর্ণ সমাবেশ!
শুধু আমাদের প্রিয়জনরাই নয়, আমরা আশা করি যে আমাদের প্রিয় রাসুল (ﷺ) এবং তাঁর পরিবার ও সাহাবীরা যাদের সম্পর্কে আমরা পড়েছি, জেনেছি, যাদের আমরা ভালোবাসি, তারাও আমাদেরকে অভিবাদন জানাবেন মৃত্যুর পর। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এটা কি কোন স্পষ্ট হাদীস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত? বস্তুত একাধিক হাদীসে এর উল্লেখ রয়েছে।
হাদিসটি হল রসুল (ﷺ) উল্লেখ করেছেন, ‘আত্মা সর্বপ্রথম যে দরজায় আরোহণ করবে তা হল ইল্লিয়্যীন, মনে রাখবেন আত্মাকে প্রথমে পূণ্যবান হিসেবে স্বীকৃতি দিবেন আল্লাহ সুবহানা তা’য়ালা। জান্নাতের দুয়ার থেকে দুয়ারে আসা-যাওয়ার পথে ফেরেশতারা বলবেন, পৃথিবী থেকে কি সুন্দর গন্ধই না এসেছে।’
মনে আছে রসুল (ﷺ) আল ইসরা ওয়াল মেরাজের রাতে সেই নেককার যুবতীর ঘ্রাণ পেয়েছিলেন যিনি ছিলেন ফারাউন কন্যার কেশবিন্যাসকারী। কি সুন্দর গন্ধ! তাই পূণ্যবান আত্মারা (আল্লাহ আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন), আকাশে আরোহণ করবে, এবং ফেরেশতারা তাদের সুন্দর ঘ্রাণ পেয়ে মন্তব্য করবে – আহা! কী সুন্দর গন্ধ!
তারপর সেই ব্যক্তি তার নতুন বাড়িতে অর্থাৎ কবরে বসতি স্থাপন করে। আপনাকে পোশাক পরানোর পর, আপনার কবরকে প্রশস্ত এবং আলোকিত করার পর, আপনাকে জান্নাতের খিরকি দেওয়ার পর – বলুনতো এবার কি?
এবার দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করে। রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘মুমিনদের আত্মা সেই ব্যক্তির উপর সমবেত হতে থাকে তাকে গ্রহণ করার জন্য।’ তারা আপনাকে দেখে আরও বেশি আনন্দিত হয় যখন আপনি হন তাদের দীর্ঘ দিনের হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জন।
মুমিনের আত্মাগুলোর এমনই সুন্দর পরিণতি হয়। তাই যাদের অভাব আপনি বোধ করছেন, এমনকি যাদের সাথে আপনার কখনও দেখা হয়নি, তারা সবাই তখন আপনার কাছে আসছে আপনাকে সাদরে গ্রহণ করার জন্য, যাদের আপনি মসজিদে দেখেছিলেন, অথবা দেখেছিলেন বিশেষ কোনো ন্যায়পরায়ণতায়। আপনাকে অভিবাদন জানানোর জন্য তারা আজ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে, বিইযনিল্লাহি তা’য়ালা।
আপনাকে তাদের মাঝে পেয়ে তারা তখন উদগ্রীব হয়ে জিজ্ঞাসা করে, এই ব্যক্তির কি হয়েছে, ওই ব্যক্তির কি হয়েছে? এভাবে তারা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে থাকে। পৃথিবীর খবর পাওয়ার জন্য তারা উদগ্রীব, কারণ তারা এখন এই পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন। এজন্য তারা আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করছে, সবার খবর জানতে চাইছে। চিন্তা করে দেখুন কারো পিতা-মাতার একজন হয়তো আগেই মারা গেছেন, এখন আরেকজন মারা গেলেন, অথবা তিন ভাইবোনের দুইজন মারা গিয়েছে, অথবা ধরুন চারজন খুব কাছের বন্ধুর মধ্যে দুজন এখনও পৃথিবীতে আছে, আর দুজন মারা গেছে। কাজেই যারা মারা গেছে তারা এখন আর দুজনের খবর নিচ্ছে, পৃথিবীতে তারা কেমন আছে জানতে চাইছে।
আবু হুরাইয়া (রা:) বলেন, ‘এমনকি তারা জিজ্ঞেস করবে কে বিয়ে করেছে, কে বিয়ে করেনি, এই ব্যক্তির পরিবারের কি হয়েছে, ঐ ব্যক্তির পরিবারের কি হয়েছে, তাদের অবস্থা এখন কেমন?’
তাদের কাছে এই পৃথিবীর স্মৃতি এখনো রয়েছে এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে তারা এই স্মৃতি থেকে বিস্মৃত হয়নি। খুব দ্রুত তারা আপনার কাছে আসবে এবং পৃথিবীর খবর জানতে চাইবে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলবে, তাকে একা থাকতে দিন, তাকে কিছুটা বিশ্রাম দিন, কারণ তারা পৃথিবীর কষ্টের মধ্যে ছিল তারা সবেমাত্র স্থানান্তরিত হয়েছে, দুনিয়ার খবর জিজ্ঞাসা করার আগে তাকে কিছুটা সময় দিন।
এভাবে কথোপকথন এগিয়ে যেতে থাকে, এবং এই কথোপকথনের ভীতিকর অংশটি হলো তারা হয়তো কারো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে যে মারা গেছে, এবং আপনি বলছেন, তারা কি আপনাদের কাছে আসেনি?
সেই ব্যক্তি কি ইতিমধ্যে মারা যায় নি?
আমি এখানে আসার আগেই তো সে মারা গেছে এবং কথোপকথনের মাঝে তারা বুঝতে পারে যে ঐ ব্যক্তির আত্মা তাদের কাছে আনা হয়নি, তাহলে উপসংহারটি কি দাঁড়ালো?
সেই ব্যক্তি যন্ত্রণাদায়ক আত্মাদের মধ্যে রয়েছে, যারা শাস্তি পাচ্ছে তাদের মধ্যে সেও একজন। তারা একে অপরের সাথে একত্রিত হবার আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত, যে আশীর্বাদ পুণ্যবানদের দেওয়া হয়েছে।
তারা তাদের শাস্তি নিয়ে এখন ব্যস্ত।
এটি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এবং কথোপকথনটি সত্যিই ভীতিকর। কল্পনা করুন যে আপনি সেই কথোপকথন থেকে এবং সেই সমাবেশ থেকে বাদ পড়েছেন। তারা হয়তো আপনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। কারণ আমরা জানিনা আমাদের ভাগ্যে কি আছে। সেই ব্যক্তি যে তিন বছর আগে মারা গিয়েছে এবং যে ব্যক্তিটি গত বছর মারা গিয়েছে, তারা এমন একজনের কথা বলছে যে এর মধ্যে মারা গিয়েছে এবং সে নিখোঁজ। তারা তখন বলে সুবহানাল্লাহ! সেই ব্যক্তি ব্যক্তি তো মারা গেছে انا لله وانا اليه راجعون, আপনি যদি সেই ব্যক্তি হন এবং সেই পুণ্যবানদের সমাবেশ থেকে নিখোঁজ হন তবে?
এবং এটি এমন একটি বিষয় যা নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে।
হতাশা জাগানোর জন্য আমি এ কথা বলছি না। কিছু লোককে আমরা ন্যায় পরায়ন হিসাবে ভেবে নেই যারা মারা গেছে। রাসুল (ﷺ) এবং তাঁর সাহাবীরা পূণ্যবান – এ কথা আমরা নিশ্চিতভাবে জানি। তাদের অবস্থা সম্বন্ধে জেনে আমাদের কি লাভ, যদি আমরা তাদের সাথে যোগ দিতেই না পারি? তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করে, তারা কি অবস্থায় আছে তা জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে কি লাভ, যদি আমরা নিজেদেরকে ন্যায়-নীতির চরম শিখরে উন্নীত করতে না পারি?
আমাদের নিশ্চিত হতে হবে যাতে সে কথোপকথন থেকে, সেই আশীর্বাদপূর্ণ সমাবেশ থেকে আমরা বাদ না পড়ি। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন, মৃত্যুর পর যাদের অভিবাদন জানাতে পুণ্যবানদের আত্মা সমবেত হয়। আল্লাহুম্মা আমীন!
অনন্তের পথে যাত্রা
পর্ব : ১৪
মূল: ড. ওমর সুলাইমান