সেহেরি কতক্ষণ পর্যন্ত খাওয়া যায়
ভোর রাতে সুবহে সাদিক (তথা রাতের শেষ প্রহরে পূর্ব দিগন্তে উত্তর-দক্ষিণ দিকে প্রলম্বিত শুভ্র রেখা) উদিত হওয়া পর্যন্ত (বা ফজরের সময় হওয়া পর্যন্ত ) সেহেরি খাওয়া জায়েজ আছে। সুবহে সাদিক উদিত হলে অবশ্যই পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্যথায় রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَالْآنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُوا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ ۚ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ۖ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ ۚ
“অতঃপর তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর এবং আল্লাহ যা কিছু তোমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন তা সন্ধান কর (সন্তান)। আর পানাহার কর যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার হয়। অতঃপর রোজা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত।”
(সূরা বাকারা: ১৮৭)
বিশিষ্ট হানাফি পণ্ডিত আবু বকর আল জাসসাস (মৃত্যু: ৩৭০ হিজরি) এ আয়াতের তাফসিরে বলেন,
“فَأَبَاحَ الْجِمَاعَ وَالأَكْلَ وَالشُّرْبَ فِي لَيَالِي الصَّوْمِ مِنْ أَوَّلِهَا إلَى طُلُوعِ الْفَجْرِ , ثُمَّ أَمَرَ بِإِتْمَامِ الصِّيَامِ إلَى اللَّيْلِ” اهـ . قاله أبو بكر الجصاص في “أحكام القرآن” (1/265)
“মহান আল্লাহ রোজার রাতগুলোতে স্ত্রী সহবাস ও পানাহারকে বৈধ করেছেন রাতের শুরু থেকে ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত। এর পরে রাত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করার নির্দেশ প্রদান করেছেন।” [আহকামুল কুরআন ১/২৬৫]
ফজরের আজানের কতক্ষণ পূর্বে সেহরি খাওয়া শেষ করা ভালো?
ফজরের আজানের সামান্য পূর্বে সেহরি খাওয়া বন্ধ করা ভালো (তবে তা শেষ সময় নয় বরং শেষ সময় হল, ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত)।
যায়েদ বিন সাবিত (রা.) বলেন,
تَسَحَّرْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ قَامَ إِلَى الصَّلاَةِ قُلْتُ كَمْ كَانَ بَيْنَ الأَذَانِ وَالسَّحُورِ قَالَ قَدْرُ خَمْسِينَ آيَةً.
“আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে সেহরি খেয়েছি। তারপর তিনি নামাযে গমন করেন। আনাস বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, সেহরি এবং আজানের মাঝে সময়ের ব্যবধান কত ছিল?
তিনি বললেন, প্রায় ৫০ আয়াত তেলাওয়াত করার পরিমাণ।” [বুখারি হা/১৯২১]
আজান হয়ে গেলেও খাওয়া চালিয়ে যাওয়া:
পানাহার চালিয়ে যাওয়ার সম্পর্ক সুবহে সাদেক বা ফজর উদিত হওয়ার সাথে। তাই যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ফজর উদিত হয়ে গেছে তাহলে অবশ্যই পানাহার বন্ধ করতে হবে।
সুতরাং কোনও কারণে আজান শোনা না গেলে অথবা মুয়াজ্জিন আজান দিতে বিলম্ব করলে আজানের অপেক্ষা না করে সময় দেখে সেহরি খাওয়া শেষ করতে হবে।
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
إنَّ بِلالا كَانَ يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ فَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُؤَذِّنَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ ، فَإِنَّهُ لا يُؤَذِّنُ حَتَّى يَطْلُعَ الْفَجْرُ
“বেলাল রা. রাতে আজান দেয়। অত:এব তোমরা পানাহার করো ইবনে উম্মে মাকতুম রা. আজান দেয়া পর্যন্ত। আর তিনি ফজর উদিত না হলে আজান দেন না।” (বুখারি হা/১৯১৯)
সহিহ বুখারির অন্য বর্ণনায় আছে, “তিনি অন্ধ ছিলেন। তিনি আজান দিতেন না যতক্ষণ না তাকে বলা হতো যে, ফজর হয়ে গেছে, ফজর হয়ে গেছে।” [সহিহ বুখারি হা/৬১৭]
উল্লেখ্য যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে রাতের শেষ প্রহরে দুটি আজান হত। প্রথমটি দিতেন বিলাল রা.। এ সময় মানুষ ঘুম থেকে উঠত ও তাহাজ্জুদ আদায়কারীগণ সালাত শেষে সেহরির প্রস্তুতি নিতো। কিন্তু ২য় আজান দিতেন অন্ধ সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাকতুম রা.। এ আজান শুনে মানুষ সেহরি খাওয়া বন্ধ করে সওম রাখা শুরু করতো। অত:পর ফজরের সালাত আদায় করতো।
অন্য হাদিসে আছে,
الْفَجْر فَجْرَانِ , فَأَمَّا الأَوَّل فَإِنَّهُ لا يُحَرِّم الطَّعَام ، وَلا يُحِلّ الصَّلاة , وَأَمَّا الثَّانِي فَإِنَّهُ يُحَرِّم الطَّعَام ، وَيُحِلّ الصَّلاة
“ফজর দু ধরণের। প্রথম ফজর পানাহার হারাম করে না এবং নামাজকেও (ফজর নামাজ) হালাল করে না। কিন্তু দ্বিতীয় ফজর (সুবহে সাদেক) পানাহার হারাম করে এবং নামাজকেও হালাল করে”। [হাকেম, বাইহাক্বী, সহীহুল জামে হা/৭৭২৭]
মোটকথা, রাতের শেষ প্রহরে পূর্ব দিগন্ত ব্যাপী ভেসে উঠা বিশাল আলোকরেখা যখন পৃথিবীকে শুভ্রতায় ভরে দেয়, (যখন মোরগ ডাকে, চতুর্দিকে পাকপাখালি কিচির-মিচির শুরু করে) তখন সেহরির সময় শেষ হয় এবং ফজরের ওয়াক্ত শুরু হয় আর তখনই মুয়াজ্জিনগণ ফজরের আজান দেন।
আল্লাহু আলাম।