সাম্প্রদায়ের বিবাদ

কমন মিস্টেকস ইন রামাদান – সাম্প্রদায়ের বিবাদ
রমজান মাসে মুসলিমদের যে ভুলগুলো হয়ে থাকে তার মধ্যে একটি হল সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যে মাতানৈক্য এবং বিবাদ। দুর্ভাগ্যবশত এই বিবাদ চলতে থাকে রমজানের শুরু থেকে পুরো মাস জুড়ে এবং অবশ্যই রমজানের শেষ পর্যন্ত। মুন-সাইটিং এক পর্যায়ে মুন-ফাইটিং এ রূপ নেয়। চাঁদ দেখা নিয়ে সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যে মতানৈক্য তো আছেই, এছাড়া তারাবির নামাজ কত রাকাত, কখন হবে খতম তারাবি- এই বিষয়গুলো নিয়ে বিবাদ চলতেই থাকে।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা আমি যে কথাটি বলতে চাচ্ছি তা হল ভিন্ন মত থাকতেই পারে, এবং কোন বিষয়ে মতামতের ক্ষেত্রে আপনি ভিন্ন অবস্থান নিতেই পারেন। কিন্তু তাই বলে এই নিয়ে লড়াই করা, একে অন্যের মুখ না দেখা, দোষারোপ করা ঠিক নয়। আমরা এই কথা বলতে পারি না এসব বিষয়ে ভিন্ন মতের কারণে তাদের রোজা বৈধ হচ্ছে না।
তবে এটাও ঠিক না যে একই শহরে বসবাসকারী লোকেরা এবং একই পরিবারের সদস্যরা ভিন্ন দিনে রোজা শুরু করবে, এবং ভিন্ন দিনে ঈদ করবে। এক্ষেত্রে সম্প্রদায়ের নেতাদের এবং ইমামদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, মসজিদে এই নিয়ে বিভক্তি ঠিক নয়।
আলহামদুলিল্লাহ আপনার এলাকার ইমাম যদি ৮ রাকাত তারাবির নামাজ পড়েন, আপনিও তাই পড়ুন। আপনি যদি এর চেয়ে বেশি পড়তে চান, তবে বাড়িতে গিয়ে পড়ুন, কিন্তু তারপরও ৮ রাকাতের জন্য জামাতে যোগ দিন। আর আপনার এলাকার ইমাম যদি ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়েন, আলহামদুলিল্লাহ আপনিও তাই পড়ুন। কিন্তু আপনি যদি এর সাথে একমত না হন তবে নীরবে প্রস্থান করুন। তবে মনে রাখবেন, আপনাকে সম্প্রদায়ের সাথে থাকতে হবে, এবং সমর্থন দেখাতে হবে।
আপনার সম্প্রদায় যদি রোজার দিন নির্ধারণ করে থাকে এবং আপনি যদি বিশ্বাস না করেন যে ওই দিন রোজা শুরু করা উচিত, তাহলে আপনি রোজা ভাঙতে পারেন এবং গোপনে আপনার মত অনুযায়ী রোজা রাখতে করতে পারেন। উলামায়ে কেরামরা বলেছেন কেউ যদি চাঁদ দেখে থাকেন এবং বিচারক যদি তার চাঁদ দেখা প্রত্যাখ্যান করেন, তবে ওই ব্যক্তি গোপনে রোজা রাখবেন, তার সম্প্রদায় না রাখলেও।
আপনি যদি এমন কোন সম্প্রদায়ে থাকেন যারা চাঁদ না দেখে গণনার ভিত্তিতে রোজা রাখে, (যদিও আমি এই পদ্ধতির সাথে একমত নই) তবে আপনিও তাই করুন, তারপরও সাম্প্রদায়িক ঐক্য নষ্ট করবেন না। রাসূল (সা.) আমাদেরকে তাঁর কাজে কর্মে দেখিয়েছেন এবং মুখেও বলেছেন রোজার অন্যতম মূল লক্ষ্য হচ্ছে মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ করা। ব্যক্তিগতভাবে আমাদের সবার মধ্যে এই ধারণাটি খুব পরিষ্কার হওয়া উচিত যে মুসলিম হিসাবে আমরা সবাই একসাথে থাকতে চাই, এবং রাসুলের (সা.) সুন্নত ছাড়া আর কিছুই আমাদেরকে একত্রিত করতে পারে না।
সম্প্রদায়ের এ ধরনের বিভাজন প্রত্যক্ষ করাটা সত্যিই খুব দুঃখের বিষয়। এটা মুসলিম হিসেবে আমাদের দুর্বলতা এবং ভালো নেতৃত্বের অভাব। আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা’য়ালা যেন আমাদের সাহায্য করেন।
যদি সত্যিই আমরা রাসুলের (সা.) সুন্নত অনুসরণ করতাম, তাহলে মুসলিম হিসেবে আমাদের অবস্থান আজ ভিন্নতর হত। যাই হোক, আল্লাহ যেন আমাদের রমজান উপভোগ করার তৌফিক দেন এবং আমাদের সবার কাছ থেকে কবুল করে নেন।
আল্লাহুম্মা আমীন!
মূল: শাইখ ওয়ালীদ বাসাইউনি