Writing

সাহাবীদের মধ্যে একজন ছিলেন ‘গোপন মুসলিম’!

তিনি যে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, সেটা কেউ জানতো না। কিন্তু, তাঁর জীবনে সরাসরি ইসলাম বিরোধী কোনো কাজ দেখা যায় না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে কয়েক রাত ছিলো সবচেয়ে সেন্সিটিভ, গোপনীয়।

তারমধ্যে অন্যতম হলো দ্বিতীয় আকাবার রাত। যেই রাতে মদীনাবাসীর সাথে পরামর্শ হয় যে, তিনি মদীনায় যাবেন, তারা তাঁকে নিরাপত্তা দিবে।
সেদিনের এরকম গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ের ‘সমন্বয়ক’ ছিলেন সেই ব্যক্তি!
রাসূলুল্লাহ মক্কায় থাকাবস্থায় মদীনাবাসীর সাথে এমন চুক্তি ছিলো তাঁর জীবননাশের কারণ; যদি এটা জানাজানি হতো।

সেই গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিটি যিনি সমন্বয় করেন, তিনি কতোটা বিশ্বস্ত ছিলেন চিন্তা করা যায়?
তিনি হিজরত করেননি। যার ফলে বদর যুদ্ধে মুশরিকদের হয়ে তাকে যুদ্ধে যেতে হয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবীদেরকে জানিয়ে দেন, তাকে যদি যুদ্ধের ময়দানে পাওয়া যায়, যেন আঘাত করা না হয়; বন্দি করা হয়।
তিনি যুদ্ধে এসে যুদ্ধ করেননি। এমনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেন, একটি খুটি যেভাবে বাঁধা যায়, সাহাবীরা সেভাবে তাকে গ্রেফতার করেন যুদ্ধবন্দী হিশেবে।

বন্দীদের মুক্তিপণের প্রসঙ্গ আসলে সেই ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানান-
“আমি তো গোপন মুসলিম!”
রাসূলুল্লাহ বলেন, আপনার প্রকাশ্য অবস্থান দেখেই আপনার বিচার হবে।
ফলে, তাকে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দিতে হয়।

তিনি আগেই ইসলাম করেছিলেন, কিন্তু মুক্তিপণের সময় রাসূলের মুখে একটি কথা শুনে তার ঈমান পোক্ত হয়। তিনি তখন মনেপ্রাণে মুসলিম হন।
মক্কায় তখন মুশরিকরা, মদীনায় মুসলিমরা।
স্বাভাবিকভাবেই তাঁর থাকার কথা ছিলো মদীনায়। কিন্তু, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে প্রেরণ করেন মক্কায়।
মক্কার লোকজন জানতোই না যে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন।

স্বাভাবিক ভাবেই মক্কায় বসবাস করেন। একদিন, দুইদিন না, মক্কা বিজয়ের আগ পর্যন্ত প্রায় ৬ বছর!
এই সময় তিনি মূলত গোয়েন্দার কাজ করতেন। মক্কায় কী হচ্ছে, কী প্ল্যান চলছে এই খবরগুলো পাঠাতেন মদীনায়।
যেহেতু তিনি মক্কার সম্ভ্রান্ত পরিবারের, ধনী ব্যক্তি এজন্য কেউ তাঁকে সন্দেহ করতে পারতো না।

মক্কা বিজয়ের পূর্বে তাঁর ভূমিকা ছিলো সমন্বয়ক। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষে মক্কাবাসীর সাথে বিভিন্ন ইস্যু সমন্বয় করেন। আবু সুফিয়ানের ইসলাম গ্রহণ ছিলো তাঁর হাত ধরে, মক্কায় গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী ঘোষণা দিবেন, সেটাতেও তিনি সাজেশন দেন।
প্রায় ৬ বছর গোপন মুসলিম থাকার পর এবং তাঁর গোয়েন্দাগিরির দায়িত্ব শেষ হলে তিনি এবার প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দেন মক্কা বিজয়ের সময়।

এর আগ পর্যন্ত মক্কাবাসী জানতোই না তাদের মধ্যে এমন একজন আছেন, যিনি ইসলাম গ্রহণ করে তাদের সব খবর মদীনায় পাঠাচ্ছেন।
সেই সাহাবী হলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাচা আব্বাস ইবনে আব্দিল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু।
যিনি মদীনাবাসীর সাথে রাসূলুল্লাহর এবং মক্কাবাসীর সাথে রাসূলুল্লাহর, এই দুই সময়ই সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন।

রাসূলুল্লাহ ﷺ –এর চাচা আব্বাস ইবনে আব্দিল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রকশ্যে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন রাসূলের নবুওয়াত লাভের প্রায় ২০ বছর পর।

অন্যদিকে তাঁর স্ত্রী লুবাবা বিনতে হারিস রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার পর ইসলাম গ্রহণকারী দ্বিতীয় নারী। তিনি স্বামীর প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণের ২০ বছর পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেন।

আমরা জানি আবু লাহাব মারা গেছে একটি রোগ হয়ে। আমরা অনেকেই জানি না, আবু লাহাবের মৃত্যুর অন্যতম কারণ ছিলো লুবাবা বিনতে হারিস তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। সেই আঘাতের কয়েক দিনের মধ্যেই সে মারা যায়।

সীরাতে মূলত তিনটি সমাজব্যবস্থা পাওয়া যায়।

মদীনায়, মক্কা, আবিসিনিয়া। তিনটি সমাজে ইসলাম পালনের সুযোগ তিনধরনের।
বর্তমানে পৃথিবীর যেকোনো রাষ্ট্রে ইসলাম পালনের অবস্থা যদি দেখতে চান, তাহলে এই তিন সমাজের মধ্যেই সেগুলো ফিট হবে। কোথাও বর্তমান সৌদি আরবের মতো, কোথাও অ্যামেরিকার মতো, কোথাও ফ্রান্সের মতো, চীনের মতো।

সবগুলোই কোনো না কোনোভাবে রাসূল যুগের সমাজব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আমাদের স্বপ্ন এবং লক্ষ্য মদীনার মতো সমাজ। কিন্তু, আমরা কোথাও আছি মক্কা বিজয়-পূর্বের মক্কার সমাজের মতো, কোথাও আছি আবিসিনিয়ার মতো।

লিখেছেন

Picture of আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture