Writing

সাহাবীদের যুগে তালাকপ্রাপ্তা নারী

সাহাবীদের যুগে তালাকের ঘটনা যে পরিমাণ ছিলো, সেটা আমাদের অনেকের কল্পনার বাইরে। ‘তালাকপ্রাপ্তা নারী’ –কে সেই যুগে খুব খারাপ চোখে দেখা হতো না, যেমনটা আমাদের যুগে দেখা হয়।
জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবীগণ তালাক দিয়েছেন, কেউ কেউ দিয়েছেন একাধিক তালাক। আমাদের যুগে তালাককে যতোটা অস্বাভাবিকভাবে সামাজিকভাবে দেখা হয়, সাহাবীদের যুগে তেমনটা ছিলো না।

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর স্ত্রী কুতাইলা বিনতে আব্দিল উজ্জাকে তালাক দেন জাহেলী যুগে। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুও মুলাইকা বিনতে আবি উমাইয়া, উম্মুল হাকিম বিনতে আবি সুফিয়ানকে তালাক দেন।

আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু তুমাদির বিনতুল আসবাঘ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে তালাক দেন। অতঃপর জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবী যুবাইর ইবনুল আউয়াম রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে বিয়ে করেন। বিয়ের ৭ দিনের মাথায় তিনিও তাঁকে তালাক দেন!

যুবাইর ইবনুল আউয়াম রাদিয়াল্লাহু আনহু তালাক দেন আসমা বিনতে আবি বকর রাদিয়াল্লাহু আনহাকে, উম্মে কুলসুম বিনতে উকবা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে।

আবু আমর ইবনে হাফস রাদিয়াল্লাহু আনহু তালাক দেন ফাতিমা বিনতে কায়স রাদিয়াল্লাহু আনহাকে (এটা ছিলো সাহাবীদের যুগে তালাকের বিখ্যাত ঘটনা)।

রিফা’আ ইবনে সামওয়াল রাদিয়াল্লাহু আনহু তালাক দেন তামিমা বিনতে ওয়াহাব রাদিয়াল্লাহু আনহাকে। অতঃপর তাঁকে বিয়ে করেন আব্দুর রহমান ইবনে আয-যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু। কিন্তু, বাসর করার আগেই তিনি তাঁকে তালাক দেন!

সাহাবীদের যুগে সবচেয়ে বিখ্যাত তালাকের ঘটনা ছিলো যায়িদ ইবনে হারিসা রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং যাইনাব বিনতে জাহাশ রাদিয়াল্লাহু আনহার। এই প্রেক্ষাপটে আল্লাহ পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত নাযিল করেন।

যায়িদ ইবনে হারিসা, কুরআনে উল্লেখিত একমাত্র সাহাবী; যাইনাব রাদিয়াল্লাহু আনহা ছাড়াও তিনি আরো দুজনকে তালাক দেন। একজন হলেন উম্মে কুলসুম, আরেকজন হলেন দুররাহ বিনতে আবি লাহাব।

কেউ তালাক দিলেই তার চরিত্র খারাপ হয়ে যায় না বা কোনো নারীর তালাকপ্রাপ্তা হলেই ধরে নিতে হবে তার চরিত্র খারাপ এমন না। তালাকের ঘটনার সাথে খারাপ চারিত্রিক গুণ (যেমন: পরকিয়া) থাকতে পারে। তাই বলে, তালাক হওয়া, তালাক দেয়া মানেই চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে এমন না।

চরিত্রবান, ভালো মানুষ আর ‘ভালো সংসার করা’ এই দুটো এক না। একজনের চরিত্র ভালো, তাই বলে সে খুব ভালো সাংসারিক হবে এমন নাও হতে পারে। ভালোভাবে সংসার করছে না (তালাক হচ্ছে) দেখেই তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে এমন না।

এখানে জাহেলী যুগের মাত্র একটা ঘটনা বলা হয়েছে৷ বাকিগুলো ‘ইসলামি যুগের‘৷ তালাক ব্যাপারটি স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত বিষয়, সবদিক বিবেচনা করে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। ইসলামে যা কিছু হালাল, সেখানে অকল্যাণের চাইতে কল্যাণ বেশি।

তালাককে সামাজিকভাবে যতোটা নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়, এর ফলে তালাকের ‘কল্যাণকর’ দিকগুলো মানুষ অস্বীকার করে বসে।
এমন অনেক স্বামী-স্ত্রী আছে যারা দুঁকে দুঁকে মরছে। সাংসারিক জীবনে চরম অশান্তি।
তাদের বিচ্ছেদ হয়ে গেলেই সবাই চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলে!
এই পোস্টের উদ্দেশ্য হলো, তালাকের ঘটনাগুলোর সাথে চারিত্রিক ত্রুটি থাকতে পারে।

তাই বলে, কারো তালাক হলেই তার চরিত্র খারাপ এমনটা যেন মনে না করি।
একজন মানুষের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো জায়গাই পাওয়া গেলো না। কিন্তু, যখনই শুনা হলো তার তালাক হয়েছে, তখনই তার চরিত্রের দিকে আঙ্গুল তোলা হয়।

আমি চাই, কারো চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার স্পেসিফিক কারণ থাকলে প্রশ্ন তোলা হোক। কিন্তু, তালাক = চরিত্র খারাপ এই ইকুয়েশন থেকে যেন মানুষ বের হয়ে আসে৷

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture