আমরা প্রায়শই এই দেখি যে— একই ক্লাসের দুইজন ছাত্রের আইকিউ বা ট্যালেন্ট একই সমান হওয়া সত্ত্বেও একজন হয়ে উঠেন সকলের কাছে ঈর্ষার কারণ অপরদিকে অন্যজন ভালোবাসার পাত্র হিসেবেই বিবেচিত হোন। কেন এই পার্থক্য?
অধিকাংশ সময় দেখা যায়—যিনি সবার প্রিয় হন, তার মূল্যবোধ- নৈতিকতা এবং সামগ্রিক শিষ্টাচার ও আচরণ উত্তম থাকে। যার ফলে তিনি মানুষের দোয়া অর্জন করেন এবং সেটিই তার অগ্রগতির অন্যতম প্রেরণা হয়ে ওঠে।
এই বিষয়ে সবচেয়ে সুন্দর গল্পটি আমরা দেখি রাসুলে আকরাম এর সিরাত থেকে। গল্পটি হলো তরুণ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর। তিনি ছিলেন মহানবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চাচাতো ভাই। তিনি জানতেন যে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভোরবেলা উঠে ওজু করেন। খুবই তরুণ তবে বুদ্ধিদীপ্ত এই সাহাবী সিদ্ধান্ত নিলন যে— তিনিও ভোরবেলা উঠবেন এবং নবীজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন প্রয়োজন অনুযায়ী ওজু করতেন তখন তিনি পানির ব্যবস্থা করে রাখবেন। দেখুন আদব এবং আচরণের সৌন্দর্য। কী সঠিক সময়ে কী সঠিক কাজ। সুবহানাল্লাহ।
একজন বড় হাদিস পণ্ডিত মুন্নির (রহ.) লিখেছেন যে, ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-চিন্তা করেছিলেন যে “আমি পানি প্রস্তুত করি। কিন্তু এখন আমার সামনে তিনটি বিকল্প আছে।
এক- আমি হয়তো পানি নিয়ে সরাসরি মহানবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রাইভেট স্থানে যেতে পারি,
খ- সারারাত ঘুমিয়ে থাকতে পারি এবং কিছুই না করি, এবং
গ- দরজার কাছে পানি রেখে আসতে পারি যাতে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সহজেই পানি পেতে পারেন।”
প্রখর মেধাসম্পন্ন এই সাহাবী তৃতীয় পদ্ধতি বেছে নিলেন তথা দরজার কাছে পানি রেখে আসতেন। কেন?
কারণ প্রথম ক্ষেত্রে তা মহানবীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন হতো আর যদি পানি প্রস্তুত না করা হতো তাহলে তা মহানবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জন্য অসুবিধাজনক হতো।
আমরা কী শিখলাম? ছোট বয়স হওয়া সত্ত্বেও, এটি তাঁরপরিপক্কতার প্রতিফলন ছিলো। নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বুদ্ধিমত্তার জন্য দোয়া করলেন, “আল্লাহুম্মা ফাকিহহু ফিদ্দীন”। অর্থাৎ—আল্লাহ তাকে দীনের গভীর জ্ঞান দান করুন। তিনি তাফসিরের জনক হয়ে ওঠেন। হয়ে উঠলেন কেয়ামত পর্যন্ত আসা সকল মুফাসসিরদের উস্তাদ।
ভদ্রতা, সুন্দর আচরণ একজন মানুষের জন্য অমূল্য রত্ন তথা অপরের দোয়া অর্জনে সহযোগিতা করে। যা মানুষের দুনিয়া এবং আখেরাত উভয় জায়গয়ই শ্রেষ্ঠত্ব প্রদানে যথেষ্ঠ।