“আমরা সবাই পাপী, নিজের পাপের বাটখারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপি।”
কবির এ কথাটি কতটাই না সত্যি! আমরা নিজেরা প্রতিদিন কত ভুল করি, কিন্তু নিজেদের সে ভুল আমাদের চোখে পড়ে না। কেউ ধরিয়ে দিলে ও হয়তো স্বীকার করতে কষ্ট হয়, সংশোধন করতে কষ্ট হয়। কিন্তু এই আমরা-ই শুধু অন্যের দোষ ত্রুটি অনুসন্ধানে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। নিজেদের ভুল সংশোধনের কোন চেষ্টা না করে শুধু অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাই। কখনও কখনও আত্মতুষ্টিতে ও ভুগি হয়তো বা। যা আমাদের আত্মশুদ্ধির পথে প্রধান অন্তরায়।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম (রহিমাহুল্লাহ) কত সুন্দর উক্তি করে গেছেন!
“যে ব্যক্তি তার নিজেকে ভালোভাবে চিনতে পেরেছে, সে অন্যের দোষ-ত্রুটি বাদ দিয়ে নিজের সংশোধনে লেগে গেছে।”
হ্যাঁ, আসলে সবার আগে আমাদের সবসময় যা চিন্তা করা উচিত তা হলো, নিজেকে সংশোধনের চেষ্টা করা। নিজেকে শুদ্ধ করার চেষ্টায় লেগে থাকা। আত্মশুদ্ধি নিয়ে আমরা যতটা যত্নবান হবো সংশোধনের ক্ষেত্রে আমাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা ততোটা বেড়ে যাবে।
মানুষ ভুল করবে এটা-ই স্বাভাবিক। কিন্তু ভুল করে তার উপর স্হির থাকাটাই সবচেয়ে বড় বোকামি। তাই ভুল স্বীকার করে, নিজের ভুল উপলব্ধি করে সবসময় আত্মশুদ্ধির চেষ্টা করে যেতে হবে। এজন্য প্রয়োজন নফসকে কঠিনভাবে কন্ট্রোল করা। আত্মশুদ্ধির ক্ষেত্রে নফস কন্ট্রোলের পাশাপাশি আমাদের আরেকটা বিষয়ের ক্ষেত্রে যত্নবান হতে হবে। সেটা হচ্ছে মহামূল্যবান সময়ের ব্যাপারে সচেতন হওয়া।
আমরা সবসময় এই বিষয়ের সাথে যেন কোনভাবেই পাল্লা দিতে পারি না। কারণ সময় তো বহমান, একে আমরা সেকেন্ডের জন্য হলে ও ধরে রাখতে পারি না। এই মূল্যবান সময়ের মোটামুটি সদ্ব্যবহার করতে পারলে সেটা আমাদের উভয় জগতের জন্য কল্যাণকর হবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“দুটি নিয়ামতের বিষয়ে অধিকাংশ মানুষ ধোঁকার মধ্যে রয়েছে; তা হচ্ছে সুস্থতা এবং অবসর।
[বুখারি: ৬৪২২]
আত্মশুদ্ধির জন্য অনলাইনে যত কম সময় দেওয়া যায় ততো বেশি উত্তম। বিশেষ করে ফেইসবুক সময় নষ্ট করার একটি উৎকৃষ্ট মাধ্যম। হয়তো কোন ভালো কাজে আসে আসা হয় এখানে ; কোন দাওয়াহ দিতে অথবা দাওয়াহ নিতে, কিন্তু অন্য কোন কিছুতে নিজের অজান্তেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
তাই এই রমাদানের আগে থেকেই আত্মশুদ্ধির ব্যাপারে আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। অনলাইনে অধিক সময় ব্যয় করলে কোন কোন সময় তা সঠিক সময়ে সলাত আদায় করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সলাতে খুশু খুজু বিনষ্টের কারণ ও হয়। ফেইসবুকে বেশি সময় নষ্ট করার ফলে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও হয়তো অনেক ইবাদত করা হয়ে ওঠে না।
সময়ের সঠিক ব্যবহার নিয়ে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমনি সতর্ক ছিলেন তেমনিভাবে সাহাবীরা ও অনেক বেশি সচেতন ছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলতেন,
“আমি ঐ দিনের চেয়ে অন্য কোন বস্তুর উপর অধিক অনুতপ্ত হই না, যে দিনটি আমার জীবন থেকে হ্রাস পেল অথচ তাতে কোন নেক আমল হল না।”
এজন্য অনলাইনে কোন প্রয়োজনে; হোক সেটা কোন কিছু পড়া অথবা কোন তিলাওয়াত বা লেকচার শোনা সেজন্য আমাদেরকে কিছু সময় নির্দিষ্ট করে নিতে হবে।
এবার আসি নফসের সচেতনতার বিষয়ে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত লিখতে গেলে লিখাটি অনেক বড় হয়ে যাবে। অতি সংক্ষেপে বলা যায় মিথ্যা, গীবাহ, পরনিন্দা, হিংসা শিরক, কুফরী, মুনাফিকীসহ যাবতীয় কবীরা গুনাহ ও বিদ’আত বিষয় থেকে যথাসাধ্য বেঁচে থাকতে হবে আমাদেরকে। দৃষ্টির হিফাজত, অন্তরের হিফাজত করা ও নফস কন্ট্রোলের অন্তর্ভুক্ত।
নফসকে বিভিন্ন ভালো কাজে ব্যস্ত রাখলে একদিকে যেমন নফসকে কন্ট্রোল করা যাবে অন্যদিকে সময়ের যথাযথ সদ্ব্যবহার করতে হবে। এজন্য কুরআন তিলাওয়াত করা, তিলাওয়াত শোনা, তরজমা, তাফসীর, সীরাহ এগুলো পড়া যায়। ইসলামের বিভিন্ন বিষয়, আখিরাতের জীবন সম্পর্কিত বিভিন্ন লেকচার শুনতে পারেন।
এছাড়াও ইসলামী অনেক অনেক ভালো বই এখন এভেইলেবল। যথাসম্ভব অফলাইনে-ই বই পড়ার চেষ্টা করতে হবে। না পেলে অনলাইনে পড়তে পারেন। রমাদানের আগের এ দিনগুলোতে রমাদানের প্রস্তুতির জন্য শায়খ আহমদ মূসা জিবরীলের ‘ধূলিমলিন উপহার: রমাদান’ বইটি অনন্য। এই বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে লেকচার সিরিজ ও আছে ; জেমস অফ রমাদান। অনেক গুলো পর্ব আছে, শুনতে পারেন এটিও। ভালো লাগবে, ইনশাআল্লাহ্ উপকৃত হবেন আশা করছি।
এছাড়াও উস্তাদ আলী হাম্মুদা ও মোহাম্মাদ ফারিসের ‘প্রোডাক্টিভ রমাদান’ বইটি আপনার রমাদানকে প্রোডাক্টিভ করার জন্য অনেক হেল্পফুল হতে পারে। কিনে পড়তে পারেন ইনশাআল্লাহ।
মুসলিমদের আমলের বসন্ত রমাদান। তাই রমাদানের আগের এই দিনগুলোতে আসুন আমরা সময়ের ব্যাপারে অধিক সচেতন হই ; সেই সাথে আত্মশুদ্ধির ক্ষেত্রে ও অধিক যত্নবান হই। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের সাহায্য করুন যেন শুধু রমাদানের জন্য নয়, বরং আমৃত্যু আমরা যেন আত্মশুদ্ধিতে নিমগ্ন থাকতে পারি।