রেমিডিস ফ্রম সুরা দ্বোহা

ফ্রাস্ট্রেটেড- ডিপ্রেসড ব্যক্তিদের জন্য গ্রেটেস্ট প্রেসক্রিপশন!

কাফের,মুশরিক বাহিনী প্রিয় নবিজীকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বুলিং করতে লাগলো। তাদের কথার আঘাতে ক্ষত বিক্ষত নবিজীর অন্তর। একদিকে প্রিয় হাবিব বিষন্নতায় ঘেরা সময় পার করছেন, অপরদিকে এই বিষন্নতার মাত্রা বহুগুণে বৃদ্ধি করছে তাঁকে উদ্দেশ্য করে কাফেরদের করা শব্দচয়ন।

‘হ্যাঁ মুহাম্মদ! তোমার রব কি তোমাকে ভুলে গেছেন?’
‘কই! তোমার রব তোমার ডাকে আর সাড়া দেননা কেন?’
‘তোমার উপর আর ওহি নাজিল হয়না কেন?

উপর্যুক্ত বাক্যাদির ন্যায় কিছু বাক্য নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর জীবনের নির্দিষ্ট একটি সময়ে প্রতিক্ষণ শুনতে পেতেন। আর এই সময় ছিলো ‘সুরা দ্বোহা’ নাজিলের পূর্বের ছয় মাস। [১] ইন্ট্রেস্টিং ফ্যাক্ট হলো— এই ছয়মাস রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে কোন ওহি আসেনি। বলা যায়—ওহি প্রেরণের ধারাবাহিকতার মধ্যখানে একটি গ্যাপ ছিলো এই সময়। মুশরিকরা তাদের প্রতীক্ষিত সুযোগ পেলো। নবিজীকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শারিরীক অথবা মানষিক আঘাত করার জন্য যারা ওৎ পেতে বসে থাকতো তারা এই সুযোগের সৎব্যবহারে একটুও ভুল করেনি।

কাফেরেরা নবিজীকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মানসিকভাবে আঘাত দিতেই লাগলো। কোন কোন কাফের জিবরাইল (আলাইসিসালাম) কে শয়তান উদ্ধৃতি দিয়ে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে লাগলো-

“হে মুহাম্মদ! তোমার শয়তান তোমাকে পরিত্যাগ করেছে।”
[সহিহ বুখারিঃ ৪৯৫০]

দীর্ঘদিন ওহি নাজিল হতে বিলম্ব হওয়ায় নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শংকিত, চিন্তিত, বিষন্ন হয়ে পরেন। তিনি ভাবতেছিলেন— রিসালাতের কাজের জন্য কি তিনি যোগ্য নন!

আল্লাহ কি অন্য কাউকে তাঁর এই কাজের জন্য নিযুক্ত করেছেন!
তাঁর উপর কি আল্লাহ তায়ালা কোন কারণে রাগ করেছেন!

একদিকে কাফের-মুশরিকের বুলিং আর অন্যদিকে বাস্তবতার প্রয়াস নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিষন্নতায় নিয়ে আসে নতুন মাত্রা । একদা উম্মুল মু’মিনিন হযরত খাদিজা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) রাসুলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করেন,

“আপনার প্রতিপালক আপনার প্রতি অসন্তুষ্ট হননি তো?”
[তাফসীরে ইবনে কাসির]

মা খাদিজার এহেন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আল্লাহ জানিয়ে দিলেন, ‘তিনি তাঁর হাবিবকে ভুলেও যাননি আবার রাগও করেননি’। সুবহানাল্লাহ।
নতুন ভোরের আলো কতটুকু মিষ্টি হয় তা জানেন?
মাত্র সুবহে সাদিক শেষ করা পূর্ব দিগন্তের বিস্তীর্ণ উজ্জ্বল রেখা যে কোন মানুষের মনকে সজীব করে তুলতে পারে। এই নতুন ভোরের আলোর ক্বসম করেই মহান রাব্বে কারিম সুরা দ্বোহা শুরু করেছেন।

রবের ক্বসমের মাঝেও নিহিতার্থ রয়েছে মানবজীবনের জন্য শিক্ষা। উজ্জ্বল আলোময় নতুন ভোর ইঙ্গিত দেয় জীবনের শুভ্রতার। এইযে— আপনি হতাশার অমানিশায় মত্ত , কোন কিছু হারিয়ে শঙ্কিত, চিন্তিত অথবা স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ার মোহে আবদ্ধ— এই পরিস্থিতি আপনার কাছে অধীর অন্ধকার। আর সেই অন্ধকারকে ভেদ করে যখন শুভ্রতার প্রতিক হিসেবে কোন সুসংবাদ আপনার জন্য আসবে তখনতো আপনিই হবেন মহাখুশি, আনন্দের চিত্তনায়ক। এই আঁধার ভেঙ্গে আলোর সন্ধানের কল্পকথা বুঝানো হয়েছে প্রথম আয়াতের আল্লাহ প্রদত্ত ক্বসমে।

আল্লাহ বলেন, ❝ শপথ পূর্বাহ্নের❞…

আল্লাহ তায়াল যেমন শুভ্রতার গন্ধ বিলাতে পারেন ঠিক তেমনিভাবে জীবনের আধারের মালিকও তিনি। আপনার হতাশাচ্ছন্ন জীবনও কিন্তু আল্লাহর নির্দেশেই ঘটেছে। আমার-আপনার জীবনের তীব্র অন্ধকারের কথাও তিনি জানেন।

দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ তায়ালা গভীর রজনির ক্বসম খেয়ে বিশেষত এই বিষয়টিই বুঝিয়েছেন৷ আল্লাহ ইরশাদ করেন, ❝ শপথ রাতের যখন তা নিঝুম হয়৷❞

বারংবার আল্লাহর কাছে চাওয়া সত্ত্বেও ব্যর্থতার গ্লানি টানতে হয়। সর্বোচ্চ চেষ্টা, দিনের পর দিন পরিশ্রম এবং অগণিতবার আল্লাহর সাহায্য কামনার পরও কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জিত না হলে মনে হয় মেইবি আমার রব আমার উপর রাগ করেছেন। আমার কৃত কোন কর্মের কারণে হয়তো রব আমাকে শুনছেননা আর শুনবেনও না। ঠিক এমনই ভাবনার সাগরে ডুব দিয়েছিলেন সৃষ্টিজগতের রহমত তথা মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। দীর্ঘদিন ওহি বন্ধের কারণে তিনিও ভেবেছিলেন— হয়তো রব আমার উপর রাগ করেছেন, আমাকে ভুলে গিয়েছেন৷

না! প্রতিত্তুর দিলেন আল্লাহ তায়ালা। সুরা দ্বোহার দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নবিজীকে আশ্বাস দিয়ে বললেন ❝নিশ্চয়ই তোমার রব তোমাকে পরিত্যাগ করেননি।

বারবার দো’য়ায় আল্লাহকে ডেকে ব্যর্থ হয়ে নিজেকে রব ভুলে গিয়েছেন মনে করা ব্যক্তির জন্য এই আয়াত এখনই নাজিল হচ্ছে মনে হচ্ছে। যেন আল্লাহ ডাক দিয়ে বলেছেন! হে বান্দা, কিসে তোমাকে আমার স্বরণ থেকে বিরত রাখে? তুমি কেন মনে করছো আমি তোমাকে ভুলে গিয়েছি? তুমি কি জানোনা আমি রহমান, রহিম? তোমার অসংখ্য পাপ এক নিমিষেই মুচন করে দেওয়ার ক্ষমতা আমি কি রাখিনা?

তোমার কি চাওয়া!!!?
আমিতো আছিই… তোমার রব তোমাকে ভুলে যাননি। তোমার ডাকে সাড়া দিবেন শীঘ্রই৷ সাথে অপেক্ষয়মান অনিন্দ্য উপহার।

❝আর অবশ্যই আপনার জন্য পুর্বের জীবন থেকে পরবর্তী জীবন উত্তম।❞

সুবহানাল্লাহ! হতাশার আকাশে যাদের বসবাস তাদেরকে আল্লাহ বলছেন—তোমার পুর্বের অন্ধকার জীবন থেকে আগামীর পথচলা আরো উত্তম হবে৷ ঠিক রাতের অন্ধকার ভেদ করে ভোরের সুর্য যেমন মিষ্টি গন্ধ আর অনুভূতি নিয়ে আসে ঠিক এরকমই হবে তোমার ভবিষ্যৎ। যা নিয়ে তুমি চিন্তিত, মহাক্লান্ত। তোমার অজ্ঞাত সেই উত্তম জিনিসের বাস্তবায়ন হবে খুব শীঘ্রই। আর তা হবে অতীতের না পাওয়া আফসোসের সময় থেকে অনেক অনেক শ্রেয়।

মু’মিনদের কাংখিত আগামী হচ্ছে ‘পরকাল’। আল্লাহ বলছেন— পরকালের শ্রেষ্ঠত্ব দুনিয়ার থেকে সেরা হবে। আর মু’মিনদের তো গন্তব্য জান্নাত। দুনিয়ার পরিক্ষার বিনিময়ে প্রাপ্ত নহর বিশিষ্ট, অগণিত নে’য়ামতে ভরপুর উদ্যান। সুতরাং, অতীত থেকে অনেক ভালো কিছু ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করছে।

এ+ পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করার পরও এ+ না পাওয়া অথবা ব্যবসায় সফলতার জন্য বারবার প্রচেষ্টা চালানোর পরও লস করে হয়তো ফ্রাস্টেটেড! অথচ— ঠিক এই সময় পূর্ণাঙ্গ সবরের সহিত আল্লাহর উপর ভরসা করলে আল্লাহ এমন কিছু উপহার দিবেন যা হারানো স্বপ্নের থেকে হাজারগুণে উত্তম। সুরার পঞ্চম আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এই অঙ্গিকার করেছেন।

আল্লাহ বলেন, ❝আর আচিরেই আপনার রব আপনাকে এমন কিছু দিবেন, যারফলে আপনি খুশি হয়ে যাবেন।❞

সুতরাং, কোন কিছু হারিয়ে ডিপ্রেশনে না ভুগে ভালো কিছুর জন্য অপেক্ষা করুন৷ যেই রব আপনাকে এতো অনুগ্রহ প্রদানের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রেখেছেন সেই রব চাইলে অবশ্যই আপনাকে আপনার হারানো জিনিসের থেকে অনেক উত্তম কিছু দিতে পারেন। যা পাওয়ার পর কৃতজ্ঞতার মহাসাগরের জাহায নাবিক হবেন আপনি।

ফুটনোট- সুরা দ্বোহা নাজিলের পূর্ববর্তী ওহি নাজিল না হওয়ার সময়ের ব্যপ্তি নিয়ে মুফাসসিরদের ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। কারো মতে ৭ দিন, কেও কেও বলেছেন ১৪ দিন আবার অনেকর মতে এর ব্যপ্তি ছিলো প্রায় ৬ মাস।

প্রেসক্রিপশন ফর ফ্রাস্টেটেড পিপল…

আচ্ছা! আপনার-আমার জন্ম, বেড়ে উঠা কিসে থেকে? একগুচ্ছ নাপাক পানি থেকে আমাদের পথচলার শুরু। ভাবতে পারেন! আপনি যেই পাঁচ/ছয়ফুট লম্বা কিংবা সিক্সপ্যাক ওয়ালা স্মার্ট ছেলে, সেই ছেলে মাত্র এক ফোটা নাপাক পানি ছিলেন। সেই পানি থেকে আপনার বেড়ে উঠা। সেখান থেকে এখানে! ছোট্ট অনু থেকে সৃষ্টি করে মহান রব আমাদের দিয়েছেন বেস্ট ফিজিক্যাল স্ট্রাকচার, দিয়েছেন সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হিসেবে খ্যাতি, দিয়েছেন পারিবারিক, সামাজিক, জাতিয় সম্মান৷ কিছুই না থাকা আমি-আপনিকে আল্লাহ যেহেতু এতকিছু দিয়েছেন, অগণিত অনুগ্রহ করেছেন সেহেতু আমার হতাশায় ডুবে থাকার কারণের ইতি টেনে আমাকে সফলতা দান করতেও তিনি পারেন, পারবেন।

নবিজীকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এতিম অবস্থা থেকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মানিত ব্যক্তি বানিয়েছেন৷ এতটাই সম্মানিত যে— যাকে প্রতিনিয়ত অনুসরণ করে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ, যার নাম উচ্চারণ করে প্রশংসাসূচক বাক্য পাঠ না করলে স্বয়ং আল্লাহ নিজেই অসন্তুষ্ট হয়ে যান, যার জীবনি নিয়ে পৃথিবীর প্রায় সকল ভাষায় লেখা হয়েছে অসংখ্য গ্রন্থ, যিনি দু’জাহানারে নেতা। আর কি লাগে! অথচ, প্রিয় হাবিব (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জন্মের আগেই হারিয়েছেন বাবাকে। খুব বেশিদিন মায়ের স্নেহের ছায়ায় থাকার সুযোগ পাননি। অতঃপর দাদা, চাচার স্নেহে কিছু দিনাতিপাতের পর তারাও মারা যান। শান্তির ছাতা হিসেবে মাথার উপরে কাউকেই তেমনটি পাননি। সেই ব্যক্তিকে অনিন্দ্য এসকল অনুগ্রহ প্রদান করা অসীম দয়ার অধিকারী আল্লাহ তায়ালা আমাদেরও দিতে পারেন।

আমার-আপনার শুন্য অতীত থেকে এখন পর্যন্ত আসার কথা স্বরণ করিয়ে দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলছেন,

❝তিনি কি তোমাকে পিতৃহীন অবস্থায় পেয়েও আশ্রয় দান করেননি?❞

❝তিনি তোমাকে পেলেন পথহারা অবস্থায়, অতঃপর সুপথের সন্ধান দিলেন।❞

জন্মের সময় রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুপথ সম্পর্কে অনভিজ্ঞ ছিলেন৷ পরে আল্লাহ তায়ালা-ই তাঁকে সুপথের সন্ধান দিলেন শুধু সুপথের সন্ধানই নয়, শ্রেষ্ঠ এইপথের সর্দার হিসেবে নিয়োজিত করলেন৷ ঠিক আমি আপনিও তো এরকম! আল্লাহ চাইলে আমার জন্ম কোন অমুসলিম নারীর গর্ভে হতে পারতো। হয়তো আমি সুপথ থেকে অনেক দূরে থাকতাম! কিন্তু— আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালাই-তো আমাদের সুপথ চিনিয়েছেন। সুপথের সন্ধান দিয়েছেন, সুপথের মশৃণ কাজে নিয়োজিত রেখেছেন।

আমি-আপনি তো একদিন নিঃস্ব ছিলাম। নিঃস্ব বলতে শুধু ফাইনান্সিয়াল কন্ডিশন বুঝায় না। ওভারঅল আমরা একদিন নিঃস্ব ছিলাম। আমরা না কথা বলতে পারতাম, না বুঝাতে পারতাম, না হাঁটতে, না নিজে বুঝতে…. । সেই অবস্থা থেকে আল্লাহ তায়ালাই আমাদের বিকশিত করিয়েছেন৷ তিনি আমাদেরকে অসংখ্য নিয়ামতের মাধ্যমে সহযোগিতা না করলে আজ আমরা এই অবস্থায় এসে পৌঁছাতে পারতাম না।

❝আর তিনি (আল্লাহ) আপনাকে পেলেন নিঃস্ব অবস্থায় অতঃপর অভাব মুক্ত করলেন৷❞

এই অভাব মুক্তি দ্বারা শুধমাত্র আর্থিক অভাব বুঝায় না। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে বলেছেন, “মাল ও আসবাবের আধিক্য আসল ধনবত্তা নয়, বরং অন্তরের সন্তুষ্টিই শ্রেষ্ঠ ধনবত্তা৷” [ সহিহ বুখারী, যাকাত অধ্যায়]

অর্থাৎ, নবিজীকে নিঃস্ব অবস্থা থেকে অসংখ্য নিয়ামতে প্রসিদ্ধ করেছেন৷ যার ফলে—নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্টার্নালি সেটিসফাইড ছিলেন।

বিখ্যাত সাইক্রিয়েটিস্ট ‘ভিক্টর ফ্রানক্ল’ এর ফেইমাস একটি বই “ম্যান’স সার্চ ফর মিনিং”-য়ে তিনি স্ট্রংলি একটি বিষয় ম্যানশন করেন যে— মানুষ তার জীবনের একটি সুন্দর মিনিং পেতে পারে অন্যের জীবনকে মিনিংফুল করার মাধ্যমে৷ অর্থাৎ, অন্য মানুষকে সাহায্য করার মাধ্যমে। (বিখ্যাত এই লেখক সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়্যারে হিটলার বাহিনী দ্বারা প্রচন্ড নির্যাতিত হয়েছিলেন। এরকম ট্রমাডিক সিচ্যুয়েশনেও অর্থবহ জীবন গঠনের পদ্ধতি নিয়ে রচিত তাঁর এই বিখ্যাত গ্রন্থ এখনও বিশ্বজুড়ে খুবই পপ্যুলার৷)

সুরা দ্বোহা’র শেষ তিনটি আয়াতে পাঠকের জন্য রেসপেক্টিবলি তিনটি নির্দেশনা রাখা হয়েছে৷ যথা:-

এক এবং দুই! প্রথম দুইটি নির্দেশনা হচ্ছে সাহায্য উপযোগী মানুষদের সাহায্য করা কেন্দ্রিক। আর আমরা পুর্বেই জেনেছি যে— অন্য ব্যক্তিদের সহযোগিতা করার মাধ্যমে ইন্টার্নাল পিস পাওয়া যায়। যেই ফিলিংস আল্লাহ তায়ালা-ই আমাদের অন্তরে সেট করে দেন৷ হতাশার সাগর থেকে একগুচ্ছ শান্তির পাঞ্জেরী হতে পারে অন্যকে সহযোগীতা করা।

সুরা দোহা শেষ হয়েছে ‘আল্লাহর অনুগ্রহ প্রচারের’ নির্দেশনার সহিত। আল্লাহর অনুগ্রহ প্রচার বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশে একধরণের প্রশান্তি অনুভূত হয়। আল্লাহর জিকির, তাসবীহ পাঠের মাধ্যমেও সেইম ফিলিংস কাজ করে। সুরা দ্বোহার শেষাংশে আল্লাহ তায়ালা বুঝাতে চেয়েছেন— আমার-আপনার শুন্য অবস্থান থেকে তিনি তার অনুগ্রহের মাধ্যমেই এতদূর পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। যেই আমি একসময় অন্যের কোল ছাড়া এক হাত পরিমাণ মুভ করতে পারতামনা সেই আমাকে গ্রেটেস্ট ফিজিক্যাল স্ট্রাকচার দেওয়া হয়েছে। নিঃস্ব অবস্থা থেকে আজ একটি সোস্যাল পজিশন দেওয়া হয়েছে৷ এত এত করুণার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে উপায় আছে!?

সুরা দ্বোহা ফ্রাস্টেটেড ব্যক্তিদের জন্য একটি প্রেসক্রিপশন। যেখানে বিভিন্ন উপমা ব্যবহারের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মানুষদের মোটিভেটেড করেছেন। আল্লাহ দেখিয়ে দিয়েছেন— একবারে না থাকা অবস্থা থেকে বিশাল অনুগ্রহের মাধ্যমে তিনি আমাদের প্রতিষ্ঠিত রুপদান করেছেন। আল্লাহ তায়ালা যদি এতকিছু আমাদের দিতে সক্ষম হয়েছেন তাহলে যা হারিয়ে যাওয়ার ফলে আমরা বিচলিত, বিষণ্ণ সেই না পাওয়া জিনিসের থেকে হাজারগুণ উত্তম কিছু আমাদের যে কোন সময় দিতে পারেন। তাহলে হতাশায় নিমজ্জিত না হয়ে প্রাপ্ত নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাই মু’মিনের কর্তব্য।

Exit mobile version