রাসূলুল্লাহ ﷺ বিভিন্ন সাহাবীকে বিভিন্ন দায়িত্ব দিয়েছিলেন কেন

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীদের যদি একটি প্রোফাইল তৈরি করেন, দেখবেন একেকজন সাহাবী একেকরকম।
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সবচেয়ে কাছের, সবচেয়ে প্রিয়। কিন্তু, রাসূলুল্লাহ দায়িত্ব দেবার ক্ষেত্রে সবসময় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে প্রাধান্য দেননি।

আবু বকর কয়টি যুদ্ধের সেনাপতি ছিলেন?

বরং দেখা যায় ইসলাম গ্রহণের মাত্র কয়েক মাস পর আমর ইবনুল আ’স রাদিয়াল্লাহু আনহুকে একটি অভিযানের সেনাপতি বানানো হয়; যার অধীনে আবু বকর, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা ছিলেন।

প্রত্যেক সমাজে দেখবেন এরকম কিছু মানুষ আছে যাদেরকে সবাই ভয় পায়।
অনেকসময় সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠে না, আঙ্গুল বাঁকা করতে হয়।

রাসূলুল্লাহর জীবদ্দশায় এমন অনেকক্ষেত্রে এই দায়িত্ব দেয়া হয় উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে।

কুরাইশরা যখন মিডিয়া-অ্যাটাক করছে, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিডিয়া টিম বানান। সেই যুগে মিডিয়ার লড়াই ছিলো কবিতা।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়োগ দেন হাসসান ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহুকে। তিনি একজন ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার। তাঁকে কোনো যুদ্ধের ময়দানে পাবেন না। যুদ্ধে যাবার জন্য তাঁর এতো সাহস ছিলো না। এই দুর্বলতার জন্য তাঁকে কেউ নেতিবাচক কথা বলেনি। বরং তিনি যেই কাজে দক্ষ ছিলেন, সেই কাজের জন্য প্রশংসিত হন।

উসমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু কয়েকটি বাদে প্রায় সবগুলো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু, তাঁর জীবনী পড়লে তাঁর বীরত্বের কাহিনী সেভাবে পাবেন না যেভাবে খালিদ-আলী-আবু দুজানা রাদিয়াল্লাহু আনহুমদের পাবেন।

তিনি বীর, এই ব্যাপারে সন্দেহ নেই। কিন্তু, ইসলামে অবদান রাখার ক্ষেত্রে তিনি সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছিলেন ধন-সম্পদ দান করে।

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু, তাঁর না ছিলো সম্পদ, না তিনি বীরত্বের জন্য বিখ্যাত। তিনি বিখ্যাত জ্ঞানের প্রতি ডেডিকেশনের জন্য।

দাওয়াতি জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো ইতিহাস জানা। কে কোন গোত্রের, ঐ গোত্রের সাথে অন্য গোত্রের সম্পর্ক ইত্যাদি। এসব ইতিহাসে সবচেয়ে এক্সপার্ট ছিলেন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু।

এই সংক্রান্ত যখনই কোনো ক্রাইসিস দেখা গিয়েছে, তখনই বিশেষভাবে ডাকা হয়েছে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে।
হাসসান ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে টিম মেম্বার বানানোর ঘটনাটি উল্লেখযোগ্য।

মদীনাবাসীকে দ্বীন শেখানোর জন্য একজন সাহাবীকে পাঠাতে হবে। একটি ভূখণ্ডকে ইসলামের উপযোগী করতে হবে।
এমন একজন কে হতে পারেন?

ধারাবাহিক সীরাত পড়তে গেলে মনে হবে, সেই একজন আর কেউ না, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুই হবেন।
কিন্তু, দেখুন, পাঠানো হলো মুসআব ইবনে উমাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে।

এমন কাজে মুসআব ইবনে উমাইর কতোটা যোগ্য ছিলেন, সেটা মাত্র দেড় বছরে মদীনায় থেকে তিনি কী করেছেন, সেটা থেকেই বুঝা যায়।
মক্কায় মুসলিমরা নির্যাতিত। এমন অবস্থায় একদলকে পাঠানো হয় আবিসিনিয়ায়। সেই দলের প্রধান বানানো হয় জাফর ইবনে আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে।

কেনো তাঁকেই নির্বাচন করা হলো?

নাজ্জাশীর সাথে তাঁর ঐ ভাষণ থেকেই বুঝা যায় তিনিই ঐ কাজের জন্য কতোটা যোগ্য ছিলেন। তাঁর ডিপ্লোম্যাসি ছিলো অনন্য।
রাসূলের ইন্তেকালের পর মদীনায় সামান্য বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ভাষণ দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

আমরা অনেকেই জানি না, মক্কায়ও তেমনটা দেখা দেয়। অবস্থা এমন দাঁড়ায়, মক্কাবাসীও ইসলাম ত্যাগ করে কিনা সেই শঙ্কা দেখা দেয়।

সেই পরিস্থিতিতে এমন একজন সাহাবী পুরো মক্কার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
এমন পরিস্থিতি আসবে, সেই পরিস্থিতিতে এই সাহাবীর ভাষণে মক্কাবাসী অনুপ্রাণিত হবে, এমন এক ভবিষ্যৎবাণী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায় ৮ বছর আগে করেছিলেন।

সেই সাহাবীর নাম সুহাইল ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু।
মক্কা বিজয়ের পর বেশিরভাগ সাহাবী রাসূলের সাথে মদীনায় আসলেও সেই সাহাবী কেনো মক্কায়ই থেকে গেলেন?

খুব ভালোভাবে সীরাত পড়লে মনে হবে, ঐ একদিনের জন্যই তিনি মক্কায় থাকেন! এটা কাকতালীয় কিছু না। সেই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য তাঁর মতো আর কেউ ছিলো না।

সীরাত এবং সাহাবীদের জীবনী যখন পড়বেন, দেখবেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন সাহাবীকে বিভিন্ন দায়িত্ব দিচ্ছেন।
রাসূলুল্লাহ কেনো ঐ সাহাবীকেই দায়িত্ব দিলেন প্রশ্নটি করলে দেখবেন তাঁর Man-Management সম্পর্কে ধারণা পাবেন।

লিখেছেন

আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

Exit mobile version