রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে মসজিদ/মাদ্রাসার জন্য চাঁদা কালেকশন জায়েজ কিনা?

প্রথমত : রাসূল (সা.) এর সময় থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন মসজিদ এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মিত হয়ে আসছে, কিয়ামত পর্যন্ত ইনশাআল্লাহ হতেই থাকবে। তবে রাসূল (সা.) বা সাহাবাদের (রা.) সময়ে এ ধরণের টাকা কালেকশনের কোন রসম ছিল না।

দ্বিতীয়ত : আমাদের দেশে যে পদ্ধতিতে মসজিদ/মাদ্রাসা বা ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য চাঁদা কালেকশন করা হয়ে থাকে সেটা ইসলামে তো জায়েজ নেই-ই, উপরন্তু এটি একটি নিন্দনীয় ও গর্হিত কাজ বলে ইসলামি বিশেষজ্ঞগণ সকলেই একমত। কেননা, রাসূল (সা.) এর সময়ে মসজিদ সংস্কারের ব্যয়ভার বহন করা হতো সরাসরি বায়তুল মাল থেকেই।
আল মাওসুআত আল-ফিকহিয়্যা : ৯ম খন্ড/পৃষ্ঠা নং- ২৭৫।

তৃতীয়ত : রাস্তার মোড়ে, পাবলিক বাসে, দোকান-পাট, হাট-বাজার, বাড়ি-ঘরে দলবদ্ধভাবে গিয়ে চাঁদা/অর্থ বা অন্যান্য সামগ্রী কালেকশন অত্যন্ত দৃষ্টিকটু এবং ভিক্ষাবৃত্তির-ই শামীল। ইসলাম এ ধরনের কাজ করাকে চরম নিরুৎসাহিত করেন।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং- ১৪২৭, ৬৪৭৩।
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ২২৮৬, ২২৮৮।
সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং- ২৫৮৫, ২৫৮৬।

প্রশ্ন জাগতে পারে, এসব মসজিদ তো গণমানুষের দানের অর্থায়নেই নির্মিত হয় এবং চলে। এ ক্ষেত্রে তো চাঁদা কালেকশন ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই। প্রকৃতপক্ষে চাঁদা/অর্থ রাসূল (সা.) এর শেখানো পদ্ধতিতেই করতে হবে।

মসজিদে নববী প্রতিষ্ঠার পর রাসূল (সা.) ইসলামের প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘সুফফা’র জন্য একটি নির্দিষ্ট কালেকশন পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন যা আমরা কুরআন এবং হাদিস থেকে জানতে পারি। ঐ পদ্ধতির আদলে ট্রাস্টি বোর্ড গঠনপূর্বক নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের অনুদানের অর্থ জমা করার মাধ্যমে বোর্ড কর্তৃক মসজিদ/মাদ্রাসা/ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করতে হবে।
সিরাতে মোস্তফা : ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং- ৪৪৮।
সুরা বাক্বারাহ, আয়াত নং- ২৭৩।

যদি কেউ বা কোনো প্রতিষ্ঠান কমিশনের ভিত্তিতে চাঁদা তুলে, অর্থাৎ যত বেশি কালেকশন তত বেশি পারসেন্টিজ। এটা একেবারে “মুতলাকান হারাম”!
আদ্দুররুল মুখতার: ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা নং- ৪৬।
ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়া : ৯ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং- ৩০৬।
ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ১০ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং- ৪০০।

মসজিদকে অতিরিক্ত সাজসজ্জা দিয়ে সাজানো জায়েজ নেই।
ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ১/৬৪২।

অমুসলিম নির্মাতা দিয়ে মসজিদ নির্মান হারাম
মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ২১/২০।

যাকাতের টাকায় মসজিদ নির্মাণ হারাম
মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ৮/১৫২।

মসজিদ ভেঙ্গে অন্য কিছু (মাদ্রাসা, মুসাফিরখানা ইত্যাদি) করা বৈধ নয়, এমনকি ইমাম রাখার জন্য বাসাও নয়।
মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ১০/৮১, ২৩/১০৩।

লিখেছেন

আলী ওসমান শেফায়েত

জীবনের অসংখ্য পথ ও কল্পিত দর্শনের গোলকধাঁধার মধ্যে চিন্তা ও কর্মের, সরল ও সুস্পষ্ট রাজপথের সন্ধানে...

All Posts

জীবনের অসংখ্য পথ ও কল্পিত দর্শনের গোলকধাঁধার মধ্যে চিন্তা ও কর্মের, সরল ও সুস্পষ্ট রাজপথের সন্ধানে...

Exit mobile version