রমজানের প্রস্তুতি নেবেন কীভাবে?
আজকাল বিষাক্ত সাপ থেকেও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ইস্যুর ছোবল! নিত্যনতুন হাস্যকর অহেতুক সব ট্রেন্ডের নর্দমায় গা ভাসিয়ে দিয়ে আমরা ভুলেই যাচ্ছি পৃথিবীতে আসার আসল উদ্দেশ্যকে!
কার সাথে কার বিয়ে হলো, কার ভিডিও কিভাবে ফাঁস হলো, কোন সেলেব্রিটি কার কাছে নাকানিচুবানি খেল, কোন ক্রিকেটার অল্পের জন্য সেঞ্চুরি করতে পারলো না ইত্যাদি নানান বেহুদা আলোচনায় মত্ত থেকে জীবনটাকে একটা উপহাস্যের নাট্যমঞ্চ বানিয়ে ফেলেছি!
ফেসবুক খুললেই শুধু এইসব চোখে পড়ে! সামনে আসন্ন রমজান নিয়ে আমাদের ভেতর কোনো আলোচনা নেই! কোনো মাথাব্যথা নেই!
অথচ রমজান মাস হলো ইবাদতের বসন্তকাল! এ মাসে অগণিত জাহান্নামী মুক্তি পায়! জান্নাতকে সাজানো হয়! যেকোনো ইবাদতের মর্তবা বেড়ে যায় বহুগুণ এবং সেই সাথে রোজাদারদের জন্য পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা নিজ হাতে দান করার ঘোষণা করেছেন! সেই মোবারকময় মাসে প্রবেশের প্রস্তুতি আমাদের কতটুকু!
তাই এ পর্বে রমজান মাস উপলক্ষ্যে প্রস্তুতি নেয়ার ১০ টি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ তুলে ধরা হলো-
Table of Contents
১. খাঁটি তওবা
পূর্ববর্তী সকল গুনাহ থেকে খাঁটি ভাবে তওবা করে ফিরে আসা হলো প্রথম পদক্ষেপ। যাতে গুনাহমুক্ত অবস্থায় রমজানকে ইস্তেগবাল করা যায়! আর গুনাহ নিয়েই বরকতময় রমজানে প্রবেশ করলে আত্মার প্রশান্তি অনুভব করা যাবে না! তখন রোজা গুলোতেও পাপের ধারাবাহিকতার বদঅভ্যেসে পছন্দের গুনাহটি হয়ে যাবে! রমজান ব্যাপি হতেই থাকবে!
যেমন কি-না একটা চলন্ত গাড়িকে নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড় করাতে গিয়ে আগে থেকেই যদি ব্রেকে পা রাখা না হয় তবে ব্রেক ধরতে ধরতে সীমানা অতিক্রম করে চলে যায়!
তাই রমজানের আগেই পাপের গাড়ির ব্রেক কষুন! নতুবা ব্রেক কষতে কষতে রমজান মাস-ই পার হয়ে যাবে!
২. আমল কবুলের দোয়া করা
রমজানে যে বেঁচে থাকবো আমল করবো এ গ্যারান্টি নেই! তাই সুস্থ শরীরে যেন রোজাগুলো এবং রমজানে ইবাদাত বন্দেগি আরও দ্বিগুণ করে আদায় করতে পারি সে বিষয়ে দোয়া করা।
কোনো কোনো সাহাবি ও তাবেঈগণ থেকে বর্ণিত আছে, তাঁরা ৬ মাস ধরে আল্লাহর কাছে এই দোয়া করতেন, যাতে তিনি তাঁদের রমজান মাস পাওয়ার তাওফিক দেন, এরপর (রমজান শেষে) ৫ মাস ধরে এই দোয়া করতেন, যেন (রমজানের আমলসমূহ) কবুল করা হয়!
৩. রমজানের আগমনে আনন্দিত হওয়া
রমজান মাসের আগমন একজন মুসলিম বান্দার প্রতি আল্লাহর সুমহান নেয়ামতগুলোর (অনুগ্রহসমূহের) একটি। কারণ রমজান কল্যাণময় একটি মৌসুম। এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ জন্য মাসটির আগমনে আনন্দিত হওয়া। এটি হলো কোরআন নাজিলের মাস, মুমিন মুসলমানের দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ ও চূড়ান্ত সংগ্রামের মাস।
৪. কাজা ওয়াজিব রোজা থেকে নিজেকে মুক্ত করা
হজরত আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলতে শুনেছি-
‘আমার উপর বিগত রমজানের রোজা বাকি থাকত যার কাজা আমি শাবান ছাড়া আদায় করতে পারতাম না।’
[বুখারি ১৮৪৯ ও মুসলিম ১১৪৬]
হাফিজ ইবনু হাজার রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, ‘এ হাদিস দ্বারা হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক শাবান মাসে রমজানের কাজা রোজা পালনের চেষ্টা প্রমাণ করে যে, এক রমজান এর কাজা আরেক রমজান প্রবেশ করা পর্যন্ত দেরি করা জায়েয নয়।’
(ফাতহুল বারি ৪/১৯১)
৫. রোজার হুকুম-আহকাম জানা
রমজান ও রোজা সম্পর্কে পর্যাপ্ত ইলম (জ্ঞান) অর্জন করা, যাতে রোজার হুকুম-বিধি-বিধান এবং রমজান মাসের মর্যাদা সম্পর্কে জানা যায়।
৬. রোজার আগে ক্ষতিকর কাজ থেকে মুক্ত হওয়া
সিগারেট থেকে শুরু করে যেনা পর্যন্ত যতো খারাপ কাজ আছে সব থেকে কঠোরভাবে নিজেকে মুক্ত করা।
রমজান মাসের ইবাদাত নষ্ট করতে পারে কিংবা রোজার ভালো কাজ থেকে বিরত করতে পারে এমন কাজসমূহের চ্যাপ্টার গুটিয়ে ফেলা।
৭. পরিবারকে রোজার জন্য প্রস্তুত করা
পরিবারের সদস্যবর্গ যেমন-স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে বসে তাদের রোজার বিধি-বিধান শিক্ষা দেওয়া এবং ছোটদের রোজা পালনে উৎসাহিত করা। নতুনদের রোজা সম্পর্কে ভয়ভীতি দূর করার ব্যবস্থা করা।
৮. ইসলামি বই সংগ্রহ করা
কিছু ইসলামি বই প্রস্তুত করা যা বাড়িতে বসে পড়া সম্ভব। আবার মাসজিদের ইমামকে কিছু ইসলামি বই উপহার দেওয়া, যা তিনি রমজান মাসে লোকদের পড়ে শোনাবেন।
৯. শাবান মাসে রোজা রেখে প্রস্তুতি নেওয়া
হজরত উসামাহ ইব্ন যাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি বললাম-
‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি আপনাকে শাবান মাসের মত অন্য কোনো মাসে এত রোজা পালন করতে দেখিনি। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘এটি রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী একটি মাস, যখন মানুষ গাফিল হয় এবং এমন মাস যখন আমলসমূহ রাব্বুল আলামিনের কাছে উঠানো হয়। তাই আমি পছন্দ করি যে আমার আমল আমি রোজা পালন রত অবস্থায় উঠানো হবে।’ (নাসাঈ ২৩৫৭)
১০. কোরআন তেলাওয়াত করা
হজরত সালামাহ ইবন কুহাইল বলেছেন, ‘(রমজানের আগে) শাবান মাসকে ক্বারীগণের মাস বলা হতো।’
হজরত আম্র ইবনে কাইস রাহমাতুল্লাহি আলাইহি শাবান মাস শুরু হলে, তাঁর দোকান বন্ধ করে কোরআন তিলাওয়াতের জন্য অবসর নিতেন।
হজরত আবু বাকর আল-বালাখি বলেছেন, ‘রজব মাস হল বীজ বপনের মাস, শাবান মাস হল ক্ষেতে সেচ প্রদানের মাস এবং রমজান মাস হল ফসল তোলার মাস।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘রজব মাসের উদাহরণ হল বাতাসের ন্যায়, ‘শাবান মাসের উদাহরণ মেঘের ন্যায়, রমজান মাসের উদাহরণ বৃষ্টির ন্যায়; তাই যে রজব মাসে বীজ বপন করল না শাবান মাসে সেচ প্রদান করল না, সে কীভাবে রমজান মাসে ফসল তুলতে চাইতে পারে?’
হে প্রিয় ভাই-বোনেরা! রজব মাস গত হয়েছে, শাবান মাসের প্রথম সপ্তাহ চলছে। তাই রমজানের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ আজ থেকেই শুরু করুন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে রমজানের রোজা ও ইবাদত-বন্দেগির জন্য যথাযথভাবে প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমিন।