Writing

রমাদানুল মোবারক

আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে পেয়েছি আরেকটি রমাদান মাস। রহমত, নাজাত, মাগফেরাতের মাস। এই মাস বরকতের মাস। এই মাস আমলের পাহাড় পরিণত করার মাস। তবে সব আমলই নিয়তের উপর নির্ভর করে! এই পৃথিবীতে আপনি দুইজন ব্যাক্তিকে দেখতে পাবেন। যাদের একজন আখেরাতের কাজ করেও জাহান্নামি। অন্যজন দুনিয়াবি কাজ করেও জান্নাতি।

দেখলে মনে হবে, প্রথম ব্যাক্তি আখেরাতের কাজ করছে। আর অপরজন দুনিয়াবি কাজ করছে। মূলত তার উল্টো। এখন আপনার প্রশ্ন জাগতে পারে, এরকম কেন হবে বা এর হেতু কী? এর একটিই মাত্র হেতু। আর সেটি হল নিয়ত। আল্লাহ তাআলা মানুষের কার্যকলাপ দেখে না, তার নিয়ত দেখে। তার কাজের ফয়সালাও নিয়ত অনুযায়ী হবে।

প্রথমজন আখেরাতের কাজ করে মানুষকে দেখানোর জন্য। মানুষ তাকে বুযূর্গ বলবে। দ্বীনদার নেককার ব্যাক্তি বলবে। যদি বেশি বেশি করে নামায আদায় করে, লোকেরা তাকে নামাযি বলবে। এতে সামান্য তৃপ্তি অনুভব করা ব্যতীত কাজের কাজ কিছুই হবে না।

অপরজন দুনিয়াবি কাজ তথা ক্ষেত-খামারে কাজ করেও আখেরাতের সামানা অর্জন করে নিচ্ছে। যমীনে লাঙ্গল চালায় আর মনে মনে আল্লাহর যিকির। দেখলে মনে হবে, এগুলো দুনিয়াবি কাজ। মূলত এগুলো দুনিয়াবি কাজ নয়। কারণ, তার নিয়ত ছিল শুদ্ধ, নির্ভেজাল। তারা মনে করেন, আমার এই ক্ষেত-খামার থেকে দেশের মানুষ উপকৃত হবে। এর বদলা স্বয়ং আল্লাহ আমাকে ক্বিয়ামতের দিন দিবেন।

বুখারী শরীফের শুরুতেই একটি হাদিস,
প্রত্যেক কাজই তাঁর নিয়্যাতের উপর নির্ভর করে।
( বুখারী)

কাল ক্বিয়ামতের ময়দানে তিনজন ব্যাক্তিকে সর্বপ্রথম দাঁড় করাবেন। তন্মধ্যে একজন হবে শহীদ, ২য় জন হবে বড় আলেম, অপরজন হবে দানকারী।
আল্লাহ তাআলা শহীদি ব্যাক্তিকে জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি কেন শহীদ হয়েছ?

শহীদ হওয়া ব্যক্তিটি বলেন, ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার রেজামন্দীর জন্য শহীদ হয়েছি। আপনার দ্বীনকে বুলন্দ করতে আমি দিগ্বিদিক ছুটেছিলাম রণক্ষেত্রে। কালিমার পতাকা উড্ডীন করতে আমি জিহাদে যোগদান করেছিলাম ইত্যাদি ইত্যাদি।

আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি আমাকে রাজি-খুশি করতে শহীদ হওনি। আমার দ্বীন বুলন্দ করতেও তুমি শহীদ হওনি। বরং তুমি শহীদ হয়েছ, মানুষ তোমাকে বীর-বাহাদুর বলবে। শহীদদের খ্যাতি অর্জন করবে। তখন আল্লাহ তাআলা ফেরেস্তাদের আদেশ দিবেন, এই ব্যাক্তিকে জাহান্নামের অন্দরমহলের গন্ধকাষ্টে নিক্ষেপ কর। ফেরেস্তারা আদেশ পেয়ে এই ব্যাক্তিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।

এবার জিজ্ঞাসা করবেন বড় আলেমকে। তুমি কী জন্য ইলম অর্জন করেছ?

ব্যাক্তিটি প্রশ্নোত্তরে বলবেন, ইয়া আল্লাহ! আমি আপনাকে রাজি-খুশি করতে আমার অর্ধেক হায়াতকে ইলমের রাস্তায় কোরবান করে দিয়েছি। মানুষকে আপনার দিকে আহবান করতে আমি ইলম অর্জন করেছি। মানুষকে গোমরাহি থেকে সঠিক পথের দিশা দিতে আমি এই ইলমকে হাছিল করেছি।

তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন,
না, তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি ইলম হাছিল করেছ মানুষ তোমাকে বড় আলিম বলবে, বড় বূযুর্গ বলবে। দ্বীনদার-নেককার বলবে। মানুষ তোমাকে হাদিয়া তোহফাহ দিবে। সুতরাং, তুমি তোমার বদলা দুনিয়েতেই পেয়ে গেছ। এখানে তোমার কোন বদলা নেয়। ফেরেস্তাদের আদেশ দিবেন জাহান্নামে নিক্ষেপ করার জন্য। ফেরেস্তারা আদেশ পেয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।

এভাবে ডাকা হবে দানশীল ব্যাক্তিকে। জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি কেন দান করেছ?

দানশীল ব্যাক্তিটি উপরোল্লিখিত ব্যাক্তির ন্যায় উত্তর দিবে। বলবে, আমি পুরো জীবনের অর্জিত মাল দান করেছি আপনাকে রাজি খুশি করতে। আল্লাহ তাআলা বলবেন, না। তুমি দান করেছ মানুষ তোমাকে দানশীল বলবে। মানুষ তোমার দানের আশায় তোমার মুখাপেক্ষী হবে। সুতরাং, তুমি তোমার জাযা দুনিয়াতেই পেয়ে গেছ। এখানে তোমার কোন বদলা নেই। তার সাথে পূর্বের ন্যায় আচরণ করা হবে।
তাদের কাজগুলো ছিল আখেরাতের। কিন্তু নীড় হল জাহান্নাম। তাই বলছি, আল্লাহ তাআলা মানুষের কার্যকলাপ দেখে না। দেখে মানুষের নিয়ত। সবকিছুর ক্ষেত্রে একই হুকুম। যদি আমি কাপড় পরিধান করি মানুষকে দেখানোর জন্য, তাহলে আমি সাওয়াবের ভাগীদার হতে পারব না। যদি আমি এই কাপড় সতর ডাকার নিয়তে পরিধান করি, তাহলে এক ডিলে দুই পাখি মারার মত। সাওয়াবও পেলাম কাপড়ও পরিধান করলাম!

এভাবে আমার প্রতিটি কাজে যদি নিয়ত সহীহ থাকে, তাহলে আমার কাজও সম্পাদন হল, সাওয়াবও হাছিল হল।

তাই নিজেকে যাছায় করে নিই, আমি কোন ব্যক্তির কাতারে শামিল হচ্ছি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন!

লিখেছেন

আল্লাহর দেওয়া অবয়ব মোদের রতন হ্যায় অমূল্য, যাহার নেই বা হারিয়েছে যেই বুঝিবে তাঁহার মূল্য।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture