রাবিআ ইবনে কা’ব রা. বিয়ের পরামর্শদাতা ছিলেন রাসুল (সা.)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি বিয়ে করবে না?”
সেই সাহাবী জবাব দিলেন- তিনি চান শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহর খেদমত করতে। আর বিয়ে করার মতো পর্যাপ্ত অর্থ তাঁর নেই।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে কিছু বললেন না, চলে গেলেন।

কিছুদিন পর আবার রাসূলুল্লাহ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি বিয়ে করবে না?”

আবারও তিনি একই উত্তর দিলেন।
তীয়বার রাসূলের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেবার পর তাঁর চিন্তা জাগলো।
তিনি যে গরীব এটা তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানেন। তিনি দেনমোহর দিতে পারবেন না, তাঁর ঘরবাড়ি নেই। তারপরও যেহেতু রাসূলুল্লাহ তাঁকে জিজ্ঞেস করেছেন, তিনি নিশ্চয়ই এসব ভেবেই জিজ্ঞেস করেছেন।

মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন। পরবর্তীবার রাসূলুল্লাহ এমন প্রশ্ন করলে তিনি রাজি হবেন।

কিছুদিন পর আবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বিয়ের কথা জিজ্ঞেস করলেন।

এবার তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি সহায়-সম্বলহীন। কে আমার কাছে মেয়ে বিয়ে দিবে?”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন, অমুক বাড়িতে গিয়ে অমুকের মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে।

সেই সাহাবী রাসূলের কথামতো চলে গেলেন। বাড়ির কড়া নেড়ে নিজের বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। প্রস্তাব শুনে কনেপক্ষ অবাক হলেও যখন তারা নিশ্চিত হলেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বিয়ের ‘ম্যাচমেকার’, তখন তারা রাজি হয়ে গেলেন।

সাহাবী ছুটে আসলেন রাসূলের কাছে। কনের বাড়ির লোকদের মহানুভবতা দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করলেন। এবার বললেন,
“ইয়া রাসূলাল্লাহ! মোহরানা দেবার মতো কিছু তো আমার কাছে নেই!”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে পাঠালেন বুরাইদা ইবনে খাসিম রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে। সেই সাহাবী তাঁর মোহরানার ব্যবস্থা করেন।

এবার তিনি বললেন,
“ওয়ালিমা করার জন্য তো আমার কাছে অর্থ নেই।”
বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু এবার সেই সাহাবীর জন্য একটি খাসির ব্যবস্থা করেন। কিন্তু, তাঁর কাছে তো যব নেই যে রুটি বানাবেন।

রাসূলুল্লাহকে সেই ব্যাপারে বললে রাসূলুল্লাহ বলেন, “যাও, আমার ঘরে যাও।”

সেই সাহাবী ছুটে গেলেন আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে। আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ঘরে যতো যব ছিলো সব তাঁর কাছে দিলেন।

খাসি আর যব নিয়ে সাহাবী এবার গেলেন শ্বশুরবাড়ি। শ্বশুরবাড়ি থেকে বলা হলো তারা রুটির ব্যবস্থা করবেন, সেই সাহাবী যেন তাঁর বন্ধুদের নিয়ে খাসি জবাই করে রান্নার ব্যবস্থা করেন।

ওয়ালিমার রান্না সম্পন্ন।
এবার তিনি গেলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে তাঁর বিয়ের দাওয়াত নিয়ে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব কম সংখ্যক সাহাবীর বিয়ের অনুষ্ঠানে যান।

রাবিআ ইবনে কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন সৌভাগ্যবান সেই সাহাবী, যার বিয়ের ব্যবস্থা স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেন এবং যার বিয়েতে তিনি অংশগ্রহণ করেন।

শুধু তাই না। তাঁর তো ঘর-বাড়ি ছিলো না।
বিয়ের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে একটি জমি উপহার দেন।

কতো সহজ ছিলো সাহাবী যুগের বিয়ে!

একজন সাহাবীর বিয়েতে আরেকজন সাহাবী সাহায্য করছেন মোহরানা দিয়ে, ওয়ালিমার ব্যবস্থা করে।

লিখেছেন

আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

Exit mobile version