কুরবানির পরিবর্তে তার মূল্য দান করা
সামর্থ্যবান ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি না করে দরিদ্র মানুষকে সমপরিমাণ অর্থ দান করার ব্যপারে ইসলামি শরিয়ত কী বলে- জানালে উপকৃত হব ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদেরকে বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন ফজিলতের বিভিন্ন ধরণের ইবাদত দিয়েছেন। প্রত্যেকটি ইবাদতের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা রয়েছে। তাই কুরআন ও হাদিসে যখন যেভাবে যে এবাদত করার নির্দেশনা এসেছে তখন তা সেভাবে সম্পাদন করাই কর্তব্য। যেমন:
কারো সম্পদের যাকাত ফরজ হলে গরীব-অসহায় মানুষের কল্যাণে আর্থিক যাকাত প্রদান করবে এবং বিভিন্নভাবে তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করবে। হজ ফরজ হলে হজ আদায় করবে। রমজান মাস শেষে খাদ্য দ্রব্য দ্বারা ফিতরা দিবে, কুরবানির সময় কুরবানি দিবে ইত্যাদি।
মহান আল্লাহ তাআলা এ সব বৈচিত্র্যময় এবাদত দিয়েছেন যেন মানুষ বিভিন্ন দিক থেকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে এবং বিভিন্ন প্রকার ফজিলত লাভ করতে পারে।
নানা যুক্তি ও অজুহাত দাঁড় করিয়ে আল্লাহর দেওয়া বিধানের বিপরীত কাজ করা সমীচীন নয়।
সুতরাং কুরবানির সময় কুরবানি করাই উত্তম। বিধানগতভাবে এটি সুন্নত মুয়াক্বাদা-মতান্তরে ওয়াজিব।
কুরবানির পরিবর্তে অন্য কিছু করার বিধান থাকলে অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা বলে যেতেন।
সুতরাং কুরবানি না দিয়ে তার মূল্য টাকা দিয়ে দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করার চিন্তা বর্জনীয়। এ ক্ষেত্রে পশু কুরবানি দিয়ে তার গোশতের একটা অংশ গরীবদেরকে দিবেন, পশুর চামড়ার অর্থ তাদেরকে দেবেন (যদি নিজে ব্যবহার না করেন) এবং সম্ভব হলে কিছু আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা করবেন। তাহলে উভয় দিক থেকে সওয়াব পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তৌফিক দান করুন। আমিন।
সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটির ফতোয়া:
” الضحية عن نفس المسلم وعن أهل بيته (الحي) سنة مؤكدة للقادر عليها ، وذبحها أفضل من الصدقة بثمنها “. انتهى من”فتاوى اللجنة الدائمة” [11 /419]
“সামর্থ্যবান মুসলিম ব্যক্তি এবং তার (জীবিত) পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানি করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। আর তা জবাই করা অধিক উত্তম তার মূল্য দান করার থেকে।”1
তবে ইসলাম সবসময় বিশেষ পরিস্থিতিকে ব্যতিক্রমভাবে মূল্যায়ন করে। অর্থাৎ পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে মানুষ চরম বিপদগ্রস্ত, প্রচণ্ড ক্ষুধা-দারিদ্র্য, হাহাকার, অথবা কোনো গরীব অসহায় ব্যক্তি চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর পথযাত্রী অথচ তাকে সাহায্য করার কেউ নেই অথবা কেউ যদি দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ে তাহলে সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন কথা। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে কুরবানি না করে তার অর্থ দ্বারা বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করা জায়েজ। যেমন:
সাওরির সূত্রে ইমরান বিন মুসলিম থেকে সুওয়াইদ বিন গাফলাহ বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, “আমি বিলালকে বলতে শুনেছি:
لأنْ أتصدق بثمنها – يعني الأضحية – على يتيم أو مغبرّ أحب إليَّ من أن أضحي بها ”
“আমার কাছে একজন এতিমকে বা ধূলিধূসরিত ব্যক্তিকে এর (কুরবানির) মূল্য দান করা কুরবানি করার চেয়ে অধিক পছন্দনীয়।” তিনি বলেন, আমি জানি না এটা আসওয়াদ নিজেই বলেছেন নাকি বিলালের বক্তব্য থেকে।2
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, নফল দান-সদকার চেয়ে নফল হজ অধিক উত্তম কিন্তু যদি নিকটাত্মীয়ের মধ্যে অভাবী থাকে তবে তাদেরকে দান করা নফল হজের চেয়ে অধিক উত্তম।3
আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ উসাইমিন রহ. বলেন,
إذا دار الأمر بين الأضحية وقضاء الدين عن الفقير فقضاء الدين أولى ، لاسيما إذا كان المدين من ذوي القربى
“যদি বিষয়টি কুরবানি করা এবং গরীবদের পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধের মধ্যে আবর্তিত হয় তাহলে ঋণ পরিশোধ করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যদি ঋণগ্রহীতা নিকত্মীয় হয়।”4
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এমন সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে যেসব ধনী লোকেরা অনেকগুলো পশু কুরবানি করে থাকে তারা চাইলে দু একটি কুরবানি রেখে বাকি পশুগুলো বিক্রয় করে সেগুলোর অর্থ দ্বারা অসহায় মানুষের মাঝে বণ্টন করে দিতে পারে। এতেই সেই কুরবানির সুন্নত পালনের পাশাপাশি বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করারও সওয়াব পাবে ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহু আলম-আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।
- স্থায়ী ফতোয়া কমিটি ১১/৪১৯ ↩︎
- মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: ৮১৫৬ ↩︎
- ফাতাওয়া কুবরা ৫/৩৮২ ↩︎
- মজমু ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল ১৩/১৪৯৬ ↩︎