কোরবানি
“আব্বা গো সাপ আইতাসে… বিশাল বড় সাপ!”
চেঁচিয়ে উঠলো বাইজিদ। উঠান পেরিয়ে বারান্দার দিকে ধেয়ে আসছে অনেক বড় একটা পদ্ম গোখরা। বাইজিদের বাবা নাসিরুদ্দিন নৌকার বৈঠা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। সাপটা বারান্দায় ওঠা মাত্র এক আঘাতে মারতে হবে। কিছুতেই ঘরে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না।
ঘরের ভেতর নাসিরুদ্দিনের পোয়াতি স্ত্রী রাবেয়া খাতুন মশারির উপর পলিথিন বিছিয়ে দিতে ব্যস্ত। কোনো ভাবেই পানি আটকাতে পারছে না সে। টিনের কয়েক জায়গায় ফুটো বেয়ে বৃষ্টির পানি সেই রাত থেকে পরছে তো পরছেই!
বৃষ্টির পানিতে বিছানা ভিজে একাকার হয়ে গেছে, রাতে ভালো ঘুম হয়নি রাবেয়ার। হঠাৎ ধুপ ধুপ শব্দ শুনে বারান্দায় বের হয়ে আসলো সে। বাইজিদ আবারো চেঁচিয়ে উঠে বলল-
“দেখ্ আম্মা কত্ত বড় সাপ!”
বাইজিদের মা বুকে এক দলা থুতু দিয়ে বাইজিদকে সরিয়ে নিলো।
“চল বাপ, ঘরে যাই!”
নাসিরউদ্দিন সাপটাকে আঙ্গিনার পানিতে নিক্ষেপ করে বিড়ি ধরালো। মেজাজ ভীষণ খিটখিটে হয়ে আছে তার। টানা সাত দিন ধরে অনবরত বৃষ্টি চলছে তো চলছেই। থামার কোনো নামগন্ধ নাই। হাটে গিয়ে যে তরকারি কিনে আনবে সে বুদ্ধিও নেই। কাজকাম না জুটলে পয়সা পাবে কই! এদিকে পোয়াতি বউটাকেও ডাক্তার দেখানো দরকার। কখন কি হয় বলা যায় না! বাইজিদ হওয়ার সময় কি আপদটাই না গেছিলো সেবার!
সেদিন ছিলো প্রচন্ড ঝড়। ঝড়ে তাদের বড় আম গাছটা পর্যন্ত উল্টে গিয়েছিলো। ওদিকে রাবেয়ার অবস্থাও ছিলো ভীষণ খারাপ! প্রসববেদনায় ছটফট করছিলো সে। হঠাৎ কোথা থেকে যেন এক যুবতী মেয়ে ছুটে এসে তাদের বাড়িতে আশ্রয় নিলো। মেয়েটা নাকি শহরের অনেক বড় এক মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়ছে। কুড়িগ্রামে এসেছে মামার বাড়ি ব্রহ্মপুত্র নদীতে ঘুরতে। নৌকা থেকে নামতেই শুরু হলো প্রচন্ড ঝড়। ঝড়ের কবল থেকে বাঁচতে আশ্রয় খুঁজছিলো সে। নদীর পাশেই নাসিরুদ্দিনের বাড়ি। ভয়ে ভয়ে সেদিকেই ছুটে এসেছে সে। রাবেয়া মেয়েটাকে দেখেই বলেছিল; ‘দেইখছো বাইজিদের বাপ! আল্লাহ আমার ডাকে শুনেছে!’ সে মেয়ে দায়িত্ব নিলো সন্তান প্রসবের। ঘরের বাইরে নাসিরুদ্দিন তখন অস্থিরতায় পায়চারি করছিলো। কিছুক্ষণ পর সুসংবাদ এলো পুত্র সন্তান হয়েছে। আনন্দে নাসিরউদ্দিন কেঁদে ফেললো। সেদিন সেই মেয়েটাকে কিছুই দিতে পারে নি নাসির, কিন্তু মাসখানেক পর শহর গিয়ে ইয়া বড় একটা কাতলামাছ দিয়ে এসেছিলো সে।
দিবেই বা না কেন! নাসিরউদ্দিন কারো কাছে ঋণী থাকতে চায় না। এইতো গেলো পরশু নৌকায় মাছ ধরতে গিয়ে হঠাৎ বৈঠা হাত থেকে ছুটে যায়। সঙ্গে সঙ্গে নাসিরউদ্দিনের সহযোগী কুটু মিয়া পানিতে লাফ দিয়ে বৈঠা বের করে আনে। দীর্ঘ ৫ মিনিট ধরে কুটু মিয়া পানির ভেতর থাকতে পারে। তার এই কেরামতি নাসিরউদ্দিনের বেশ ভালো লাগে। নাসিরউদ্দিন কুটু মিয়ার হাতে তিনটা বিড়ি ধরিয়ে দিয়ে অনেক প্রশংসা করলো। কুটু মিয়া হাসতে হাসতে নৌকার হাল ধরলো। সে দৃশ্য মনে হলে বড়ই আনন্দ হয় নাসিরউদ্দিনের!
“কই গেলা গো!”
রাবেয়া ডাক দিলো। নাসিরুদ্দিন বিড়ি ফেলে দিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকলো।
“কি হইছে কও।”
বিরক্তিভরা কণ্ঠে জবাব দিলো নাসিরউদ্দিন।
“ঘরে যে চাল-ডাল কিচ্ছু নাই সে কথা মনে আছে? না খাইয়া আর ক্যামনে পারন যায় কও!”
বলতে বলতেই কেঁদে ফেলল রাবেয়া। নাসিরুদ্দিন বউয়ের কাছে গিয়ে বসলো। বড্ড পেয়ারা বউ তার। ক্ষিদ পিয়াস একদম সহ্য করতে পারে না। ওর বয়স যখন কেবল এগারো তখনি ঘরে তুলেছিল সে। সেই ছোট থেকেই সময় মতো খাবার না পেলে ঠিক থাকতে পারে না রাবেয়া। রাবেয়ার বাপ দাদা ছিলো জমিদার বংশের মানুষ। সম্ভবত এই কারণে তার রক্তে এখনো আভিজাত্যের কিছু ছিটেফোঁটা লেগে আছে। নাসিরুদ্দিনও তাকে আদর করে মাঝেমাঝে জমিদারের বেটি বলে ডাকে।
“যাইগা! দেখি কোনো কিছুর বন্দোবস্ত করতে পারি কি-না।”
“তুমি আবারো বিড়ি খাইছো? তোমারে না কইছি আর বিড়ি খাইবা না।”
“বিড়ি খাইলাম কই! চাল কেনার টাকা নাই আর বিড়ি পামু কইত্তে?”
“মিছতা কতা কইবা না বাইজিদের বাপ। আমি নিজের চোক্কে দেখছি তুমি বিড়ি খাইছো। তোমার মুখ থাইকা এহনো বিড়ির দুর্গন্ধ আইতাছে!”
“ওই ভেজা ন্যাতন্যাতা একডা ছিলো লুংগির ভান্জে, ওটাই ধরাইছিলাম। আর খামু না।”
লজ্জিত কণ্ঠে বললো নাসির। বউকে যেমন ভালোবাসে তেমনি ভয় পায় সে। রাবেয়া এমনিতেই উদার প্রকৃতির তবে রাগ অভিমানও প্রচুর। একবার নাসিরের সাথে রাগ করে টানা দুই দিন পর্যন্ত মুখে খাবার তুলে নি সে। অনেক পিড়াপিড়ি করে হাতে পায়ে ধরে ভাত খাইয়ে দিয়েছিলো নাসির। সে কথা মনে হলেই রাবেয়ার সাথে সাবধানে কথা বলে নাসিরুদ্দিন।
“আসরের নামাজ পরিছো?”
ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করলো রাবেয়া। নামাজের ব্যপারে বেশ কঠোর সে। নাসিরুদ্দিন আমতাআমতা করতে করতে বলল;
“পরমুনে।”
এমন সময় হঠাৎ কোথা থেকে যেন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো কুটু মিয়া। এসেই হাঁপাতে হাঁপাতে বলল;
“বান আইতাসে ওস্তাদ। বিশাল বড় বান। সব কিছু ভাইসা যাইবো। সব!”
কুটু মিয়ার কথা শুনে নাসিরুদ্দিন ঘরে থেকে বেড়িয়ে নদীর দিকে ছুটলো। নদী ফুলেফেঁপে টইটম্বুর হয়ে উঠেছে। আকার-আকৃতি দেখে মনে হচ্ছে এবার পুরো গ্রাম ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। গোটা আকাশ আবারো কালো করে তুমুল বৃষ্টির আভাস দিচ্ছে। নদীর অদুরে প্রকাণ্ড বটগাছটার শিকড়ের ওপর বসে চারদিক ভালো করে দেখতে লাগলো নাসিরুদ্দিন। কুটু মিয়া তার পায়ের কাছে গিয়ে বসলো। নাসিরুদ্দিন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল;
“এই বান মনে হয় সহজে যাইবো না রে কুটু!”
“তাইলে উপায় কি ওস্তাদ। ”
“উপায় কিছু নাই। সব আল্লার হাওলা।”
|| দুই ||
ঘরের ভেতর এক কোমর পানিতে দাড়িয়ে জিনিস পত্র সব নৌকায় তুলে দিচ্ছে নাসিরুদ্দিন। বাইজিদ নৌকার উপর মাল-সামানা গুছিয়ে দিতে সাহায্য করছে। রাবেয়া নৌকার পাটাতনে শুয়ে আছে। শরীর খুব একটা ভালো নেই তার। সকাল থেকে সামান্য একটু চিঁড়ে গুড় খেয়েই এখন অব্দি আছে সে। পেটের ভিতর মোচড় দিয়ে ক্ষিদের অতৃপ্ত আহবান বারবার অসহ্য যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে। তবুও সে আল্লাহর শুকরিয়ায় মগ্ন। সে জানে, বিপদ একসময় না একসময় কেটে যাবে। অবশ্যই ধৈর্যের বদলা পাবে সে।
“আমরা কনে যাইতাসি আব্বা?”
“তোর ইশকুলে।”
“ইশকুলে ক্যান?”
“ওইডাই তো উচু জায়গা। ওখানেই আশ্রয় নিতে হইবো। দেখলি না সগায় কেমতে ইশকুলের দিকে দৌড়াইতাছে।”
নদীর ঠিক ওপাড়ে কদমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নিচতলায় এতক্ষণে পানি ঢুকে গেছে হয়তো। দোতলায় আশ্রয় নিবে তারা। নদী পার হতে খুব একটা সময় লাগে না। কিন্তু সমস্যা হলো নদীতে এখন প্রবল স্রোত। এই স্রোতের ভেতর দিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। তবুও এগিয়ে গেল নাসিরুদ্দিন। বৈঠা হাতে যারপরনাই বাইতে লাগলো সে। বাইজিদের হাতেও একটা বৈঠা৷ কিন্তু উত্তাল নদীতে বৈঠা বসানোর সাহস পেল না সে। নৌকার এক কোণে কুটু মিয়া জুবুথুবু হয়ে বসে আছে। সকাল থেকে তার প্রচন্ড জ্বর। জ্বরের প্রকোপে আবোলতাবোল বকছে সে। বিরবির করে বলছে;
“আমার মায়ের কব্বরটা ডুইবা গেল ওস্তাদ আমার মায়েরে আপনে বাঁচান।”
এক কথা বারবার শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ হয়ে গেল নাসির। হঠাৎ দেখা দিলো আরেক নতুন সমস্যা। নৌকার তলানি থেকে ভুরভুর করে পানি উপরের দিকে উঠে আসছে। আৎকে উঠলো নাসিরুদ্দিন। প্রতিবছর ঠিক এই সময়টা নৌকা মেরামত করে সে। কিন্তু এবার নানা কারণে আর নৌকা মেরামত করা হয়ে উঠেনি তার।
“আব্বা তাড়াতাড়ি চলো। তলানি দিয়া পানি আইতাছে।”
নাসিরুদ্দিন প্রাণপণে নৌকা চলাতে লাগলো। বাইজিদ একটা স্টিলের গামলা দিয়ে পানি বের করার জন্য কাজে লেগে পরলো। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হচ্ছে না। মাঝ নদীতে গিয়ে নৌকা ধীরে ধীরে ডুবতে শুরু করলো। নাসিরুদ্দিন ডুকরে কেঁদে উঠলো। তার নিজের জন্য নয়। সে সাঁতার জানে, বাইজিদও জানে, কুটুও জ্বরের শরীর নিয়ে কষ্টেমষ্টে পার হয়ে যেতে পারবে। সাঁতার জানে না শুধু রাবেয়া। রাবেয়া ভীতু চোখে তাকিয়ে আছে। নাসিরুদ্দিন রাবেয়ার কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল;
“ভয় পাসনে বউ। আমারে শক্ত কইরা ধর। সাঁতার দিয়া ডাঙায় উঠমু।”
রাবেয়া বেশ শক্ত করে নাসিরুদ্দিনকে আঁকড়ে ধরলো। নৌকা পুরোপুরি ডুবে যাওয়ার সাথে সাথে নাসিরুদ্দিন সাঁতার কাটার চেষ্টা করলো। খরস্রোতা নদীতে একাই সাঁতার কাটা যেখানে কষ্টসাধ্য সেখানে আরেকজনকে পিঠে নিয়ে যাওয়া প্রায়ই অসম্ভব। তবুও নাসির অদম্য শক্তিতে এগিয়ে যেতে লাগলো। বাইজিদ এবং কুটু মিয়া সাঁতার কেটে আগে আগে চলছে। নাসিরুদ্দিন কিছুদূর যেতে না যেতেই শরীরের সব শক্তিই ব্যায় করে ফেলল। এখন আর দুজন মিলে কোনো ক্রমেই ওপারে যাওয়া সম্ভব নয় বুঝতে পেরে রাবেয়া নাসিরের কানে কানে বলল;
“আমার জন্যে চিন্তা করো না গো! স্বপ্নের মইদ্দে আমি আমার মাইয়ার লগে বিশাল একটা বাগানে খেলা করতে দেখেছি। তুমি একাই চলে যাও।”
রাবেয়া ছেড়ে দিলো নাসিরুদ্দিনকে। নাসিরুদ্দিন ফুঁপিয়ে উঠে বউ বউ করে চিৎকার করে হাতড়াতে লাগলো পানির নিচে। চোখের পলকেই ডুবে গেল রাবেয়া। নাসির ডুব দিলো রাবেয়াকে ধরতে। ঠিক এমন সময় কোথা থেকে যেন একটা স্পিডবোট ছুটে এলো। উদ্ধারকর্মির দুজন লোক নাসিরকে স্পিডবোটে টেনে তুললো। উঠেই নাসির রাবেয়ার দিকে ইঙ্গিত দিলো। লোক দুটো আবার পানিতে লাফ দিয়ে রাবেয়াকে তুলে আনলো। একে একে বাইজিদ এবং কুটু মিয়াকেও স্পিডবোটে তুলে নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটলো তারা। রাবেয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক। সে ভালো করে শ্বাস নিতে পারছে না।
|| ৩ ||
নাগেশ্বরী হাসপাতাল। খসখসে একটা বেডের উপর শুয়ে রাবেয়া। তার চোখে মুখে রক্ত নেই, শাদা কাগজের মতো হয়ে আছে। অপারেশনে অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে ওর শরীর থেকে। আর এই বন্যার মধ্যে রক্ত পাওয়াও সম্ভব ছিলো না। অবশ্য সুখের বিষয় হলো তার একটা মেয়ে সন্তান হয়েছে। এবং সে পুরোপুরি সুস্থ। মেয়েটা দেখতে রাবেয়ার মতোই সুন্দর। বাইজিদ তার মায়ের কাছে বসে আছে। বারবার আম্মা আম্মা করে ডাকার পরেও রাবেয়া কোনো সাড়া দিচ্ছে না। তার শরীর বরফের মতো ঠান্ডা।
নাসিরুদ্দিন হাঁটু গেড়ে বসে রাবেয়ার মুখের সামনে এগিয়ে গিয়ে বলল;
“দেখ বউ। কত্ত সুন্দর হইছে আমাগো মাইয়া! একদম তোর মতো। চোখ খোল বউ!”
রাবেয়া আর চোখ খুললো না। কথাও বললো না। ডাক্তার এসে মৃত ঘোষণা দিয়ে চলে গেল। নাসিরুদ্দিন নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলো রাবেয়ার দিকে। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না রাবেয়া আর নেই। বারবার ডাকতে লাগলো সে। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ পেল না।
হাসপাতালে বেশিক্ষণ রাখতেও দিলো না ওকে। দ্রুত সরিয়ে নিতে বলল ডাক্তারেরা। হাসপাতালেও বন্যা কবলিত মানুষের ভিড় জমেছে। কিছুক্ষণ পর রাবেয়াকে কোলে নিয়ে মূর্তির মতো বের হয়ে এলো নাসিরুদ্দিন। কুটু মিয়া বাইজিদ আর বাইজিদের বোনকে নিয়ে স্কুলের ভেতর এক মহিলার কাছে তুলে দিয়ে নাসিরুদ্দিনের সাথে চলতে লাগলো দাফনের কাজ সারতে। কিন্তু চারদিকে শুধু পানি আর পানি। কোথাও দাফনের মতো এতটুকুন জায়গা নেই।
কিছুদূর যাওয়ার পর একদল টুপি পাঞ্জাবি পরিহিত লোকদের সাথে দেখা মিললো নাসিরের। ওরা যাচ্ছিলো বন্যা কবলিতদের সাহায্য করতে। নাসিরকে দেখে নৌকা থামিয়ে দ্রুত তুলে নিলো তাদের। অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোনরকম একটা উঁচু জায়গার দাফনের কাজ শেষ করলো সবাই।
নাসিরের যেন এতক্ষণে ডুকরে কেঁদে ওঠার ফুরসত মিললো। ছোট বাচ্চাদের মতো ভেউভেউ করে কাঁদতে লাগলো সে। ওস্তাদের চোখে পানি দেখে কুটু মিয়াও আর চোখের পানি আটকাতে পারলো না। নাসিরের মনের ভেতর রাবেয়ার শেষ কথাগুলোই বারবার ঘুরতে লাগলো! নিজের জীবনকে কোরবানি দিয়ে হলেও স্বামীকে বাঁচানোর যে আকুতি তার চোখে দেখেছিলো নাসির তা কখনোই ভুলবে না। এমন স্ত্রী পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি আছে বলে জানা নেই নাসিরুদ্দিনের। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো আজ থেকে প্রতিদিন নামাজের শেষে রাবেয়ার জন্য দোয়া করবে। মন ভরে দোয়া করবে। আর কখনো নামাজ ছেড়ে দিবে না।