সাতশো (৭০০) বছর আগের ঘটনা। তখনকার দিনে বিমান ছিলো না যে ভোঁ দৌড় দিয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে চলে যাওয়া যেতো। সেকালে এক লোক দিমাশ্কে মারা গেছেন। সেখান থেকে যেতে মাসের পর মাস লাগে চীনে যেতে। সেই চীনে এক গায়েবানা জানাযার জন্য ডাকা হচ্ছে এভাবে,
”কুরআনের দাওয়াতদানকারীর (জানাযার) সলাত হবে…!”
[যাইলু ত্ববাক্বাতুল হানাবিলাহ, ইবনু রজব হাম্বলী, ৪/৫২৮]
গায়েবানা জানাযা হলো কেউ মারা যাওয়ার পর দূরদেশে থেকে এই জানাযা পড়া হয় তবে লাশ সামনে থাকে না। এই জানাযা পড়া যাবে কি যাবে না বা কখন পড়া যাবে তা নিয়ে আলিমদের মাঝে আলাপ-আলোচনা আছে। তা আমাদের আজকের আলোচনা নয়।
যা হোক, কুরআনের এই দাওয়াতদানকারী কে? তিনি হলেন সাতশো বছর আগের মস্ত বড় আলিম শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ। কুরআনের দাওয়াতদানকারী নামটি তিনি এমনি এমনি পাননি। সারা জীবন কুরআনকে তিনি সম্মান করে গেছেন এবং এর উপর আমল করেছেন। মারা যাওয়ার সময়েও তিনি কুরআনকে ছাড়েননি। তিনি কিভাবে মারা যান?
তাঁর ভাই যাইনুদ্দীন ইবনু তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ এ বিষয়ে জানান,
তিনি ছিলেন জেলখানায়। অন্যায়ভাবে তাকে জেলখানায় রাখা হয়েছিলো। সেখানে বসেই আশি (৮০) বার কুরআন খতম করেন বা শেষ করেন। একাশি (৮১) বারের মাথা সূরাতুল ক্বমারের এই দু’ই আয়াত যখন তিনি পড়ছিলেন,
إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَنَهَرٍ (*) فِي مَقْعَدِ صِدْقٍ عِنْدَ مَلِيكٍ مُقْتَدِرٍ “তাকওয়াবানরা (আল্লাহকে ভয় করে তাঁর কথা যারা মেনে চলে তাঁরা) থাকবে জান্নাতগুলোর মাঝে ও নদীর মাঝে, (বসার জন্য) থাকবে সঠিক আসনে, সবার চেয়ে শক্তিমান মালিকের সামনে। [সূরাতুল ক্বমারঃ ৫৪-৫৫]
এরপর জেলখানার দু’জন নেককার মানুষের সাথে এ দু’ই আয়াতের শিক্ষা নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। এরপর কুরআনের শিক্ষা ও কুরআন আমাদের কী করতে বলে এসব বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। নেককার দু’জনের কুরআন তিলাওয়াত তাঁর কাছে খুবই ভালো লাগতো। এরপর কুরআনের আলোচনা করতে করতেই তিনি আল্লাহর কাছে চলে যান।
[আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়া (ফিক্র), ইবনু কাছীর, ১৪/১৩৮; সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস (মুহাম্মাদ ব্রাদার্স), আলী নদভী, ২/১২৯]
জান্নাতের আয়াত নিয়ে কথা বলতে বলতে বিদায়, আল্লাহর কাছে দু’আ করি তিনি যেন ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহকে জান্নাতুল ফিরদাউসের মেহমান বানান।