Writing

বিয়ে

আগেই উল্লেখ করেছি আল্লাহ আমাদের মধ্যে সহজাত অনুভূতি দিয়েছেন, আর এই সহজাত অনুভূতির মধ্যে একটি হল বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ভালোবাসা। এই ভালোবাসা খুবই স্বাভাবিক এবং আল্লাহ অনুমোদিত। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন এই ভালবাসাকে কিভাবে পূর্ণতা দিতে হয়, এবং এখানেই এসেছে বিয়ের প্রসঙ্গ। অবশ্যই বিয়ের কথা কুরআনে এসেছে। সাধারণত বিয়েতে কুরআনের যে আয়াতটি পাঠ করা হয়, এমনকি নিমন্ত্রণপত্রেও প্রায়ই যে আয়াটির উল্লেখ থাকে তা হল আর-রূমের একটি আয়াত।

وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦٓ أَنۡ خَلَقَ لَكُم مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ أَزۡوَٰجًا لِّتَسۡكُنُوٓاْ إِلَيۡهَا وَجَعَلَ بَيۡنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحۡمَةًۚ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٍ لِّقَوۡمٍ يَتَفَكَّرُونَ
আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে।
[সূরা আর-রূম: ২১]

তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকে তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন। আমরা এর আগে আলোচনা করেছি যে জান্নাতে আদম (আ:) একা ছিলেন, তাই আল্লাহ তার পাঁজর থেকে হাওয়াকে (আ:) সৃষ্টি করেছেন। এখানেও ঠিক একই কথা, আল্লাহ পুরুষ থেকে নারীকে সৃষ্টি করেছেন। বিবাহ নামক বন্ধনটিই হল নারী পুরুষের পারস্পরিক অনুভূতির প্রকৃত রূপায়ন।

এই আয়াতে তিনি বর্ণনা করেছেন বিয়েতে আমাদের ঠিক কি কি অনুভূতি থাকা উচিত। আল্লাহ কিন্তু কেবল প্রেম ভালোবাসার কথাই বলেননি, তিনি বলেছেন – وَجَعَلَ بَيۡنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحۡمَةًۚ – আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। مَّوَدَّةً অর্থ কি? স্নেহ-মমতা, বন্ধুত্ব, ঘনিষ্ঠতা, করুণা, একে অপরের প্রতি যত্নবান হওয়া, পারস্পরিক বিশ্বাস, এবং ত্যাগ এসব সবই مَّوَدَّةً এর অন্তর্ভুক্ত। আরবি ভাষা এতটাই সমৃদ্ধ যে এর একটি শব্দের অনেকগুলো অর্থ ইংরেজিতে এবং বাংলায় রয়েছে। তিনি কিন্তু কেবলমাত্র مَّوَدَّةً এর কথাই বলেননি, তিনি আরো বলেছেন وَرَحۡمَةً, রাহমা অর্থ করুণা, প্রেমময় করুণা, এবং দয়া।

আমরা জানি বৈবাহিক জীবনের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক সবসময় খুব সহজ ভাবে যায় না। ভালোবাসার অনুভূতি বদলায়, বদলে যায় মাওয়াদ্দাহ (স্নেহ ভালোবাসা)। যখন কোনো কারণে মাওয়াদ্দাহ কমে যায়, তখন রাহমাকে (করুণা/দয়া) অনুপ্রবেশ করানো উচিত।

আমার মধ্যে যদি দয়া থাকে, ভালোবাসার অনুভূতি না থাকলেও এই দয়ার কারণে আমি আমার জীবনসঙ্গীর সাথে এমন আচরণ করব যা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা খুব আকর্ষণীয়ভাবে এই আয়াতে শব্দগুলো ব্যবহার করেছেন। আয়াতের শেষে বলেছেন -إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٍ لِّقَوۡمٍ يَتَفَكَّرُونَ- নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সেই কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে। এই যে আল্লাহ আদম (আ:) থেকে হাওয়াকে (আ:) সৃষ্টি করেছেন, এবং স্বামী স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক অনুভূতি দিয়েছেন, এসব সবই আল্লাহর নিদর্শন, তাদের জন্য যারা চিন্তা করে।

বৈবাহিক জীবনটা সবসময় মসৃণ নয়, টুকটাক ঝামেলা হতেই পারে। তখন একটু বিরতি নিয়ে আমাদের চিন্তা করা উচিত, বিয়ের আসল লক্ষ্য কি, এতে কি ধরনের অনুভূতি থাকা উচিত? ইসলাম বিয়ের ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করেছে। হাদিসে এসেছে রাসূল (সা:) বলেছেন –

“হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা সামর্থ্য রাখ তাদের উচিত বিয়ে করে ফেলা। কেননা বিয়ে দৃষ্টি অবনতকারী ও লজ্জাস্থানকে হেফাযতকারী। আর যার সামর্থ্য নেই তার উচিত রোযা রাখা। কেননা রোযা যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী।”[সহিহ বুখারী]

ইসলামিক সমাজ ব্যবস্থায় সতীত্ব এবং নৈতিকতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নারী পুরুষের মধ্যে আল্লাহ যে অনুভূতি দিয়েছেন একমাত্র বিয়ের মাধ্যমেই তা পূর্ণতা পায়, এবং এটাই আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উপায়।

অন্য একটি হাদিসে রাসূল বলেছেন, আল্লাহ তিনজন ব্যক্তিকে সাহায্য করেন এবং তাদের জীবন সহজ করে দেন। সুবহানাল্লাহ, তাদের মধ্যে একজন হল সেই যুবক যে বিয়ে করতে চায় চরিত্র রক্ষার জন্য, কিন্তু তার সামর্থ্য নেই। সূরা আন-নূরে আল্লাহ তায়ালা বিয়ের আদেশ দিয়েছেন –

وَ اَنۡکِحُوا الۡاَیَامٰی مِنۡکُمۡ وَ الصّٰلِحِیۡنَ مِنۡ عِبَادِکُمۡ وَ اِمَآئِکُمۡ ؕ اِنۡ یَّکُوۡنُوۡا فُقَرَآءَ یُغۡنِهِمُ اللّٰهُ مِنۡ فَضۡلِهٖ ؕ وَ اللّٰهُ وَاسِعٌ عَلِیۡمٌ
আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।
[সূরা আন-নূর: ৩২]

এমন নয় যে আল্লাহ শুধু অর্থবিত্ত বা শারীরিক ক্ষমতা দিয়ে সাহায্য করবেন, বিবাহিত দম্পতির মনে তিনি তৃপ্তিও এনে দিবেন।

মুসলিম সমাজের মূল ভিত্তি হচ্ছে বিয়ে। এতে কেবল প্রেম ভালবাসার অনুভূতিই নয়, এর সাথে সাথে চলে আসে দায়িত্ব, বন্ধুত্ব, ত্যাগ, ধৈর্য, যত্নশীলতা, সহানুভূতিশীলতা। বিবাহিত দম্পতির কাছ থেকে এই অনুভূতিটাই আল্লাহ চান।

আল্লাহ যেন প্রতিটি বিয়েতে বরকত দেন, যারা বৈবাহিক জীবনে কঠিন সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, আল্লাহ যেন তাদের জন্য সহজ করে দেন।
আল্লাহুম্মা আমীন!

সিরিজ: কুরআনে সব আছে

মূল: ড: হাইফা ইউনিস

লিখেছেন

Picture of ফাহমিনা হাসানাত

ফাহমিনা হাসানাত

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture