কুরআনের এক তৃতীয়াংশ
সে শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে উসাইমীনকে এতটাই ভালোবাসে যে ইবনে উসাইমীন শুধু তার প্রিয় শায়খই নন, তিনি এই পৃথিবীতে তার সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি।
এই অকৃত্রিম ভালোবাসার কারণ জানতে হলে ফিরে যেতে হবে ৩০ বছর পেছনে। তখন সে ছিল নিতান্তই একজন শিশু, সে স্বাগত জানিয়েছিল শায়খ ইবনে উসাইমীন সহ আরো কয়েকজন শায়েখকে তার বাবার বাড়িতে। তার বাবা নিজেও ছিলেন একজন সম্মানিত শায়খ।
অতিথিদের একজন শিশুটিকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “তুমি কুরআন থেকে কত কতটুকু মুখস্ত করেছো?” তিনি আরো ঘোষণা করলেন, “আমি আশা করছি তুমি তোমার বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করবে।”
ছেলেটি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলো না! সে তখনও কোনো জুজ (পারা) মুখস্ত করেননি এবং তার বাবাকে বিব্রত করতে চায়নি।
শিশুটির চেহারায় পরিবর্তন লক্ষ্য করে শায়খ ইবনে উসাইমিন বলে উঠলেন: “আমি সাক্ষ্য দিতে পারি যে সে এ পর্যন্ত কুরআনের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মুখস্থ করেছে মাশাআল্লাহ।” ছেলেটি নিজেই অবাক হল এবং মনে মনে ভাবল,
“সত্যিই কি আমি তা করেছি!” অতঃপর শায়খ জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি সূরা আল-ইখলাস মুখস্থ করো নি?” শিশুটি দ্রুত উত্তর দিল, “হ্যাঁ আমি করেছি! শায়খ বললেন, “এটা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।”
সেই শিশুটি আর কেউ নয়, আমি নিজেই। এরপর শায়খ আমার জন্য দু’আ করলেন এবং এ পর্যায়ে কথোপকথনের মোড় পরিবর্তিত হল।
এই গল্পটি সর্বদা আমার হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে, শুধু এই কারণে নয় যে এই গল্পটির সাথে আমার শিক্ষক ইবনে উসাইমিন জড়িত, বরং এই গল্পের শিক্ষাগুলোও আমাকে ভাবতে শিখিয়েছে। কিছু শিক্ষা নিচে তুলে ধরছি –
অনুগ্রহ করে কাউকে, বিশেষত শিশুদেরকে, এমন প্রশ্ন করবেন না যা তাদের বিব্রত করতে পারে। আপনার প্রশ্নের প্রতি অন্যদের প্রতিক্রিয়ার দিকে মনোযোগ দিন এবং যদি দেখেন তা ভাল নয়, আলোচনার বিষয় পরিবর্তন করুন।
মানুষকে গড়ে তুলুন এবং তাদেরকে নিজের সম্পর্কে ভালো বোধ করতে দিন। এতে করে আপনি সারা জীবনের জন্য তাদের হৃদয় জয় করে নিবেন। শায়খ মুহাম্মাদ ছেলেটিকে সেদিন সবার সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছিলেন, এবং ছেলেটি যেন নিজের সম্পর্কে সুধারণা পোষণ করে সেই চেষ্টা করেছিলেন। কল্পনা করুন সেদিন যদি শায়খ বলতেন “কি লজ্জার বিষয় তুমি তোমার বাবার মত হাফিজ নও, বড় হয়ে তুমি কিভাবে একজন শায়খ হবে?” তাহলে অবশ্যই আজ আমি এই গল্পটি লিখতাম না, এবং শায়খের ব্যাপারে মাথাও ঘামাতাম না। কিন্তু শায়খের সেদিনের ব্যবহারের কারণে ছেলেটি তাকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে ভালবেসেছিল। মানুষের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে আমাদেরকে সহানুভূতিশীল হতে হবে – আমাদের সহকর্মী, কর্মচারী, বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সদস্য – সবার সাথেই।
আপনার সন্তানদেরকে জ্ঞানী লোকদের সাথে মিশতে দিন। এটা তাদের আরো পরিণত হতে সাহায্য করবে এবং জ্ঞানীদের সংস্পর্শে থেকে অসাধারণ অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ করে দিবে।
আমরা আমাদের প্রত্যাশা যেন অন্যের উপর চাপিয়ে না দেই। এটা জরুরী নয় যে পিতা শায়খ হলে তার সন্তানরাও শায়খ হবে। তাই অল্পবয়সী বাচ্চাদের উপর অতিরিক্ত প্রত্যাশা করার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। শুধুমাত্র একজনকে ধার্মিক দেখায় বলে তার মানে এই নয় যে তিনি খুব নিখুঁত একজন মানুষ, বা ভালো জীবনসঙ্গী, বা আদর্শ নেতা, বা বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী হতে পারবেন।
ভালো ব্যবহার এবং ভালো কাজের প্রভাব যুগ যুগ ধরে বহাল থাকে। শুধুমাত্র একটু ভালো ব্যবহার এবং একটুখানি দয়া একজন মানুষের জীবনকে বদলে দিতে পারে। মনে রাখবেন, “kind people are the best kind of people.” আপনিও হয়ে উঠতে পারেন সেইসব দয়ালু লোকদের একজন!
মূল: শায়েখ ওয়ালীদ বাসাইউনি