কুরআনের ১ম সূরা আল ফাতিহা – নিরাময় পর্ব : ১
এই সিরিজে আমাদের ধার্মিক পূর্বসূরিদের কুরআনের সাথে সম্পর্ক এবং প্রতিক্রিয়ার গল্পগুলি রয়েছে। যেহেতু এটি প্রথম পর্ব, তাই অনেকে হয়তো সুরা বাকারাহ থেকে একটি গল্প আশা করছেন, কিন্তু অনেক সময় আমরা ভুলে যাই যে কুরআনের প্রথম সুরাটি আসলে সুরা বাকারা নয়, এটি সূরা ফাতিহা, যা রাসুল (ﷺ) সাতটি ঘন ঘন তেলোয়াতকৃত আয়াত বলতেন, কারণ আমরা প্রতি রাকাতে এই সুরা পাঠ করি, এটি প্রথম জুয, এটিই কুরআনের প্রথম সূরা।
পুণ্যবানদের জীবনে সূরা ফাতিহা কিভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল সেই সম্পর্কে অনেক গল্প এবং হাদিস আছে। তবে সিরিজের শুরুতে আমি আমার বিশেষ প্রিয় একটি হাদিস আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই।
আবু সাঈদ আল খুদরি (রা:) বলেন: একবার একদল সাহাবী ভ্রমণ করছিলেন এবং তারা একটি অমুসলিম গোত্রের সাক্ষাৎ লাভ করলেন, তখন তারা গোত্রটিকে তাদের আতিথেয়তা করতে বললেন। কিন্তু গোত্রটি তাদের সাথে কঠোর আচরণ করলো, এবং তাদের আশ্রয় দিতে রাজি হলো না। এক অর্থে তারা সাহাবীগণকে নিজের পথ দেখে নিতে বলল। আবু সাঈদ (রা:) বলেন: আমরা একরকম প্রত্যাখ্যাত বোধ করছিলাম, এবং বাহিরে তাঁবু খাটানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। এভাবে আমরা একটি রাত অতিবাহিত করলাম।
আবু সাঈদ (রা:) বলেন: পরেরদিন গোত্রের লোকেরা এসে আমাদের বলল: আমাদের প্রধানকে সাপে কামড় দিয়েছে। তোমাদের কাছে কি এমন কোনো ঔষুধ আছে যা এর নিরাময় করতে পারে, অথবা এমন কেউ কি আছে যে রুকিয়া করতে পারে?
আবু সাঈদ (রা:) বলেন: আমি তখন উত্তর দিয়েছিলাম, তোমরা আমাদের সাহায্য করোনি, আমাদের আশ্রয় দাওনি, কাজেই আমরা তোমাদের জন্য কিছুই করব না যতক্ষণ না তোমরা আমাদের এর বিনিময়ে অর্থ প্রদান করো। অর্থাৎ তোমরা যদি সাদরে আমাদের গ্রহণ করতে, আশ্রয় দিতে তবে আমরা বিনামূল্যে একাজ করতাম। তোমরা আমাদের প্রত্যাখ্যান করেছো যে কারণে তোমাদের গোত্র থেকে আমাদেরকে দূরে রাত কাটাতে হয়েছে। কাজেই অর্থের বিনিময়ে আমরা একাজ কাজ করব।
অমুসলিম গোত্রটি এতে রাজি হল, তারা বলল: এর বিনিময়ে আমরা তোমাদের একটি ভেড়ার পাল দিব। আবু সাঈদ (রা:) বলেন: আমাদের মধ্যে এক সাহাবী ঐ প্রধানের কাছে গেলেন। তিনি উম্মুল কুরআন – সূরা ফাতিহা পাঠ করতে শুরু করলেন। তারপর তিনি ওই প্রধানের ক্ষত স্থানটি থুতু দিয়ে মালিশ করে দেন। এভাবে তিনি তা করতেই থাকলেন যতক্ষণ না পর্যন্ত ঐ প্রধান ভালো বোধ করতে শুরু করলো।
সুবহানাল্লাহ, এই গোত্রের প্রধান একজন অমুসলিম। কাজেই এই হাদীসটি থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি একজন অমুসলিমের সুস্থতার জন্য দু’আ করা যাবে, তাদের নিরাময়ের জন্য চেষ্টা করা যাবে, এমনকি তাদের ওষুধের ব্যবস্থা করা যাবে।
তাই আবু সাঈদ (রা:) বলেন: সূরা ফাতিহা পড়ার পর ঐ গোত্রের প্রধান সুস্থ হয়ে উঠে। স্পষ্টতই তারা খুশি হয়ে একটি ভেড়ার পাল এনে সাহাবীদেরকে দিল। কিন্তু সাহাবীরা বললেন: একটু দাঁড়ান, এটা কি আমাদের জন্য হালাল? তারা বলল দেখুন আমরা প্রশংসা করছি এই ভেড়ার পালটি আমাদের দেওয়ার জন্য, কিন্তু আমরা এটি গ্রহণ করতে সক্ষম হব না যতক্ষণ না আমরা রাসুলের (ﷺ) কাছে যাই এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করি এটা গ্রহণ করা আমাদের জন্য জায়েজ হবে কিনা।
আবু সাঈদ (রা:) বলেন: আমরা তাদের ছেড়ে রাসুলুল্লাহর (ﷺ) কাছে গেলাম। আমরা আমাদের অবস্থা সম্পর্কে রাসুলকে (ﷺ) জানালাম, রাসুল (ﷺ) হাসতে লাগলেন, এবং বললেন আপনারা কিভাবে জানেন যে সূরা ফাতিহা কাউকে নিরাময় করতে পারে? অর্থাৎ আমি তো আপনাদের কখনও শিখাইনি যে সুরা ফাতিহা নিরাময় হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, আপনারা কিভাবে এর ব্যবহার জানলেন? রাসুল (ﷺ) হাসতে হাসতে বললেন: আপনারা ভেড়ার পাল গ্রহণ করার জন্য এগিয়ে যান এবং আমার জন্যও এর একটি অংশ বরাদ্দ করুন।
এখন গল্পটি থেকে যে শিক্ষা আমরা গ্রহণ করতে পারি তা হল: সমগ্র কুরআন একটি শিফা –একটি নিরাময়, তবে তা আধ্যাত্মিকভাবে। কিন্তু যা সুরা ফাতিহাকে অনন্য করে তুলে তা হল এটা আধ্যাত্মিক নিরাময় তো বটেই, শারীরিকভাবেও তা আমাদের জন্য শিফা। আমরা নিজেরা যখন অসুস্থ থাকি, আমাদের সন্তান সন্ততি যখন অসুস্থ থাকে তখন এই সূরা তেলাওয়াত করতে পারি। আমরা আশা করি আল্লাহ সুবহানাতায়ালা সূরা ফাতিহার মাধ্যমে আমাদের নিরাময় করবেন, আমাদের মর্যাদাকে উন্নীত করবেন, এবং আমাদের কুরআনের মানুষে পরিণত করবেন। আল্লাহুম্মা আমীন!
আল ফাতিহা – নিরাময়
পর্ব : ১
কুরআনের মানুষ
মূল: ড. ওমর সুলাইমান
অনুবাদ: ফাহমিনা হাসানাত