Writing

পুরুষের “পর্দা”

বোনদের পর্দা, প্রোফাইল পিক নিয়ে দেখি অনেক লিখালিখি হয়। তবে ভাইদের নিয়েও লিখা উচিত!! আমরা মনে করি পর্দা নারীর জন্যই নাযিল হয়েছে!!
না ভাই সর্ব প্রথম আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা মুমিন পুরুষের পর্দা কথা বলেছেন –

قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصٰرِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذٰلِكَ أَزْكٰى لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌۢ بِمَا يَصْنَعُونَ.
অর্থঃ মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।
[আন নূরঃ আয়াত নং - ৩০]

অনেকে ভাই আছেন যারা রাস্তাআঘাটে চলাফেরা ক্ষেত্রে নিজের চোখ সংযত করেন না অথবা চাইলেও সংযত করতে পারেন না। তাতেই শয়তান আপনার মনে কুমন্ত্রণা দেওয়া শুরু করে দেয়। একবার তাকালে কিছু হয় আবার তাকা তারপর যিনার দিকে নিয়ে যায়, আস্তাগফিরুল্লাহ। তাই যখন কোন রাস্তায় কোন বোনের দিকে নজর গেলে সাথে সাথে নজর নিচে নিয়ে আসবেন আর পড়বেন “আস্তাগফিরুল্লাহ” ৩ বার। এইটি পরীক্ষিত আমল আমি নিজে এই আমল করে অনেক লাভবান হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।

আপনি যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের বেস্ট একটা ছবি আপলোড করেন এর ফলে যদি কোন নারীর মনে সামান্য অনুভূতিরও সৃষ্টি হয়, এর জন্যও অবশ্যই আপনাকে জিজ্ঞাসিত করা হবে। আপনি বলতে পারেন পুরুষের ত মুখ পর্দার অন্তর্ভুক্ত নয়। জ্বি ভাইজান তা অন্তর্ভুক্ত নয়। কিন্তু মেয়েদের মনে আপনার চেহারা দেখেই ত শয়তান ফিতনার সৃষ্টি করবে। কিছু বোন আছেন তারা অনেক সময় দেখা গেছে সরাসরি বলেই দেন যে “ভাইয়া আমি আপনার উপর ক্রাশ খাইছি”

আর এই কথা ফিতনা হয়ে আপনাকে নিয়ে যাবে হারাম রিলেশনশিপের দিকে আর আপনি আপনার ভবিষ্যৎ হালালের হক নষ্ট করবেন। এই ফিতনার জন্য আপনাকে জবাব দিতে হবে।

কেননা ওই নারীরাই সেদিন শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য আপনার বিরুদ্ধে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার কাছে অভিযোগ জানাবে। কোন জাহান্নামিই সেদিন চাইবে না সে একা জাহান্নামি হোক, আর তার বদ আমলের অংশীদার জান্নাতের আরাম আয়েশ ভোগ করুক।

আপনার কি মনে হয় শয়তান শুধু পুরুষদেরকেই ওয়াছওয়াছা দেয়??

-না, সে সবাইকে ওয়াছওয়াছা দেয় ।

আপনার ছবি দেখে যতজন মহিলা চোখের যিনা করছে এর একটা অংশ অবশ্যই আপনার আমলনামায় যুক্ত করা হবে। ঠিক তেমনি; যেমনভাবে কোন নারীকে আপনি দেখলে তার একটা অংশ ঔ নারীর আমলনামায় ও যুক্ত করা হয়।

আমাদের সমাজ মনে করে পর্দা ও চোখের হেফাজত এগুলো নারীর জন্য, পুরুষের জন্য নয়। না, ভাই এই মনমানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসুন। পর্দা উভয়ের জন্যই ফরজ

তারপর আমরা আরেকটি কবীরা গুনাহ করি যা আমাদের জন্য অনেক ক্ষতিকর ভাইজান। টাখনুর নিচে কাপড় পড়া। আবার খেয়াল করলে দেখতে পাবেন কোন কোন ভাই শুধু নামাজের সময় টাখনুর উপর কাপড় তুলেন, পরে নামাজ সেই আবার সেই আগের মতো। কেন ভাই? কেন? শুধু নামাজে টাখনুর নিচে কাপড় উপরে তুলার কথা বলা হয়েছে???
না ভাই সবসময় টাখনুর উপর কাপড় রাখার কথা বলা হয়েছে। এটা পর্দার মধ্যে পড়ে ভাই।

লুঙ্গি, পাজামা, প্যান্ট অথবা যে কোন কাপড় টাখনু বা পায়ের গিঁটের নিচে পড়া কবীরা গুনাহ্। চাই তা গর্ব করেই হোক অথবা এমনিতেই।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

مَا أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ مِنَ الْإِزَارِ فَفِيْ النَّارِ.
‘‘লুঙ্গি, পাজামা বা প্যান্টের যে অংশটুকু পায়ের গিঁটের নিচে যাবে তা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে’’।
(বুখারী ৫৭৮৭)

যে ব্যক্তি টাখনু বা পায়ের গিঁটের নিচে কাপড় পরিধান করে আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার সাথে কোন কথা বলবেন না, তার দিকে তাকাবেনও না এমনকি তাকে গুনাহ্ থেকে পবিত্রও করবেন না উপরন্তু তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।

আবূ যর গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ، وَلَا يُزَكِّيْهِمْ، وَلَـهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ، قَالَ: فَقَرَأَهَا رَسُوْلُ اللهِ. ثَلَاثَ مِرَارٍ، قَالَ أَبُوْ ذَرٍّ: خَابُوْا وَخَسِرُوْا، مَنْ هُمْ يَا رَسُوْلَ اللهِ!؟ قَالَ: الْـمُسْبِلُ، وَالْـمَنَّانُ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: الْـمَنَّانُ الَّذِيْ لَا يُعْطِيْ شَيْئًا إِلاَّ مَنَّهُ، وَالْـمُنْفِقُ سِلْعَتَهُ بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ.
‘‘তিন ব্যক্তি এমন যে, আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেনও না এমনকি তাদেরকে গুনাহ্ থেকে পবিত্রও করবেন না উপরন্তু তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। বর্ণনাকারী বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাগুলো তিন বার বলেছেন। আবূ যর (রাঃ) বলেন: তারা সত্যিই ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত।
তবে তারা কারা হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

টাখনু বা পায়ের গিঁটের নিচে কাপড় পরিধানকারী, কাউকে কোন কিছু দিয়ে খোঁটা দানকারী এবং মিথ্যা কসম খেয়ে পণ্য সাপ্লাইকারী’’।
(মুসলিম ১০৬; আবূ দাউদ ৪০৮৭, ৪০৮৮)

জাবির বিন্ সুলাইম (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন:

وَارْفَعْ إِزَارَكَ إِلَى نِصْفِ السَّاقِ، فَإِنْ أَبَيْتَ فَإِلَى الْكَعْبَيْنِ، وَإِيَّاكَ وَإِسْبَالَ الْإِزَارِ فَإِنَّهَا مِنَ الْـمَخِيْلَةِ، وَإِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْـمَخِيْلَةَ.
‘‘তোমার নিম্ন বসন জঙ্ঘার অর্ধেকে উঠিয়ে নাও। তা না করলে অন্ততপক্ষে পায়ের গিঁট পর্যন্ত। তবে গিঁটের নিচে পরা থেকে অবশ্যই সতর্ক থাকবে। কারণ, তা অহঙ্কারের পরিচায়ক। আর আল্লাহ্ তা‘আলা অহঙ্কার করা পছন্দ করেন না’’।
(আবূ দাউদ ৪০৮৪)

জামা এবং পাগড়িও গিঁটের নিচে যেতে পারবে না।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রাযিয়াল্লাহু আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

الْإِسْبَالُ فِيْ الْإِزَارِ وَالْقَمِيْصِ وَالْعِمَامَةِ، مَنْ جَرَّ مِنْهَا شَيْئًا خُيَلَاءَ لَمْ يَنْظُرِ اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
‘‘গিঁটের নিচে পরা হারাম হওয়ার ব্যাপারটি লুঙ্গি, পাজামা, প্যান্ট, জামা, পাগড়ি ইত্যাদির মধ্যেও ধরা হয়। যে ব্যক্তি গর্ব করে এগুলোর কোনটি মাটিতে টেনে চলবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলা তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না’’।
(আবূ দাউদ ৪০৯৪)

অসতর্কতাবশত প্যান্ট, লুঙ্গি বা পাজামা গিঁটের নিচে চলে গেলে স্মরণ হওয়া মাত্রই তা গিঁটের উপরে উঠিয়ে নিবেন।উৎস: “হারাম ও কবীরা গোনাহ” বই।

তারপর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটা না বললে হয় না।

কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা নামাজে পড়তে লাগলে নামাজের সূরাহ, তাসবিহ গুলো ফিসফিস করে পড়েন যা ভাইটির পাশে থাকা অন্য এক ভাই সূরাহ ও তাসবিহ পড়তে অসুবিধা হয়। এতে নামাজে গিয়ে গুনাহ আরো বেশি হচ্ছে সেটা অনেক ভাই খেয়াল করেন না। আপনি যেমন নামাজে আসেন ঠিক আরেক ভাইটি ও এক নামাজে আসেন কিন্তু আপনার এই ফিসফিস করে বলা প্রত্যেকটি সূরাহ ও তাসবিহ গুলা অন্য ভাইটির নামাজে অনেক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, হয় ভাইটি সূরাহ ও তাসবিহ আপনার সাথে তাল মিলিয়ে পড়তে হয় নতুবা আপনি পড়া শেষ করলে পড়তে হয়। সম্মানিত ভাই, নামাজে ফিসফিস করে সূরাহ ও তাসবিহ গুলা না পড়ে মনে মনে পড়ুন, এমনতো নয় যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা মনে কথা শুনতে পান না (আস্তাগফিরুল্লাহ ইন্নাল্লাহা গাফুরুর রাহিম) [আল্লাহ আমায় ক্ষমা করে দিন, আপনি তো পাপ মার্জনাকারী, আপনি তো অতিশয় মেহেরবান], আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা তো আপনার অন্তরের অন্তস্তলের কথা জানেন ভাই। তাই সম্মানিত ভাই, নামাজে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে সূরাহ ও তাসবিহ গুলো পড়া হতে বিরত থাকুন।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা সব মুসলিম ভাই ও বোনদের আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালার সন্তুষ্টির ও নবিজীর (সাঃ) সুন্নাহের আলোকে নামাজ পড়ার ও পর্দা করার তাওফীক দিন।

ওমা তাওফীকি ইল্লা বিল্লাহ,

আল্লাহুম্মা আমিন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture