প্রথম ব্রিটিশ মুসলিম নারী হিসেবে লেডি ইভিলিন বা লেডি যাইনাব হজ্জ করেন ১৯৩৩ সালে। লেডি ইভিলিন কবল্ডের জীবনী পড়ে বিস্মিত হই! তার ন্যানি ছিলেন আলজেরিয়ান মুসলিম। শৈশব কাটে আলজেরিয়ার বাচ্চাদের সাথে। ছোটোবেলা মুসলিমদের সান্নিধ্যে কাটানোর অভিজ্ঞতাকে তিনি উল্লেখ করেন ‘মনে মনে মুসলিম’।
একবার ইতালীতে গেলে দেখা করতে যান পোপের সাথে। পোপ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি ক্যাথলিক?”
লেডি ইভিলিন জবাব দিলেন, “না, আমি তো মুসলিম।”
মুখ দিয়ে যা উচ্চারণ করেন, সেটা নিজের কানে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।
লেডি ইভিলিন ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং একপর্যায়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি চাইলেন হজ্জ করতে। তাঁর নতুন নাম হলো লেডি যাইনাব। তাঁর আগ পর্যন্ত কোনো ব্রিটিশ নারী হজ্জ করেননি।
সেই সময় ইউরোপ থেকে হজ্জে যাওয়া সহজ ছিলো না। অমুসলিমদের মক্কা-মদীনায় প্রবেশ নিয়ে সেই সময় কয়েকটি ঘটনা ঘটে। ফলে, মক্কার শরীফরা বেশ সতর্ক ছিলেন।
ইউরোপ থেকে কেউ হজ্জ করতে চাইলে তাকে জেদ্দায় গিয়ে ১ বছর থাকতে হতো। লেডি যাইনাবের সেই সময়টা বেশ অস্থিরতায় কাটে। কখন দেখবেন কা’বা! তাঁর আশেপাশের অনেকেই চলে যাচ্ছে, তাঁর দিন এখনো আসছে না।
অবশেষে এলো সেই প্রতীক্ষিত দিন। একজন ইউরোপীয়, একজন নারী হিসেবে তাঁর বর্ণনার কা’বা পড়ে পাঠক আকৃষ্ট হবে, হাহাকার করবে- কবে আসবে সেই সুযোগ!
৬৬ বছর বয়সে তিনি হজ্জ করেন। পরের বছর লিখেন তাঁর হজ্জ-অভিজ্ঞতা ‘Pilgrimage to Mecca‘। ইতোপূর্বে কোনো নারী তার হজ্জ সফরনামা লিখছেন কিনা জানা যায়নি।
লেডি যাইনাবের ইসলাম গ্রহণ এবং অবিচলতা কতোটা অনুপ্রেরণার, সেটার আরেকটা উদাহরণ হলো তাঁর ইন্তেকাল। তিনি যখন ইন্তেকাল করেন তাঁর জানাযা পড়ার মতো কোনো মুসলিম ছিলো না সেই শহরে।
৯৫ বছর বয়সে ইন্তেকাল করা লেডি যাইনাব অসিয়ত করে যান তাঁর যেন জানাযা পড়া হয় এবং মক্কামুখী করে তাঁকে দাফন করা হয়। তুষারপাতের মধ্যে শাহ জাহান মসজিদের ইমাম গাড়ি চালিয়ে ১০০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পৌঁছান স্কটল্যান্ডের শহরে।
অসিয়ত অনুযায়ী তাঁর কবর ফলকে কুরআনের একটি আয়াত লেখা- ‘আল্লাহু নুরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্ব’।