পরিপূর্ণ পর্দা করে চলাফেরা করার দুই বছর পার হচ্ছে। তার পূর্বের জীবনে আট দশটা মেয়ের মতন পোষাকে অভ্যস্ত ছিলাম। বলা বাহুল্য, সাইড টোন শুনেনি এমন মেয়ে দেশে পাওয়া দুষ্কর!
তবে যেদিন থেকে পর্দা করে চলাফেরা করতে লাগলাম, সেদিন থেকে আমার সম্মান যেন কয়েকগুণ বেড়ে গেলো! এইতো এক সন্ধ্যার ঘটনা—
কোচিং শেষ করে বাড়ি ফিরবো, একা রাস্তায়! কোনো রিক্সা নেই, অটোর অপেক্ষা করছিলাম। সামনে এসে দাঁড়ালো অটো, তাকাতেই নজর পরলো সিটে ইতিমধ্যে তিনজন যুবক। লোকেশন শুনে অটো চালক জানালেন ওদিকে অন্য গাড়ি যাবে না তার অটোতে উঠতে। কিন্তু সব মিলিয়ে সাহস-ইচ্ছে কোনোটাই হয়নি। হঠাৎ একজন অটো থেকে নেমে বললেন, ‘ভয় পাবেন না, আপনি উঠুন আমরা অন্য অটো খুঁজে নিবো।’ বলেই বাকিদের নামিয়ে দিলো। অতঃপর আরেকজন বোন যিনি আরেকটু দূরে যাবেন তাকেও ডেকে অটোতে উঠিয়ে দিলেন। অটো ছাড়ার সময় কানে কেবল ভেসে আসলো—
‘দেখলি না চোখটাও দেখা যায় না, এসব মেয়েরা হুটহাট ছেলেদের সাথে বসতে পারেনা’
আরেকদিনের ঘটনা—
তখন সবেমাত্র অনার্সে উঠেছি। কলেজে দ্বিতীয় দিন ছিল। বাড়ি থেকে দূরের পথ ফেরার পথে বাঁধ সাধলো বৃষ্টি! অচেনা রাস্তায় কেবল দুআ করছিলাম, ‘আল্লাহ এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দেও, বৃষ্টি বাড়লে ভিজে সবার চোখের বিনোদন হই যাবো, বাঁচায় দেও।’ বিড়বিড় করে দুআ করছিলাম, হঠাৎ এক মাঝ বয়সী যুবক অটো এনে বললেন, আপনাকে ৫ মিনিট হাঁটতে হবে সামনে অটো স্ট্যান্ড। ছাতা আছে?
আমার নিরবতা দেখে বললেন, অটোতে চড়ুন পৌঁছে দিচ্ছি। যদিও একাকি অটোতে চড়তে কিছুটা জড়তা ছিলো কিন্তু না চড়েও উপায় ছিলো না। অটোওয়ালা ঠিক জায়গায় এনে দিলেন আর বললেন,
‘আপনি আমার ছোট বোনের মতন। দুআ কইরেন আমার বোনটাও আপনার মতন যেন পর্দা করে চলে’
আমি ভাড়া দিতেই ধরেছি উনি এতোটুকু বলে চলে গেলেন!
দৈনিক জীবনে এছাড়াও যখনই বের হতে হয়েছে আমি দেখেছি, ভীড় থাকা জায়গায় ছোট ছেলে-যুবক-বয়স্ক পুরুষদেরকে আমার জন্য রাস্তা করে দিতে। অতীত জীবনে বরাবরই ভাবতাম— ইসলাম কেনো মেয়েদের উপর এতো রুলস দিয়ে রাখছে! কেনো শীত-বর্ষা কিংবা গরমেও মেয়েগুলোকে মাথা থেকে পা অব্দি কাপড়ে জড়িয়ে থাকতে হবে? এটা তো রীতিমতন নির্যাতন! জান্নাতের প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে বস্তার ভেতর ভরে রাখছে।(আল্লাহুম্মাগফিরলী)
কিন্তু নিজের মাঝে পরিবর্তন, চাক্ষুস এসব ঘটনা আমাকে বলে, ‘এখন অনুভব করিস কেনো রব নারীকে পর্দা করতে বলে?
আপাদমস্তক ঢেকে রাখলে একজন নারীর সম্মান বৃদ্ধি পায়। ভীড়ের মধ্যও একজন পুরুষ শ্রদ্ধা দেখিয়ে সাইড কেটে যায়।’ আমার মনে হয়, আল্লাহ তাআ’লা আমাকে এরকম জটিল পরিস্থিতিতে বাঁচিয়ে দিয়ে বারবার স্মরণ করান কেনো তিনি নারীর প্রতি এ রকম হুকুম জারি করেছেন। আর আমি?
মুচকি হেসে নিজেকে কটাক্ষ করে কেবল বলি, ‘আলহামদুলিল্লাহ‘