পর্দার দুটি অবিচ্ছেদ্য অংশঃ কন্ঠ ও পা
কন্ঠ ও পায়ের যে পর্দা আছে তা হয়ত অনেক বোনই জানেন না। এই দুটি অংশ অবহেলা করার কারণে আমাদের পর্দা শুধু পোষাকেই সীমাবদ্ধ। যার কারনে আমাদের পর্দা পূর্ণাঙ্গ হয় না।
প্রয়োজনের খাতিরে কলেজ-ভার্সিটি-বাজার যেখানেই যাই পুরুষদের সাথে কথা বলতে হয়।
আমরা অনেকেই আছি যাদের কন্ঠ অনেক মিষ্টি, যারা খুব সুন্দর শব্দ করে হাসতে পারি। এসব কন্ঠ বা হাসিতে অনেক পুরুষ মেয়েটির চেহারা না দেখেই প্রেমে পড়ার রেকর্ডও নতুন নয়।
অনেক বোনেরা মার্কেটে গেলে দোকানীদের সাথে বেশ সুন্দর করে কথা বলেন, দোকানীদের মন গলাবার চেষ্টা করেন। ক্লাসমেট বা কাজিনদের সাথে ইনিয়ে-বিনিয়ে কথা বলার ব্যপারটা তো আছেই।
অথচ এই কথার ব্যপারে মহান রব সতর্ক করেছেন আমাদেরকে। কারন, এর দ্বারা আমরা নিজেদের পায়ে কুঠারাঘাত করি।
“….যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করে থাক তাহলে মিহি স্বরে কথা বলো না, যাতে মনের দুষ্ট মনের কোন ব্যক্তি প্রলুব্ধ হয়ে পড়ে বরং পরিষ্কার সোজা ও স্বাভাবিক ভাবে কথা বল।”
(সূরা আল-আহযাব : ৩২)
এক্ষেত্রে আমার মনে খারাপ কিছু না থাকলেও অপর মানুষটির মনে থাকতেই পারে। চেহারা দেখে মানুষের মনের ভাব বোঝা আমাদের অসম্ভব। তাই আল্লাহ আমাদেরকে আগেই সতর্ক করে দিয়েছেন।
সুতরাং এমনভাবে গায়রে মাহরামের সাথে কথা বলতে হবে যেন সে আমার কন্ঠে দুর্বলতা বা খারাপ ইঙ্গিত খুঁজে না পায়।
আমরা মাঝে মাঝে উঁচু জুতা পরে রাস্তায় বের হই, যা থেকে শব্দ তৈরি হয়। আবার অনেক কম বয়সী বোনেরা রাস্তায় চলার সময় লাফালাফি বা দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা যায়। ফলে তাদের পায়ের সৌন্দর্য দৃশ্যমান হয়ে পড়ে।
অনেক বোন হাতে চুড়ি বা পায়ে নুপুর পরে বের হন। এতে শব্দ সৃষ্টি হয়। একজন মুসলিম নারীর জন্য কখনোই এরকম উশৃঙ্খলতা শোভনীয় নয়। বরং এগুলো নির্লজ্জতার অংশ। আল্লাহ এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে নিষেধ করেছেন। আমাদের পা যথাসম্ভব ঢেকে রাখতে হবে এবং তা আরেকজনের সামনে উন্মোচন করা যাবে না।
“…এবং তারা যেন তাদের পা এমনভাবে না মেরে চলে যাতে তাদের লুকানো সাজ-সৌন্দর্যের কথা লোকেরা জেনে ফেলে।
(সূরা নূর : ৩১)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ “নবী (সা.) বলেন, নির্লজ্জতা ও অশ্লীলতা কোন বস্তুর কেবল কদৰ্যতাই বৃদ্ধি করে। আর লজ্জা কোন জিনিসের সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে।
[আদাবুল মুফরাদ ৬০৪]
অনেক সময় ময়লা লেগে যাবার ভয়ে আমরা নন-মাহরামদের সামনে বোরকা উঁচুতে তুলে রাস্তায় হাঁটি। আবার অনেকে বোরকার সাইজ ছোট করে ফেলি। এমনটি করা যাবে না। বরং ময়লা হলেও পা বোরকা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। কারণ পরবর্তীতে পাক মাটি এই নাপাকি সাফ করে দেবে। তাছাড়া এ ক্ষেত্রে আগে পর্দাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
এক মহিলা সাহাবী রাসূল (সা.) কে বলেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ মসজিদে আসতে আমাদের পথটি নোংরা ও নাপাক। বৃষ্টিতে আমরা কি করব?
রাসূল (সা.) বলেন, এরপরে কি আর কোনও পবিত্র রাস্তা নেই?
সাহাবী বললেন, হ্যাঁ আছে। রাসূল (সা.) বলেন, তাহলে ঐটির বদলে এটি (অর্থাৎ নাপাক রাস্তা থেকে যে নাপাকি লাগবে, পরের ভালো রাস্তার মাটিতে ঘষে তা পবিত্র হয়ে যাবে।” [আবু দাউদ ১/১০৪, আলবানী জিলবাব পৃঃ৮১-৮২]
তাহলে দেখুন পর্দার কত সুক্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ দিক আমরা এড়িয়ে চলছি। এই এড়িয়ে চলাটা দুনিয়া ও আখিরাতে আমাদের মহাবিপদ ডেকে আনে। অথচ ইসলামের সত্যিকারের মুমিনাগন, উম্মুল মু’মিনীনগন কত সুন্দরভাবে চলাফেরা করতেন। সেই পর্দা করতে আমদেরকেও চেষ্টা করতে হবে।
লেখাঃ আমিনা জান্নাত