এক আরব শাইখের জীবনের সত্য ঘটনা। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে তার বাড়ি। একবার তিনি নিজ প্রয়োজনে সৌদির পাশের কোন এক দেশে গিয়েছিলেন।
পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুকরণে অবৈধ আমোদ ফূর্তির জন্য সেখানে স্বতন্ত্র ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রাত্রিবেলায় শহরের হোটেলগুলোতে নারী-পুরুষের অবৈধ মেলামেশা, মদ্য-পান আর গানবাজনার মেলা বসত।
শাইখ বলেন, ‘আমি নিজের কাজ শেষে রাত্রিযাপনের জন্য একটা ঘর খুঁজছিলাম। না জেনেই এরকম অশ্লীলতাপূর্ণ একটা হোটেলে প্রবেশ করলাম। ওখানে যা দেখেছি, সেই নিকৃষ্ট চিত্র আমার জীবনে আর দেখিনি।
আমাকে দেখেই এক ভদ্র মুসলমান কর্মচারী দৌড়ে আসল। সে বললো, ‘শাইখ! এই যায়গা আপনার জন্য না। দয়া করে এখানে প্রবেশ করবেন না।’
‘হোটেল থেকে বেরিয়ে রাস্তায় হাঁটতে শুরু করলাম। সারাদিনের ছোটাছুটিতে শরীর বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। কোথায় যাবো কিছু বুঝতে পারছিলাম না। কিছুদূর হেঁটে একটা পার্ক দেখতে পেলাম। সামনে চলার মতন শক্তি অবশিষ্ট ছিল না। তাই পার্কের বেঞ্চের উপরেই শুয়ে পড়লাম।’
‘যোহরের পর আমার ফ্লাইট ছিল। তাই ফজরের সময় ঘুম থেকে উঠে একটা ট্যাক্সি নিয়ে সোজা এয়ারপোর্টে চলে আসলাম। ভেতরে একপাশে নামাজঘর দেখে সেখানে গিয়ে ফজর আদায় করলাম। এরপর ক্লান্তি কাটাতে আবারও সেখানে ঘুমিয়ে পড়ি। একঘন্টা পর একটা কান্নার আওয়াজে আমার ঘুম ভাঙল। চোখ খুলে দেখলাম, একটা ২৫-২৬ বছর বয়সী যুবক। নামাজে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছিল। এরকম কান্নাভরা আবেগী নামাজ আমি আগেও দেখেছি, তাই বেশি কিছু না ভেবে আবার চোখ বন্ধ করলাম। যোহর পর্যন্ত বিশ্রামের পর যখন চোখ খুললাম, দেখলাম সেই যুবক তখনো সালাতে দাঁড়িয়ে কেঁদেই যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর আমাকে উঠতে দেখে ছেলেটা আমার কাছে আসলো। দেখে মনে হচ্ছিল, সে অনেক বেশী ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত আর দু’তিনদিন ধরে হয়ত ঘুমায় নি। আমাকে অবাক করে দিয়ে সে বললো, ‘শাইখ! আপনি কি ঘুমোতে পারেন?’
আমি বললাম, ‘হ্যাঁ! পারি।’
সে বললো, ‘আমি ঘুমোতে পারছি না শাইখ! তিনরাত তিনদিন ধরে পাগলের মত এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছি। কিছু খেতে পাচ্ছি না, ঘুমোতে পাচ্ছি না, জীবন উপভোগ করতে পাচ্ছি না। ঘরে আর ফিরতে চাই না।’
এদিকে যোহরের সালাতের সময় হয়ে এসেছিল। তাকে বললাম, ‘আমরা যোহরের পর কথা বলবো’। এরপর আমরা দুজনে যোহর আদায় করলাম। সেখানে আর কেউই ছিল না।
এরপর তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি হয়েছে বলো?’
সে বললো, ‘আমি আহমদ (ছদ্মনাম)। আমি বিবাহিত। আমার সন্তানও আছে। আমি অনেক বিত্তশালী এবং দ্বীনদার পরিবারের সন্তান। আমরা সবাই উদ্যোক্তা। আমাদের কারও কাজ করার প্রয়োজন হয় না কেননা আমাদের ইনকাম যথেষ্ট। আমাদের কাছে সবকিছুই আছে। কর্মচারী, চাকর-বাকর, দামী গাড়ি, ভালো খাবার, যা কিছু আপনি ভাবতে পারেন – তার সব আমাদের আছে।’
‘কিন্তু একটা সময় আমি নিজের এই আয়েশের জীবন নিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়লাম। আমার মনে হলো, মানুষের জীবনে কি আর কিছুই নেই?
আমার আরও কিছু ট্রাই করা উচিত। আমার সব আছে, কিন্তু আমি নতুন কিছু ট্রাই করতে চাই।’
আমার ভাইয়েরা, এটা মূলত শয়তানের একটা প্ররোচনা। সে এরকম অবস্থায় মানুষকে এসে বলতে থাকে, ‘কেন তুমি নিজের স্বাভাবিক জীবন থেকে একটু বের হয়ে পৃথিবীটা দেখো না?’ স্বাভাবিক জীবন থেকে বেরিয়ে আলাদা সময় অতিবাহিত করায় খারাপ কিছু নেই। কিন্তু এরপরেই শয়তান এসে বলে, ‘কেন তুমি এমন কিছু করছ না যেটা কখনোই কর নি? ইসলাম বলেছে, এটা হালাল ওটা হারাম। তুমি তো এতদিন হালালের সীমারেখার মাঝেই থেকেছ, তাই হয়ত জীবনটা তেতো হয়ে গিয়েছে। একটু হারাম ট্রাই করে দেখ না কেন?’
‘বড় কিছু না হউক একটু ছোটখাটো পাপ করে দেখো কেমন লাগে। তোমার চারপাশে কত ছেলে-মেয়ে একসাথে সময় কাটাচ্ছে। ঘুরতে যাচ্ছে, জীবনকে নিজেদের মত করে উপভোগ করছে, তুমিও তাদের মত একটু করে দেখো না? অত বেশী গভীরে যাবার দরকার নেই, তবে সামান্য হাসি মজা তো করাই যায়। আর যা পাপ হবে তার জন্য ওমরাহ করে নেবে, তাহলেই সব মুছে যাবে।’
আহমদ বলল, ‘শয়তানের এই প্রতারণার ফাঁদে আমি পা দিয়ে ফেললাম। আমার নতুন কিছু করার দৃঢ় ইচ্ছা জাগল। কিন্তু আমি তো পরিবারের সাথে থাকি। সবার সামনে নিজের ইচ্ছা পূরণের সুযোগ হবে না। তাই এমন কোনো স্থানে যাবার পরিকল্পনা করলাম, যেখানে আমাকে কেউ দেখবে না, কেউ বাধা দিবে না। এভাবে পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবসার কথা বলে ঘর থেকে বের হলাম। আর এই দেশে আসলাম যেটা আমরা কথা বলছি।’
‘শাইখ! আমি বড় কিছু করার কথা কখনো কল্পনাও করিনি। চেয়েছিলাম ছোটখাটো দু’একটা পাপ করে সাথে সাথেই আবার তাওবা করে নেব। কিভাবে শুরু করব তা বুঝে ওঠার আগেই একদল উন্মাদদের সাথে আমার সাক্ষাত হলো। এতদিন শুধু দূর থেকেই তাদের আনন্দ-উল্লাস দেখতাম। আজ সেই উল্লাস আরও কাছ থেকে দেখার ইচ্ছা জাগল। তাই তাদেরকেই নিজের সঙ্গী বানালাম।’
‘তাদের সাথে পাপের নতুন এক জগতে প্রবেশ করলাম। তারা নারীদের সাথে মেলামেশা করছিলো, মদ পান করছিল, গানের তালে নিজেকে ভাসিয়ে দিচ্ছিল। আমি শুধু বসে বসে দেখছিলাম। কিন্তু ধীরে ধীরে আমার ভেতরের উত্তেজনাও প্রবল হতে লাগল, কামনারা সীমা ছাড়িয়ে যেতে লাগল। এর প্রভাবে যেটা এতদিন আমার কাছে বড় পাপ মনে হত, এখন তা ক্ষুদ্র মনে হতে লাগল। যা এতদিন নিকৃষ্ট মনে হত, এখন সেটা স্বাভাবিক হয়ে গেল। একটা সময়ে আমি পাপের প্রতি পুরোপুরি অনুভূতিশূন্য হয়ে পড়লাম। দিন-রাত আমাকে নিয়ে তার আপন গতিতে ছুটছিল। কিন্তু ওয়াল্লাহি! আমি তখনো মদ স্পর্শ করিনি। আমার চারপাশে জুয়ার আসর বসেছিল, আমি জুয়া খেলিনি।’
‘এরপর আমাদের মাঝে কিছু নারীর আগমন ঘটল। আমার বন্ধুরা তাদের সাথে দুষ্টুমি শুরু করল। তারাও এতে সায় দিচ্ছিল। আমিও তাদের সাথে যোগ দিলাম। আমাকেও তারা প্রতিউত্তর করছিল। আমার বন্ধুরা সেই নারীদের সাথে রাত্রি যাপন করছিল। আর হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় ফিরে আসছিল। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের এই অপকর্মের দৃশ্য দেখছিলাম।’
‘একদিন আমার পাশে এক সুন্দরী নারী এসে বসলো। দেখার সাথেই তার চেহারার প্রতি আমি আকৃষ্ট হয়ে গেলাম। তার সাথে কথাবার্তা শুরু করলাম। কিন্তু একপর্যায়ে আমার নফস তার কামনার পূর্ণতা চাইতে লাগল।’
একটা বিষয় জানা দরকার। মানুষের মস্তিষ্কের ভালো-মন্দ নির্বাচনকারী অংশকে প্রি ফ্রন্টাল কর্টেক্স বলা হয়। কিন্তু কোনো কারণে যদি এটা ব্লক হয়ে যায় তাহলে মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তখন সে নিজের আবেগ আর অনুভূতির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়। আর বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, মানুষের কাম উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে তার প্রি ফ্রন্টাল কর্টেক্স ব্লক হয়ে যায়।
আহমদ বললো, ‘আমার প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স ব্লক হয়ে নফসের কামনাগুলো আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে লাগল। সেই মুহুর্তে আমার সাথে কি হচ্ছিল আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। একপর্যায়ে আমি আর সেই নারী একটা ঘরে প্রবেশ করলাম।’
কিন্তু রাসুলুল্লাহ ﷺ যেমন বলেছেন,
“কোনো পুরুষ একজন মহিলার সাথে নির্জনের মিলিত হলে তাদের তৃতীয় সঙ্গী হয় শয়তান।”
[সহিহ বুখারী : ৩০০৬]
‘শয়তান আমাদের দু’জনকে একলা পেয়ে উত্তেজিত করতে থাকল। এভাবে আমরা পরস্পরের প্রতি পুরোপুরি আসক্ত হয়ে আল্লাহর সীমারেখা ভেঙ্গে নিজের উপর জাহান্নাম অবধারিত করার মাধ্যমে নিজের বাসনার পূর্ণতা দিলাম।’
‘কিন্তু কামনার সাময়িক সুখ শেষ হবার পর যখন উত্তেজনা প্রশমিত হলো আর ঈমান ফিরে আসলো, আমার ভেতরে অনুশোচনা আর অপরাধবোধ প্রবল যন্ত্রণা সৃষ্টি করল। পায়ের তলার মাটি সরে গিয়ে নিজেকে অসহায় অবস্থায় পেলাম। মনে হচ্ছিল, আমি মাটিতে পড়ে যাবো। নিজের প্রতি এত বেশী ঘৃণা হচ্ছিল যে মনে হতে লাগল, ‘আমি যদি কখনো দুনিয়াতেই না আসতাম’।
নিজেই নিজেকে বলতে লাগলাম, ‘এটা আমি কি করলাম?
আমার পরিবারের কি হবে?
আমার স্ত্রী-সন্তানের কি হবে?
আমার আখিরাতের কি হবে?
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা আমাকে এর জন্য কখনোই ক্ষমা করবেন না। আমি কিভাবে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকব?’
‘আমি চিৎকার করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম। সেই হোটেলের দরজায় এসে দেখলাম আমাদের একজন সঙ্গী। সে মূলত একজন অবৈধ নারী ব্যবসায়ী। অর্থের নিনিময়ে সে নারী এনে দিত। আর তার এই ব্যবসার আমি একটা ক্রেতা ছিলাম। হায়! সে যদি শুধু আমার অর্থ নিয়ে নিত। সে যদি আমাকে জানাত যে আমার সাথে কি করতে চাচ্ছে। কিন্তু আমিতো যিনার মত কবীরা গুনাহ করে ফেলেছি। এখন আমি কি করব?’
সেই লোকটি আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। আমাকে দেখে বললো, ‘কি সমস্যা?’
আমি বললাম, ‘আমি তো যিনা করে ফেলেছি। তুমি কি জানো এর পরিণতি কি?’
আমার দিকে মদের বোতল বাড়িয়ে ধরে সে বললো, ‘কোনো ব্যাপার নাহ। এটা একটু চেখে দেখো। তাহলেই সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে।’
আহমদ বললো, ‘এতক্ষণ তো আমি জান্নাতের স্ত্রী পাওয়ার অযোগ্য হয়েছিলাম, এখন তুমি আমাকে জান্নাতের শরাব পান করা থেকেও বঞ্চিত করতে চাচ্ছ?’
সে শয়তানের সুরে তাকে বললো, ‘আল্লাহ তো দয়ালু ক্ষমাশীল। চিন্তা কর না।’
সে ভুলে গিয়েছিল আল্লাহ তায়ালা কঠিন শাস্তিদাতা।সে ভুলে গিয়েছিল জাহান্নাম কতটা ভয়াবহ। সত্তর হাজার ফেরেশতা দিয়ে যাকে সামলে রাখতে হয় তার ভেতরটা কত বেশী ভয়ানক।
আহমদ বললো, ‘এরপর আমি ধাক্কা দিয়ে তাকে দূরে ঠেলে দিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে আসলাম। কিন্তু কোথায় যাবো তা জানা ছিল না। গৃহহারা ব্যক্তির মত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে লাগলাম। তারপর থেকে আর কিছু খেতে পাচ্ছি না, ঘুমাতে পাচ্ছি না। শুধু কান্না আসছে। নিজেকে একটা আবর্জনার স্তুপ মনে হচ্ছে। আমি এই জগতে থাকার যোগ্যই না। আমি পৃথিবীর সবচাইতে নিকৃষ্ট মানুষে পরিণত হয়েছি। আমি আল্লাহর ক্ষমারও যোগ্য না।’
শাইখ তার দিকে তাকালেন। তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছিলাম না তাকে এখন কি বলবো? আমি কেবল এইসময়ে ক্ষমার বিষয়ে শ্রেষ্ঠ আয়াতের কথা মনে করতে পারলাম। এরপর তা তিলাওয়াত করলাম,
قُلْ يَٰعِبَادِىَ ٱلَّذِينَ أَسْرَفُوا۟ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا۟ مِن رَّحْمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغْفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلْغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ
বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।
[সূরা আয যুমার: ৫৩]
কিন্তু এটা শোনার পরেও আহমদের অনুশোচনা কমলো না। সে বললো, ‘এটা সত্য যে আল্লাহ সকলকে ক্ষমা করেন। কিন্তু আমাকে ক্ষমা করবেন না। আমি ক্ষমার যোগ্য না। আমার চারপাশে আলিমদের অভাব ছিল না। আমি এমন স্থানে জন্মেছি যেটা ইসলামের মূল কেন্দ্র। যেখানে আল্লাহর ঘর আছে, যেখানে রাসুলুল্লাহ ﷺ শুয়ে আছেন। আমি বিবাহিত। আমার সন্তানও আছে। আমি জানি কোনটা হালাল আর কোনটা হারাম।তারপরেও আমি এটা করেছি। আমি ক্ষমার যোগ্য না।’
শাইখ বলেন, ‘এরপর আমার ফ্লাইটের সময় হয়ে গিয়েছিল। তাই আমি চলে আসি। আর আসার সময় তার নাম্বার নিয়ে এসেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম, এরকম অনেককেই তো দেখেছি। দুই এক সপ্তাহ পর সে এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।’ কিন্তু প্রায় এক মাস পর আমি তার ফোন পেলাম। সে বললো, ‘আমি আপনার সাথে মসজিদে দেখা করতে চাই।’
‘আহমদ যখন আমার কাছে আসলো তার মধ্যে বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম। আগের মত আর কান্নাকাটি করছিল না, চেহারায় কোনো বিষণ্ণতা ছিল না। কিন্তু তার মধ্যে একটা ভয়ংকর ব্যাপার ছিল। আমি তার চেহারার দিকে তাকালাম। মনে হলো, সে পুরোপুরিভাবে শূন্য।’
আমাকে আরও আশ্চর্য করে দিয়ে সে বললো, ‘শাইখ আমি আপনাকে হ্যালো বলার জন্যে কল দেইনি। আমি আপনাকে বিদায় জানাতে এসেছি।’
আমি বললাম, ‘কেন? তুমি কোথায় যাচ্ছ?’
সে বললো, ‘আমি নিজেকে সৌদি সরকারের নিকট সোপর্দ করে দেবো। যাতে তারা আমার অপরাধের জন্য আমাকে পাথর নিক্ষেপের শাস্তি দেয়।’
‘তার কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম। রীতিমতো ভয় পেয়ে গেলাম। তাকে আটকাতে চেষ্টা করলাম। তাকে বললাম, তুমি কি পাগল হয়ে গিয়েছ?
তোমার সন্তান আছে, স্ত্রী, পরিবার আছে। আর আল্লাহ তায়ালা তো কাউকে স্বেচ্ছায় নিজেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে বলেন নি। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। এর থেকে মুক্তির আরও অনেক পথ খোলা আছে। আল্লাহ অসীম ক্ষমাশীল।’
আহমদ বললো, ‘আমার স্ত্রী এবং সন্তান আমাকে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচাতে পারবে না। আমি শাস্তির যোগ্য। আমাকে যেতে দিন। আমি শুধু আপনাকে ধন্যবান জানাতে এসেছি। জাঝাকাল্লাহ! আপনি আমাকে সাহায্য করতে যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন।’
‘আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না। এটা ওটা বলে বোঝাতে চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তারপরেও সে বুঝতে চাইছিল না। এরপর তার চলে যাবার মুহুর্তে আমি বললাম – আহমদ! শোনো, চলো আমরা এমন একজন আলিমের কাছে যাই যাকে তুমি এবং আমি দুজনেই সম্মান করি এবং যার উপর আমাদের আস্থা আছে। আমরা তাকে তোমার ঘটনা বলবো। তিনি যদি তোমাকে মৃত্যুর মুখে যাবার ব্যাপারে সম্মতি দেন, তাহলে আমি নিজেই তোমাকে নিয়ে যাবো। আমি তার কাছে এই ব্যাপারে অঙ্গীকার নিলাম। কেননা তার পালিয়ে যাবার সম্ভাবনা ছিল।’
এরপর আমরা সেই বড় আলিমের কাছে গেলাম। আর তিনি আমাদেরকে বললেন, ‘তার জন্য নিজেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া বৈধ নয়।’ কিন্তু আহমদ এতে সন্তুষ্ট হয় নি। সে ফিরে আসার পর বারবার সেই আলিমকে ফোন দিয়ে বলতে লাগল, ‘শাইখ! আপনি আমাকে যা বলেছেন তার ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করুন ওয়াল্লাহি! কেয়ামতের দিন আমি আল্লাহকে বলবো, আমি নিজেকে শাস্তির জন্য সরকারের কাছে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এই আলিম আমাকে যেতে দেন নি।’ শাইখ আশ্চর্য হয়ে বললেন, ‘আমি তো ইলমের বাইরে কিছুই বলিনি।’
এর কিছুদিন পর আহমদ আবার আমাকে ফোন দিল। সে বললো, ‘আমি আপনার সাথে মসজিদে দেখা করতে চাই’।
আমি বললাম, ‘এবার কি হয়ছে?’
সে বললো, ‘আমি হজ্জে যেতে চাই।’
আমি খুশি হয়ে বললাম, ‘চলো তাহলে একসাথে যাই।’
কিন্তু সে না করে দিয়ে বললো, ‘না না! আমি একাই যাবো।’
আমি ভাবলাম সে হয় নিজের কোনো পছন্দের গ্রুপের সাথে যাবে।
আমরা দু’জনে আলাদা আলাদা হজ্জ্ব গেলাম। হঠাৎ শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের স্থানে দূর থেকে তাকে দেখতে পেলাম। দেখা মাত্রই আমি ‘আহমদ, আহমদ’ বলে ডাকলাম। কিন্তু সে আমাকে দেখা মাত্রই দৌড়ে পালাল।
হজ্জ শেষে আমাদের দেখা হলে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আমাকে দেখে পালিয়ে গেলে কেন?’
সে বলল, ‘শাইখ! কেন আপনি আমার সাথে দেখা করবেন?
আপনারা পবিত্র মানুষ। কেন আমার মত অপবিত্র মানুষকে সঙ্গী বানিয়ে নিজের হজ্জ নষ্ট করবেন। আমি তো তখন ইস্তেগফারে ব্যস্ত ছিলাম। আপনি এখনও কেন আমার সাথে দেখা করছেন?
আমাকে একলা ছেড়ে দিন…!’
সে আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘কিছুসময় আমি সকল হাজিদের দিকে তাকিয়ে ভাবি, তারা সকলেই কত পবিত্র। আর এই নুরানী কাফেলায় আমার মত নিকৃষ্ট সত্ত্বাও আছে। আমার জন্যেই হয়ত আজ কারও হজ্জ কবুল হবে না। কিন্তু আবার কখনো মনে হয়, যদি এই পবিত্র মানুষগুলোর সাথে থাকার কারণে আমিও ক্ষমা পেয়ে যাই।’
এইটুকু পবিত্রতা নিয়ে আরও কিছুসময় অতিবাহিত হলো। এতদিনে আহমদ কুরআনের হাফেজ হয়ে গেছে। সে এখন একদিন পরপর রোজা রাখে, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে মসজিদে উপস্থিত থাকে। বেশী বেশী দান সদকা করে। সারাক্ষণ যিকিরে মগ্ন থাকে। নিজের প্রত্যেকটা কাজকে হিসেব কষে কষে আল্লাহর ইচ্ছার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে। সে আর কখনোই এত বেশী খুশি হয়নি।
কিছু বছর পর ~
একদিন মদিনা থেকে একজন বড় আলিম বক্তব্য দেয়ার জন্য আসলেন। তিনি তার বক্তব্যের একপর্যায়ে একটা ঘটনা বললেন। তিনি বলেন, রাবী ইবনু খুসাইম রহিমাহুল্লাহ নামক এক নেককার তাবেয়ী ছিলেন। তিনি আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিআল্লাহু এর প্রিয় ছাত্রদের একজন। তার পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্ব, নিষ্কলুষ অন্তর আর ইবাদাতের একনিষ্ঠতা দেখে ইবনু মাসউদ (রা) আফসোস করতেন আর বলতেন : “হে আবু ইয়াযিদ! যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে দেখতেন, তবে অবশ্যই তোমাকে ভালোবাসতেন। আমি তোমাকে যতবার দেখেছি, আমার কোরআনে বর্ণিত বিনয়ীদের কথা মনে পড়েছে।” [সিফাতুস সাফওয়া : ২/৩৪]
একবার একদল লোক রাবী রহিমাহুল্লাহর পদস্খলনের জন্য চেষ্টা করল। তারা ১০০ দিনারের বিনিময়ে শহরের সবচাইতে সুন্দর নারীকে ভাড়া করল। আর তাকে বললো, ‘তোমার রাবী ইবনু খুসাইমকে চুম্বন করতে হবে।’ সেই নারী বললো, ‘একশ দিনারের বিনিময়ে সামান্য এইটুকু!‘
সে রাবী রহিমাহুল্লাহর জন্য পথের একপাশে অপেক্ষা করছিল। মাগরিবের সালাত আদায় করে তিনি যখন বাড়ি ফিরছিলেন সে চুম্বনের উদ্দেশ্যে তার সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমে নিজের রূপ প্রদর্শন করল। রাবী রহিমাহুল্লাহ চিৎকার দিয়ে বললেন, ‘হায়! যদি তুমি এক ঘন্টা পর মৃত্যুবরণ কর তাহলে কালকে তোমার এই রূপের কি অবস্থা হবে?
তুমি আল্লাহকে কি জবাব দিবে?
তিনি তোমাকে রূপ আর সৌন্দর্য দান করেছেন আর তুমি তা হারামের পথে ব্যবহার করছ।’
নিজের মৃত্যুর কথা শুনে সেই নারী এমনভাবে প্রভাবিত হলো যে, সে কাঁদতে কাঁদতে ফিরে গেল। এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলো এবং আখিরাতে মনোযোগী হলো। আর রাবী রহিমাহুল্লাহর সেই নসীহতের বদৌলতে একটা সময়ে সে আবিদাতুল কুফা বা কুফার ইবদতগুজার নারীতে পরিণত হলো।
এই ঘটনা শুনে লোকেদের মাঝ থেকে একজন যুবক চিৎকার করে কেঁদে উঠে বললো, ‘রা’বীয়া ইবনু খুসাইম সেই নারীকে ফিরিয়ে দিয়েছে আর আমি তার সাথে যিনায় লিপ্ত হয়েছি।’
‘আমরা বুঝতে পারলাম এটা আহমদ ছিল। কিন্তু আমি কিভাবে জানব সে এখানে আছে! পূর্বে জানলে শাইখকে এই গল্প বলতে বারণ করতাম।’
‘সময়ের আরও কিছু অংশ চলে গেল। অনেকদিন আহমদকে দেখি না। একদিন আমি একজন বড় আলিমের সাক্ষাত লাভ করলাম। তিনি আগের সবার থেকে বেশী প্রজ্ঞাবান এবং অধিক ইলমের অধিকারী ছিলেন। আমি ভাবলাম এই শাইখকেও আহমদের ব্যাপারটা জানিয়ে দেখি। যদি এবার অন্তত সেই অসহায় যুবকের জন্য একটা সমাধান পাওয়া যায়।’
সেই আলিম সমস্ত ঘটনা শুনে আমাকে বললেন, ‘শাইখ! এর জন্য তো কুরআনে কত সুন্দর একটা আয়াত রয়েছে। আপনি তার কাছে যান আর তাকে বলুন।’
‘কোন আয়াত টা?’
‘আপনার কি সূরা ফুরকানের সেই আয়াতের কথা মনে নেই? যেখানে আল্লাহ বলেছেন,
وَٱلَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ ٱلنَّفْسَ ٱلَّتِى حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ يَلْقَ أَثَامًا،
يُضَٰعَفْ لَهُ ٱلْعَذَابُ يَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِۦ مُهَانًا،
إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَٰلِحًا فَأُو۟لَٰٓئِكَ يُبَدِّلُ ٱللَّهُ سَيِّـَٔاتِهِمْ حَسَنَٰتٍۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا،
“আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে না এবং যারা আল্লাহ যে নাফসকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর যারা ব্যভিচার করে না। আর যে তা করবে সে আযাবপ্রাপ্ত হবে।”
“কিয়ামতের দিন তার আযাব বর্ধিত করা হবে এবং সেখানে সে অপমানিত অবস্থায় স্থায়ী হবে।”
“তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে। পরিণামে আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পূণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা ফুরকান, ২৫ : ৬৮-৭০]
‘আমি এটা শুনে খুশিতে পাগলের মত হয়ে গেলাম। আমার আর তর সইছে না। কতক্ষণে আহমদকে এই বিষয়ে জানাবো। এটা এখন পর্যন্ত আমার শোনা শ্রেষ্ঠ সমাধান। কেন এতদিন এটা আমার মনে ছিল না!’
‘আমি সাথে সাথেই মসজিদে গেলাম। আর দেখলাম, আহমদ প্রতিদিনের মত মিম্বারের সামনে নত মস্তকে প্রার্থনারত। তাকে দেখে আমি নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলাম না। তাকে ডাকলাম, ‘আহমদ, আহমদ’ এর পর আর কিছু না বলেই নিজের হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা আর আবেগ দিয়ে সূরের সর্বোত্র সুন্দর তরঙ্গে সেই আয়াতগুলো তিলাওয়াত করলাম।
আমার তিলাওয়াত শেষ হলে আহমদ লাফ দিয়ে উঠল। সে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি তার হৃৎপিণ্ডের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। তার ভেতরে যেন প্রশান্তির উত্তাল তরঙ্গ প্রবাহিত হচ্ছিল। সে আমার কপালে চুম্বন করল। একবার কাঁদছিল আবার হাসছিল। আমাকে বলল, ‘শাইখ! আমি সমস্ত কুরআন হিফজ করেছি কিন্তু আজকে মনে হচ্ছে, আমি এই আয়াত জীবনে প্রথমবার শুনলাম। কিভাবে আমি এই আয়াতটা দেখলাম না।’
সেদিন মাগরিবের সময়ে মসজিদের ঈমাম উপস্থিত ছিল না। তারা আহমদকে সালাতের জন্য এগিয়ে দিল। আর সে সূরা ফাতিহার পর সূরা ফুরকানের সেই আয়াতগুলোই তিলাওয়াত করতে থাকল। কিন্তু যখন’ই إِلَّا مَن تَابَ পর্যন্ত পৌঁছালো, ক্রন্দনের কারণে পুরোটা শেষ করতে পারল না। এভাবে দ্বিতীয় রাকাতেও সূরা ফাতিহার পর একই সূরা পাঠ করে একই স্থানে এসে কাঁদতে থাকল। এই আয়াত সে কখনোই শেষ করতে পারত না।
এরপর জীবন থেকে আরও কিছু মাস পেরিয়ে গেল। তখন রমজান চলছিল। হঠাৎ একদিন আমি আহমদের পিতার ফোন পেলাম। তিনি বললেন, ‘দয়া করে দ্রুত বাসায় আসুন।’
আমি তাড়াতাড়ি আহমদের বাসায় পৌঁছালাম। তার পিতা দেখা মাত্রই আমাকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মত কাঁদতে লাগল। আমি তখনো বুঝতে পারছিলাম না কি হয়েছে। তিনি বললেন, ‘আপনার প্রিয় বন্ধু আহমদ আপনাকে সালাম জানিয়েছে আর গতরাতে সে তার রবের কাছে ফিরে গিয়েছে।’
আমি বুঝতে পারছিলাম না কার জন্য কাঁদবো। আহমদ নাকি তার পিতা!
কিছুক্ষণ পর আমার সামনে আহমদের সাদা কাফনে মোড়ানো দেহ আনা হলো। তার মুখ ঢেকে রাখা ছিল।
আমি মুখের উপর থেকে কাপড় সরিয়ে দেয়ার সাথে সাথেই তার চেহারার নুর আমাকে বিস্মিত করল। এটা যেন জান্নাতী মানুষের চেহারা, এটা যেন প্রশান্তিময় জীবনের সূচনার চিহ্ন, এটা যেন নুরানী পবিত্রতার উজ্জ্বলতা। আমি তার জন্য দোয়া করলাম আর তার কপালে চুম্বন করলাম। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুক। আমিন।
এরপর তার পিতাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ঘটনা কি বলুন তো?’
তিনি বলেন, ‘সে অনেকদিন ধরেই কোনো সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু আমাদের কাউকে তা জানায়নি। আজকে আমরা একত্রে আসর আদায় করেছি। আমি তাকে বললাম, বাবা! আজকে আমাদের সাথে ইফতার করবে চলো।’
কিন্তু সে বললো, ‘আমার আজকে মসজিদে আরো কিছুক্ষণ থাকতে ইচ্ছে করছে। আমি একটু অন্যরকম অনুভব করছি।’
‘তাই আমি তাকে ছেড়ে আসলাম। ইফতারের সময় তাকে আসতে না দেখে আমার ছোট ছেলেকে দিয়ে ডাকতে পাঠালাম। সে কাঁদতে কাঁদতে ফিরে এসে বললো, ‘বাবা! বাবা! আহমদ কথা বলছে না।’
‘আমি দৌড়ে মসজিদে গেলাম আর তাকে মিম্বারের সিড়ির উপর পরে থাকতে দেখলাম। যেমনটা সে সবসময় করে। তখনো তার শ্বাস-প্রশ্বাস কিছুটা বাকি ছিল। আমি তার হাত থেকে কুরআন টা নিয়ে সরিয়ে রাখলাম।’
‘সে আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছিল বলে মনে হলো, তাই আমি তার দিকে এগিয়ে কান বাড়িয়ে দিলাম। সে ধীর আওয়াজে বললো, ‘শাইখকে আমার সালাম দিও, শাইখকে আমার সালাম দিও।’ এজন্য আমি আপনাকে এই আমানত পৌঁছাতে ফোন করেছি।
কিন্তু শাইখ আরেকটা কথা। সে আমার কোলের উপর ছিল। আমরা এম্বুলেন্স ফোন করেছি। তার প্রশ্বাস ক্রমশই বন্ধ হয়ে আসছিল। কিন্তু এমন সময় হঠাৎ করেই তার কণ্ঠস্বর পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে গেল। একটা সুস্থ মানুষের মত করে স্পষ্টভাবে সুরলিত কন্ঠে সে কুরআন তিলাওয়াত করতে লাগল,
وَٱلَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ ٱلنَّفْسَ ٱلَّتِى حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ يَلْقَ أَثَامًا، يُضَٰعَفْ لَهُ ٱلْعَذَابُ يَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِۦ مُهَانًا ،إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَٰلِحًا فَأُو۟لَٰٓئِكَ يُبَدِّلُ ٱللَّهُ سَيِّـَٔاتِهِمْ حَسَنَٰتٍۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
‘সে এই আয়াতগুলো পুরোপুরি তিলাওয়াত করল। এমন মধুময় আওয়াজ আমি ইতিপূর্বে কখনো শুনিনি। আর এরপরেই তার আত্মা আখিরাতের দিকে ফিরে গেল।’
আহমদের পিতা জিজ্ঞেস করল, ‘শাইখ! আমার ছেলের কি হয়েছিল?’
আমি আহমদকে কথা দিয়েছিলাম এটা প্রকাশ করব না। তাই বললাম, ‘সে তার বন্ধুকে (ঈমান) হারিয়ে ফেলেছিল।’