পিরিয়ডে থাকা নারীরা রামাদানের শেষ দশকে
পিরিয়ডে (হায়েজ অবস্থায়) থাকা নারীরা রামাদানের শেষ দশকে এবং লাইলাতুল কদর তালাশে যেসব আমল করতে পারেন:
এই আমলগুলো যে কেউ করতে পারেন
Table of Contents
দু‘আ করা:
পিরিয়ডকালে দু‘আ করতে কোনো অসুবিধা নেই। সুতরাং, উত্তম হবে—অজু করে লাইলাতুল কদরের মহান রজনীতে আন্তরিকভাবে দু‘আয় মনোনিবেশ করা। এই রাতে দু‘আ কবুল হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। দু‘আ কোনো সাধারণ বিষয় নয়। হাদিসে এসেছে, ‘‘দু‘আ হলো ইবাদত।’’ [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৪৭৯; হাদিসটি সহিহ]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো।’’1
দু‘আর আদব ও নিয়মগুলো অনুসরণ করে দু‘আ করলেই যথেষ্ট হবে, ইনশাআল্লাহ।
তাওবাহ-ইস্তিগফার পাঠ করা:
এই রাতের গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল হলো, আল্লাহর নিকট তাওবাহ্ ও ইস্তিগফার পড়া। ইস্তিগফারের যত বাক্য মুখস্থ আছে, সবই পড়তে পারেন। ইস্তিগফারের জন্য নিচের বাক্যটি খুব সহজ।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে আর কাউকে এটি অধিক পরিমাণে পড়তে দেখিনি—
أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ وَأَتوبُ إِلَيْهِ
[আস্তাগফিরুল্লা-হা ওয়া আতু-বু ইলাইহি]
অর্থ: আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি এবং তাঁর নিকট তাওবাহ্ করছি।2
পাশাপাশি আরেকটি সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্তিগফার বেশি বেশি পড়তে পারেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর আগে এই ইস্তিগফারটি খুব বেশি পড়তেন—
سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِهِ أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
[সুব‘হা-নাল্লা-হি ওয়া বি‘হামদিহি, আস্তাগফিরুল্লা-হা ওয়া আতু-বু ইলাইহি]
অর্থ: আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর নিকট তাওবাহ করছি।3
সম্ভব হলে সায়্যিদুল ইস্তিগফার বেশি বেশি পড়া উচিত। হাদিসের ভাষায় এটি হলো শ্রেষ্ঠ ইস্তিগফার। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬৩০৬]
এর পাশাপাশি তাওবাহর শর্তগুলো পূরণ করে অবশ্যই নিজের সমস্ত গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করা উচিত। তাওবাহর তিনটি শর্ত হলো: কৃত গুনাহ স্বীকার করে সেসব আগে ছেড়ে দেওয়া, নিজ অপরাধের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হওয়া এবং ভবিষ্যতে এসব গুনাহ আর না করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করা। [ইমাম নববি, রিয়াদুস সলিহিন]
নবিজির উপর দরুদ পাঠ করা:
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার প্রতি ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন, ১০টি গুনাহ মোচন করবেন এবং তার জন্য ১০টি (মর্যাদার) স্তর উন্নীত করবেন।’’4
নামাজের শেষ বৈঠকে যে দরুদ (দরুদে ইবরাহিম) আমরা পড়ি, সেটি সর্বোত্তম। এটি অগ্রাধিকারযোগ্য। তবে, অন্যান্য দরুদও পড়া যাবে।
সহজ দরুদ হিসেবে এটি পড়া যায়।
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ، وَعَلٰى آلِ مُحَمَّدٍ
[আল্লা-হুম্মা সল্লি ‘আলা মু‘হাম্মাদ, ওয়া ‘আলা আ-লি মু‘হাম্মাদ]
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ এবং মুহাম্মাদের পরিবারের উপর রহমত বর্ষণ করুন।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা আমার প্রতি দরুদ পড়ো এবং সাধ্যানুযায়ী দু‘আ করো ও বলো (উপরের দরুদটি)।’’5
আবু বকর (রা.)-এর কন্যা আসমা (রা.) যে বাক্য দিয়ে রাসুলের উপর একই সাথে দরুদ ও সালাম পাঠ করতেন, সেটিও পড়া যেতে পারে।
صَلَّى اللّٰهُ عَلٰى رَسُوْلِهِ وَسَلَّمْ
(সল্লাল্লা-হু ‘আলা রাসু-লিহি ওয়া সাল্লাম)
অর্থ: আল্লাহ তাঁর রাসুলের উপর সালাত (দরুদ) ও সালাম বর্ষণ করুন।6
৪০০ বার যিকির ও তাসবিহ পাঠ করা
(৪) সুবহানাল্লাহ্, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ এবং আল্লাহু আকবার—প্রতিটি ১০০ বার করে মোট ৪০০ বার পড়া।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে হানি (রা.)-কে বলেন—
- তুমি ১০০ বার তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ) বলবে, এটি তোমার পক্ষে ইসমাইল (আ.)-এর বংশের ১০০ ক্রীতদাস মুক্ত করার সমতুল্য হবে;
- তুমি ১০০ বার আল্লাহর হামদ বা প্রশংসা (আলহামদুলিল্লাহ) বলবে, এটি তোমার পক্ষে আল্লাহর রাস্তায় যু[দ্ধে]র জন্য ১০০ টি সাজানো ঘোড়ায় মু[জা]হিদ প্রেরণের সমতুল্য হবে;
- তুমি ১০০ বার তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলবে, এটি তোমার পক্ষ থেকে ১০০টি মাকবুল (কবুলকৃত) উট কুরবানির সমতুল্য হবে;
- তুমি ১০০ বার তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) বলবে, তাহলে এত প্রতিদান পাবে, যার ফলে আসমান ও জমিন পূর্ণ হয়ে যাবে। [ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২৬৯১১; শায়খ আলবানি, সহিহুত তারগিব: ১৫৫৩; হাদিসটি হাসান]
সহজ ৩টি যিকর ও তাসবিহ পাঠ করা:
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “ওহে আব্দুল্লাহ ইবন কায়েস! আমি কি জান্নাতের এক রত্নভাণ্ডার সম্পর্কে তোমাকে অবহিত করবো না?” আমি বললাম, নিশ্চয়ই হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বলেন, “তুমি বলো—
لَا ﺣَﻮْﻝَ ﻭَﻻَ ﻗُﻮَّﺓَ ﺇِﻻَّ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ
(লা ‘হাউলা ওয়ালা ক্বুও-ওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ)
অর্থ: আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কোনো উপায় নেই এবং কোনো শক্তি নেই।’’7
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দুটি বাক্য এমন রয়েছে, যা উচ্চারণে সহজ, আমলের পাল্লায় অনেক ভারী এবং আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়। তা হলো—
سُبْحَانَ اللّٰهِ وبِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللّٰهِ الْعَظِيمِ
(সুব‘হা-নাল্লা-হি ওয়া বি‘হামদিহি সুব‘হা-নাল্লা-হিল ‘আযি-ম)
অর্থ: আল্লাহ পবিত্র, প্রশংসা কেবল তাঁরই; মহান আল্লাহ ত্রুটিমুক্ত।8
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘সর্বশ্রেষ্ঠ যিকর হলো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’’9
জীবিত ও মৃত সকল মুমিনের জন্য দু‘আ করা:
জীবিত ও মৃত সকল মুমিনের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং ভালো দু‘আ করা:
ইবরাহিম (আ.)-এর দু‘আটি পড়তে পারেন—
ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻭَﻟِﻮَﺍﻟِﺪَﻱَّ ﻭَﻟِﻠْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻳَﻮْﻡَ ﻳَﻘُﻮﻡُ ﺍﻟْﺤِﺴَﺎﺏُ
অর্থ: হে আমাদের রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সকল ঈমানদারকে আপনি সেদিন ক্ষমা করে দিয়েন, যেদিন হিসাব কায়েম করা হবে।10
হাদিসে এসেছে, কেউ অনুপস্থিত ব্যক্তির জন্য দু‘আ করলে, ফেরেশতারা বলেন, ‘‘তোমার জন্যও অনুরূপ হোক!’’11
বিশেষ একটি দু‘আ বেশি বেশি পড়া:
আয়িশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি বুঝতে পারি, কোনটি কদরের রাত, তখন ওই রাতে কী বলবো?’ নবিজি বলেন, তুমি বলো—
اَللّٰهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ
[আল্লা-হুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউ-উন, তু‘হিব্বুল ‘আফওয়া ফা‘অ্ফু ‘আন্নি]
অর্থ: হে আল্লাহ্! আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দিন।12
সাধ্যানুসারে কিছু দান-সাদাকাহ করা:
নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “প্রত্যেক ব্যক্তি (হাশরের মাঠে) তার সাদাকার ছায়াতলে থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত লোকদের মাঝে ফয়সালা সমাপ্ত না হবে।”13
যদি সম্ভব হয়, তবে রাতেই সাদাকাহ করুন। এটাই উত্তম। এক টাকা দান করলে হাজার মাস (৮৩ বছর) ধরে এক টাকা দান করার নেকি পাবেন। এই রাতের প্রতিটি আমল এভাবেই বৃদ্ধি পাবে। কারণ আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
‘‘কদরের রাতটি (মর্যাদার দিক থেকে) হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।’’14
যদি রাতে দিতে না পারেন, তবে রাতেই কিছু টাকা সাদাকাহ করার জন্য আলাদা করে রেখে দিন। এগুলো দিনের বেলা গরিবদের দিয়ে দিন। আশা করা যায়, নিয়তের বদৌলতে কদরের প্রতিদান পাওয়া যাবে, ইনশাআল্লাহ।
উল্লেখ্য, হায়েযা অবস্থায় নারীদের কুরআন স্পর্শ করা জায়েয নেই। এমনকি মুখস্থ পড়াও জায়েয নেই। এটি অধিকাংশ ফকিহের মত।
- সুরা মুমিন: ৬০ ↩︎
- ইমাম ইবনু হিব্বান, আস-সহিহ: ৯২৮, হাদিসটি সহিহ ↩︎
- ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৯৭৫ ↩︎
- ইমাম নাসায়ি, আস-সুনান: ১২৯৭; ইমাম ইবনু হিব্বান, আস-সহিহ: ৯০৪; হাদিসটি সহিহ ↩︎
- ইমাম নাসায়ি, আস-সুনান: ১২৯১; হাদিসটি সহিহ ↩︎
- ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ২৮৯৪ ↩︎
- ইমাম বুখারি আস-সহিহ: ৬৩৮৪ ↩︎
- ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬৬৮২ ↩︎
- ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৩৮৩; হাদিসটি হাসান ↩︎
- সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪১ ↩︎
- ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৬৮২০ ↩︎
- ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ৩৮৫০; হাদিসটি সহিহ ↩︎
- ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১৭৩৩৩; শায়খ আলবানি, সহিহুত তারগিব: ৮৭২; হাদিসটি সহিহ ↩︎
- সুরা ক্বাদর, আয়াত: ০৩ ↩︎