হাল-যামানায় পায়ে হেঁটে হজ্ব যাত্রা: কী বলে শরিয়ত

হজ্ব এমন এক ইবাদাত যা ফরয হতে হলে আর্থিক ও শারীরিক উভয় সামর্থ্যের প্রয়োজন । অন্য সকল ফরয ইবাদাতের চেয়ে হজ্ব অনেকটা আলাদা । সামগ্রিক দিক বিবেচনায় সলাত, সিয়াম ও যাকাতের চেয়ে হজ্ব আদায় অধিক কষ্টের ও ব্যায়বহুল । হয়তো এ জন্যই কবুল হজ্বের প্রতিদান কেবলই জান্নাত বলে ঘোষিত হয়েছে ।

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম এর সময়ে মানুষেরা তাদের সময়কার সহজলভ্য ও সর্বাধিক জনপ্রিয় বাহনে চড়ে হজ্বে যেতেন । যদিও কেউ কেউ কখনো পায়ে হেঁটে হজ্ব আদায়কে অধিক সওয়াবের ভেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন হেঁটেই পৌঁছবেন কাবার আঙিনায় । রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম এ খবর শুনে, ব্যাক্তির সামর্থ্যের দিক বিবেচনায় তা করতে নিষেধ করেছেন ।

নিচের দুটি হাদিস খেয়াল করুন,

হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন অতি বৃদ্ধ লোকের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে তার দুই ছেলের কাঁধে ভর করে যাচ্ছিল। তিনি প্রশ্ন করেন, তার কি হয়েছে?
লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! সে (বাইতুল্লাহ শারিফে) হেঁটে যাওয়ার মানত করেছে। তিনি বললেন, এ লোকের নিজেকে কষ্টে নিক্ষেপ করা হতে আল্লাহ তা‘আলা মুক্ত। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাকে সাওয়ারীতে চড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন।
(জামে আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৫৩৭)

হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন একজন মহিলা পায়ে হেঁটে বাইতুল্লাহ শারীফে যাওয়ার মানত করে। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তার হাঁটার মুখাপেক্ষী নন। তোমরা তাকে সাওয়ার হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দাও।
(জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৫৩৬)

এখানে দুটি বিষয় লক্ষ্যণীয়,

এক, যাদের পায়ে হেঁটে হজ্বে যেতে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম নিষেধ করেছেন তাদের বাহন থাকায় হেঁটে যাওয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ।

দুই, তাদের একজন ছিলেন বয়স্ক । যিনি নিজের সন্তানদের কাঁধে ভর করে হেঁটে যাচ্ছিলেন । বাহনে চড়ে যাওয়ার সামর্থ্য থাকায় নিজেকে ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অনর্থক কষ্ট দেয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ।

বর্তমান আধুনিক উৎকর্ষতার এই যুগে উড়ো জাহাজে চড়ে হজ্বে যাওয়ার সামর্থ্য থাকা স্বত্বেও পায়ে হেঁটে হজ্বে যাওয়া অনেক কারণেই শরিয়তে প্রশ্নবিদ্ধ ।

এক, যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বাহনে চড়ে হজ্বে যাওয়ার সামর্থ থাকা ব্যাক্তিদের পায়ে হেঁটে যেতে নিষেধ করেছেন তাই এই কষ্টকর সিদ্ধান্ত শরিয়তে নিষিদ্ধ ।

দুই, আমাদের দেশ থেকে উড়োজাহাজে চড়ে হজ্বে যেতে সময় লাগে কয়েক ঘন্টা । পায়ে হেঁটে যেতে সময় লাগে মাসের পর মাস । এই লম্বা সময় পায়ে হেঁটে হজ্বে যাওয়া ব্যাক্তির পরিবার -পরিজন তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । যা শরিয়তে না জায়েয ।

তিন, পায়ে হেঁটে হজ্ব করতে যাওয়া ব্যাক্তি শুরুতে আবেগের বশীভূত হয়ে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও তিনি স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে মুক্ত নন । তাই নিজেকে এভাবে মৃত্যু মুখে ঠেলে দেয়া শরিয়তে নিষিদ্ধ ।

চার, এই দীর্ঘ সময় নষ্ট না করে তিনি অন্য যেকোন কল্যাণমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারেন । এতে তিনি নিজে, তার পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র অনেক বেশি উপকৃত হবে ।

পাঁচ, বর্তমান সময়ে এই ধরণের কাজ সাধারণত লৌকিকতায় ভরপুর থাকে । রিয়ার ফাঁদে পড়ে হজ্বের মত এই মহান ইবাদাতকে নষ্ট করা বোকামি ছাড়া কিছুই না ।

লিখেছেন

শাইখ সালাহউদ্দীন মাক্কী

বিশুদ্ধ আক্বিদা ও সহীহ সুন্নাহর আলোতে উদ্ভাসিত এক নির্মল সকালের অপেক্ষায়।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন
বিশুদ্ধ আক্বিদা ও সহীহ সুন্নাহর আলোতে উদ্ভাসিত এক নির্মল সকালের অপেক্ষায়।
Exit mobile version