পাপমোচন
মদীনার বাজারে এক সাহাবী খেজুর বিক্রি করছেন। অসম্ভব রূপবতী এক মহিলা তাঁর কাছে খেজুর কিনতে আসলেন। মহিলা বললেন, “আমাকে ভালো কিছু খেজুর দিন?”
– এখানে যা আছে, সেগুলো ভালো খেজুর। তবে এরচেয়ে ভালো খেজুর আমার ঘরে আছে।
– তাই? ঘরের খেজুরই আমাকে দিন।
– তাহলে তো আপনাকে আমার সাথে ঘরে যেতে হবে।
– আচ্ছা, চলুন।
রূপবতী মহিলা ভালো খেজুর কেনার জন্য সাহাবীর ঘরে গেলেন। কিন্তু, সাহাবীর মনে অন্য চিন্তা ছিলো। মহিলা ঘরে ঢুকলেন। He hugged her and kissed her!
কাজটি করার পর সাহাবীর সংবিৎ ফিরলো। ‘এ আমি কী করলাম? একজন মহিলার সাথে আমি এ কী আচরণ করলাম?’ মুহূর্তের মধ্যে তিনি অনুতপ্ত হলেন, কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। এত্তো বড়ো পাপের মাশুল কিভাবে দিবেন?
তিনি গেলেন আল্লাহর বিধানের বেলায় সবচেয়ে কঠোর উমরের (রাদিআল্লাহু আনহু) কাছে। উমর (রা:) তাঁকে শাস্তি না দিয়ে বললেন আবু বকরের (রাদিআল্লাহু আনহু) কাছে যাও। আবু বকরও (রা:) তাঁকে শাস্তি দিলেন না, বললেন নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে যাও।
এতো বড়ো পাপ তিনি করলেন, পাপমোচন কিভাবে করবেন? এই পাপের জন্য তিনি অনুতাপে দগ্ধ। তাঁর মনের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা তাঁর বান্দার মনের অস্থিরতা দূর করলেন। তিনি কুরআনের একটি আয়াত নাযিল করলেন।
"নিশ্চয়ই ভালো কাজ মন্দ কাজকে মিটিয়ে দেয়।"1
সাহবী নবিজীকে জিজ্ঞেস করলেন, “আয়াতটি কি শুধু আমার জন্য?” নবিজী বললেন, “না, আমার সমস্ত উম্মতের জন্য।”2
সাহাবীরা উম্মতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তাঁরা এই কারণে সর্বশ্রেষ্ঠ নন যে, তারা পাপ করেননি, নিষ্পাপ ছিলেন। তাঁরাও পাপ করেছেন, কিন্তু পাপকে আঁকড়ে ধরেননি, অনুতপ্ত হয়েছেন, তাওবা করে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করেছেন।
আমরাও পাপ করি, তাঁরাও পাপ করতেন। আমরা পাপ করে পাপকে আঁকড়ে ধরে থাকি, অনুতপ্ত হই না, প্রত্যাবর্তন করতে লজ্জা পাই। আর তাঁরা কোনো পাপ করলে সাথে সাথে টেনশনে পড়ে যেতেন, কিভাবে পাপমোচন করা যায় সেই চিন্তায় অস্থির থাকতেন।
আমরা পাপের সাগরে ডুবে আছি। শয়তান আমাদেরকে বুঝাচ্ছে- ‘ডুব যখন দিয়েছো, আরো ডুব দাও, সাগর থেকে উঠলে তো ভেজা থাকবে।’ অর্থাৎ, ভালো কাজ করে কী করবে? তুমি তো অনেক পাপ করছো।
কিন্তু, আল্লাহ ঐ আয়াতে আমাদেরকে যেনো মোটিভেশন দিচ্ছেন- পাপ করছো? তাওবা করো। পূণ্য করো, পাপ তো আমি মুছেই দেবো।
নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“পাপের পরপরই পূণ্য করো, এতে করে পাপমোচন হবে।”3
বুঝলাম, পাপ করেছি, পাপমোচনের জন্য পূণ্য করবো। কিন্তু কোন আমলটা করবো? নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেটাও শিখিয়ে দিয়েছেন।
“যে ব্যক্তি আমার মতো অজু করে দুই রাকআত নামাজ পড়বে (যাতে দুনিয়াবি চিন্তা থাকবে না), তার পূর্বের সমস্ত পাপ ক্ষমা করা হবে।” 4
জুমু’আ উপলক্ষে তো আজ শারিরীক গোসল করলাম, শরীরের ময়লামোচন করলাম। আসুন না, একটু অন্তরের ময়লামোচন করি, পাপমোচনের জন্য একটু চেষ্টা করি।
এই ধরনের লেখাগুলো কখনো পাপকে নর্মালাইজ বা উৎসাহ দেবার জন্য না।
এটা হলো— আমরা সবাই পাপী। সবাই নানান পাপে লিপ্ত। আমরা কীভাবে নিজেদের পাপমোচন করতে পারি সেই টিপস।
এটা পড়ে পাপ করার গ্যারান্টি পেয়ে গেলাম মনে করাটা ভুল।
পাপ করে দুই রাকআত নামাজ পড়ে ফেলবো, তাহলেই হয়ে গেলো।
এই আশায় পাপ করলে আপনার পাপমোচন হবে তার গ্যারান্টি নেই। বরং এই চিন্তাটাই পাপ। আল্লাহর বিধানের সাথে তামাশা করা।
- সূরা হূদ- ১১:১১৪ ↩︎
- সহীহ বুখারী: ৪৬৮৭, মুসনাদে আহমাদ: ২/২৪৫ ↩︎
- জামে আত-তিরমিজি: ১৯৮৭ ↩︎
- সহীহ বুখারী: ১৫৯ ↩︎