আজকের দু’আটিতে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং তাঁর কাছে আমরা যে অঙ্গীকার করি তা স্মরণ করার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। উয়াইস আল-কারনির (রহ:) এই দু’আটি থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি।
“হে আল্লাহ, আপনি আমার কুষ্ঠরোগ নিরাময় করে দিন, এক দিরহাম (মুদ্রা) পরিমাণ জায়গা ছাড়া।”
উয়াইস আল-কারনি এমন একজন ব্যক্তি যার সম্পর্কে রাসুল (ﷺ) তাঁর সাহাবীদের বলে গেছেন, যদিও উয়াইসের (রহ:) সাথে রাসুলের (ﷺ) কখনো দেখা হয়নি। তিনি তাঁর সাহাবীদের বলে গেছেন, যদি কখনও তারা এই লোকটির দেখা পায়, তবে তারা যেন তাকে অনুরোধ করে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে, কারণ উয়াইস (রহ:) ছিলেন আল্লাহর নৈকট্যলাভকারীদের একজন, এমনকি তিনি উয়াইস (রহ:) সম্পর্কে কিছু বর্ণনাও দিয়ে গেছেন।
রাসুল (ﷺ) বর্ণনা করেছেন যে উয়াইসের (রহ:) কুষ্ঠরোগ ছিল এবং তিনি আল্লাহর কাছে তাকে কুষ্ঠরোগ থেকে আরোগ্য করার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন, এক দিরহাম আকারের এক টুকরো জায়গা ছাড়া। উয়াইস (রহ:) ছিলেন খুব উদার একজন ব্যক্তি এবং তার মায়ের প্রতি পরম অনুগত। মায়ের প্রতি তার আনুগত্যের কারণে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাকে সম্মানিত করেছিলেন। প্রতি বছর যখন লোকেরা হজ্জের জন্য আসত, তখন ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) কাফেলাদের জিজ্ঞাসা করতেন, বিশেষ করে ইয়েমেন থেকে আগত কাফেলাদের, তাদের মধ্যে উয়াইস নামে কেউ আছেন কিনা।
অবশেষে ওমর (রা:) তাকে খুঁজে পেলেন এবং তিনি উওয়াইসকে রাসুলের (ﷺ) বর্ণনা অনুযায়ী প্রশ্ন করতে শুরু করলেন: তার গোত্র, সম্প্রদায়, ইত্যাদি সম্পর্কে। ওমর (রা:) যখন নিশ্চিত হলেন এই ব্যক্তি রাসূলের বর্ণিত সেই লোক, ওমর (রা:) তাকে অনুরোধ করলেন তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে।
সাধারণত এই বর্ণনায়, আমরা মায়ের প্রতি তার আনুগত্যের বিষয়টিতে মনোনিবেশ করি, কারণ আল্লাহর নৈকট্য লাভের সবচেয়ে বড় উপায় হল পিতামাতাকে সম্মান করা। ইবনে আব্বাস (রা:) বলেছেন,
‘আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার জন্য মায়ের সম্মানের চেয়ে বড় অন্য কোন কাজ তার জানা নাই।’
যাইহোক, আজকে আমরা এই দু’আর এমন একটি বিষয়ে আলোকপাত করব, যা সাধারণত হাদীসের ব্যাখ্যায় খুব একটা আলোচিত হয়নি। উয়াইস (রহ:) কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং রোগ মুক্তির জন্য তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, আল্লাহ যেন তাকে কুষ্ঠ রোগ থেকে আরোগ্য দান করেন কিন্তু এক দিরহাম পরিমাণ জায়গা ছাড়া। আপনার কি কখনো মনে হয়েছে কেন তিনি এমন দু’আ করেছেন? তিনি তা করেছিলেন কারণ তার শরীরে এই এক দিরহাম পরিমাণ জায়গাটি তাকে তার কষ্টের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে, এবং একই সাথে তার সুস্থতার জন্য সর্বদা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার কথাও স্মরণ করিয়ে দিবে। এই দু’আটি বস্তুত তার শক্তিশালী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকেই তুলে ধরে।
অনেক সময় আমরা আমাদের চরম হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় আল্লাহকে ডাকি এবং আমাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করে দেওয়ার জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করি, এবং তখন আমরা আল্লাহর কাছে অঙ্গীকারবদ্ধও হই। কিন্তু আল্লাহ আমাদের বিপদ দূর করার সাথে সাথে আমরা আবার গাফেল হয়ে যাই। আমাদের কষ্ট দূর করে দিয়ে তিনি আমাদের প্রতি যে আশীর্বাদ করেছেন তা আমরা ভুলে যাই, এমন কি ভুলে যাই তাঁর কাছে আমাদের কৃত প্রতিশ্রুতির কথাও।
তাই এটি একটি অসাধারণ শিক্ষা; আপনি যখন আল্লাহকে ডাকেন, কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করেন, তখন এর থেকে আপনি যে শিক্ষাটি পেয়েছেন তা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যও তাঁর কাছে প্রার্থনা করুন, কারণ প্রায়শই আপনি আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হন আপনার চরম দুঃসময়ে। আপনি নিশ্চয় চান না আল্লাহর নৈকট্য হতে দূরে সরে যেতে। প্রায়শই, যখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আপনার কাছ থেকে কিছু কেড়ে নেন, তিনি আপনাকে আরও ভাল কিছু দিয়ে তা প্রতিস্থাপিত করেন। এই পৃথিবীতে আপনি যা হারান তার বিনিময়ে আল্লাহ আপনাকে সবচেয়ে বড় যে জিনিসটি দিতে পারেন তা হলো তাঁর নৈকট্য।
উয়াইস আল-কারনি (রহ:) তার কষ্ট থেকে অর্জন করেছিলেন আল্লাহর সাথে সেই গভীর সম্পর্ক যা তিনি কখনও ভুলতে চাননি, এমনকি কুষ্ঠরোগ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার সময়েও। আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদেরকে নম্রতা দান করেন এবং সব দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি দেন। আমরা আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনাও করি যে কষ্টের সময় অর্জিত শিক্ষাটি যেন আমরা ভুলে না যাই এবং তিনি যেন আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের সর্বোত্তম দান করেন।
আল্লাহুম্মা আমীন!
জীবনের সেরা দিন!
পর্ব:১৮
মূল: ড. ওমর সুলাইমান