Q/A

কোনো অমুসলিম মারা গেলে তার জন্য উল্লাস করা বা শান্তিকামনা দুঃখ করা যাবে

যদি কোনো অ’মুসলিম তথা কাফির ইসলামের সাথে শত্রুতা না করে নিরীহ বা স্বাভাবিক অবস্থায় জীবনযাপন করে এবং এভাবেই মারা যায়, তবে তার ব্যাপারে মুমিনের মনে এজন্য দুঃখ আসবে যে, সে ঈমানহারা হয়ে কবরে চলে গেলো।
এর উদাহরণ হলো, আবু তালিবের ঈমানহীন মৃত্যু। নবিজি এবং সাহাবায়ে কিরাম খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। তবে, এমন লোক মারা যাওয়ায় তার প্রতি কোনোরকম ভালোবাসা প্রদর্শন করা যাবে না। তাকে নিয়ে উল্লাস করা ইসলামি শিষ্টাচারের পরিপন্থী কাজ।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

‘‘তোমরা মৃতদের গালি দিও না; কেননা তারা তাদের কৃতকর্মে পৌঁছে গেছে।’’1

শান্তিতে থাকুন (RIP—Rest in peace) ইত্যাদি বলা যাবে কি?

তাদের জন্য কি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা যাবে? ‘‘শান্তিতে থাকুন’’ (RIP—Rest in peace) ইত্যাদি বলা যাবে?

উত্তর হলো, না। তাদের জন্য কোনোভাবেই ক্ষমাপ্রার্থনা করা যাবে না এবং তাদের কল্যাণ কামনা করা যাবে না। ইসলামের জন্য আবু তালিবের অবদান বলে বা লিখে শেষ করা যাবে না। কিন্তু সে ঈমান আনার সৌভাগ্য লাভ করতে পারেনি। নবিজি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সে কাফির অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে। অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মৃত্যুর পর তার জন্য ক্ষমা চাইতে থাকেন আল্লাহর কাছে। তখন আল্লাহ আয়াত অবতীর্ণ করে বলেন—

‘‘নবি ও মুমিনদের উচিত নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, যদিও তারা আত্মীয় হয়—একথা সুস্পষ্ট হওয়ার পর যে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী।’’2

(যারা আল্লাহর সাথে শির্ক করে, তাদেরকে মুশরিক বলা হয়। যেমন: খ্রিষ্টানদের প্রায় সবাই ৩ খোদায় বিশ্বাস করে, এটা শির্ক। একইভাবে, যারা মনে করে পির তার মুরিদকে জান্নাতে নিতে পারবে, সন্তান দিতে পারবে বা এরকম কাজগুলো করতে পারবে, যেগুলো একমাত্র আল্লাহর হাতে, তাহলে এগুলোও শির্ক হবে। এসব নিয়ে অন্য কোনো পর্বে কথা হবে, ইনশাআল্লাহ)

এবার বলুন, যে আবু তালিব নিজের জীবন বাজি রেখে ভাতিজা মুহাম্মাদকে সাপোর্ট দিয়ে গেছে, তার জন্যও ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি নেই, তবে আপনি আর কার জন্য শান্তি কামনা করেন? কার উদ্দেশ্যে Rest in peace (RIP) বলেন?

মুশরিক তথা কাফিরের ব্যাপারে ইসলামে কেন এত কঠোরতা যে, তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমাও চাওয়া যাবে না?

উত্তর হলো: যে আল্লাহ আপনাকে মায়ের পেট থেকে নিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত রিযিক দিয়েছেন, এই পৃথিবীর আলো বাতাস উপভোগ করিয়েছেন, সেই আল্লাহকে আপনি বিশ্বাস করেন না। আপনার মত অকৃতজ্ঞ আর কে আছে?
আল্লাহ কত সুন্দর করে বলছেন—

‘‘কীভাবে তোমরা আল্লাহর সাথে কু'ফর করছো, অথচ তোমরা ছিলে মৃত? অতঃপর তিনি তোমাদেরকে জীবিত করেছেন, এরপর তিনি তোমাদের মৃত্যু দেবেন। অতঃপর জীবিত করবেন, তারপর তারই নিকট তোমাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে। তিনিই জমিনে যা আছে, সব তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তারপর আসমান সৃষ্টির ইচ্ছা করলেন এবং তাকে সাত আসমানে সুবিন্যস্ত করলেন। আর সবকিছু সম্পর্কে তিনি সম্যক জ্ঞাত।’’3

যদি কোনো কাফির মুসলিমদের সাথে শত্রুতা করে থাকে এবং সারাজীবন মুসলিমদের ক্ষতির চেষ্টা করে থাকে, তবে তার মৃত্যুতে মুসলিমরা আনন্দিত হলে, তাতে কোনো দোষ নেই। শায়খ মুহাম্মাদ বিন সলিহ আল মুনাজ্জিদের ফাতাওয়ায় এটি বলা হয়েছে। এটি সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত, তবে জরুরি কিছু নয়। কাফির মারা গেলে ‘ফি নারি জাহান্নামা খালিদিনা ফিহা’ বলতেও হাদিসে বলা হয়নি।

আব্দুল্লাহ বিন আবু আওফা (রা.) থেকে বর্ণিত যে,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে (বদর যুদ্ধে) আবু জাহলের মাথা কর্তনের ব্যাপারে সুসংবাদ দেওয়া হলে তিনি দুই রাকাত (শুকরিয়ার) নামাজ আদায় করেন।4

অনেকে মনে করেন, ‘‘কোনো মৃত ব্যক্তির ব্যাপারেই নেতিবাচক কথা বলা যাবে না—হোক সে মুসলিম অথবা অমুসলিম।’’ তাদের এই বক্তব্য সঠিক নয়।

একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাশ দিয়ে একটি মৃত লাশ নিয়ে যাওয়া হয়। তখন তিনি বলেন, “সে (মৃত ব্যক্তি) নিজে শান্তি পেলো অথবা অন্যরা তার থেকে শান্তি লাভ করলো।”
লোকজন প্রশ্ন করলো,
‘হে আল্লাহর রাসুল! “সে নিজে শান্তি পেলো অথবা অন্যরা তার থেকে শান্তি লাভ করলো” এর মানে কী?’
তিনি উত্তরে বলেন, “মুমিন বান্দা দুনিয়ার কষ্ট-ক্লেশ থেকে মুক্তি লাভ করে শান্তি লাভ করে আর পাপিষ্ঠ বান্দার ক্ষতিকর আচরণ থেকে মানুষ, এই অঞ্চল, গাছ-পালা এবং জীব-জন্তু (অর্থাৎ, গোটা সৃষ্টিজগৎ) শান্তি লাভ করে।”5

এ ব্যাপারে আরও সহিহ হাদিস আছে।

একটা বিষয় স্পষ্ট করা জরুরি:

বর্তমানে অনলাইনের যুগে আমাদের কথা-বার্তা মুহূর্তেই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এই অনলাইনে বহু মত-পথের মানুষ আছে। কোনো অত্যাচারী কাফিরের মৃত্যুতে অনলাইনে সংঘবদ্ধ উল্লাস করা এবং ট্রল করে হাসি-ঠাট্টা করার মাঝে তেমন ফায়দা আছে বলে মনে হয় না। এগুলোর খুব একটা ভালো ফিডব্যাক আসে না।

বরং কিছু ক্ষেত্রে এমন কাজের নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ করা যায়। সকল বৈধ কাজ সবসময় করা জরুরি নয়। হ্যাঁ, অ্যাকাডেমিক ওয়েতে সমালোচনা করার এবং তার জঘন্য কৃতকর্মগুলো লোকজনকে জানানোর দরকার আছে, তবে উল্লাসে মেতে ওঠার দরকার নেই।

নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর সাহাবিগণ এবং পরবর্তী বিজ্ঞ ইমামগণ এসব ক্ষেত্রে আনন্দিত হয়েছেন, কিন্তু সর্বত্র প্রচার করে বেড়াননি বা উল্লাসে মেতে ওঠেননি। দেখা যায়, নিজেদের আঙিনাতেই আনন্দটুকু সীমাবদ্ধ রেখেছেন। মৃত্যু জিনিসটা খুবই স্পর্শকাতর। পৃথিবীর বড় বড় দাগী আসামীরাও যখন মারা যায়, তখন অনেক এমন মানুষও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে, যারা তাকে তীব্রভাবে ঘৃণা করে।
তাই, বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আমরাও মনে করি, এ ব্যাপারে প্রজ্ঞার পরিচয় দেওয়াই উত্তম। ওয়াল্লাহু আলামু বিস সওয়াব।

  1. ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ১৩৯৩ ↩︎
  2. সুরা তাওবাহ, আয়াত: ১১৩ ↩︎
  3. সুরা বাকারাহ, আয়াত: ২৮-২৯ ↩︎
  4. ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ১৩৯১; সনদ দ্বঈফ ↩︎
  5. ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬৫১২; ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ২০৯১ ↩︎

লিখেছেন

Picture of নুসুস টিম

নুসুস টিম

কুরআন ও হাদিসের মূল পাঠকে নুসুস (text) বলা হয়। নুসুসের উপর ভিত্তি করেই আমরা লেখালেখি করি।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন
Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button